Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 38
ফযরের নামাজ পড়ে তানহা রান্নাঘরে গেলো আর আমি গেলাম ঘুমাইতে।
সকাল আটটায় তানহা ডাকতে আসলো,
তানহা : এই উঠুন সবাই খেতে বসেছে আপনাকে ডাকছে।
তানহার ডাকে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আজকে আবার বিয়ে বাড়ি যেতে হবে।
খাবার খেতে যায়ে দেখি নানা ধরনের রান্না। বাব্বাহ! আমার বউটা এতো রান্না পারে? সত্যি আমার বউটার অনেক গুণ আছে। কিন্তু তানহাকে রাগাইতে ভালোই লাগে।
প্রথমে বিরিয়ানি দিয়ে শুরু করলাম। রান্নাটা এক কথায় অসাধারণ। আমার বউটা সত্যিই অনেক মজাদার রান্না পারে। বললাম,
অর্ণব : আম্মু অনেক সুন্দর রান্না করেছো আজ।
মিস রাদিয়া : আজকে আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতেই দেই নি। কিভাবে রান্না করবো?
অর্ণব : তাহলে কে করেছে?
মনে মনে,
তানহা : ও ভালো করেই জানে আমি আজ রান্নাঘরে গেছি আর মা রান্না করে নি। বুঝায় যাচ্ছে এগুলা আমি রান্না করছি। সব বুঝেও নেকামো করতেছে। রাগে মনে হচ্ছে খাবার গুলা কেড়ে নেই। রাগে বললাম,
: নতুন বুয়া রাখছে তো, উনিই রান্না করছে।
মিস রাদিয়া : অর্ণব চুপ করে খা। জানিস যে তানহা মা রান্না করছে তাও কেন ওকে জ্বালাচ্ছিস?
বুঝলাম তানহা রাগে গেছে তাই আর জ্বালাইলাম না। তবে আব্বু-আম্মু আর নাজিম খাবারের প্রশংসা করতে ভুললো না।
খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবো তখনই,
রফিক সাহেব : তোমাকে আজকে অফিস যাইতে হবে না। কলেজে যাবা আর বিয়ে বাড়িতে দেওয়ার জন্য আসার সময় তানহা মার সাথে যায়ে গিফট কিনে আনবা।
অর্ণব : কলেজে তো ক্লাশ হয় না তেমন। তাই অফিস করে দুপুরেই চলে আসবো।
তানহা : না আব্বু। রোজ ক্লাশ হয়। আজকে ওর পরিক্ষা তাই ভয়ে যাবে না।
অর্ণব : আমি কোনো পরিক্ষাকে ভয় করিনা। এগুলা আমার বা হাতের ময়লা।
তানহা : জানিতো আপনি হচ্ছেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। এতো পড়া পড়েছেন যে নিজেরই মনে নাই।
মিস রাদিয়া : তানহা মা কিসের পরিক্ষা?
তানহা : আমি আজ অর্ণবদের পরিক্ষা নিবো।
মিস রাদিয়া : অর্ণব তুই কলেজ যাবি। আর তানহা তুমি অর্ণব কতো পাইলো তা জানাবা।
তানহা : ঠিক আছে আম্মু।
কথা না বলে আমি রুমে যায়ে তৈরী হচ্ছিলাম। তানহা আসে কলার ধরে,
তানহা : এই নিচে কি বলতেছিলেন? কে রান্না করতেছে জানেন না?
অর্ণব : হাহাহা। জি আমি জানি ম্যাডাম। আর খাবারগুলা দারুণ হয়েছে। আমার বউ এতো সুন্দর রান্না করতে পারে জানতামই না। একেবারে একের ভিতর সব এরকম বউ পাইছি।
কলারটা ছাড়ে দিয়ে,
তানহা : হইছে হইছে। পাম মারতে হবে না। ঐখানে আমাকে রাগাচ্ছিলেন কেনো?
অর্ণব : না হলে কি আমার তানহার এই রূপ দেখতে পেতাম?
তানহা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
তানহা : আপনি নিচে যান। আমি রেডি হয়ে আসতেছি।
আমি বাইক বেড় করলাম। তানহা আসতেই একসাথে কলেজ গেলাম।
প্রথম ক্লাশেই তানহা পরিক্ষা নিলো। প্রশ্নটা খুব সহজ হয়েছে। কিন্তু নিজে ইচ্ছা করে ভুল দাগায় উত্তরপত্র জমা দিলাম। তানহার শেষের দুইটা পিরিয়ডে ক্লাশ না থাকায় আমরা তাড়াতাড়ি গিফট কিনে বাসায় চলে আসলাম।
মিস রাদিয়া : তানহা রেজাল্ট কবে দিবে?
তানহা : আম্মু কালকে।
অর্ণব : আম্মু দেখে নিও তোমার ছেলে সবচেয়ে আশ্চর্যকর রেজাল্ট করবে যা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।
আম্মু আর তানহা হাসে উঠলো।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে গল্প লিখতে বসলাম। দেখলাম তানহা লেপটপে কি জানি করতেছে।
অর্ণব : কি করতেছো?
তানহা : এইতো কিছু প্রবন্ধ পড়তেছি।
অর্ণব : তুমি লেপটপ চালাইতে পারো?
তানহা : পারি মোটামুটি। আমার একটা বান্ধবীর ছিলো তার কাছ থেকেই শিখছি।
তারপর তানহাকে লেপটপ চালানো শিখাতে লাগলাম।
তানহা : আচ্ছা আপনি কি ইংরেজি পারেন?
অর্ণব : কেনো?
হেসে,
তানহা : আমার কেনো জানি মনে হয় আপনি অনেক শিক্ষিত। আপনার চালচলন, কথাবার্তা সব কিছু আমার অন্যরকম লাগে। আমি মিলাইতে পারি না।
অর্ণব : ওহ হো! আমাদেরকে বিয়ে বাড়ি যেতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হও।
[কথাটাকে ঘুরানোর জন্য। অতি শীঘ্রই রহস্য খুলবে😁]
তানহা : আমিও ভুলে গেছিলাম।
আমরা রেডি হয়ে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সাথে নাজিমও আছে। বিয়ে বাড়িতে পৌছাতেই তারা আমাদের ওয়েলকাম করলো।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আন্টি।
আন্টি : অলাইকুম আসসালাম। বাবা অর্ণব কেমন আছো?
(ইনি বরের মা)
অর্ণব : জি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
আংকেল : জি আমরাও ভালো আছি। তোমার আব্বু-আম্মু আসেনি?
(ইনি বরের পিতা)
অর্ণব : জি আব্বু সামান্য অসুস্থ তো তাই আসতে পারেনি। ইদানিং তাই আমিই ব্যবসা দেখাশুনা করতেছি।
আংকেল : ওহ। ঠিক আছে। উনার সাথে রাতে কথা বলবো। তোমরা ভিতরে যাও।
আমরা ভিতরে গেলাম। খুব সুন্দরভাবে সব কিছু সাজানো। অনেক বড় ব্যবসায়ী তাই তার স্ট্যাটাস অনুযায়ী সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে। এবার বুঝলাম আব্বু-আম্মু কেনো আসেনি। কিন্তু বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতে হবে তাই আমাদেরকে পাঠায় দিছে। আমরা গিফট কাউন্টারে গিফটটা জমা দিলাম।
বিয়েতে হঠাৎ আমার অনেক পুরাতন বন্ধু সিফাতের সাথে দেখা। তাই তানহার কাছ থেকে সময় নিয়ে সিফাতের সাথে কথা বলতে গেলাম। তানহাকে বললাম,
অর্ণব : বিয়ে বাড়ির কোন ধরনের পানীয় তুমি ভুল করেও খাবানা। বুঝলা?
তানহা : হুম।
সিফাতের সাথে অনেক্ষণ ধরে কথা বলতেছিলাম। হঠাৎ নাজিম আসলো,
নাজিম : ভাইয়া আপু তোমাকে ডাকে।
সিফাতের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে তানহার কাছে আসলাম।
অর্ণব : এই কি হয়েছে?
তানহা : আমার কেমন কেমন যেনো করতেছে। মাথা ঘুরতেছে। মনে হচ্ছে বমি করবো।
আমি তাড়াতাড়ি তানহাকে নিয়ে বাড়ির পিছনে চলে আসলাম। আর সাথে সাথে তানহা বমি করলো।
অর্ণব : কি খাইছিলা?
তানহা : জুস খাইছিলাম।
অর্ণব : ঐটা জুস ছিলো না। তোমাকে আমি সাবধান করে গেলাম না যে বিয়ে বাড়ির কোন কিছু খাবানা।
তানহা : তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন। আমার সমস্যা হচ্ছে।
আমি দেরী না করে ওদের নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসি। নাজিমকে,
অর্ণব : নাজিম এগুলা কথা যেনো আব্বু আম্মু না জানতে পারে।
নাজিম : ঠিক আছে ভাইয়া।
আম্মু দরজা খুলে দিলো। ঐসময় তানহা স্বাভাবিক ছিলো। বাকিটা সামলে নিয়ে তানহাকে রুমে নিয়ে গেলাম। রুমে যায়ে তানহা অদ্ভুদ আচরণ শুরু করলো। সেদিন আমি তানহার এক অন্য রূপ দেখলাম।
……….
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি বোরখাতেই শুয়ে আছি। আস্তক নিজেকে ছাড়িয়ে অর্ণবকে ডাক দিলাম।
অর্ণব ঘুম থেকে উঠে,
অর্ণব : কি ব্যাপার কি হইছে?
তানহা : এই কালকে রাতে কি হইছে? আমার কিছু মনে নেই কেনো?
অর্ণব : কালকে রাতে তুমি নিজের হুস হারায় ফেলছিলা।
তানহা : কিহ? জুসটা খাওয়ার পরই এইগুলা শুরু হয়েছে৷ ওটাতে কোন ভেজাল ছিলো।
অর্ণব : ওটা জুস ছিলোনা।
তানহা : নাউজুবিল্লাহ। ছি ছি। আপনি আমাকে আগে বলবেন না?
বলেই কাঁদতে শুরু করলো।
আমি যায়ে বললাম,
অর্ণব : এই শান্ত হও। কাঁদতেছো কেনো?
তানহা : আপনি জানেন আমার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো? এক তো এটা হারাম।
হাদিসে এসেছে,
রাসুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়া হারাম”
-(সহীহ বুখারী ৬১২৪)💕
তার উপর আমার চল্লিশ দিনের এবাদত কবুল হবে না। কেননা,
হাদিসে আছে,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“যে ব্যাক্তি একবার নেশাদ্রব্যকারি জিনিস পান করলো,সে তার ৪০ দিনের সালাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।”
-(আবু দাউদঃ ৩৬৮০)💕
আমার চল্লিশ দিনের এবাদত কবুল হবে না এর মানে বুঝছেন?
(বলেই আবার কাঁদতে শুরু করলো।)
অর্ণব : এই শুনো। প্রথম কথা তুমি এটা ইচ্ছা করে করোনি। আর
পবিত্র কুরআনে আছে,
অজ্ঞতাবশত ভুল করলে আল্লাহর ক্ষমা প্রত্যাশা করুন।
-(১৬ঃ ১১৯)💕
আর আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেন। কেননা,
আল্লাহ বলেন,
“হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ – আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
-[সূরা আল-যুমার ৩৯-৫৩]💕
তোমাকে শুধু আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র কাছে খাঁটি তওবা কর।”
-[সূরা আত্তাহরীম, ৬৬:৮]💕
এ সম্পর্কে
আল্লাহ বলেন,
” আল্লাহ তওবা কবুলকারী,করুনাময়”
-[সূরা তাওবা:১০৪]💕
অন্য এক আয়তে এসেছে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করেন। আর তোমরা যা কিছু কর তিনি তা জানেন।”
-[সূরা শুরা, ৪২:২৫]💕
আল্লাহ তো জানেন যে তুমি এটা ভুল করে করেছো। আর মানুষ ভুল করবেই। এ ব্যাপারে
হাদিসে এসেছে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ— যদি তোমরা গুনাহ না করতে তবে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে ধ্বংস করে এমন এক সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আবার ক্ষমা প্রার্থনা করে।”
-[সহিহ মুসলিম ২৭৪৯]💕
বুঝলা? তোমাকে এখন ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। আর এ সম্পর্কে,
হাদিসে এসেছে,
নবী (সা) বলেন: “প্রত্যেক বনী আদম গুনাহগার। আর গুনাহকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে- তওবাকারীগণ।”
-[সুনানে তিরমিযি (২৪৯৯), আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]💕
তানহা : তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি খুব ভয় পায়ে গেছিলাম।
অর্ণব : বোকা মেয়ে। তবে কালকের ঘটনাটা কখনো ভুলবো না। আহা প্রতিদিন যদি এমন হতো।
তানহা : কেনো কি করছিলাম?
অর্ণব : আমার পাওনা তুমি নিজে জোড় করে দিছিলা।
…..
সকালের নাস্তা করে তানহাকে নিয়ে কলেজে গেলাম। তানহা ক্লাশে রেজাল্ট দিলো। আমার রেজাল্ট দেখে নেহাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
অর্ণব : আরে নেহা মাইনাস মার্কিং আছে নাকি?
নেহা : না তো। কেনো?
অর্ণব : দুই মার্ক তো পাওয়ার কথা। সেখানে আমাকে দুইটা শূন্য বসায় দিছে।
হ্যাঁ দুইটা শূন্য পাইছি পরিক্ষায়🤐
রাতেরবেলা,
খাবার টেবিলে,
মিস রাদিয়া : কি রে অর্ণব কতো পাইছিস?
মনে মনে,
অর্ণব : কত পাইছি? পাইছি তো দুইটা শুন্য। কিন্তু কিভাবে বলবো? শরম লাগতেছে🙈
মিস রাদিয়া : কি রে তোর রেজাল্ট বল?
অর্ণব : রেজাল্ট তো অনেক ভালো। মাশআল্লাহ! এক এর জন্য একশ পাইনি।
মিস রাদিয়া : তার মানে নিরানব্বই পাইছিস?
তানহা : না আম্মু। মিথ্যা কথা বলতেছে। ও শুন্য পাইছে। দুইটা শুন্য বসায় দিছি তাই বলতেছে সামনের একটা “এক” এর জন্য একশ হয় নি।
মিস রাদিয়া : ওগুলা শয়তানি বুদ্ধি ঠিকই আছে কিন্তু পড়াশুনায় নাই। এতোদিন এভাবেই ফাঁকিবাজি করে আসতেছিলি?
অর্ণব : না আম্মু আমি দুই পাইছিলাম। তানহা বদলা নেওয়ার জন্য দেয় নি।
(সবাই হাসতেছে)
খাওয়া দাওয়া শেষ করে এশার নামাজ পড়ে গল্প লিখতে বসলাম। গল্প লিখা শেষ করে তানহাসহ ঘুম দিলাম।
পরের দিন,
অফিসে কাজ করতেছিলাম। এমন সময় রিপন ফোন দিলো। কলটা ধরতেই,
রিপন : ভাই একটু তাড়াতাড়ি কলেজে আয়। অনেক বড় বিপদে পড়ছি।
অর্ণব : কি বিপদে?
রিপন : তুই আগে আয়। অনেক বড় ঘটনা।
কলটা কাটে আব্বুর কাছ থেকে সময় নিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম। কি এমন হয়েছে যে ফোনে বললো না? শুধু শুধু চিন্তায় ফেলায় দিলো। বললে কি হইতো?
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply