Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 40
চারপাশে দূর থেকে ভেসে আসা ব্যস্ত নগরীর শব্দ। উপরে খোলা আকাশ। চাঁদটা দারুণ লাগতেছে। তানহা আর আমি ছাঁদে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছি।
অর্ণব : আচ্ছা তুমি কিভাবে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য নাজিমকে পেয়েছো?
তানহা : আমি দিনাজপুরে আসে হোস্টেল নেওয়ার পর সবার আগে তোমার ঠিকানায় গেছিলাম।
অর্ণব : আমার ঠিকানা কিভাবে জানলা?
তানহা : বিয়ের সময় আপনার সব কিছু মুখস্থ করে নিছিলাম। আর পরে ডাইরিতে লিখে রাখছিলাম।
অর্ণব : তুমি পারোও বটে।
তানহা : হাহা! আপনার আব্বুর নামটা জানা ছিলো বলে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়েছিলো।
অর্ণব : তারপর?
তানহা : আমি তো খুব চিন্তায় ছিলাম বাড়িতে ঢুকে কি বলবো। কিন্তু দরজা খুলছিলো আপনার ছোট ভাই। তাই মাথায় বুদ্ধিটা চলে আসলো। আপনার আম্মুর সাথে নাজিমের প্রাইভেটের জন্য আসছি বলে আলোচনা করতেছিলাম। সব শুনে আম্মু প্রাইভেটটা ঠিক করছিলো। বুঝছো?
অর্ণব : আর নাজিমের কাছেই শুনছেন যে আমি কলেজে পড়ি?
তানহা : না। আপনার আম্মু বলছিলো। প্রথমে তো আমি বিশ্বাস করিনি। ভাবতেছিলাম ভুল বাসায় চলে আসছি নাকি আবার।
অর্ণব : হাহাহা। শুনো আমি গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করছি এক বছর আগে বুঝলেন?
অবাক হয়ে,
তানহা : কিহ?
অর্ণব : Yeah Misses Tanhaa! I completed my Graduation last Year.
তানহা : আমি কিছু ভুল শুনলাম নাতো?
অর্ণব :- কেনো?
তানহা :- মানে হলো ইংরেজী গুলা আপনিই বললেন😜
অর্ণব : আমিই বলছি😒
তানহা : By the way I m also complicated my Graduation last year.Omg! That’s mean we are Batch mats…
অর্ণব : হাহাহা। এইজন্য আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা এতো ভালো।
তানহা : হুম। আমার তো প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিলো যে আপনি অনেক শিক্ষিত।
অর্ণব : আমাকে ছোট মনে করছিলা এইজন্যই কি আমাকে ভালোবাসতা না?
তানহা : একদম না। আমি তোমাকে প্রচুর ভালোবাসি। শুধু তোমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে বলে বলিনি। আমি কি জানতাম নাকি যে তুমি এতো বড় রহস্য নিয়ে ঘুরো।
অর্ণব : আমার পড়াশুনার চিন্তা তোমাকে কে করতে বলছে?😡
তানহা : আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে। তা কি জন্য এই রহস্য নিয়ে ঘুরতেন?
তারপর তানহাকে পুরা ঘটনা বললাম।
অর্ণব : আসলে রুম্মান ওর বোনকে প্রচুর ভালোবাসে। তাই ওর অনুরোধ না রাখে পারিনি। বুঝলা?
তানহা : হুম। এজন্যই তো আমার স্বামীকে আমি এতোটা ভালোবাসি😜
অর্ণব : আমার বউকেও আমি কম ভালোবাসি না। এমন বউ পাওয়া ভাগ্যের বেপার। চাকরি আর বউয়ের দায়িত্ব একসাথে খুব ভালোভাবেই পালন করে। আর অনেক আদরও করে😜
তানহা : আমার চাকরির সময় আপনিই সাহায্য করছিলেন তাই না? আম্মুও বললো।
অর্ণব : হুম।
তানহা : পরে বিস্তারিত শুনবো। এখন শুনেন আমাকে কয়েকদিনের জন্য রাজশাহীতে যেতে হবে। ট্রেনিং এর জন্য। একটু পারমিশনটা নিয়ে দেন।
অর্ণব : ঠিক আছে। এখন একটু চোখ বন্ধ করো।
তানহা চোখ বন্ধ করলো।
অর্ণব : এবার চোখ খুলো।
তানহা : এটা কি?
অর্ণব : হাদিসের বই। আসলে আমার কাছে বেশি টাকা নেই। তোমাকে তো কখনো কোন গিফট….
কথা না বলতে দিয়ে তানহা হাত দিয়ে আমার মুখ চাপে ধরলো।
তানহা : আমি কি কিছু শুনতে চাইছি? এইটাই আমার জন্য বেস্ট গিফট। তুমি আমাকে জান্নাতে যাওয়ার পথে সাহায্য করতেছো, এর থেকে বড় গিফট আমার জন্য কি হতে পারে?
অর্ণব : খুশি হয়েছো?
তানহা : প্রচুর। এটা আমার স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। খুশি না হয়ে পারি?
অর্ণব : এজন্যই তো এই পাগলিটাকে খুব ভালোবাসি। আর এতো শুকনা হইলে হবে?
এই বলে অর্ণব আমাকে কাছে টেনে নিলো। এবার আর পালাবার ব্যর্থ চেষ্টা করিনি।
……..
তানহা আর আমি নিচে নামলাম। তানহা চলে গেলো শাড়ি পাল্টাতে।
আমি খাবার টেবিলে বসতেই আব্বু-আম্মু আমার দিকে তাকায় আছে। কিছুই বুঝলাম না।
আমি ওতো না ভেবে খাবার তুলতেছিলাম। তানহা শাড়ি বদলায় এসে যেই চেয়ারে বসতে যাবে তখনই আমার চেহারায় তাকিয়ে দৌড়ে আবার রুমে ঢুকলো।
আমি তো কিছুই বুঝতে পারতেছিনা।
নাজিম আমার দিকে দেখে হাসতে লাগলো আর বললো,
নাজিম : ভাইয়া তুইও আজকাল এসব ব্যবহার করিস?
অর্ণব : কিসব?
নাজিম : যায়ে আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখ।
আম্মু-আব্বু চুপ করে তাকায় আছে, তানহা দৌড়ে রুমে গেল,নাজিম হাসতেছে। অবস্থা তারমানে বেগতিক। তাড়াতাড়ি রুমে গেলাম।
আমি রুমে যেতেই,
তানহা : এই আপনার কি লজ্জা নাই?
অর্ণব :- মানে?
তানহা :- মানে কিছুনা। নিজের তো লজ্জা নাই। আব্বু-আম্মুর সামনে আমার মানসম্মান মাটিতে মিশায় দিলো।
অর্ণব : আমি আবার কি করলাম?
তানহা :- আয়নাতে দেখে নিন তাহলেই বুঝবেন ব্যাপারটা কি। আব্বু-আম্মুর সামনে কিভাবে যাব সেটা ভাবছি, লজ্জায় মাথা কাটা গেল আমার😡
আয়নার দিকে দেখতেই,
অর্ণব : এই এতো রাতে কেউ লিপস্টিক দেয়?😡
আমার মান-সম্মান শেষ। কোনমতে আমরা মাথা নিঁচু করে রাতের খাবার খেয়ে আর তানহার যাওয়ার পারমিশন নিয়ে আসলাম। আমাকে তানহার সাথে রাজশাহী যেতে বললো।
রুমে আসে আমি লেপটপে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখলাম তানহা মেসেজ দিছে। তানহার হাতে আমার মোবাইল। বুঝলাম আমার মোবাইল দিয়ে তানহা ফেসবুকে ঢুকছে।
তানহা : আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন?
তানহা : হুম ভালো আছি।
(ঢং দেখে বাচিঁ না। এখানেই আছে তাও জিজ্ঞাসা করতেছে।)
অর্ণব : তাহাজ্জুদে হালকা পানি ছিটিয়ে তোলে দেওয়ার জন্য তোমাকে প্রয়োজন ।😍
ফজরে উঠতে না চাইলে,মাথায় হাত বুলিয়ে তুলে দিবার জন্য তোমাকে প্রয়োজন💝
ইশরাকের নামাজ না পড়ে আসলে ঘরে ডুকতে দিব না!এই শাসনের জন্য তোমাকে প্রয়োজন😘
প্রতিদিন কমপক্ষে এক পৃষ্ঠা তিলাওয়াত না করলে, সকালের নাস্তা না দেওয়ার জন্য তোমাকে প্রয়োজন🤗
তানহা : Who are you?😒
অর্ণব : বাসা থেকে বের হবার পরে,বারবার ফোনের যন্ত্রণা পাবার জন্য তোমাকে প্রয়োজন 💖
ফিরে আসার সময় তেতুল নিয়ে আসতে চাই বলে তোমাকে প্রয়োজন💕
সন্ধ্যা বেলায় কাজে সহযোগিতা করতে তোমাকে প্রয়োজন 💚
দু’জন মিলে এক গ্লাসে,এক থালাতে বসে খেতে তোমাকে প্রয়োজন💘
মাঝেমধ্যে অভিমান করে খাব না বললে, আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিবার জন্য তোমাকে প্রয়োজন💛
তানহা : বাব্বাহ শখের তো কমতি নেই। আপনার বউকে যায়ে বলেন এগুলা😪
অর্ণব : ওজু করে না আসলে বিছানায় উঠতে না দেওয়ার জন্য তোমাকে প্রয়োজন💜
দু’জন এক বালিশে মাথা রেখে আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য তোমাকে প্রয়োজন💙
আমার ঈমান পরিপূর্ণ করে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমাকে অনেক বেশি প্রয়োজন❤
তানহা : আমার স্বামী আছে বুঝলেন?
অর্ণব : চলনা সুজন পালাই দুজন🤗
ওদেরকে দিয়ে ফাঁকি😜
কোন সমান্তরাল পথের বাঁকে😉
বাসা বানিয়ে থাকি😍
চলনা সুজন মিলে দুজন😊
অচেনা শহর গড়ি😘
সেই শহরে আপন করে😇
বৃষ্টি ফোটা হয়ে ঝরি😍
তানহা : “চোরাবালির পিছু টানে
বুঝিনা এই ভাষার মানে
অশান্ত মন কি উচাটন
খোদা জানে”
My Favourite Song😍
অর্ণব : তুমি হাতটা শুধু ধরো🙈
আমি হবোনা আর কারো😘
তানহা : যান যান। অনেকেই আছে হাত ধরার জন্য। আমার হাতটা অলরেডি আমার স্বামী ধরে রাখছে😜
অর্ণব : Some love one🤗
Some love two😜
I love one😘
And That’s you😍
(No Reply)
অর্ণব : অভিমান করার জন্য শুধু তোমাকেই চাই🙂
এত এত ভালোবাসার জন্য তোমাকে চাই😊
বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্য তোকে চাই😉
শুনো, আমার না তোমাকেই চাই😘
তোমাকে ভালোবাসি অনেক😏
তাই তোমাকে নিয়ে বাকি জীবনটা একসাথে কাটাতে চাই😍
(No Reply)
অর্ণব : My Heart is Perfect Because😊
You Are Inside🥰
We are Perfect Because👌
We are Together😍
(No Reply)
অর্ণব : I love three things
Allah, Muhammad and You.
Allah, Because he is my creator😘
Muhammad, because of him i created😍
And You, Because For me You was Choosen by Allah🤗
(No Reply)
(মেসেজেই)
অর্ণব : কি ব্যাপার মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দিচ্ছো না কেনো?
মেসেজেই রিপ্লাই দিলো,
তানহা : “মেয়েটা মেসেজ সিন করে রিপ্লে দিচ্ছে না,আপনি আবার মেসেজ দিছেন মেয়েটা আবারো সিন করে ফেলে রাখছে,আপনি এবার মনে মনে ভাবছেন মেয়েটা দেমাগি,অহংকারী,
এবার নিজের দিকে তাকান,ভাল করে চেয়ে দেখুন আপনি একটা ছ্যাচড়া😐”
আমি শুনে তানহার দিকে তাকায় বললাম,
অর্ণব : এই তুমি আমাকে ছ্যাচড়া বললা কেনো?😡
তানহা : পরিচয় গোপন করে কথা বললে তো বলবোই😜
অর্ণব : কিহ! তার মানে তুমি আগে থেকেই জানতা?
তানহা : আমি এতোটাও গাধা না যে তুমি আমার সাথে কথা বলবা আর আমি বুঝতেই পারবো না। আর এজন্যই প্রতিদিন মেসেজ দিতাম। তোমার সাথে কথা বলার জন্য। নইলে আমার বয়েই গেছে অন্য জনার খোঁজখবর রাখার।
অর্ণব : ধুর! ভাবছিলাম সারপ্রাইজ দিবো। ভান্ডা যে আগেই ফুঁটে গেছে কে জানে।
তানহা : 😁😁
(মূল গল্প শেষ)
সকালবেলা আব্বু-আম্মুর কাছে বিদায় নিয়ে আমি আর তানহা বাস স্ট্যান্ডে গেলাম। টিকিট কাটে বাসে উঠলাম। ব্যাগগুলা জায়গামত রাখে সিটে বসলাম।
তানহা : এই আমি কিন্তু জানলার ধারে বসবো।
অর্ণব : ঠিক আছে বসেন ম্যাডাম।
তারপরে আমরা সিটে বসলাম।
অর্ণব : তা ম্যাডাম এখনও কি গা ঘেষে বসা যাবে না?
তানহা : ফাযিল একটা। আচ্ছা যদি আগের মতো আবার ঘটে? মানে চাকা ফুট্টুস হয়ে যায়?
অর্ণব : আল্লাহ! ঐগুলা কথা মুখেও আনিও না। উফফ! কি দুর্দশাটা না গেছিলো ঐদিন।
তানহা : আমার তো ভালোই লাগতেছিলো😁
অর্ণব : 😒😒
মনে মনে,
তানহা : সারা রাস্তা অর্ণব আমার হাতটা ধরে ছিলো। মাঝে আমি ওর ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমায় গেছিলাম। আমি জানি আমার ব্যবহারে অর্ণব প্রচুর কষ্ট পাইছে। ওর মধ্যে চাপা ক্ষোভ আছে। যা কখনো ও বলবে না বা প্রকাশ করবে না। প্রকৃত প্রেমিক সবাই হতে পারে না। প্রকৃত প্রেমিক হতে হলে থাকতে হয় প্রচুর ধৈর্য, করতে হয় অপেক্ষা। কিন্তু গুটি কয়েক মানুষ তা পারে। আমি ভাগ্যবতী যে আমি অর্ণবকে পেয়েছি। এবার দায়িত্বটা আমার। দায়িত্বটা অর্ণবের প্রেমিকা হওয়ার। এই কয়দিন আমার হাতে সময় আছে ওর মন জয় করার। এবার অপেক্ষাটা পরিপূর্ণ রূপে স্বামী-স্ত্রী হওয়ার।
(চলবে…)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply