Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 12
মিস রাদিয়া : মেয়েটা রাজশাহী থেকে এসেছে। অচেনা জায়গা আর রাস্তাঘাটের যে অবস্থা! ওর নিরাপত্তার ব্যাপার আছে না।
অর্ণব : কিহ?!
(আমি তো অবাক! আমি নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না।হাজারটা প্রশ্ন, হাজারটা ভাবনা, হাজার ধরনের অনুভূতি আমার মনে বিদ্যুতের মত খেলে গেল। আজকে কাটায় কাটায় দুই মাস পাঁচ দিন। সব কিছু মিলে যাচ্ছে। এটাই তাহলে আমার “উনি”। মানে আমার বউ। এবার ভুল হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না)
মিস রাদিয়া : হুম রাজশাহী থেকে। যা নাদিমকে নিয়ে আয়।
আম্মুর কথায় ভাবনা ভাঙ্গল,
অর্ণব : ওকে যাচ্ছি
মিস রাদিয়া : তাড়াতাড়ি যাস।আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
আমি কলটা কেটে ম্যাডামের বাড়ির দিকে হাটা দিলাম। হাটতে হাটতে ভাবতেছি,
যাক এবার আমার অপেক্ষাটা শেষ হলো। “উনা”-কে শেষ পর্যন্ত পেলাম। এজন্য মেয়েটাকে এত কাছের মানুষ মনে হচ্ছিল,আর কন্ঠটাও চেনা চেনা লাগতেছিলো। এবার আর তোমাকে হারাতে দিবো না প্রিয়তমা। অনেক কষ্ট করে তোমাকে পেয়েছি। কতদিন অপেক্ষা করলাম শুধু নিজের বউয়ের সাথে কথা বলবো বলে। তবে একটা জায়গায় খটকা আছে,
যেদিন আমি “উনা”-কে দ্বিতীয় দিন দেখছিলাম তখন উনার একজন বান্ধবী “তাসনিয়া” নামে কাউকে ডাকতেছিলো। কিন্তু আমি “উনা” -কে দেখতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে কাকে ডাকতেছিলো আর কে উত্তর দিছিলো কিছুই দেখিনি।
আর বিয়ের সময়ও আমি এরকমই কিছু নাম শুনছিলাম। আসলে বিয়েটা হয়েছে অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে। আমি নিজে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না যে আমি বিয়ে করতেছি। তাও আবার “উনা” -কে। বিয়ের পিড়িতে আমি “উনা” -কে দেখাতেই ব্যস্ত ছিলাম। সব কিছু এক প্রকার ঘোরের মধ্যেই সম্পন্ন করছি। ওদের কথাবার্তা তেমন মনে নেই।
নাজিমের ম্যাডামের নাম তানহা। আর আমার লক্ষি বউয়ের নাম তো ছিলো তাসনিয়া। উফফফ! আল্লাহ বাঁচাও। এটাই যেন আমার “উনি” হয়। আর এগুলা ঝামেলা ভালো লাগে না। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছি এটাই যেন হয়।
দোয়া মুসলিমের জন্য অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। যা বেশির ভাগ সময় অব্যবহৃতই থেকে যায়।
এগুলা ভাবতে ভাবতে নাজিমের ম্যাডামের বাসার দিকে এগোচ্ছি। যত আগাচ্ছি তত বুকের মধ্যে ভয় লাগতেছে। আর তত বেশি পরিমানে দোয়া করতেছি। বুকের ধুকধুকানিটা ক্রমস বেড়েই যাচ্ছে।
ভাবতে ভাবতে নাজিমের মেডামের বাসায় পৌঁছে গেলাম। আজকে বাসাটা ভালো করে দেখলাম। বাসাটা ছোট। রোমান্স করার জন্য পারফেক্ট জায়গা।একাই থাকে মনে হয়।রাত্রি বেলায় বৌটার সাথে রোমান্স করতে আসতে হবে। আমার বউটার পছন্দ আছে বলতে হবে।
ডাকতেই নাজিম দরজা খুলে চলে গেলো।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
তানহা : অলাইকুম আসসালাম।
অর্ণব : নাজিম পড়া শেষ হয়েছে?
(যদিও জানি আমি অনেক আগেই আসছি। আজকে সব কিছু জানতেই হবে। এতো তাড়াতাড়ি পড়া শেষ হবে না)
তানহা : এখনো তো সময় শেষ হয়নি,আরো ৩০ মিনিট পড়ে আসতেন।
( নাজিমের মেডাম)
দূর থেকেই বললাম,
অর্ণব : একটু আগেই এসে পড়লাম।
তানহা :-দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন।
অর্ণব :- সারাজীবন তো অপেক্ষাই করলাম।
(চমকে উঠে)
তানহা:-মানে?
অর্ণব :- না কিছুনা,আপনার রুমগুলা একটু ঘুরে দেখতে পারি।
তানহা :-আমি ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছি,কি দেখবেন এ বাসার।
(পিছনে না ঘুরেই কথাগুলো বললো।কালকের মতো আজকেও হিজাব পড়ছে। আজকের হিজাবটা দারুন।)
অর্ণব :- তবুও একটু দেখি!
বলেই একটা রুমে প্রবেশ করলাম। এবার আমার বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো। কেননা তানহার মতো মেয়ে একজন নন মাহরাম ছেলেকে কখনো নিজের রুমে ঢুকতে দিবে না। এটা আমার “উনি” না ছাড়া কেউ না।
রুমটা তার বেডরুম মনে হয়। উফফ কি সুন্দরভাবে সবকিছু সাজানো গুছানো। বিছানা তে একটা ডাইরি পেলাম। প্রথম পাতায় লেখা, “Tasniya Islam Tanhaa”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নামটার দিকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। এই মূহুর্তে আমার চেয়ে বেশি খুশি সম্ভবত দুনিয়াতে কেউ নেই। আলহামদুলিল্লাহ! জি হ্যাঁ এটাই আমার উনি। আমার বউ। আমার তানহা।
বাহ! নামটা খুব সুন্দর। শেষ পর্যন্ত আমার অপেক্ষা চূড়ান্তভাবে শেষ হলো। যাকে আমি সবখানে খুজে বেড়াই, সে আমার ছোট ভাইকেই পড়ায়। এবার তোমাকে পেয়েছি প্রিয়তমা। আর কোথাও হারাতে দিবো না।
যদিও প্রচুর খুশি হয়েছি। কিন্তু খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় নি। এটা একজন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য নয়। তারা খুশিতে আত্মহারা না হয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আমিও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন,
তোমার পরবর্তীতে আমি এক উম্মত পাঠাব, কাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয় যদি তাদের হাসিল হয় তাহলে তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং শুকরিয়া আদায় করবে, আর যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে তাহলে তারা সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করবে।
-(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৪৫)💕
আবার,
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।”
-[ইবরাহীম; ১৪:৭]💕
এসব ভাবছি আর ডাইরি দেখছি। হাতের লেখাটাও দারুণ! আমি “উনা” -র ব্যাপারে যত জানতেছি তত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
বাব্বাহ! এটাতো আমাদের বিয়ের কাহিনীটা। সম্পুর্নটা লিখে রাখছে। এটাতো পড়তেই হবে। তাহলে পুরোটা সময় ধরে উনি কি ভাবছেন তা জানতে পারবো। আবার আমার ব্যাপারে কি ভাবেন তাও জানতে পারবো।
এমন সময় “উনি” রুমে আসলেন।
তানহা : কি করছেন?
অর্ণব : এইতো ডাইরি পড়ছি তোমার!
(পিছনে না তাকিয়েই জবাবটা দিলাম)
তানহা : Are you Insane? Don’t you have manners? Don’t you know that reading someone else’s Diery is bad manners? And How dare you to call me “তুমি”?
মনে মনে,
বউটা আমার অনেক রাগী। ইংরেজিটা বুঝেও না বোঝার ভান করলাম। নিজের বউকে তুমি করেই বলতে হয়।আর তুমি করে বললে কেউ পাগল হয়না।
অর্ণব : ইংলিশ বুঝিনা, বাংলায় বলো?
তানহা : অপরিচিত জনকে আপনি বলুন?
অর্ণব : তুমি বললে কি হবে?
তানহা : কিছুনা পাগল যত্তসব! আমার ডাইরি দিন।
অর্ণব : এটা বাসায় নিয়ে গিয়ে পড়ব….তাই আজকে দিতে পারবো না তোমায়।
তানহা দৌরে আমার কাছে আসলো ডাইরি নেবার জন্য,আমি পেছন ঘুরেই আছি।
তানহা : দিন বলছি আমার ডাইরি?
(ডাইরিটা পড়লেই সব কিছু জানা পাবে। একদম দেয়া যাবে না। আর আমিও পাগলের মতো ডাইরিটা বিছানায় রাখছি।ড্রয়ারে রাখতে হইতো)
অর্ণব : না দিবনা
(তানহার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম)
দীর্ঘ দুইমাস পর আমরা একজন আরেকজনকে দেখলাম। কিছুক্ষণের জন্য আমরা অন্য এক জগতে চলে গেছিলাম। কয়েক সেকেন্ড আমরা কেউ পলক পর্যন্ত ফেলিনি। পরস্পরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। কি সুন্দর মিষ্টি চেহারা উনার। হিজাবটা ওর সৌন্দর্য আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিছে।
তানহার চেহারায় রাগ, অভিমান, বিরক্তি আর ঘটনার আকস্মিকতার মিশ্র ছাপ।
নিরবতাটা আমিই ভাঙ্গলাম,
অর্ণব : কি হল ডাইরিটা নেও, আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছো কেন।
তানহা :- কো…ই না তো…..
(মনে হচ্ছে এখান থেকে আবার ঢাকা বা রাজশাহীতে যেতে হবে।উফফ এতো চেষ্টা করলাম তাও ইনার কাছে পরিচয়টা গোপন রাখতে পারলাম না।)
অর্ণব :- তাহলে কি ভাবছ এত। আর আমায় চিনতে পারছো?
অর্ণব :- না…তো কে আপনি?
অর্ণব :- ওহহো! বিয়া করলাম ২ মাস আগে আর এত তারাতারি ভুলে গেলা?
এমন সময় একটা লোক দরজায় ডাক দিলো। তানহা দরজা খুলতে চলে গেলো।
তানহা : আসসালাম অলাইকুম।
লোকটি : তানহা মা এ মাসের ভাড়াটা দিলে আমার একটু উপকার হত।
বুঝলাম, ইনি বাড়িওয়ালা।
তানহা : চাচা আপনার ভাড়া আমি তিন – চার দিনের ভিতরই দিয়ে দিবো ইনশাল্লাহ। একটু অপেক্ষা করেন।
বাড়িওয়ালা : কথাটা যেন ঠিক থাকে। আসলে আমারো লাগবে তো। নইলে জোড় করতাম না।
তানহা : হুম বুঝছি চাচা, আমি এখানে মনে হয় আর থাকব না, মনে হয় ঢাকা চলে যাব,খালি রেজাল্টার অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ পারলে দুই-তিন দিনের মধ্যে আপনার টাকা দিয়ে দিব।
বাড়িওয়ালা:-ওকে মা তাহলে আমি আজ আসি!
তানহা :- চাচা চা খেয়ে যান??
বাড়িওয়ালা:-না মা অন্য দিন আজ একটু তারা আছে আমার। আসসালাম অলাইকুম
তানহা :- ওকে চাচা।অলাইকুম আসসালাম।
বাড়িওয়ালা চলে গেল, তারপর যখন তানহা ভিতরে আসলো,
অর্ণব : আমার জন্যে এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
তানহা : ইস! শখ কতো।
একটু রেগে,
অর্ণব : এই তুমি জানো না আমি তোমাকে দীর্ঘ দুইমাস ধরে পাগলের মতো খুঁজতেছিলাম। সেই যে গেলা তারপর আর কোন খোঁজখবর নাই। তোমাকে আমি কালকে এতো জোর করলাম তাও তুমি বললানা কেনো? দিনাজপুরে এসেও আমার সাথে দেখা করো নি কেনো? এতো দিন কোথায় ছিলা? তোমার কি ন্যুনতম দায়িত্ববোধ নেই? আর তুমি জানেও আমাকে বলনি কেনো তুমিই আমার “উনি”?
তানহা : এত গুলা প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।
অর্ণব : তোমাকে আজকে সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আরো প্রশ্ন আছে আর অনেক কথা আছে তোমার সাথে।
তানহা : জবাব না দিলে কি করবেন? দিবো না!
অর্ণব : না দিলে আর কি করার। যাও নাস্তা বানাও খেয়ে ঘুমাবো।
তানহা : আমি কিন্তু মানুষ ডাকব?
অর্ণব : ডাকলে ডাক,তুমি আমার বিয়ে করা বউ, বউয়ের কাছে থাকলে কিছু আসে যায়না, আর কেউ কিছু বলবেও না😉
তানহা : দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসিনা,আর ঐ দিন একটা দুর্ঘটনাবশত আমাদের বিয়ে হয়ছে। দয়া করে আমার সাথে এমন করবেন না।আমি শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা করতেছি। রেজাল্টটা হয়ে গেলেই আমি চলে যাবো। আর আপনি আমার সাথে জোর করলে আমি এখনই আবার রাজশাহী চলে যাবো।
(চলবে…)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply