Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 35
তিন চার দিন হয়ে গেলো একই অবস্থা। না ঢুকতে দিচ্ছে বাসায় না দেখা করতেছে৷ তাই কথাও বলা হচ্ছে না আর জানানোও হচ্ছে না। আমি পড়ে গেলাম দারুণ ফ্যাসাদে।
পরের দিন,
সকালবেলা সায়মা রিকশায় কলেজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।
তানহা : আচ্ছা অর্ণব আপনাকে কতো করে টাকা দেয় আমায় কলেজে নিয়ে আসার এবং যাবার জন্যে?
রিকশাচালক :- সেটা তো ঠিক হয় নি। আর আমি নিতেও চাই না।
তানহা : কি বলতেছেন? অর্ণব কাজটা একদম ঠিক করেনি। কেননা,
হাদিসে আছে,
নবী (সা) বলেনঃ
যখন’মজদুর নিয়োগ করবে, তার পারিশ্রমিক নির্ধারিত করে নিবে।
-(নাসাঈ, হা.৩৮৯০)💕
আর কেনো নিতে চান না?
রিকশাওয়ালা : অর্ণব বাবা আমাকে সাহায্য করেছিলো। যার জন্য আমি ঋণী। এর মাধ্যমে আমি সেই ঋণ শোধ করতে চাই।
তানহা : কি সাহায্য?
রিকশাওয়ালা : আমরা তো অনেক গরিব। অনেক কষ্ট করে আমি আমার সংসার চালাতাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার ছেলের বড় অসুখ হলো,আমি আর আমার স্ত্রী আমাদের ছেলেকে মেডিকেলে নিয়ে গেলাম সেখানে শুনলাম আমার ছেলের অপারেশ করতে হবে চল্লিশ হাজার টাকা লাগবে নাহলে আমাদের ছেলের বড় ধরনের সমস্যা হবে। আমরা অনেকের কাছে হাত পাতলাম কিন্তু কেউ কোন সাহায্য করলো না। তাই আমি আর আমার স্ত্রী রাস্তাঘাটে বসে টাকা যোগার করতে লাগলাম, ঠিক তখনি অর্ণব বাবার সাথে দেখা হয়, সে সব কথা শুনে অপারেশনের টাকা দিয়েছে এবং উনার বাবাকে বলে আমাকে এই রিকশাটা কিনে দিয়েছে। তাই আমি তার থেকে কোন টাকা নিতে চাইনি এবং নিবোও না।
(বাব্বাহ! আমার স্বামী তো দেখছি অনেক বড় মনের মানুষ। আল্লাহ্ তোমায় অনেক শুকরিয়া আমার জীবনে এমন কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য)
তানহা : অর্ণব কি বলছে?
রিকশাচালক :- অর্ণব বাবা বলছে এই মাসে উনার টাকার সমস্যা আছে তাই সামনে মাসে পুরা দিবে। কিন্তু আমি তো বললামই নিবো না।
তানহা : আপনাকে ঋণ শোধ করার কোন দরকার নেই। শুধু আমাদের জন্য দোয়া করিয়েন। আর পারিশ্রমিকটা আপনার প্রাপ্য। আপনার পরিবার আছে, যাদের ভরনপোষণের দায়িত্ব আপনার। তাদের হকটা আগে। আর আমাদের আল্লাহর রহমতে তেমন অভাব নেই। তাই আপনার প্রাপ্য ভাড়াটুকু সামনে মাসে বেতন পেলে আমিই দিয়ে দিবো।
রিকশাওয়ালা : ঠিক আছে মামুনি। অর্ণব বাবা সত্যিই অনেক ভালো একটা বউ পাইছে।
হঠাৎ…..
আমি সকালের নাস্তা করতেছিলাম। এমন সময় রিকশাওয়ালার ফোন আসলো। কলটা ধরে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম চাচা। কি জন্য কল দিলেন।
হাঁপাতে হাঁপাতে,
চাচা : বাবা তুমি একটু তারাতাড়ি বালুবাড়ি আসো।
আমি শুনে সাথে সাথে গেটের দিকে দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে,
অর্ণব : কি হয়েছে চাচা? কিছু তো বলেন?
সাথে সাথে ফোনটা কেটে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে টান দিলাম। আমার মাথায় প্রচুর টেনশন। তানহার কিছু হয়ে গেলো নাতো। এই মেয়েটাকে কতবার বলছি বাসায় চলে আসতে। যদি আমার কথা শুনে?
বালুবাড়ি যায়ে দেখলাম তানহা একটা বসার জায়গায় বসে আছে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। যাক মেয়েটার কিছু হয় নি। আমি কাছাকাছি যায়ে দেখলাম তানহা কাঁদতেছে। চাচা রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর পাশে তিতুমির। তিতুমিরকে দেখে আমি অবাক। আমি আগে ওদের কাছে গেলাম। যায়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
: কি হয়েছে।
রিকশাওয়ালা : কিছু ছিনতাইকারী আমাদের উপর আক্রমণ করছিলো। মামুনির ব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ঠিক সময় এই ভদ্র লোক এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলো। ভদ্রলোকটিকে দেখে তারা পালিয়ে গেছিলো। বেশি কিছু করার সুযোগ পায়নি।
আমি তিতুমিরের কাছে যেয়ে,
অর্ণব : আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো তার ভাষা নাই।
তিতুমির : আর একটা কথা বলিয়েন না। আমি আপনার জন্য যা করি তাই কম।
আমি তিতুমিরকে নিয়ে একটু সাইডে গেলাম। কারণ তানহার সামনে কি বলতে কি বলে দেয়।
তিতুমির : আমার ভাবিকে আক্রমণ করবে এতো বড় সাহস। পাইলে একেকটাকে হালের ঘানি টানিয়ে ছাড়বো। শুধু বেটারা মুখোশ পড়ে ছিলো বলে চিনতে পারিনি।
অর্ণব : ভাবী মানে?
তিতুমির : ভাই! আমার সাথে নাটক করে লাভ নাই। প্রধান শিক্ষক নিজে আমাকে ডেকে বলছে যে ইংলিশ শিক্ষিকা তানহা আপনার বউ। আর উনার সাথে যেন আমি কোন ধরনের ফাজলামো না করি। চিন্তা নাই এটা আমি গোপনই রাখবো। হাহাহা।
অর্ণব : ধন্যবাদ বিষয়টা বুঝার জন্য।
তিতুমির : কিন্তু ভাবী একা একা যাচ্ছে কেনো?
অর্ণব : আর বলিস না। তোর ভাবী তো আমাকে ভালোই বাসে না। এজন্য অন্য এক জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে আছে।
তিতুমির : ওহ এই কাহিনী। শুনেন নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি মানে রসিকতা পছন্দ করে। আবার নখরা মানে ন্যাকা তাদের স্বভাবগত। তারা ভালবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে খুবই পছন্দ করে। আপনি একান্তে স্ত্রীর কাছে এসব কথা প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবেননা। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবেন। যদি এসবে কার্পণ্য করেন, তাহলে দেখবেন কিছুদিন পরই আপনার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে। এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে। ভালবাসা জানলা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজবে। বুঝলেন?
