Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part 45 and Last Part :
পদ্মার পাড়ে আমরা হাটতেছি। চারপাশে প্রচুর ভীর। আমরা একটা নিরিবিলি জায়গায় যায়ে পাশাপাশি বসলাম। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় চারপাশ অন্ধকার। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো অন্ধকারকে আড়াল করে রেখেছে। আমি আর তানহা চারপাশের মনমুগ্ধকর পরিবেশ দেখতেছি আর গল্প করতেছি।
তানহা : আচ্ছা তুমি আমার মতো শুধু দ্বীনদার মেয়েকেই কেনো পছন্দ করলা? আরো তো অনেক কিছুই দেখতে বলা হয়েছে।
হাদিসে আছে,
রসূলুল্লাহ স. বলেছেন, চারটি জিনিস দেখে নারীকে বিবাহ করা হয়। যথা —
— তার সম্পদে
—তার বংশ মর্যাদা
—তার সৌন্দর্য
— তার দ্বীনদারী
অতএব তোমরা দ্বীনদার নারীকে জিতে নাও।
-(বুখারি ও মুসলিম)💕
অর্ণব : এর উত্তর দেওয়ার আগে একটা ঘটনা শুনো,
“গণিতবিদ আল খাওয়ারিজমিকে নারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল।
তিনি জওয়াবে বলেছিলেন,
- নারী যখন দ্বীনদার হয়, তখন তার মান ১।
*এর সাথে যখন সৌন্দর্য যোগ হয়, তখন একের সাথে একটা শূন্য যুক্ত হয়। ফলে মান হয় ১০।
*এর পর যখন সম্পদ যোগ হয়, তখন এর সাথে আরেকটা শূন্য যুক্ত হয়ে মান হয় ১০০।
- সর্বশেষ,যখন উপর্যুক্ত তিনটির সাথে তার বংশ মর্যাদা যোগ হয়, তখন একের সাথে আরও একটি শূন্য যুক্ত হয়ে তার মান দাঁড়ায় ১০০০।
কিন্তু যখন তার থেকে এক নাম্বারটা (দ্বীনদারী) চলে যায়, তখন তার মান শূন্য ছাড়া আর কিছুই বাকী থাকে না।”
আর আমার জন্য ঐ একটাই(১) যথেষ্ট। বুঝলা?
তানহা : ওহ! এজন্যই তোমাকে এতটা ভালোলাগে।
অর্ণব : এই যে শুনো।
তানহা : হুম বলো।
অর্ণব : আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ো।
তানহা : কেনো?
অর্ণব : বাসের সফরটাতে আমাদের দ্বারা অজান্তেই অনেক পাপ হয়ে গেছে। কেননা তখন আমরা স্বামী-স্ত্রী ছিলাম না। যদিও আমি নিজেকে সংযত রাখছিলাম, কিন্তু তোমার উপর নানাভাবে চোখ পড়ে যাচ্ছিলো। সবচেয়ে বড় কথা আমরা কথাবার্তা ঠিকই বলতেছিলাম। যা অনেক বড় একটা ফেৎনা ছিলো। তারপর আমরা হাসাহাসিও করতেছিলাম। নির্জনে দুজনে একা ছিলাম।
তানহা : হুম। আমিও নিজেকে ওতটা সংযত রাখতে পারিনি। কয়েকঘন্টাই শুধু কাটাইছিলাম, কিন্তু কতগুলা পাপ হয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস আমাদের বিয়ে হয়ে গেছিলো।
অর্ণব : বিয়ে করে নিছি বলেই যে আমাদের পূর্বের পাপের ক্ষমা হয়ে যাবে এমনটা ভাবা বোকামী। বিয়ের উদ্দেশ্যে হলেও বিয়ের আগে নারী-পুরুষ কোন ধরনের যোগাযোগ ইসলামে বৈধতা নেই।
তবে “আল্লাহ গাফুরুর রাহীম”। তিনি বান্দার পাহাড়সম গুনাহ ও ক্ষমা করে দেন। দুজন মিলে বিয়ের পূর্ববর্তী পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আন্তরিক তাওবাহ করতে হবে। আশা করা যায় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বাকী জীবন পরিচালিত করলে,দ্বীনের পথে চললে আল্লাহ আমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন।
তানহা : হুম ঠিক বলছো। আল্লাহর আরো একটি গুণ হলো তিনি কঠোর শাস্তি দাতা।
আল্লাহ বলেন,
“আমরা বান্দাদেরকে বলে দাও, ‘নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মম্ভেদ শাস্তি।”
-( হিজরঃ ৪৯-৫০)💕
অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে,
“তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
-(মায়িদাহঃ ৯৮)💕
এর ব্যাখ্যাতে একজন ইসলামী চিন্তাবিদ বলেছেন,
“সুতরাং তার একটা গুণবাচক দিকে ধরে থেকে অন্য দিকটা ভুলে যাওয়া আদৌ উচিৎ নয়। আশার সাথে ভয়ও থাকা উচিৎ।”
-(ইবনে উসাইমিন)💕
অর্ণব : হুম ঠিক বলছো।
তানহা : একটা সত্যি কথা বলবা?
অর্ণব : হুম কি কথা?
তানহা : আমার ব্যবহারে তুমি কষ্ট পাইছিলা তাই না? সত্যি বলবা কিন্তু।
অর্ণব : হুম। যেদিন ডাইরিটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলতেছিলো সেদিন। অনেক কষ্ট করে নিজেকে সংযত রাখে স্বাভাবিক কথা বার্তা বলতেছিলাম। চোখের পানি পড়েনি এই যা।
আমার হাতটি ধরে আমার দিকে ঘুরে,
তানহা : আমাকে ক্ষমা করে দেও। আমি ইচ্ছা করে সেদিন এগুলা করিনি। আমারো খুব কষ্ট হইছিলো এরকম নাটক করতে। মাফ করে দিও। আমি সত্যিই দুঃখিত।
তানহাকে কাছে টেনে নিয়ে,
অর্ণব : আরে আমি তো সেদিনই তোমাকে ক্ষমা করে দিছিলাম।আর সেদিন ধৈর্য ধরছিলাম বলেই আজকে তুমি আমার পাশে। এজন্যই তো
আল্লাহ বলেন,
আল্লাহ কষ্টের পরেই সুখ দেবেন।
-(কোরআন ৬৫ঃ৭)💕
তানহা : ধন্যবাদ তোমাকে। আমি সবসময় চাইছিলাম আমার স্বামী যেনো আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। আল্লাহকে শুকরিয়া।
অর্ণব : হুম। সেদিন তো আমি ভাবতেছিলাম তুমি যদি চাও তাহলে তোমাকে আটকায় রাখবো না। যত কষ্টই হউক তোমাকে যেতে দিবো। জোর করে তো আর ভালোবাসা যায় না। আর তোমারো অন্য কেউ থাকতে পারে। তোমার খুশিটাই আমার কাছে আগে।
তানহা এক ঝটকায় আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলো। রাগে,
তানহা : কি বললা?
আজ অনেক দিন পর তানহাকে এত রাগী দেখতেছি।
অর্ণব : এই শান্ত হও। আমি শুধু ভাবতেছিলাম। কিন্তু পরে তোমার সাথে ফেসবুকে কথা বলেই তো সব কিছু জানতে পারলাম।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে,
তানহা : আমি ওতো কিছু শুনতে চাই না। তুমি প্রমিস করো মৃত্যু না ছাড়া কখনো আমাকে ছেড়ে যাবা না। আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার……ইয়ুউ। একদম না। তুমি প্রমিস করো যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক আমাকে ছাড়ে যাবা না।
অর্ণব : আমি এটা করতে পারবো না।
চিৎকার করে,
তানহা : কেনো?
তানহার চোখগুলা ভয়ংকরভাবে লাল হয়ে আছে।
অর্ণব : তুমি শান্ত হও। আগে আমার কথা শুনো। আল্লাহ না করুক কালকে এমন পরিস্থিতি আসে যেটা তোমার জন্য আমার সাথে থাকা কষ্টদায়ক হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ না করুক কালকে যদি আমার কিছু হয়ে যায়, যে পরিস্থিতিতে তোমার আমার কাছে না থাকাটাই তোমার জন্য শ্রেয়। তখন আমি তোমাকে কখনো আমার কাছে রাখতে পারবো না। তোমার একটা জীবন আছে, তোমার ভবিষ্যত আছে, তোমার স্বপ্ন আছে সেগুলাকে শুধু আমার স্বার্থে তখন আমি মাটি চাপা দিতে পারি না।
তানহা দ্বিগুন রেগে আমার কলার ধরে,
তানহা : তোর সাথে আমি শুধু সুখের দিনে থাকার জন্য বিয়ে করছি? আর তুই যে আমার চাকরির জন্য টাকা দিছিস, আমার স্বপ্নগুলা যে পূরণ করছিস, ওগুলা কি? আমার জীবন দিয়ে হলেও শেষ বিন্দু পর্যন্ত তোর সাথে কাটাতে চাই। প্রমিস করতে বললাম না😡
একটু ভ্যাবাচেকা খাইলেও নিজেকে সামলে নিয়ে,
অর্ণব : কালকে যদি তুমি নিজে বলো যে “আমাকে যেতে দেও!” তখন?
চিৎকার করে,
তানহা : তুই জোর করে আটকাবি। বলতে বললাম না তোকে😡
এবার কয়েকজন মানুষ শুনাও পেয়েছে।
তাই তাড়াতাড়ি বললাম,
অর্ণব : হুম বাবা প্রমিস করতেছি আমি তোমাকে কখনো ছাড়ে যাবো না।
তানহা আমার কলার ছেড়ে শান্ত হয়ে পাশে বসলো। আমার প্রমিস করাটা ঠিক হয় নি। কেউ জানে না ভবিষ্যতে কি হবে। কিছুক্ষণ আমরা চুপ করে থাকলাম। কেউ কোন কথা বলতেছিনা। তানহা নিজেকে শান্ত করতেছে আর আমি ওর রাগ নিয়ে ভাবতেছি। বাপরে বাপ কি মারাত্মক রাগ! আমি তো ভয়ই পায়ে গেছিলাম।
কিছুক্ষণ পর,
তানহা : আমি দুঃখিত। তোমার কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে নিজেকে ভাবতেই জঘন্য লাগে। তাই আর কখনো ওগুলা বলবা না।
কি শান্ত কন্ঠ।
অর্ণব : হুম বুঝছি। বাপরে বাপ! তোমার কি রাগ।
একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে,
তানহা : তুমি আমার কাছ থেকে কি কিছু চাও? আজকের ব্যবহারটা করা উচিৎ হয় নি। তাই তোমাকে কিছু দিতে চাই। আমার সাধ্যের মধ্যে হলে আমি ইনশাআল্লাহ দিবো। প্লিজ না করিও না। একটা কিছু চাও।
অর্ণব : তাহলে একটা উপহার চাই।
তানহা : কি উপহার?
অর্ণব : একটা বরকতময় সংসার।
আমার ঘাড়ে মাথা রেখে,
তানহা : ইনশাল্লাহ! শুধু এতটুকুই?
অর্ণব : আর দুজনে মিলে এত বেশি আমল করতে চাই যে আমলের জন্য মৃত্যুর পরেও তোমার সাথে সুখে থাকার জন্য একটা জান্নাতী ঘর পাই। জান্নাতে তোমার সঙ্গী হতে চাই।
.
.
চারপাশের এই নিস্তব্ধতা আর দুজন প্রেমিক প্রেমিকার কথাবার্তার মাঝে একটু দূরে দুটো চোখ নিরবে সেই দুই প্রেমিক প্রেমিকাকে আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছে। নাহ! দুজনকেই না, শুধু তানহাকে। পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। চাদর গায়ে দেওয়া আর সাথে অন্ধকার তাই চেনা গেলো না।
(সমাপ্ত)
লেখা : ক্ষণিকের মুসাফির❣
[ ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান তা গল্পটিতে তুলে ধরা হয়েছে🙂.. Even আমিও ইসলামে যে সবকিছুর সমাধান দেওয়া আছে তা দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম😅.. গল্পটিতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রচুর হাদিস ও আয়াত বর্ণনা করা হয়েছে💙….একটি হলেও আমল করার চেষ্টা করুন😇… গল্পের সাথে মিল রেখে কুরআন ও হাদিসের রেফারেন্সগুলো খুঁজতে যায়ে প্রচুর অজানা হাদিস ও আয়াত জানতে পারছি🖤.. যেমন আমিও মনে করতাম সব মুসলমানই বেহেশতে যাবে😐.. কিন্তু না💔
আর অর্ণব আর তানহার মতো প্রকৃত দ্বীনদার Life Partner সবাই চায়😊… এদের চরিত্রগুলা সবাইকে ইসলামের প্রতি Inspire করার জন্য তৈরী💝…. তাই আপনার ভবিষ্যত Partner এর জন্য আপনিও হয়ে উঠুন অর্ণব বা তানহার মতো একজন প্রাকটিসিং মুসলিম বা মুসলিমাহ😉..
একটা হাদিস পড়ছিলাম,
“আল্লাহ তায়ালার এমন কিছু বান্দা আছে যাদের কে আল্লাহ সৃষ্টিই করেছেন যে তারা মানুষের প্রয়োজন পূরণ করবে । তাদের কাজকর্মে সাহায্য করবে । এইসব লোক কিয়ামতের কঠিন দিনে নিশ্চিন্তে থাকবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না ।”💕
যদিও হাদিসটা কতটুকু সহিহ তা জানিনা। তবে অর্ণব সেরকম একটা ছেলে😊… তাই অর্ণবের মতো সবাইকে বিপদে সাহায্য করাই আমাদের দায়িত্ব💖]
তবে মূল গল্প ইসলামিক ছিলো না। তাই মূল গল্পের প্লটের সাথে মিল রেখে অনেক নন ইসলামিক বিষয়বস্তু যুক্ত হয়ে গেছে। যেমন
- প্রথমের দিকে তানহার নূপুরের শব্দ।
*অর্ণবের অনেকগুলো পাত্রীর ছবি দেখা।(ফতোয়া অনুসারে)
*আর তানহাকে দেখার সময় ওর নিজ মাহরাম এর কেউ উপস্থিত থাকতে হইতো।
এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখিয়েন🙂
আল্লাহ যেনো গল্পের ইসলাম বহির্ভূত বিষয়গুলোর জন্য আমাকে মাফ করে দেন – আমিন🖤
আর সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দীর্ঘ এক মাস চার দিন ধরে গল্পটি ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য🤗
💙ইমাম মাহদীর সন্ধানে🙃
আজকে অন্তত কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো গল্প পড়ে
যারা গল্প পড়ার জন্য রিকুয়েস্ট দেন তারা প্লিজ গল্পে কমেন্ট করবেন
“”” গল্প পড়ার জন্য””””
সংগ্রহ:-https://www.facebook.com/islamicwriterumman/
Leave a Reply