অধিকার পর্ব:-২

“অধিকার”

পর্ব:-২

Writer:-Hassab bin Ahmed.

তিন দিন পর। এখনো মনটা একেবারে ঠিক না । হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে ফোন , 

আমি:- আসসালামু আলাইকুম ?

ওপাস থেকে:- ওয়ালাইকুম আসসালাম । আমি হুমাইরা।

আমি:- ওও , হুম বলেন ?

হুমাইরা:- আমরা কি একটু দেখা করতে পারি ? প্লিজ না করবেন না ।

আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে ।

হুমাইরা:-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আজ বিকেলে , কফি হাউজে।

আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে। 

বিকেলে দেখা করতে চলে এলাম । 

আমি আর হুমাইরা বসে আছি  , হুমাইরা কিছু বলছে না।

আমি:- আপনি মনে হয় কিছু বলার জন্য আসতে বলেছিলেন ?

হুমাইরা:- জি আপনি হয়তো জানেন ,

আমি:- জি , চিন্তা করবেন না । আমি দেখি কি করা যায় । 

হুমাইরা:- আসলে যুক্তি গুলো অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে । আমি যা বুঝতে পারলাম আপনি ধর্ম মেনে চলার চেষ্টা করছেন , কিন্তু ইছলামে তো মেয়েদের চাকরি করার অনুমতি আছে । তাহলে আপনি আপনার স্ত্রীকে চাকরি করার অনুমতি দিবেন না কেন ? আমরা কি এতো পড়া লেখা করেছি স্বামীর কাছে পরাধীন হয়ে থাকার জন্য? কথায় একটু একটু রাগ আছে

আমি কফির কাপে চুমুক দিয়ে হাসি মুখে বললাম ।

আমি:- আমার কাছে আপনার একটি সুন্দর ছবি আছে দেখতে চাইবেন আপনি?

পকেট থেকে একটা ছবি বের করে হুমাইরার দিকে এগিয়ে দিলাম। ‘ছবিটায় হুমাইরা ওর বস কে ব্লেজার পড়িয়ে দিচ্ছে ‌।’ 

হুমাইরা ছবিটা দেখে মনে হয় কিছু অবাক হয়েছে। কিছু বললো না

আমি:- বসের ব্লেজার পড়িয়ে দেয়ার নাম  পারফরমেন্স, আর স্বামীর কাপড় এগিয়ে দেয়া পরাধীনতা! , এই আপনার নরী স্বাধীনতা।

হুমাইরার মুখ থেকে রাগের ছায়া চলে গিয়ে মনে হয় অপরাধ বোধ এসে গেছে।

হুমাইরা:- আমি সরি এই ভাবে ভেবে দেখিনাই । কিন্তু আপনি এই ছবি কোথায় পেলেন ?

আমি:- আপনার বস ফেসবুকে আপলোড করেছিলো , আপনার বিষয়ে একটু জানতে চাইছিলাম এইটা পেয়ে গেলাম ।

হুমাইরা:- আমি  জানিনা বস তখন ছবি তুলেছিলো । 

আমি:- আপনি কিন্তু কিছু খাচ্ছেন না?

হুমাইরা কফির কাপে চুমুক দিলো ।

আমি:- আসলে কি জানেন, নারীবাদীরা ভাবে ! এয়ারহোস্টেস হওয়ার নাম যোগ্যতা, নিজ ঘরে রান্না করাটা বুয়াগিরি! বসের ব্লেজার পড়িয়ে দেয়ার নাম  পারফরমেন্স, স্বামীর কাপড় এগিয়ে দেয়া পরাধীনতা! কাস্টমারদের চড়া ব্যবহারকে হাসি মুখে সামাল দেয়ার নাম কোয়ালিটি, ক্লান্ত স্বামীর শাউট মানে আত্মমর্যাদার হনন!

হুমাইরা:- হুম আপনার কথা ঠিক কিন্তু এখন আধুনিক যুগ , নারীর কস্ট কমানো উচিত ,।

আমি- নারীরা ঘরের কাজ করার জন্য জন্মায়নি” এই নীতিতে বিশ্বাসী আপুটির ঘরের সব কাজ আরেকজন নারী এসে করে দেয়।

যাকে সে আদর করে বুয়া ডাকে!😢

আজীব দুনীয়া ,তাই না ??

( হুমায়রা এবার চুপসে গেল)

হুমায়রা- আসলে সত্যি বলতে আমাদের অফিসে এই গুলো কখনো কেউ বলে নাই , কখনো চিন্তাও করি নাই ,

আমি:-আধুনিক যুগে নারীদের কষ্ট আরো বেড়েছে। কমে নি।

ইসলাম যেখানে পিরিয়ড নামক কষ্টের দিনগুলোতে বাধ্যতামূলক ফরজ আমল থেকেও নারীকে ছুটি দিয়েছে,

আধুনিকতা সেখানে নারীকে তখনও কাজ করিয়ে চলে! কোন ছাড় ছুটি দেয় না ! আর বলে, এটাই স্বাধীনতা! এটাই অধিকার!

দিনশেষে আবার নাকি ইসলামই নারীর প্রাপ্য দেয়নি! আজব দুনিয়া!! তাইনা?

একটা সময় নারীরা ছিল অন্তঃপুরবাসিনী। তারা সংসার সামলাতেন, সন্তান মানুষ করতেন।

আমাদের বোঝানো হল এটা অবিচার। পুরুষরা বাইরে কাজ করে, তারা স্বাধীন। নারীদের কোন স্বাধীনতা নেই। তাদেরও বাড়ির বাইরে আসতে হবে।

ধীরে ধীরে সমাজ এটা গিলতে শুরু করল। নারীরাও পুরুষদের সাথে বাইরে কাজ করতে লাগল।

এর ফলাফল এখন কি দাড়িয়েছে? এখন নারীকে ঘর বাহির দুটোইই সামলাতে হচ্ছে। দুটো একসাথে ব্যলান্স করতে গিয়ে কারো ঘর ভাঙ্গছে, কারো বাহির ভাঙ্গছে।

কিন্তু তাও নারীদের আফিমের মত ভ্রান্ত বিশ্বাস দিয়ে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। তুমি স্বাবলম্বী, তুমি স্বাধীনতা ভোগ করছ। তুমি পুরুষের সমকক্ষতা অর্জন করেছ।

ফলাফল?

১। নারীদের একটা বৃহৎ অংশ শরীর প্রদর্শন করতে পারাকে শুধু স্বাধীনতা নয়, সাহসিকতা ভাবতে শুরু করেছে।

২। স্বামীসেবাকে দাসত্ব আর এয়ার হোস্টেস, বড় হোটেলে চাকরী করা, কর্মক্ষেত্রে বসের মন জুগিয়ে চলাকে স্বাধীনতা ভাবতে শুরু করেছে।

৩। ক্যারিয়ার ভাবনা অনেক ক্ষেত্রে মাতৃত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

৪। পারিবারিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গতে শুরু করেছে।

৫। বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ক্যান্সারের মত বাড়ছে। 

হুমাইরা:- আমি সত্যি অবাক হয়ে যাচ্ছি । এই সাধারণ কথা গুলো আমার মাথায় কখনো আসেনি । আপনার সঙ্গে দেখা না হলে বুঝতেই পারতাম না আমার আরো অনেক কিছু শিখার আছে , অনেক কিছু জানার আছে ।  আরো একটি কথা ?

আমি:- হুম বলেন?

হুমাইরা:- কেউ চাইলে তো পর্দা করে চাকরি করতেই পারে ?