অর্ণব : হুম। এগুলা তো কখনো তেমনভাবে করা হয় নি।
তিতুমির : এখন থেকে করবেন। আর নারীরা কঠোর, কর্কশ, রূঢ়, বদমেজাজি, রুক্ষ স্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করেনা। আপনার মধ্যে এমন কিছু থাকলে এখুনি ঝেড়ে ফেলেন। কারণ তারা সুশীল, ভদ্র, উদার পুরুষ পছন্দ করে। আপনি তার ভালবাসা অর্জনের জন্য, তাকে আশ্বস্ত করার জন্য হলেও গুণগুলো অর্জন করেন।
অর্ণব : শেষ কয়েকদিন ওর উপর একটু রাগেই ছিলাম।
তিতুমির : এজন্য! ক্ষমা চেয়ে নিয়েন । আর এটা খুব ভালো করে মনে রাখবেন, আপনি আপনার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, পরিপাটি, গোছালো, সুরুচিপূর্ণ, সুগন্ধিময় দেখতে চান, আপনার স্ত্রীও কিন্তু আপনাকে ঠিক তেমনটাই চায়। তাই সাবধান থাকবেন, তার চাহিদা পূরণে যেন কোন অবস্থাতেই আপনার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।
অর্ণব : ওহ! ঠিক আছে। যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।
তিতুমির : আর ঘর হল নারীদের রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সবসময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে। সাজায়, রচনা করে।
খুবই সাবধান থাকবেন। কখনোই আপনার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেংগে দিতে যাইয়েন না। এমনকি তাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াশও চালাবেননা। আপনি তো জানেনই, আল্লাহ্ তা’আলার কাছে সবচেয়ে অপছন্দজনক বিষয় কী?
অর্ণব : তাঁর সাথে কোনকিছু শরীক করা।
তিতুমির : হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। ঠিক তেমনি একজন রাজার কাছেও সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় কী?
অর্ণব : তার রাজ্যে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করা।
তিতুমির : ঠিক তাই। আর নারীরা তার স্বামীকে মনে প্রাণে, সর্বান্ত:করণে প্রবলভবে স্বামীকে পেতে চায়। তবে পাশাপাশি বাবার বাড়িকেও হারাতে চায় না। হুঁশিয়ার থাকিয়েন! আপনি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিয়েননা। আপনি এ অন্যায় দাবী করে বসিয়েন না “হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে’।” আপনি এই বিষয়টা চিন্তাতেও স্থান দিয়েন না। আপনি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করলে সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নিবে। কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। আপনার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে জেগে উঠবে।
অর্ণব : ঠিক। এইদিক থেকে চিন্তা নাই। উনি এতিম।
তিতুমির : তাহলে তো আপনার জন্য বিষয়টা সহজ। আর নারীদের শরীর মনের অবস্থা সবসময় একরকম থাকে না। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেকসময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামাজ মাফ করে দিয়েছেন। রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন তার স্বাস্থ্য ও মেজাজ ঠিক হওয়া পর্যন্ত। আপনিও তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহুর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে।
অর্ণব : হুম বুঝছি তুমি কোন সময়ের কথা বলতেছো। তা একটা নারীর জন্য সত্যিই কষ্টদায়ক এক সময়।
তিতুমির : শেষে এতটুকুই বলতে চাই সবসময় মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী আপনার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ। বিভিন্নভাবে আপনার মুখাপেক্ষী। আপনার সুন্দর আচরণের কাঙাল। আপনি তার প্রতি যত্নবান হবেন। তার প্রতি অনেকবেশি মনোযোগ দিবেন। তাকে আপন করে নেবেন। তাহলে সে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিসেবে পাবেন। অার নিজের সাথে নিজের স্ত্রীকেও যদি দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন,তাহলে আপনার ঘরই তো আপনার জন্য দুনিয়ার একটা জান্নাত।
অর্ণব : ধন্যবাদ তোমাকে। একজন প্রাকটিসিং মুসলিমাহ হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি এগোচ্ছো। আল্লাহ তোমার জ্ঞান আরো বৃদ্ধি করে দিক। আজকে যাও তাহলে। তোমার কলেজের দেরি হচ্ছে। আসসালাম অলাইকুম।
তিতুমির : আপনি ভাবীকে নিয়ে বাসায় যান। আমি হেড স্যারকে বলে দিবো ঘটনাটা। অলাইকুম আসসালাম।
অর্ণব : ধন্যবাদ।
তারপর চাচার সাথে কথা বলে চাচাকে বিদায় জানিয়ে তানহার কাছে গেলাম। তানহা কাঁদতেছে। আমি এতক্ষণ ওকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিছিলাম। তাই কথা বলিনি।
অর্ণব : এই তানহা কাঁদতেছো কেনো?
(তানহা কথা না বলে কাঁদেই যাচ্ছে)
অর্ণব : উফফ! মেয়েটা এতো কাঁদে।
এবার তানহা মুখ খুললো,
তানহা : আপনার সাথে যদি হইতো তাহলে বুঝতেন।
অর্ণব : ওহ তাই। তা শুনি কি হইলো তোমার সাথে?
তানহা : ওরা আসে জোর করে আমার ব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে গেছে। আমি ভয়ে দিয়ে দিছি।
অর্ণব : আচ্ছা তিতুমির না আসলে তো বেশি কিছু হতে পারতো তাই না? আর মোবাইল তো আরেকটা কিনে নেওয়া যাবে। আল্লাহকে শুকরিয়া জানাও যে তিনি বিপদটা এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন।
আল্লাহ বলেন,
“আর তাঁর নির্দেশনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তিনি [বৃষ্টির] সুসংবাদ বহনকারী হিসেবে বাতাস প্রেরণ করেন এবং যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমত আস্বাদন করাতে পারেন এবং যাতে তাঁর নির্দেশে নৌযানগুলো চলাচল করে, আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ থেকে কিছু সন্ধান করতে পারো। আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।”
-[সূরা রুম; ৩০ : ৪৬]💕
তানহা : হুম।
অর্ণব : এবার কাঁদা বন্ধ করে একটু হাসো।
তানহা : আমি এখন আর কাঁদতেছিনা। নিকাবের জন্য দেখতে পাচ্ছেন না। বুঝলেন?
অর্ণব : হুম বাবা এখন চলো।
তারপর তানহাকে বাইকে নিয়ে ওর বাসার দিকে রওনা হলাম।
মনে মনে,
তানহা : এই প্রথম কারো বাইকে উঠলাম। তাও আবার আমার স্বামীর। সত্যি অনেক ভালো লাগতেছে।
তানহার বাড়িতে এসে,
অর্ণব : চাবি দেও আমি রুমের দরজা খুলি।
তানহা :- ফুলের গাছের টপের ভিতর দেখেন। ওই খানেই অাছে।
অর্ণব :-এইখানে কেউ চাবি রাখে? যে কেউ নিয়ে রুমের সব জিনিস চুরি করে নিয়ে যাবে।
তানহা :- আপনার মতো চোরেরাই আসবে।
অর্ণব :-মানে😡
তানহা :- মানে কিছুনা, আমার রুম থেকে কিছু চুরি হলে আপনাকেই ধরবো কারণ আপনি শুধু জানেন আমি এখানে চাবি রাখি।
(হাহা আজ থেকে তুৃমি এখানে থাকতেই পারবা না মিসেস তানহা)
তানহা : কি ভাবতেছেন? আর হাসতেছেন কেনো?
অর্ণব :- না কিছুনা,ভিতরে চলো।
তানহা :- ভিতরে চলো মানে কি? আপনি বাসায় যান😒
অর্ণব :-আরে যাব তো পরে, একটু রেস্ট নিই। তুমি ফ্রেস হয়ে আসো। আমি শুয়ে আছি।
তানহা :- ওকে, যাচ্ছি।
আমি তানহার বিছানায় শুয়ে আছি। বিশ মিনিট পরে তানহা গোসল শেষ করে বেড় হলো। তানহার মাথায় টাওয়েল পেঁচানো। গোসলের পর মেয়েদেরকে এতটা সুন্দর লাগে জানতাম না। আমি এক দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে তানহা মুচকি হেসে মাথা থেকে টাওয়েলটা খুলে নিলো। আমি তো অবাক। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়ায় কালো ঘন চুলগুলো কমড়ের নিচ অব্দি চলে গেলো। তানহা টাওয়েল দিয়ে চুল মুঁছছে আর আর চুলের কিছু পানি ছিটে নিচে পড়ছে। আমি তানহার এই রূপ দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। আমি নিজেকে সংযত রেখে বললাম,
: তানহা তাড়াতাড়ি করো। আমার দেরী হচ্ছে।
তানহা : আপনি তাহলে চলে যান। আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুৃমাবো।
অর্ণব : সব কাপড় গুছিয়ে নেও। তুমি আমার বাসায় যাবা।
তানহা : আমি আপনার সাথে যাবোনা। আর আপনি না আসার সময় বললেন যে আমায় পৌঁছে দিয়ে আপনি বাসায় যাবেন?
অর্ণব : আমি আমার বউকে নিয়ে আর ঝুঁকি নিতে পারবো না। তাড়াতাড়ি করো।
তানহা : যাবনা আমি।
ওর কথা শুনে আমি নিজেই ড্রয়ার থেকে ওর কাপড়চোপড় সব একটা ব্যাগে ঢুকানো শুরু করলাম।
তানহা : এই কি করতেছেন। একটা মেয়ের ড্রয়ারে হাত দিতে লজ্জা লাগেলো না?
অর্ণব : আমার বউয়ের ড্রয়ার। আপনি চুপ থাকেন।
গুছানো শেষ করে,
: চলো এখন
তানহা :- বললাম না যাবোনা।
অর্ণব :-যাবানা মানে কি হুম?
বলেই তানহাকে ধরে কোলে তুলে নিলাম। ওর ভিজা চুল গুলা আমার বাহু ভিজায় দিলো।
তানহা :- এই কি করছেন পড়ে যাব তো।
অর্ণব :-এই রকম করেই তোমায় নিয়ে যাব আজকে।
তানহা :- এই ছাড়ুন। আমি এমনিতেই যেতে পারবো। আল্লাহ আমাকে দুইটা পা দিয়েছে। আর আমাকে বোরখা,হিজাব আর নিকাব পড়তে হবে। এভাবে খোলা চুলে যাবো? আমার মাথা খারাপ হইছে?
নামিয়ে দিয়ে,
অর্ণব :-লজ্জা পাইছো নাকি?
তানহা :- কিসের লজ্জা ফাজিল একটা।
বলে রুমে যায়ে তৈরী হয়ে বেড় হলাম।
অর্ণব : ছোট মোবাইলটা থাকলে ঐটা নিয়ে নেও। সামনে মাসের আগে নতুন মোবাইল কিনে দিতে পারবো না।
মোবাইলটা ড্রয়ার থেকে নিলাম।
অর্ণব : চলো তাড়াতাড়ি।
তানহা :- হুম….
বলা শেষ নাই হইতেই হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো।আমি যাবোই না, জোর করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তো উনাদের সামনে কি হবে এটা ভাবে অস্থির। অর্ণব তো এই ঘটনার পর আমাকে আর এখানে রাখবে না। আর আমার যাওয়ার মন নাই তবুও যাচ্ছি। ইয়া আল্লাহ! উনারা যেনো ভালো মানুষ হয়। যদিও আন্টিকে আমি আগে থেকেই চিনি। আমি যায়ে বাইকে অর্ণবের পিছনে বসে ওর ঘাড়ে হাত রাখলাম।
অর্ণব : ঠিকভাবে বসছো?
তানহা : হুম।
অর্ণব বাইক স্টার্ট করলো। দেখতে দেখতে অর্ণবের বাসার সামনে চলে আসলাম। আগেও আসসিলাম নাজিমের প্রাইভেট ঠিক করতে।
আমরা যায়ে গেটের সামনে দাঁড়াইলাম। বললাম,
তানহা : আমার না গেলে হয় না?
অর্ণব : এক থাপ্পর দিয়া সবগুলা দাঁত ফেলায় দিবো।
বলেই অর্ণব কলিং বেল চাপলো।
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply