গল্প:- “অধিকার”
পর্ব:-৫
Writer:-Hassab bin Ahmed
দেখতে দেখতে বিয়ের ১০ দিন চলে গেলো , সত্যি বলতে হুমাইরা আর আমার খুনসুটি দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় দিন গুলো কিভাবে পার হলো বুঝতেও পারিনি।
হুমায়রা খাটে বসে আছে।
আমি হুমাইরার হাতে বড় একটা প্যাকেট ধরিয়ে বলল,
এটা আজকে রাতের জন্য সারপ্রাইজ 🎁
হুমায়রা প্যাকেটা খুলে দেখলো কোসমেটিক, জুয়েলারী, নীল কালারের একটা শাড়ী ””
হুমায়রা -শাড়ীটা দেখতে তো বেশ সুন্দর” ! কিন্তু শাড়ীটা অনেক পাতলা ,
আমি: কেন “”””? তোমার পছন্দ হয় নি””?
হুমায়রা : শাড়ী পছন্দ না পছন্দের ব্যাপার না”! এ শাড়ী পড়ে আমি কোথাও বের হবো কি করে??”‘!
আমি: আপনি কি মনে করছেন”’”? এই শাড়ী পড়ে আপনাকে আমি বাহিরে বের হতে দিবো””! আমার বউ কি জনগনের সম্পত্তি নাকি “”? এইটা শুধু আমার সামনে পড়বেন !!
যাও পাখি তারাতাড়ি তৈরি হয়ে আসো
হুমায়রা: এখুনি??
আমি: হুম এখুনি ,
হুমায়রা কিছু সময় পর তৈরি হয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো!! আমার তো হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা ,এ আমি কি দেখেছি ‘ আমার স্বপ্নের নীল প্রজাপতি’।
হালকা মেকাপ করে চোখে টানা টানা করে কাজল দিয়েছে ” ঠোঁটে হালকা লিপগ্লোস ।আর চুলটা কিছু সামনের দিকে আর কিছু পিছনে ঝুলে আছে। নীল শাড়ি, নীল ব্লাউজ ,
হুমায়রা- কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলেন !!
আমি- আমি ঠিক আছি 😊
তারপর আমি হুমাইরা কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে বক্স থেকে ফুলের তৈরী গহনা বের করে (গহনাগুলো রজনীগন্ধ্যা আর গোলাপ দিয়ে তৈরী””।🌹🌹) এক এক করে সব গুলো গহনা হুমাইরা কে পড়িয়ে দিলাম””। কানে, গলায়, হাতে, মাথায়, বাজুতে। চুলের বেনির মাঝখানে মাঝখানে ঝারবেরা ফুল আর বেলি ফুলের গাজরা”””🌹🌹🌹🌹
তারপর আমি হুমাইরা কে কলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম
হুমায়রা: এই কি করছেন পারে যাবো তো,
আমি: পড়বে না , তোমার যা শরীরে তামার মতো দুই জন কে কলে নিতে পারবো!!
হুমায়রা: কোথায় যাচ্ছেন ?
আমি : ছাদে
আমাদের ছাদের এক ছাইডে একটি খাট আছে , ঐ খাটে একটি বিছানার চাদর বিছিয়ে ঐ খানে হুমাইরা কে নিয়ে বসিয়ে দিলাম ।
আমি: তো প্রিওতমা এখন বলেন কিরকম লাগছে?
হুমায়রা: আমার এখানে অসম্ভব ভাল লাগছে”‘.! সত্যিই মন মুগ্ধকর এক পরিবেশ।
শরৎ এর চাঁদনী রাত।
বাহিরের ঝিরিঝিরি হৃদয় কাঁপন তোলা দক্ষিনের ঠান্ডা হাওয়া ।
মাঝে মাঝে ঝিঝিপোঁকার ডাক।
আর সবচেয়ে ভাল লাগছে আপনার ব্যবহার করা পাগল করার মত সুগন্ধ। যা আমার নাকে ভেসে আসছে। এটা আমার লাইফের শ্রেষ্ঠ চাঁদনী রাত।
আমি আরো একটি পেকেট দিয়ে বললাম এই নাও এইটাও তোমার জন্য।
হুমায়রা : আর কত সারপ্রাইজ দিবেন “”? কি আছে এখানে?
আমি : স্ত্রীকে মাঝে মাঝে উপহার দেয়া এটা নবীর সুন্নাহ্। এখানে তোমার পছন্দের কিছু চকলেট ।
হুমায়রা : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ , এতো সুন্দর রাত আমাকে উপহার দেয়ার জন্য।
হুমায়রা আমার বুকের উপর শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখছে
হুমায়রা- আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর তাইনা ??
আমি : হুম , কিন্তু আমার চাঁদের থেকে অসুন্দর , আমার চাঁদ পৃথিবীর সব কিছুর থেকে সতো গুন বেশি সুন্দর ।
হুমায়রা: আচ্ছা তাই নাকি ? তো কোথায় আপনার চাঁদ , আমিও একটু দেখি !!😏
আমি: আমার চাঁদ আমার বুকের উপর শুয়ে আছে ।
হুমায়রা: আপনি না অনেক বেশি বেশি বলেন ( লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বললো)
হুমায়রা: আচ্ছা একটি প্রশ্ন করি রাগ করনা তো??
আমি: আরে না , বলো??
হুমায়রা: নারীবাদীরা তো মেয়েদের সন্মানের কথা বলে । তাহলে আপনি এতো বিরোধীতা করেন কেন??
আমি : ইসলাম নারীদের যে পরিমান সন্মান দিয়েছে , পৃথিবীর কোন ধর্মেও এতো সন্মান মেয়েদের দেই নি , এমন কি তোমাদের নারীবাদীরা ও , ইসলাম নারীদের সন্মান দিয়েছে তার অনেক প্রমান আছে ,আজ তোমাকে শুধু একটি বলি
★মহানবী সা. বলেন,
যার ঘরে কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে; সেই বাবা কষ্ট দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং
পুত্র সন্তানকে প্রাধান্যও দেয়নি, এমন বাবাকে আল্লাহতায়ালা শুধু মেয়ের কারণে জান্নাত প্রদান করবেন।
__________[মুসনাদে আহমদ : ১/২২৩].
হুমায়রা : সুবহানাল্লাহ , সত্যি এর থেকে বড়ো সন্মান আর হয়না।
আমি: আচ্ছা তুমি কি জানো নারীবাদী তৈরি করার উদ্দেশ্যে কি??
হুমায়রা: না তো ?
আমি: আচ্ছা , আমি বলছি ,মন দিয়ে শোন , “নারীবাদ তৈরী করার একটি কারণ হলো পর্ন ইন্ডাস্ট্রীর অভিনেত্রীর যোগান দেওয়ার জন্য।” পর্ন ইস্যুতে নারীবাদ দুই ভাগে বিভক্ত। একটা ভাগ হলো রেডিকাল ফেমিনিজম, অন্য অর্থে সেক্স-নেগেটিভ ফেমিনিজম। অপরটি লিবারেল ফেমিনিজম বা সেক্স-পজেটিভ ফেমিনিজম।
সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। মূলত এটি যাত্রা শুরু করে রেডিকাল ফেমিনিজমের বিরোধীতা করে। সেক্স-পজিটিভ ফেমিনিজমের কী-আইডিয়া হলো, নারীর সেক্সুয়াল ফ্রীডম রয়েছে। আর সেই ফ্রীডমগুলোর তালিকার একদম শীর্ষে রয়েছে পর্নগ্রাফি। অর্থাৎ রেডিকাল ফেমিনিজম যেসকল ব্যাপারগুলোর বিরোধীতা করে আসছিলো, সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজম তার সবগুলোর বৈধতা দেয়। যেমন, নারীর জন্য পর্ন দেখা, পর্নে অভিনয় করা। এমনকি লক্ষণীয় যে, যে ক’জন নারীবাদির হাত ধরে সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের যাত্রা শুরু, তাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই পর্ন অভিনেত্রী ছিলেন (উইকিপিডিয়া দেখুন) ।
সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের প্রথম উল্লেখযোগ্য অর্জন বলা যায় ১৯৮২ সালের একটি ঘটনাকে। সেটা ছিলো নারীবাদিদের দীর্ঘদিনের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ‘মিস ম্যাগাজিনে’ একটি নগ্ন বিজ্ঞাপন ছাপানোকে কেন্দ্র করে। রেডিকাল ফেমিনিস্টদের আপত্তি ছিল যে, এর দ্বারা নারীকে অব্জেক্টিফাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্ত মিডিয়া, কর্পোরেশন হাউজগুলো সেক্স পজিটিভ ফেমিনিস্টদের পাশে এসে দাঁড়ায়। অবশেষে কয়েক মাসের দেনদরবার শেষে বিজ্ঞাপনটি ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। আর এভাবেই লিবারেল ফেমিনিস্টরা একটা বিজয় অর্জন করে।
এবার একটু আশ্চর্য হবে।
পর্নগ্রাফিতে নারীদের চরম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কোনো নিরাপত্তা নেই, পর্ন ভিডিওর প্রায় সব ডিরেক্টর পুরুষ- এসব নিয়ে নারীবাদিদের বিস্তর অভিযোগ ছিলো। তো এজন্য লিবারেল ফেমিনিস্টরা সিদ্ধান্ত নিলো কিছু করবে। তো সে সিদ্ধান্ত কি ছিলো, পর্নগ্রাফি বন্ধে কাজ করবে?
না!
বরং নিজেরা পর্ন বানাবে! মানে ব্যাপারটা এরকম, তোমার ঘর কেউ পুড়িয়ে দিচ্ছে। তো তুমি বললে, তোমার ঘরপোড়ানো অমানবিক, তাই আমি নিজেই আমার মত করে আমার ঘর পোড়াবো। মানে আল্টিমেটলি যে তোমার নিজের ঘরই পুড়ছে সেটা বোঝার মতো আইকিউ তোমার নেই। অথচ নারীকে কাপড় খুলতে দেখে পুরুষ কবে অখুশি ছিলো? পরিসংখ্যান ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট করে দেয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত লেসবিয়ান পর্নের ৬৪% দর্শক ছিলো পুরুষ।
ফেমিনিস্ট পর্নের ইতিহাস প্রায় ত্রিশ বছরের, তবে গত ৮-১০ বছরে সবচেয়ে বেশী অ্যাটেনশন পেয়েছে। লিবারেল ফেমিনিস্টরা এর পিছনে রয়েছে।
ফেমিনিস্ট পর্নের অধিকাংশই লেসবিয়ান পর্ন, এছাড়া মারাত্মক পুরুষ নির্যাতনেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কন্টেন্ট রয়েছে। এর বাইরে প্রায় সব লেসবিয়ান পর্নকেই তারা ফেমিনিস্ট পর্ন বলে ধরে নেয়।
যারা শুরু করেছিলেন তাদের বক্তব্য ছিল, মেল ডমিনেটেড মেইন্সট্রিম পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে নারীকে অব্জেক্টিফাই করা হয়, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সব বর্নের, সব আকারের নারীদের জন্য। পর্ন, যা নারীর ক্ষমতায়ন করবে।
পর্ন দেখা নিয়ে বাংলাদেশের একটি নারীবাদি ব্লগে একটা লেখা আছে, “যেসব নারীরা পর্ন দেখেন না, চটি পড়েন না তারা সতী সাজার চেষ্টা করছেন, আর সতী মানে ভন্ড।”
এখন তুমি বলো এই নারীবাদীদের আমি কিভাবে সন্মান করবো??
হুমায়রা : ছি ছি ছি, আস্তাগফিরুল্লাহ, ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে আমি কতো বড় অন্ধকার জগতে ছিলাম । 😥
আমি: আচ্ছা বাদ দাও তো এতো সুন্দর রাত , এইগুলো বলে নষ্ট করার কি মানে আছে?? আচ্ছা ময়না পাখি তোমার চোখ দুটো বন্ধ করো তো!
হুমায়রা: কেন??
আমি: যা বলছি তাই করো???
হুমায়রা চোখ বন্ধ করে নিলো , আমি নূপুর পড়িয়ে দেয়ার জন্যে হুমাইরার পা আমার হাত দিয়ে ধরলাম , হুমাইরা সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে পা সরিয়ে নিলো।
হুমায়রা: এই আপনি কি করেন??
আমি: নূপুর পড়িয়ে দেই!!
হুমায়রা: আপনি আমার স্বামী হয়ে আমার পা ধরবেন এটা কি করে হয়।
আমি: তোমার মনে আছে, কদিন দিন আগে আমার পা কেটে গিয়েছিলো আর তুমি আমার পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিলে । তুমি তো আমার অর্ধেক , আমার প্রিয়তমা, আমার মহারানী, তুমি যদি আমার পা ধরতে পারো । আমি কেন পারবো না??
হুমায়রা: তারপরও…
আমি: আচ্ছা তোমাকে একটি হাদিস বলি -সাফিয়্যা (রা.) ছিলেন, নবীজির অন্যতম স্ত্রী। তিনি কিছুটা খাটো ছিলেন, ফলে উটের পীঠে আরোহন করতে কষ্ট হতো। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাহায্য করার জন্যে নিজের হাঁটু পেতে দিতেন। সাফিয়্যা (রা.) সেই হাঁটুতে পা রেখে উটের হাওদায় ওঠে বসতেন [সহিহ বুখারি: ৪২১১]
তাই চুপচাপ আমাকে আমার কাজ করতে দাও
আমি নিজের হাতে হুমায়রার পায়ে নূপুর পড়িয়ে দিলাম। উপরে চেয়ে দেখি । হুমায়রা কান্না করছে ।
আমি: এই আবার কি হলো, কাঁদো কেন? আমি পড়িয়ে দিয়েছি তা কি তোমার পছন্দ হয় নি??
হুমায়রা: অনেক পছন্দ হয়েছে , আমি সব সময় চাইতাম আমার স্বামী আমাকে এইভাবে আদর করে আগলে রাখুক।
আমি: তাহলে কাঁদো কেন??
হুমায়রা: ইসলাম একজন নারীকে কোত সন্মান দিয়েছে , সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর হাঁটুতে পা রাখতে দিয়েছে একজন মেয়েকে, কিন্তু আমি ইসলাম সম্পর্কে কতো ভুল জানতাম ।
আমি উঠে হুমাইরা কে জরিয়ে ধরলাম, হুমাইরা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো ।
আমি: অনেক হয়েছে কান্না বন্ধ করো সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। চলো অনেক রাত হয়েছে।
হুমায়রা: আর একটু থাকি ।
আমি: না , তুমি কি ভুলে গেছো?? কাল আমাকে কি বলেছিলে।
হুমায়রা: কি???
আমি: মনে নেই , কাল রাতে বলেছিলে ” আজ আমরা দুষ্টুমি করবো🙂”
হুমায়রা: ছি , অসভ্য ,সব সময় কি কি বলেন ,
আমি: ঐ সব বলে লাভ নেই ,চলো
হুমায়রা: আজ না কাল 🙈🙊
আমি: হবে না কাল কাল , বলতে বলতে ১০ দিন নিয়েছো।
হুমায়রাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেলাম । তারপর… তারপর আর বলা যাবে না।
….. সমাপ্ত…..
আজ অন্তত আপনাদের মন্তব্য আশা করছি
( বি:দ্র: – অনুমতি না নিয়ে কপি করা নিষেধ। অনেকেই আমার গল্প নিজের নামে পোস্ট করেন , ইসলামে এইটা সম্পূর্ন হারাম, ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। )
#অধিকার
#hassab
#hassab_irsf
#গল্প
Leave a Reply