Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 17
সবাই মিলে কলেজ মাঠের একপাশে বসলাম,
রিপন : এখন বলতো তোর বিয়েটা কিভাবে হলো?
(রিপনের কথা শুনে সবাই অবাক)
মশিউর, বেলাল, নেহা ওরা সবাই বলে উঠলো কিসের বিয়ে কার বিয়ে,আর কার সাথে বিয়ে?
রিপন : অর্ণব বিয়ে করেছে দুই মাস আগে। আমাকে সেদিন ভুল করে সত্যি কথাটা বলে দিছিলো। কিন্তু কিভাবে কি হয়েছে কিছুই বলেনি। এই ঘটনাটা বলার জন্যই আজকে সবাইকে ডাকছে।
নেগলা :-তুই সত্যি কি বিয়া করছিস?
অর্ণব : হুম আমার বিয়ে হয়েছে দুই মাস আগে।
নেহা : ইস। আমি চাইছিলাম তোর বিয়েতে কত মজা করবো। আর গাধাটা না জানায় বিয়ে করে ফেললো। লাথ মারতে ইচ্ছা করতেছে।
অর্ণব : হাহা। আমি এখানে বিয়ে করলেও সেই সুযোগটা পাইতি না। কারণ আমি বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দিতাম। কেননা,
হাদিসে আছে,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,”সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।”
-(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৫২৯)💕
পরে দাওয়াত করতাম। মানে করবো। বুঝলি?
নেহা : হুম। সব কিপ্টামি।
মশিউর : কিপ্টামি না এটা নবীজির সুন্নত।
বেলাল : যাক হাদিসটা জানে ভালোই হইছে আমার বাপের অনেক টাকা বাঁচবে।
নেহা : এইতো আরেকটা কিপ্টা।
(সবাই হেসে উঠলো)
নেগলা:- এই তোদের কথাবার্তা থামাবি? ঘটনাটা তো শুনতে দে।
রিপন : অর্ণব তুই কিভাবে কি হলো ঘটনাটা শুরু কর।
নেহা : রিপন আপনি কিভাবে বিয়েটা করবেন তা একটু শুনি। আগেই বলে রাখলাম কিপ্টামি কথাবার্তা বললে কিন্তু😡
(কোন চিপায় ফেলায় দিলো? নেহাকে যদি বলি আমিও ঐভাবেই বিয়ে করবো ওকে। তাহলে নির্ঘাত রাগে আগুন হয়ে যাবে)
রিপন : বি…য়ে তো অর্ণ..বে..র মতোই হবে..
নেহা : কিইইইই?😡
তাড়াতাড়ি করে এক নিশ্বাসে বললাম
রিপন : কিন্তু পরের দিন সবার জন্য বড় করে অনুষ্ঠান দিবো!
নেহা : তাহলে ঠিক আছে।😑
মনে মনে,
রিপন : যাক বাবা বাঁচা গেলো।
বেলাল : অর্ণব ঘটনাটা বলতে শুরু কর।
অর্ণব : থাম তোরা। তোদের কি মনে আছে আমি দুই মাস আগে রাজশাহী গেছিলাম?
একলাস : হুম মনে আছে।
(গল্পটি শুরু…)
রাজশাহীতে আমি সাত দিনের জন্য আছি। এখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাজীবের বাড়িতে উঠছি। রাজিবের সাথে ঘুরতে ঘুরতে পাঁচ দিন কিভাবে যে চলে গেলো বুঝতেও পারলাম না।
খুব সকালবেলা পদ্মা নদীর পাড়ে একা ঘুরতে গেলাম। উফফ! সে কি দৃশ্য। নদীটা বিশাল। যত দূর চোখ যাচ্ছে তত দূর পানি। নদীটা আসলেই অনেক বড় তাই ওপাড় দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে দূর দিগন্তে নদী আর আকাশ একসাথে মিলিত হয়েছে। নদীর পাড়টা দেখতে আরো সুন্দর। পাশেই নদীর পাশে সান বাধানো ছিলো। সানটা বড় হলেও নদীর বিশালতার কাছে ছোট লাগতেছে। সেখানে একজন বয়স্ক লোক বসে আকাশ দেখতেছেন। ইনার আকাশ দেখা দেখে নবীজি (সা) এর কথা মনে পড়ে গেলো। আগে নবীজি (সা) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন। এতে ইহুদীরা খুবই খুশি হত। নবীজি (সা) মনের একান্ত ইচ্ছা ছিলো ইব্রাহীম (আঃ) এর কিবলাহ তথা কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা। এ জন্য তিনি মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাতেন এবং মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করতেন। তখন
মহান আল্লাহ নাযিল করেন,
“নিশ্চয়ই আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করেছি।”
-(২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১৪৪)💕
দেখলাম সামনেই পাহাড়ের মতো উঁচু ঢিবি। সেখানে উঠলাম। এখান থেকে নদীটাকে দেখতে আরো সুন্দর লাগতেছে। দেখলাম পাশেই সারি সারি কাঁশবন। কাঁশফুল বাতাসে যখন দুলতেছিলো তখন সত্যিই অসাধারণ লাগতেছিলো।
ঢিবি থেকে নেমে হাঁটতাছি হঠাৎ কিসের যেন শব্দ পেলাম আর কিছু মেয়ের কন্ঠ। পিছনে ঘুরে দেখলাম চারটা মেয়ে আসতেছে। তার মধ্যে তিনজন বোরখা পড়া ও আরেকজন সিম্পল জামা-পায়জামা আর ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা। বোরখা পড়া দুই জন শুধু হিজাব পড়লেও বাকি একজন সম্পুর্নভাবে পর্দা করেছে। বাকি তিনজনকে না দেখলেও ইনাকে খুব ভালোভাবেই দেখলাম। আমি রাস্তার যে দিকে ছিলাম সেদিক থেকে প্রথম মেয়েটা ছিলো উনি।
সম্পুর্ন কালো বোরখা, মাথায় কালো হিজাব, মুখে কালো নিকাব, হাতে কালো মুজা আর পায়ে মুজাসহ জুতা। শুধু চোখগুলাই শুধু দেখতে পেলাম। কি মায়াবি সে চোখ জোড়া।
আমি কখনো কোন মেয়েকে এভাবে লক্ষ্য করিনি। এই প্রথম। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমি একটা মেয়েকে দেখিতিছি। যখন হুস হলো তখন চোখ নিচে নামায় পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় থাকলাম। আল্লাহ মাফ করুক। তাও ভালো মেয়েটা সম্পুর্ন পর্দা করে ছিলো। আসলেই পর্দা শুধু মেয়েদের পাপ থেকেই রক্ষা করে না ছেলেদেরকেও চোখের যেনা থেকেও রক্ষা করে।
মেয়ে চারজন পাশ দিয়ে গেলো। আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ পর্দা করা মেয়েটা বোরখা না পড়া মেয়েটাকে অনেক কিছুই বললো। আমার পাশ দিয়েই উনি গেছিলেন তাই ভালোভাবেই শুনতে পাইলাম উনি কি বললেন।
অপরিচিতা মেয়ে : এই তোকে বললাম না যে তুই পর্দা করে আসবি। পর্দা করা ফরয। তোকে এটা করতেই হবে। কেননা
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
-(সূরা নুর 31)💕
বুঝলি?
এতটুকুই শুনতে পেলাম। আমি মেয়েটার কথা গুলা শুনে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। এই যুগেও এরকম মেয়ে আছে যে কুরআনের রেফারেন্স বা দলিল টেনে কথা বলে। বাব্বাহ! এবার বোধহয় আমার আম্মুর স্বপ্ন পূরণ হবে।
আমি মেয়েটার যাওয়ার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখতেছি। দেখলাম শুধু এক পায়ে নূপুর। বাম পায়ে। নূপুরের আওয়াজটা খুব মৃদু কিন্তু আমার কানে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করতেছিলো। আমি এই আওয়াজ কখনো ভুলবোনা।
আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। যাওয়ার দৃশ্য, নুপুরের আওয়াজ আর আমার মনের উথাল-পাতাল অবস্থা আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গেছিলো। যা এই জগৎ থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন। অনেক্ষণ পর আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। দেখলাম ওদের টিকিটাও দেখা যাচ্ছে না। ধুর মিস করলাম অন্ততপক্ষে পিছু নিয়ে বাড়িটাতো দেখতে হইতো। যদিও কখনো এই কাজ করিনি। আর পাওয়া যায় এই মেয়েকে?! নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো।
আমি একা একা হাঁটছি আর মেয়েটার কথা ভাবতেছি। নুপুরের আর মেয়েটার কথার আওয়াজের মৃদু মৃদু রেশ এখনো আমার কানে বাজতেছে। আশেপাশে অনেক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। জানতাম পাবো না।
আমার বারবার মনে হচ্ছে এই মেয়ের জন্যই আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি মনে মনে এটাই দোয়া করতেছিলাম,
“হে আল্লাহ! এই মেয়ে যদি আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণময় হয় তাহলে আমাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেও।”
কেননা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া চাওয়া নিয়ে,
হাদিসে এসেছে,
রাসুল (সা) বলেছেন, “আল্লাহ তোমার দুয়ার জবাব দেবেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আল্লাহ’কে ডাকো। তবে সেই সাথে এটাও জেনে রাখো যে, গাফেল অন্তরের দুয়ার জবাব দেওয়া হয় না।”
-[তিরমিযী, ৩৪৭৯]💕
আমার চাওয়াটা পবিত্র। কেননা আমি তাকে বিয়ের জন্য চাচ্ছি। আর আল্লাহর উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা তো শয়তানের দোয়াও কবুল করেছেন।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“শয়তান বলেছিলোঃ ‘আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।’ আর আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ ‘অবকাশ দেওয়া হলো।”
-(সূরাহ আল আরাফ, আয়াত : ১৪-১৫)💕
আমি তো শয়তানের থেকে নিকৃষ্ট নই।
তারপর সারাদিনের বাকি নামাজগুলাতে দোয়া করলাম। বিশেষভাবে আজান ও ইকামতের মাঝখানে একাগ্রচিত্তে দোয়া করলাম। কেননা
হাদিসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয়না।”
-(আবু দাউদ ৫২১, তিরমিজি ২১২)💕
পুরো দিন রাজিবকে নিয়ে তন্ন তন্ন করে খুজছি। কিন্তু সেদিন আর পরের দিন মানে সপ্তম দিনেও ” উনা” -র কোন খোঁজ পেলাম না।
(চলবে…)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply