“অধিকার”
পর্ব:-১
Writer:-Hassab bin Ahmed.
আজকের সকল টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য । কারণ আজকে আমার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছি । ওও আমার পরিচয় তো দেই নাই , আমার নাম ‘সজিব’ আমি বিজনেস করি , আমার বাসায় বাবা,মা আর ছোট একটি বোন আছে ! আমার বোনের নাম ‘তানিশা’ ! আমার বোন তো আমাকে বিয়ে পাগল বলে ডাকে, কারণ আমার ফেসবুকের নিক নেম দিয়েছি ” বিয়ে পাগল” ! যাই হোক আমি তো রেডি ।
তানিশা:- ভাইয়া তারাতাড়ি কর , আম্মু নিচে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি ।
তানিশা চলে গেল , আমিও তারাতাড়ি নিচে গেলাম । যাত্রা শুরু করলাম , হুমাইরাদের বাসায় । জি মেয়েটার নাম হুমাইরা । আমি দেখিনি কিন্তু তানিশার কাছে শুনেছি অনেক কিউট । হুমাইরাদের বাসা আমাদের বাসা থেকে প্রায় ২ ঘন্টার রাস্তা । আব্বুর কথা অনুযায়ী যদি আমার পছন্দ হয়ে যায় তাহলে সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের কাম শেষ করবে।
হুমাইরাদের বাসায় বসে আছি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে , অনেক ধরনের খাবার খেতে দিয়েছে , কিন্তু আমি কিছু খাইনি , লজ্জাও করছে আবার ভাবছি কখন হুমাইরা কে দেখতে পাবো , আম্মু মনে হয় আমার অবস্থা বুঝতে পেরে হুমাইরার আম্মুকে মেয়ে দেখাতে বললো, আমাকে হুমাইরার রুমে পাঠিয়ে দিলো , যদিও আমি হুমাইরার সঙ্গে একা একা দেখা করতে চাইনি , কারণ , এইভাবে একা একা দেখা করা ইছলামে সম্পূর্ণ অনুমতি নেই । তারপরও দেখা করতে গেলাম। হুমাইরা নিল শাড়ি পরে সোফায় বসে আছে । আমি সালাম দিয়ে সামনের সোফায় বসলাম । কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই । তাই আমি শুরু করলাম
আমি:- আপনি ভালো আছেন?
হুমাইরা:- জি , আপনি?
আমি:- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ,
হুমাইরা মাথা নিচু করে আছে ।
আমি:- একটি কথা বলি রাগ করবেনা না তো ।
হুমাইরা:- না না বলেন কি বলবেন ?
আমি:- আপনি অনেক সুন্দর ! আর আপনার নামটাও আপনার মতোই সুন্দর । আর আপনার কন্ঠে তে অন্য রকম মায়া আছে।
হুমাইরা:- ধন্যবাদ ।
আমি:- সত্যি বলতে হুমাইরা আমার প্রিও নাম ।
হুমাইরা কিছু বলছে না । তাই কিছু সময় চুপ থাকে আমি বললাম
আমি- দেখুন আমর কিছু বলার নেই ! আপনি যদি কিছু জানতে চান বলতে পারেন ।
হুমাইরা:- না মানে বলছিলাম কি বিয়ের পর আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চাই না ।
আমি:- ও মানে আপনি এখন চাকরি করেন ?
হুমাইরা:- জি ।
আমি:- দেখুন আমি মেয়েদের চাকরি করার বিরুদ্ধে নোই , কিন্তু আমি কখনো চাইবো না আমার স্ত্রী বাইরে চাকরি করুক। এইটা আমার ব্যক্তিগত মত।
হুমাইরা:- মানে আমি যদি আপনার স্ত্রী হৈ তাহলে আমি জব করতে পারবো না?
আমি:- জি !
হুমাইরা:- আমি সরি , আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি আসলে নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, আর কিছু মনে করবেন না এইটা আপনাকে বলতে হচ্ছে- আপনাদের মতো মানুষের জন্য আজ নারীরা পরাধীন।
আমি কিছু বললাম না , শুধু হাসলাম , মনে মনে রাগ ও হচ্ছে
আমি:- ওও আচ্ছা, আপনারা পরাধীন ,?
হুমাইরা:-হুম, আমাদের আপনাদের মতো মানুষের কাছ থেকে স্বাধীন হতে হবে
আমি:- ওওও কিভাবে ?
হুমাইরা:- আমরা ধর্না দেই , মিছিল বের করি !
আমি:- ওও খুবই সুন্দর পদক্ষেপ , এগিয়ে যান , কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল করতে পারি?
আমি:- আচ্ছা পরকিয়া কি স্বাধীনতা না অপরাধ?
হুমাইরা:- অবশ্যই অপরাধ?
আমি:- ওওও , আপনি “পশ্চিম কল্পনা নগর নারী সংগঠনের” নাম শুনেছেন?
হুমাইরা:- জি আমি ওখানকার সদস্য।
আমি:- ওও খুবই ভালো , কিন্তু পরকিয়া এইটা অপরাধ , তাহলে এক সাপ্তাহ আগে আপনাদের নারী সংগঠন , ধর্না দিয়েছিলো পরকিয়ার বৈধতা দিতে হবে , এদের বেপারে আপনি কি বলবেন ?
হুমাইরা:-…………..( চুপ)
আমি:– এইগুলো কি ধরনের স্বাধীনতা , যে মেয়ে গুলো এই ধরনের ধর্না দেয় এরা কি মানুষ না ? এদের কি লজ্জা বলতে কিছু নেই? পরকিয়া করা কি নরি স্বাধিনতা ? ছিঃ ছিঃ লজ্জা করে না , লজ্জা করে না আপনাদের নারী স্বাধিনতার নামে এই গুলো করার জন্য?
হুমাইরা কিছু বলছে না ,
আমি:- যাইহোক ভালো থাকবেন, আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলো। হুমাইরা একটি কথাও বললো না।
তার পর ওখান থেকে কোনমতে আব্বু আম্মুকে বুঝিয়ে বাসায় চলে আসলাম । বাসায় এসে আম্মু কে সব বললাম । কিন্তু তাদের এক কথা আমাকে ও মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে কারণ আমারা যখন অনেক ছোট তখন নাকি আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । কি করবো বুঝতে পারছি না , মন খারাপ করে বসে থাকি ! কখনো ভাবিনি এইরকম একটা ঘটনা ঘটবে । কোন কাজে মন বসে না ।
তিন দিন পর , মাগরিবের নামাজে পরে রাস্তায় বসে আছি হঠাৎ মনে হলো আরিফ দের বাসায় যাই। আরিফ আমার ভালো বন্ধু । গেলাম ওদের বাসায় দেখি আরিফ মন খারাপ করে বসে আছে , আরে ভাই মন খারাপ করে বসে থাকার কথা আমার আর বসে আছিস তুই ! কথা গুলো বলছি । কিন্তু আরিফ কিছু বলছে না । ভাবলাম কিছু একটা তাহলে হয়েছে ।
আমি:- আরিফ কি হয়েছে , ?
আরিফ:- না কিছু না ,
আমি:- আংকেল আন্টি ঠিক আছে তো?
আরিফ:- জি ঠিক আছে ।
আমি:- তাহলে আমাকে খুলে বল কি হয়েছে!
আরিফ:- নিয়ম অনুযায়ী আমিনা কে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার
পরেও আমিনা ওর এক নারীবাদী বান্ধবিকে নিয়ে এসে আরো সম্পত্তি দাবি করতেছে। ও চাইতেছে
সব সম্পত্তি সমান ভাবে ভাগ করতে। যদি ভাগ না করে দেই তাহলে না কি ও আমার নামে মামলা করবে। ( আমিনা আরিফের বোন , বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন চার বছর আগে )
আমি:- আমিনা কোথায়?
আরিফ:- আছে ওর ঘরে , ও আর ওর বান্ধবী।
আমি:- ঠিক আছে চল , আমি দেখতেছি ।
আমি আর আরিফ আমিনার ঘরে প্রবেশ করে এইটা দেখবো তা কখনো কখনো কল্পনাও করি নাই , আমিনা আর আমিনার বান্ধবি বসে আছে , আমিনার বান্ধবী আর কেউ না , হুমাইরা । আমিতো অবাক হয়ে গেছে । হুমাইরা আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেছে ।
আমি আর আরিফ গিয়ে সোফায় বসলাম ।
আমি:- কি হয়েছে আমিনা কিসের মামলা করবি?
এমন সময় হুমাইরা বললো,
~সমান সম্পত্তি না দিলে অবশ্যই মামলা করবো।
আমি:- আমি আপনার কাছ থেকে কোন কিছু জানতে চাইনি ! আমি আমার বোনের সঙ্গে কথা বলছি আপনি একটু চুপ করুন , আপনার সঙ্গেও কথা বলবো , চিন্তা করবেন না ।
আমিনা তুই বল .
আমিনা :- বলার কিছে, ভাইয়া যেমন বাবার ছেলে আমিও তেমন একি বাবার মেয়ে।
আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে দেখে কি আমার অধিকার
হারিয়ে গেছে নাকি?
আমি:- আমিনা তো ঠিকই বলেছে। সম্পত্তি সমান ভাবে ভাগ করা
উচিৎ।
আমিনা আমার কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
আমিনা:-যাক ভাইয়া আপনিতো বুঝতে পেরেছেন৷ এখন আপনি
আপনার বন্ধুকে বুঝান।
আমিও তখন মুচকি হেসে বললাম,
–
আমি:- হ্যাঁ অবশ্যই, এখনি বুঝিয়ে বলছি!
আমি তখন আরিফের দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি- আংকেলের তো ক্যান্সার হয়েছিলো। অপারেশন
আর সব ডাক্তার দেখিয়ে কত টাকার মত খরচ হয়েছে রে?
আরিফ:- ২৬ লাখ টাকার মত..
আমি:- এখন প্রতিমাসে আংকেল আন্টির পিছনে ঔষধ কিনা
থেকে শুরু করে বাজার করা এবং যাবতীয় সব খরচ
মিলিয়ে কত টাকা যায়?
আরিফ একটু চিন্তা করে বললো,
আরিফ:- প্রায় ৩০ হাজার টাকার মত খরচ হয়..
এইবার আমি আমিনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:- তুমি ১৩ লাখ টাকা রাকিবকে দিবে আর প্রতি মাসে ১৫
হাজার টাকা করে দিবে। আংকেল আন্টি শুধু আরিফের
মা-বাবা না। তোমারও মা-বাবা। শুধু যে বাবার সম্পত্তি
ছেলে মেয়ের মাঝে সমানভাবে ভাগ হবে, তা তো না।
ছেলে মেয়ে উভয়কেই সমানভাবে বাবা মায়ের দায়িত্ব
নিতে হবে। আপনি কি বলেন “হুমাইরা বিনতে আব্দুল্লাহ”?
হুমাইরা চমকে উঠলো , কিছু বললো না । আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম ,
আমি:- হুমাইরা আপনি কি বলেন , আমিনাকে এই খরচ গুলো দিতে হবে কি?
হুমাইরা:- জি দিতে হবে ( মাথা নিচু করে)
আমিনা ও মাথা নিচু করে বললো,
আমিনা:- আমি সরি ভাইয়া, নিয়ম অনুযায়ী যেটুকু সম্পত্তি পেয়েছি তাতেই
সন্তুষ্ট। আমার সমপরিমাণ সম্পত্তি চাই না। আমি তো আমার বান্ধবীদের কথায় …..
আর বলতে পারলো না ।
আমি বাসা থেকে যখন বের হবো তখন হুমাইরা কে বললাম,
আমি:- আপনার কি আরো কিছু বলার আছে?
হুমাইরা:- না ।
আমি:- কুরআনে কোন ভুল নেই। কুরআনে স্পষ্ট করে লেখা আছে
ছেলে মেয়ের মাঝে সম্পত্তি কিভাবে ভাগ হবে। শুধু
মাঝে মাঝে আমরা শয়তানের ধোকায় পড়ে পুরুষের সাথে
নারীর পক্ষপাতিত্যতা তৈরি করে ফেলি..
|
তার পর বাসায় চলে আসলাম ।
চলবে…..
Leave a Reply