আমি:- স্বাভাবিকভাবে এবং অপ্রয়োজনে আমার স্ত্রীর চাকরি করাটা আমি পছন্দ করিনা। সে করতে চাইলে বাঁধ্য করবো না যে তোমার চাকরী করা যাবেনা, তবে এই ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট থাকতে পারব না। বিশেষ করে এই ঈমানহারা নষ্ট যামানায় আমি নারীদের চাকরি করাটা ভীষন রকম অপছন্দ করি।

হুজুর মাইন্ডেড মানুষরা স্ত্রীর চাকরি করা অপছন্দ করেন, এর শরীয়তীয় অনেক কারণ তো আছে, এরপরে অন্যতম কারণ আমাদের গীরাহ (প্রটেকটিভ জিয়েলাসি) অনেক বেশি।

হজরত উমর (রাঃ) স্ত্রীর মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে যাওয়া অপছন্দ করতেন, কারন তিনি পছন্দ করতেন না তার প্রিয়তমা কে আবৃত অবস্থাতেও কেউ দেখুক। যদিও তিনি নিষেধ করেননি যেহেতু সালাতের ইস্যু।

স্বয়ং রাসুল (সাঃ) স্ত্রী দের ব্যাপারে জিয়েলাস ছিলেন। একবার এক অন্ধ সাহাবী আসলে, সেখানে উম্মে মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) ছিলেন,তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ভেতরে যেতে বললেন। আয়েশা (রাঃ) বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি তো অন্ধ”

রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, “তুমি তো অন্ধ নও”

টাকার কথা যদি বলি তাহলে ,

ধরেন

একটা গার্মেন্টসে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা বেতনে ১০০ জন‌ পুরুষ কাজ করতো। বিপরীতে ১০০ জন নারীকে নিয়ে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাড় করানোর পর মোট শ্রমিক সংখ্যা দাঁড়ালো ২০০ জন। এখন গার্মেন্টস মালিক দ্বিগুণ শ্রমিক দেখে সুযোগ নিয়ে ঘোষণা দিলো ৫ হাজার টাকার বেশি বেতন দিতে পারবে না। যার খুশি কাজ করলে করো, না করলে নাই। এমতাবস্থায় স্বাবলম্বীতার লোভ দেখিয়ে ব্রেইন‌ওয়াশড করা মেয়েরা ভাবলো আমিতো চাকুরী পেয়ে গেছি, রাজি হয়ে গেলো। 

গার্মেন্টস মালিক তো খুশিতে আত্মহারা। যে কাজের বিনিময়ে তাকে জনপ্রতি ১০ হাজার দিতে হতো, তা সে মাত্র ৫ হাজার টাকায় করিয়ে নিতে পারছে।

অন্যদিকে চাকরিহারা পুরুষ শ্রমিকদেরও কাজ না করলে পেটে ভাত যাবে না। শেষপর্যন্ত তারাও পাঁচ হাজার টাকায় কাজ করার জন্য রাজি‌ হতে বাধ্য হতে হয়।

এবার তো গার্মেন্টস মালিক এর খুশিতে হার্টফেল করার মতো অবস্থা। যেখানে ১০ হাজার টাকা একজন শ্রমিককে দিতে হতো সেখানে এখন এক‌ই অর্থে দুইজন শ্রমিক খাটাতে পারছে।

এখন একটু চিন্তা করো?

নারী স্বাবলম্বী হ‌ওয়ার সুবিধাটা কে পেলো?

স্বামী ১০ হাজার টাকা ইনকাম করলে, ঘরে বসেই নারী পুরো টাকাটা পরিবারের স্বার্থে খরচ করতে পারতো। কিন্তু স্ত্রী কর্মক্ষেত্রে পাড়ি জমানোর কারনে ওই এক‌ই পরিমান অর্থ দুইজনকে শ্রম দিয়ে উপার্জন করতে হচ্ছে। মাঝখান থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে পুঁজিবাদীরা। এই দ্বিগুণ লাভ করার প্রক্রিয়াকে অবহ্যত রাখতে তারা যথাযথ ভাবে টিভি-মিডিয়ায় নারীবাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আর ঘুঘু ধরা ফাঁদে আটকে যাওয়া ঘুঘুর মতো নারীরাও না বুঝে তাদের সাথে তাল মিলাচ্ছে।

এই সব কারনেই আমি আমার স্ত্রীর চাকরি করা পছন্দ করব না ।

হুমাইরা এক পলকে আমার কথা গুলো শুনে যাচ্ছিলো ।

হুমাইরা:- আমি জানতাম আপনার কাছে অবশ্যই এর যুক্তি পূর্ণ উত্তর আছে ‌ । তাই আমি বিয়েতে রাজি হয়েগেছি ।( মুচকি হাসি দিয়ে ) 

আমি তো শুনে অবাক হয়ে গেছি। আমি এতোটাই অবাক হয়েছি ,আর চিন্তা করছি , আমার পূরো মুখ দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে ।

আমি:- মানে কি ? আপনি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছেন? 

হুমাইরা:- জি , আর আপনি এতো ঘামছেন কেন ? ভয় পাবেন না আমি চাকরি করবো না , রিজাইন দিয়েছি কালকে । 

আমি হাসার চেষ্টা করলাম ।

হুমাইরা:- আমাকে এখন যেতে হবে , অনেক সময় হয়ে গেছে। 

আমি:- আমার একটু কথা ছিল !

হুমাইরা:-হুম বলেন?

আমি:- “দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়” এইটা কি ?

হুমাইরা:- ওও এইটা আমাদের সংগঠনের “স্লোগান”

আমি:- ওওও আমি কাল আপনাদের সংগঠনের অফিসে গিয়েছিলাম ‘ তো দেখতে পেলাম সব মেয়েরা সর্ট ড্রেস পরে আছে ! কারণ কি?

হুমাইরা:- আধুনিক যুগে এই ধরনের স্মার্ট ড্রেস তো পরবেই। এইটা স্বাধীনতা , তার যা ইচ্ছে তাই  পারবে।

আমি:- “নগ্নতা ছিল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটা

আযাব!

আর আপনারা  এখন এটাকে স্বাধীনতা বলেছেন!”

“দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়” স্লোগানে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? ওরা তো বলছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে …. আসলে কোন দিকে??

একপাক্ষিক আইনের আওতায় নারীর স্বাধীনতা বেশি।

নারীদের ভোগ করার জন্য নারীবাদীদের নারীকে নগ্ন করার চেষ্টা।

সবশেষে একটা কথা: পোষাক খুললেই যদি স্মার্ট হওয়া যায় তাহলে সবথেকে স্মার্ট আমাজনের আদিবাসীরা।

হুমাইরা:- আমি কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা । শুধু এইটা বলবো , আমি সরি এই ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কখনো ভাবিনি । তাই হয়তো আপনার মতো একজন মানুষ কে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। 

আমি কিছু বললাম না,

হুমাইরা:- বিয়ে করবেন আমাকে ?

আমি- কি বলবো , এখন আমার কি বলা উচিৎ? আমি আবারও ঘেমে যাচ্ছি।

হুমাইরা:- কিছু বলছেন না যে?

আমি:- আপনি হয়তো জানেন যে আমাদের বিয়েটা অনেক আগেই মানে আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ঠিক করে রেখেছিল।

হুমাইরা:- এই আপনি এতো ঘেমে যাচ্ছেন কেন? আপনার নাকটা বেশি করে ঘামছে । কোথায় যেনো পড়েছিলাম যে ছেলের নাক বেশি করে ঘামে , ঐ ছেলে বউ পাগল হয়।☺️

আমি চেয়ে আছি হুমাইরার দিকে কিছু বলতে পারছি না । 

হুমাইরা:- এখন যাই আর দেরি করা ঠিক হবে না। ভালো থাকবেন ।

হুমাইরা চলে গেল , আমি নাকে হাত দিয়ে দেখি সত্যিই ।

চলবে………


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *