Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 28
আমাকে চাচার ছেলেরা নিয়ে গেলো অন্য রুমে। রুমে যায় আমি পড়ে গেলাম বিপদে। তানহার তো অসুবিধা হবে না। কারণ অন্য জনার শাড়ি ও পরতেই পারে। আর মেয়েদের তো শাড়ির গোডাউন থাকে। উনার মেয়েদের গোডাউনে দুএকটা একদম নতুন শাড়ি পাওয়াও যাবে। কিন্তু আমি তো আর মানুষের ব্যবহার করা জিনিস পড়তে পারবো না। এখন উপায়! পরে শুনলাম বড় মেয়েটা ও তার জামাই আসার সময় সবার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসছে। তার মধ্যে শাড়ি ও পাঞ্জাবীও ছিলো। কিন্তু আমার বিয়ে আর আমি ধার করা পোষাক পড়বো? এটা আত্মসম্মানের ব্যাপার।
আমি যায়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে চার্জ অবস্থায় আব্বুকে বললাম যেভাবে পারো আধা ঘন্টার মধ্যে আমার বিকাশে বিশ হাজার টাকা দিতে।
আব্বু : তুই ঠিক আছিস তো বাবা?
অর্ণব : জি আব্বু। কিন্তু টাকাটা খুব দরকার।
আব্বু : ঠিক আছে আমি এখনই যাচ্ছি। আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
আমি একটু চিন্তায় ছিলাম এতো রাতে বিকাশের দোকান খুলা থাকবে কি না। কিন্তু পনেরো মিনিটের মধ্যেই আব্বু টাকা পাঠাইলো। তাও আবার ত্রিশ হাজার টাকা। যাক ভালোই হলো কাজে আসবে। এজন্য আব্বুকে এতোটা ভালো লাগে।
[হ্যাঁ😍]
আরেকটা চিন্তা ছিলো এদের কারো বিকাশ আছে কি না। স্বস্তি পাইলাম শুনে যে এদের অনেকেরই বিকাশ আছে। তাই সব মিলায় বারো হাজার টাকা ওদের বিকাশ করে দিলাম। ওরা মানা করতেছিলো কিন্তু আমি তো দিবোই। জোর করে দিলাম। উফফ! এখন শান্তি পাচ্ছি। নইলে সারাজীবনের জন্য কেলেংকারী হয়ে থাকতো। বিয়ে করছি মানুষের জিনিস দিয়ে। ভাবা যায় এগুলা।
পাঞ্জাবি এবং পায়জামা পরলাম। একটু পর অন্য রুমে যায়ে দেখি তানহা বসে আছে। আমি সামনে যায়ে বসলাম। শাড়িটা কালো, বিয়ের শাড়ি না। আসলে ওরাতো আর বিয়ের শাড়ি কিনবে না পড়ার জন্য। তানহা ঘোমটা দিয়ে রাখছে যতটা পারে।
কাজি সাহেব মানে চাচার ভাই আসছেন। আমাদের বিয়ের কাজ শুরু করার আগে,
কাজিব সাহেব : কত টাকা দেনমোহর ধার্য করবো?
তানহা চুপ করে আছে। আমি জানি ও বলবে না বললেও কম বলবে। তাই আমি একটা Amount বললাম। বাকিগুলাও আমিই বললাম।
তারপর থেকে আমি সম্পুর্নভাবে ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমি তানহার দিকে দেখে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না উনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর তোমরা যা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহ্র নেয়ামতের গণনা করো, তবে তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতিমাত্রায় যালিম, ও অকৃতজ্ঞ।”
-[সূরা ইবরাহীম; ১৪ : ৩৪]💕
তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে কৃতজ্ঞতা জানাইলাম। এই সেই তানহা যার দ্বীনি জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। যার প্রতি আমি প্রতিটা মুহুর্তে আরো বেশি পরিমানে দূর্বল হচ্ছিলাম। আজ তার সাথে আমার বিয়ে। কিছুক্ষণ পর তা সম্পন্ন হয়েও যাবে। পুরো ঘটনা ভাবতে আমাকে অবাক লাগতেছে। কিভাবে কি হলো! রাগ,অভিমান,ঝগড়া,প্রোপজ,ভালোবাসা, স্মরণীয় মূহুর্ত ইত্যাদি কি ছিলনা এই শেষ কয়েক ঘন্টায়। এটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বিয়ে। সাতটায় বিয়ের প্রস্তাব আর দুইটায় বিয়ে। আমাকে এখনো সবকিছু স্বপ্নই মনে হচ্ছে।
তারপর কাজী সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করলেন। বিয়ে পড়ানো শেষ হলে কবুল বলতে বললেন, আমি বললাম। তানহাও বললো। এভাবে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। পুরোটা সময় তানহার দিকে তাকায়ে ঘোরের মধ্যেই বিয়ে সম্পন্ন করছি।
আমি ছাদের উপর একা দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়িতে আড়াইটা বাজে। তানহাকে ওরা আমাদের জন্য বরাদ্দ করা রুমে নিয়ে গেছে। আমি ওদের কাছ থেকে একটু সময় চায়ে নিয়ে ছাদে আসলাম। ছাদে দাঁড়িয়ে ভাবতেছি কি হলো এটা!
মনে পড়লো রাজিবকে কল দিতে হবে। আমি ওকে আমার সব কথা বলি। আর এটাতো ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজিবকে কল দিতেই ও রিসিভ করলো,
রাজিব : আসসালাম অলাইকুম। কিরে এতো রাতে?
অর্ণব : হুম। আর শুন ঐ মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
রাজীব : কোন মেয়েটা?
অর্ণব : আরে যেই মেয়েটার উপর রাগে ছিলাম আর যার বাড়ি খুঁজতে যাচ্ছিলাম।
রাজিব : হুদাই! এখন তোর মজা করার সময়? এতো রাতে?
অর্ণব : হ্যাঁ রে সত্যি কথা!
রাজিব : কি? কখন? কিভাবে? কোথায় তুই?
অর্ণব : পুরা ঘটনা পরে বলবো। রোমাঞ্চকর কাহিনী। এখন শুধু বিয়ের ঘটনাটা শুন।
তারপর শুধু বিয়ে কিভাবে হইলো তা বললাম।
রাজিব : যাক আমি প্রচুর খুশি হইছি। আমি চাচ্ছিলাম যে ওর সাথেই যেনো তোর বিয়েটা হয়।
অর্ণব : হুম তোর দোয়া কবুল হইছে। হাহা।
রাজিব : আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুই ঐ মেয়েকেই বিয়ে করছিস।
অর্ণব : আমারো😆… আচ্ছা শুন। বিয়ের বিবাহের শর্ত তো চারটি।
১. পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন।
২.উভয়ের সম্মতি।
-(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬)💕
৩. মেয়ের ওলী থাকা
-(আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩১৩০)💕
৪. দুজন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮)💕
তাই না?
রাজীব : হুম। আর বিয়ের রুকন দুটি।
১.ইজাব বা প্রস্তাবনা ও
২. কবুল বা গ্রহন
-(সূরা নিসা ১৯)💕
অর্ণব : হুম! আর
হাদিস অনুসারে,
উক্ত শর্তাবলীর কোন একটি পূরণ না হলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। উল্লেখ্য যে, যে মেয়ের ওলী নেই, তার ওলী হবেন সরকার।
-(আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১)💕
আর অন্য বর্ণনায়,
পাত্রীর জন্য তার অলী বা অভিভাবক জরুরী। বিনা অলীতে বিবাহ বাতিল।
-(আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৩৯,১৮৪০নং)💕
রাজীব : ওলী না ছাড়া বিয়ে বাতিল এই বিষয়টাতে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতোবিরোধ আছে। এ ব্যাপারে পরে আসতেছি। তবে সাক্ষী না ছাড়া বিয়ে বাতিল। তার আগে শুন,
এই ওলী হবে সাবালক, সুস্থমস্তিষ্ক ও সুবোধসম্পন্ন সচেতন মুসলিম পুরুষ। যেমন পাত্রীর পিতা, তা না হলে দাদু, না হলে ছেলে বা পোতা, না হলে সহোদর ভাই, না হলে বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে আপন চাচা, নচেৎ পিতার বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে চাচাতো ভাই অনুরূপ নিকটাত্মীয়।
সুতরাং বৈপিত্রেয় ভাই, ভাইপো, নানা, মামা অলী হতে পারে না। অনুরূপ মা বা অন্য কোন মহিলার অভিভাবকত্বে বা আদেশক্রমে বিবাহ হবে না।
- (আয-যিওয়াজ, ইবনে উসাইমীন ১৬ পৃঃ)💕
যেমন, নিকটের ওলী থাকতে দূরের ওলীর; যেমন বাপ থাকতে দাদুর বা দাদু থাকতে ভাইয়ের অভিভাবকত্বে নারীর বিবাহ হয় না।
অনুরূপ পালিতা বাপ কোন ওলীই নয়। যার কোন অলী নেই তার অলী হবে কাজী।
-(মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৫)💕
বুঝলি?
অর্ণব : হুম এবার বুঝছি। এজন্যই তোর ভাবীর ওলী হয়েছিলো কাজী সাহেব নিজে।
রাজীব : হ্যাঁ। আরেকটা বিষয়,
বাপ নাস্তিক বা কবরপূজারী হলে মেয়ের ওলী হতে পারে না।
-(মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৫)💕
অর্ণব : ওহ!
রাজীব : আর,
অভিভাবক ছাড়া নারীর বিয়ে হয় না। যেহেতু পুরুষের ব্যাপারে তার মোটেই অভিজ্ঞতা থাকে না। আবেগ ও বিহ্বলতায় স্বামী গ্রহণে ভুল করাটাই তার স্বাভাবিক, তাই পুরুষ অভিভাবক জরুরী। তবে অবৈধ অভিভাবকত্ব কারো চলবে না।
-(সুলূকুল মারআতিল মুসলিমাহ, সাইয়িদী মুহাম্মদ শানক্বীত্বী ৭০পৃঃ)💕
আবার ওলী বা অভিভাবদেরও দায়িত্ব আছে। তারা সাধ্যমত সুপাত্র ও যোগ্য স্বামী নির্বাচন ছাড়া খেয়াল-খুশী মত যার-তার সাথে মেয়ের বিবাহ দিতে পারে না। যেহেতু অভিভাবকত্ব একটি বড় আমানত। যা নিজের স্বার্থে যেখানে খুশী সেখানে প্রয়োগ করতে বা নিজের কাছে ভরে রাখতে পারে না। যথাস্থানে তা পৌঁছে দেওয়া ফরয।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও রসূলের খেয়ানত করো না এবং তোমাদের (গচ্ছিত) আমানতেরও নয়।’’
-(সূরা আল-আনফাল ৮ : ২৭)💕
অপর এক আয়াতে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানত তার যথার্থ মালিককে প্রত্যর্পণ কর।”
-(সূরা অন-নিসা ৪ : ৫৮)💕
সুতরাং যেমন অপাত্রে কন্যাদান হারাম। অনুরূপ সুপাত্র পাওয়া সত্ত্বেও কন্যাদান না করাও হারাম। কন্যার সম্মতি সত্ত্বেও নিজস্ব স্বার্থে বিবাহ না দেওয়া অভিভাবকের অবৈধ কর্তৃত্ব। ওলী এমন বিবাহে বাধা দিলে পরবর্তী ওলী বিবাহ দেবে। নচেৎ বিচার-বিবেচনার পর কাজী তার বিবাহের ভার নেবেন।
-(সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৯নং)💕
অর্ণব : হুম। হাদিসে এসেছে ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না,
হাদিসে আছে,
আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রসূল (সাঃ) বলেছেন : ”অভিভাবক ছাড়া কোন বিয়েই হবে না”।
-[হাদীসটি আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্, আহমাদ (১৯০২৪, ১৯২৪৭) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটিও সহীহ্, দেখুন ”সহীহ্ আবী দাঊদ (২০৮৫), ”সহীহ্ তিরমিযী” (১১০১), ”সহীহ্ ইবনু মাজাহ্” (১৮৮১), ”ইরউয়াউল গালীল” (১৮৩৯), ”সহীহ্ জামে’ইস সাগীর” (৭৫৫৫), ”মিশকাত” তাহকীক্ব আলবানী (৩১৩০)। হাদীসটিকে ইবনু হিব্বান এবং হাকিমও সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন]💕
অন্য হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ), ইমরান ইবনু হুসায়েন (রাঃ) ও আনাস (রাঃ)ও বর্ণনা করেছেন,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন : রসূল (সাঃ) বলেছেন : ”কোন নারী কোন নারীর বিয়ে দিবে না এবং নারী নিজে নিজের বিয়ে দিবে না। কারণ, ব্যভিচারী নারী নিজেই নিজের বিয়ে দেয়।
-[হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (১৮৮২) ও দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির দাগ দেয়া শেষাংশ বাদে বাকী অংশ সহীহ্। দেখুন ”সহীহ্ ইবনে মাজাহ্” (১৮৮২), ”ইরউয়াউল গালীল” (১৮৪১), ”সহীহ্ জামে’ইস সাগীর” (৭২৯৮)]💕
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তার সে বিয়ে বাতিল। তিনি একথাটি তিনবার বলেছেন। আর সে যদি তার সাথে সহবাস করে, তাহলে এজন্য তাকে মোহর দিবে। যদি উভয় পক্ষের (অভিভাবকদের) মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলে শাসক হবেন তার অভিভাবক। কারণ যাদের অভিভাবক নাই তার অভিভাবক শাসক।
-(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২০৮৩)💕
রাজীব : এখন কথা হচ্ছে শেষের হাদিসটি যেটা বললি তা হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা) এর। অথচ
হাদিসে এসেছে,
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,
আয়শা রাঃ তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। আবদুর রহমান তখন শাম দেশে ছিলেন।
-{মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০ ও তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫}💕
সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত শেষ হাদিস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা (রা) নিজেই “বিবাহ শুদ্ধ হয় না” একথা বুঝান নি।
বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অভিভাবক ছাড়া বিয়ে অসম্পূর্ণ হয়, সম্পূর্ণ বাতিল নয়৷ কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ। বিয়ে সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷
অর্ণব : হুম।
রাজীব : আর কোরআনের আলোকে অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া বিয়ের বৈধতার কিছু দলিল,
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই।”
-(সূরা বাকারাহ-২৩৪)💕
কিন্তু বলা হয়েছে সৎভাবে এটা তোকে মাথায় রাখতে হবে। অন্য এক আয়াতে,
আল্লাহর বাণী,
“তোমরা মেয়েদেরকে তাদের স্বামীদেরকে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না।”
-(সূরা বাকারাহ-২৩২)💕
বুঝলি?
অর্ণব : কিন্তু কুরআনের আয়তের ব্যাখ্যা কিন্তু সহজ বিষয় না।
রাজীব : হুম জানি তাই একটা হাদিস উল্লেখ করতেছি,
হাদিসে এসেছে,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন-
ﺍﻷﻳﻢ ﺃﺣﻖ ﺑﻨﻔﺴﻬﺎ ﻣﻦ ﻭﻟﻴﻬﺎ
সাবালিকা মেয়ের নিজ বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নেওয়ার
অধিকার অভিভাবক অপেক্ষা তার নিজেরই বেশি।
-(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪২১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৯৮)💕
কিন্তু তাকে পূর্ণ বয়স্ক হতে হবে।
বুঝলি?
অর্ণব : হুম বুঝছি। এজন্যই স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমামদের এক অংশের মতে, বিয়েতে মেয়েদের জন্যে অভিভাবকের অনুমতি অত্যাবশ্যক। অভিভাবক অনুমতি না দিলে বা অবিভাবকের অজ্ঞাতসারে বিয়ে করলে মেয়ের বিয়ে সহীহ হবে না। এ মতের পক্ষে রয়েছেন ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ রহ. প্রমুখ। উভয়ের মতের সপক্ষে বিস্তর দলীলও রয়েছে।
রাজীব : হুম। আর অন্য একাংশের মতে, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া যদি কোন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বিয়ে করে তাহলে তার বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো, উক্ত মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং কুফু (সমতা) রক্ষা করে বিয়ে করতে হবে। যদি কুফু না মিলে তাহলেও বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়ের পিতা চাইলে উক্ত বিয়ে ভেংগে দিতে পারবেন। তবে পিতা যদি বিয়ে না ভেংগে বলবৎ রাখেন তাহলে বিয়ে ঠিক থাকবে। এ মতটি দিয়েছেন বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম জুহরী, ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শা’বী প্রমুখ।
তাই যারা হানাফী মাজহাবের বা ইমাম আবু হানীফা এর হাদিসের ব্যাখ্যার ও মতামতের উপর নির্ভর করেন তারা অভিভাবক ছাড়া বিবাহকে বৈধ মনে করেন এবং এভাবে তাদের বিয়ে হলে সে বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হয় । এই বিয়ে আপন অবস্থার উপর স্থির থাকে এবং বিয়ে ভেংগে ফেলতে বলা হয় না।
অর্ণব : তবে ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য অভিভাবক থাকা খুবই জরুরী বিষয়। যদিও বুঝলাম যে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মেয়ে বিবাহ করলে সেই বিবাহ হয়ে যাবে। তারপরেও অভিভাবকের অনুমতি নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয়, সঙ্গি নির্বাচনের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। অথচ বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দ একটা সাইড মাত্র। তার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং ছেলেমেয়েদের জন্য উচিত হলো অবিভাবকের অনুমতি ও দোয়া নিয়ে বিবাহ করা। এতে আল্লাহ চাহেন তো সংসারও সুখী হবে। পারিবারিক অশান্তি ও ফেতনার পথও বন্ধ হবে। স্বামী-স্ত্রীর মাজে প্রেম, মোহাব্বত, ভালবাসা, আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পাবে।
রাজীব : একদম ঠিক বলছিস। অবিভাবকের মতামতের তায় তোয়াক্কা না করলে সমাজে বিচ্ছৃংখলা দেখা দিবে। পরিবারে অশান্তির বীজ বপন হবে। ছেলে মেয়েরা বিয়ের নিয়তে প্রেম শুরু করবে। নারীধর্ষণ ও নির্যাতন বেড়ে যাবে। অসমাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের ইজ্জত সভ্রমকে আত্মসাৎ করবে। প্রেমের শুরুটা হবে নেক সুরতে, শেষ হবে শয়তানের ধোকার মাধ্যমে। তাছাড়া বাবা মা যখন দেখবে, মেয়ে ইসলামিক হওয়ার প্রধান সমস্যা হচ্ছে মেয়ে বাবা মায়ের আবেগের মূল্য দিচ্ছে না, বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়াই বিয়ের বৈধতার ফাতাওয়া ব্যবহার করে নিজে নিজে পছন্দমত পাত্র খুঁজে বিয়ে করে ফেলছে তখন বাবা মায়েরা মনে কষ্ট পাবে ও নীকটস্থ প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে কানা গোসা করবে, তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপন করবে। এই নানাবিধ বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা যায় না। তাই বিতর্কিত না হতে চাইলে অবিভাবকের পছন্দমত ছেলেকে বিবাহ করা উচিৎ হবে।
অর্ণব : হুম। বুঝলাম। তবে ইসলাম অনুযায়ী শুধু বাবা-মার একচেটিয়া মত হলেই হবে না। মেয়ের দিকটাও দেখতে হবে। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,
হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই্।
-(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪)💕
রাজীব : হ্যাঁ ঠিক বলছিস। আর মেয়ের অনুমতি না ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। কেননা,
হাদিসে আছে,
“রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
বিধবার বিয়ে তার পরামর্শ ছাড়া এবং কুমারী মেয়ের বিয়ে তার অনুমতি ছাড়া করানো যাবে না।”
-(বুখারী ৫১৩৬)💕
অর্ণব : এই জায়গায় তো আমার খটকা লাগতেছে। তোর ভাবী বিয়ের আগে কিন্তু আমাকে বলতেছিলো যে বিয়ে করবে না। শুনলি তো তুই ঘটনাটা।
রাজীব : ভাবী বোধহয় চাচ্ছিলো বিয়েটা পরে করতে। ভাবী কি চুপ ছিলো?
অর্ণব : হুম। আমি বলতেই চুপ হয়ে গেছিলো। আর তেমন বিরোধিতা করে নি।
রাজীব : চুপ থাকাই সম্মতির লক্ষণ। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
“আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই কুমারী মেয়েরা লজ্জা করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার সম্মতি।”
-(সুত্রঃ সহীহবুখারী,অধ্যায় ৬৭, হাদিস নম্বর ৫১৩৭;)💕
বুঝলি?
অর্ণব : হ্যাঁ বাবা বুঝলাম। তুই বুঝাবি আর আমি বুঝবো না এরকম কখনো হয়েছে? এইজন্যই তো তোর সাথে সব কিছু শেয়ার করি।
রাজীব : হাহা। তুই জানিস তুই কতটা ভাগ্যবান? ভাবীর মতো একটা মেয়ে পাইছিস। আর ভাবীও প্রচুর ভাগ্যবান। আমি পড়ছিলাম,
“সেই স্বামী ভাগ্যবান-
যার স্ত্রী প্রতিটি নামাজের পর,
তার স্বামীর জন্য দয়া করে।”
আর Believe me, She is that kind of Girl Dude! যে মেয়ে তার স্বামীর জন্য নিজের সৌন্দর্যকে এভাবে হেফাযত করে সে মেয়ে তোর জন্য আরো কি কি জমা রাখছে একবার ভাব। এটাই প্রকৃত দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়ার লাভ। যার জন্য তোকে জোর করতেছিলাম ওকে বিয়ে করতে।
আর,
“সেই স্ত্রী ভাগ্যবান-
যার স্বামী প্রতিটা মুহুর্তে তার
স্ত্রীকে মনে করে ভালোবাসে।”
আর তোকে তো আমি ভালো মতই চিনি।
অর্ণব : হাহা। ওকে বাদ দে। রাত হয়ে গেছে আর তোর ভাবী একা বসে আছে। কালকে কথা হবে। পুরা ঘটনাটা বলবো নি।
রাজীব : আসসালাম অলাইকুম
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
কলটা কেটে ছাদ থেকে রুমে আসলাম….
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply