অর্ধাঙ্গিনীঃ৯ম পর্বঃ

অর্ধাঙ্গিনীঃ

৯ম পর্বঃ
★মোর্শেদা খাতুন★
:::::::::::::::::::::::::::::::
আফনান তাকিয়ে দেখল জারা উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে।আফনান কিছু না বলে পাশ ফিরে শুলো।জারা ওর কাধে হাত রেখে বলল-“রাগ করেছেন?”কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফনান বলল
-“না”!
-“তাহলে, খাননি কেন?না খেয়েই শুয়ে পড়েছেন?”
-“আমার ক্ষিধে নেই!আমাকে ঘুমুতে দাও! “
জারা হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল।ওর শ্বাশুড়ীর দিকে দেখতে গিয়ে আফনানের যে চুড়ান্ত অযত্ন হচ্ছে তা জারা খেয়ালই করেনি।শ্বাশুড়ীর মন পেতে ও যেন জীবন বাজি লাগিয়ে দিয়েছে অথচ এদিকে অতি আপন স্বামীকেই অবহেলা করে ফেলছে ও।আফনান চুপ করে পড়ে আছে,একবারো এদিকে তাকাচ্ছে না।জারা আস্তে করে ডান হাত দিয়ে আফনানের পা ছুঁলো-“আমাকে মাফ করে দিন না প্লিজ,আর এরকম হবেনা।
আফনান প্রায় লাফ দিয়ে উঠল-“আরে আরে,কি করছো?”তাকিয়ে দেখলো জারা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।আফনান ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল-“উফ্,তুমি দেখছি ভীষণ ছেলেমানুষ!এতে কান্নার কি হলো?”
জারা মুখ নামিয়ে বসে থাকল।আফনান বিছানা থেকে নামল।-“চলো খেতে দেবে!”!
জারা চোখ মুছে উঠে পড়ল।কমলাকে ডেকে বাবুর কাছে বসিয়ে ওরা দুজন খেতে এলো।আফনান ঘন ঘন হাই তুলছে,জারা ওকে হাতমুখ ধুয়ে আসতে বলল।খেতে বসে জারা জানতে চাইল-“কাল অনেক মেহমান আসবে শুনলাম।পুরুষ কেউ হলে আমি সামনে যেতে চাইনা,আম্মুকে এটা বুঝিয়ে বলে দেবেন,প্লিজ”!
-“হুঁ,বলে দেবো!” আফনান নিঃশব্দে খেতে খেতে বলল।খাবার শেষে শুতে যাবার সময় জারা বলল-“মাথায় হাত বুলিয়ে দেই?”
-“দাও…আর কি?দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।”
-“মানে?”
-“মানে আবার কি? এতো কিছু বোঝো আর এটা বোঝোনা আমি কি চাই?” জারার চেহারায় রক্ত জমা হলো।
-“হয়েছে আর লাল নীল হতে হবেনা।সকালে ডেকে দিও”!
…..
পরদিন শ্বাশুড়ী খোঁজ নিলেন আয়োজন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।জারা বাচ্চাকে ঘুম পাড়াচ্ছিল।তখন শ্বাশুড়ী সাবিহা চৌধুরী এলেন-“শোনো,রাতে আমার ছোটবোন ওর ছেলে মেয়ে ছেলে বৌ সবাই আসবে,আমার এক ননদও আসবে।তুমি একটু সেজেগুজে তৈরী থেকো!বাচ্চাকে ওখানে নেবার দরকার নেই,কমলাকে দিয়ে ঘরেই রেখো।ও,হ্যাঁ,আফনান ফোন করেছির,তুমি নাকি বাইরের লোকদের সামনে যাও না?”
-“জ্বী,আম্মু।”
-“কেন ইসলামে কি নিষেধ আছে,যে আত্মীস্বজনের সামনে যাওয়া যাবেনা?”
-“বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া গায়ের মাহরামের সামনে না যাওয়াই উত্তম,এটা তাকওয়ার অন্তর্ভূক্ত।”
-” কি জানি বাবা,এতো বুঝিনা,ফিনের খালু মুরুব্বী মানুষ যেয়ে সালাম দিয়ে আসবে”!
জারা মাথা কাত করলো! পরপুরুষের সামনে যেতে কিছুটা খারাপ লাগলেও একটা জিনিস ভেবে জারার কাছে খুব ভালো লাগছে,তা হলো ওর শ্বাশুড়ী যদি ওকে বউ হিসেবে ততটুকু না মানতেন তাহলে তাদের সামনে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য পীড়াপীড়ি করতেন না।

মাগরিবের নামাজ পড়ে বাবুকে খাইয়ে নিজে তৈরী হতে বসল জারা।বেছে বেছে আফনানের কিনে দেয়া একটা শাড়ী বের করল জারা।শাড়ীটাতে খুব সুন্দর মালটি কালারের কারুকাজ করা,জায়গায় জায়গায় রূপা আর কুন্দনের হালকা কাজ করা।শাড়ীর সাথে ফুলহাতা ব্লাউজ পড়লো জারা।চোখে হালকা করে কাজল দিলো, ঠোঁটে সামান্য ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক।
মেহমান এলে ওর শ্বাশুড়ী ওকে ডেকে পাঠালেন।যথাসম্ভব ঢেকেঢুকে ঘর থেকে বেরুলো জারা।শ্বাশুড়ী বেরিয়ে ওর ঘরের দিকেই আসছিলেন,জারাকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন,তাঁর মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে যেন কেউ নেমে এসেছে।উনাকে দেখে জারা ইতস্তত করে বলল-“ভেতরে যাবো আম্মু?”
সাবিহা সম্বিত ফিরে পেলেন-“উুঁ…বলে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলেন।তারপর কি চিন্তা করে বললেন-“না,থাক,ড্রইংরুমে যেতে হবেনা তোমাকে,ওদের আমি আমার রুমমে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ওরা তোমার সাথে ওখানেই বসুক,এখানে ফিনের খালু,খালাত ভাইরা আছে।ওদের সামনে যেতে হবেনা তোমাকে।”
জারা মনে মনে আল্লাহর শোকর করল।খুব দোয়া করছিল যেন ওকে লোকদের সামনে যেতে না হয়,শ্বাশুড়ীর মন যে বদলে যাবে জারা ভাবতেই পারেনি!আসলে মানুষের মন যেকোন সময় বদলে দেবার ক্ষমতা যিনি রাখেন তাঁর কাছেই আমাদের নিজেদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সমস্যা তুলে ধরা উচিত।

সাবিহার ঘরে মেয়েরা সবাই জড়ো হলো।জারা সালাম দিয়ে ওদের সামনে যেয়ে বসলো।সাবিহা গর্বিত ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকালেন-“ছোটোখালামনি উঠে এসে জারারাকে জড়িয়ে ধরলেন-“ভারী মিষ্টি মেয়ে”বলে।বাকীরা হা করে বারবার জারাকে দেখতে লাগল।ছোটখালামণির মেয়ে ইরিণা তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো জারার দিকে,ওর মুখে হাসি নেই।ওকে দেখখলে যে কেউ বুঝে ফেলবে যে ও ঈর্ষার আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।প্রথমত জারার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য,দ্বিতীয়ত জারা ওর জায়গাটা দখল করেছে বলে।নইলে এতদিনে আফনানের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যেতো।বড়খালামনি নিজে ওকে পুত্রবধু বানাতে আগ্রহী ছিলেন! রাগে কষ্টে ইরিনার চোখ দুটো জ্বালা করে উঠল।
মেহমানদের খাবারের আগ দিয়ে আফনান আসল।সবার সাথে হাত মেলাল,কুশল বিনিময় করলেও ওর চোখ এক কাঙ্খিত জনকেই খুঁজে ফিরছিল।ওর যৌবন সরসী নীরে মিলনের শতদল জারা।ইরিনা বিষয়টা লক্ষ্য করল এবং বেশ বুঝতে পারল সে জারা নামের ঐ গাইয়াটাকেই খুঁজছে।সে এগিয়ে গিয়ে খুব কায়দা করে ঠোঁট বাকিয়ে বুক পর্যন্ত হাত সালাম দিল।
-“স্লামালিকুম ফিন ভাই”!
আফনান ঘুরে তাকিয়ে হেসে বলল-“আরে তুমি ইরিনা না?ভালো আছো?”
-“আমি কিন্তু সালাম দিয়েছি ফিন ভাই”!আদুরে গলায় বলল ইরিনা।আফনান শুধরে দিল-“উঁহুঁ,তুমি যেটা দিয়েছো সেটা একচুয়েলি সালাম হলো না,সঠিক সালাম হবে আসসালামুআলাইকুম”যার অর্থ,আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।তোমার ভাবির কাছ থেকে শিখেছি..হাহাহা…!”প্রানখোলা হাসি দিল আফনান।ইরিনার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল।আফনান ওর জীবনের প্রথম ক্রাশ।ওকে দেখলে আজো ইরিনার বুকের ভেতর কেমন করে উঠে।আফনানের মত টল ডার্ক,ম্যানলি ছেলে সে খুব কমই দেখেছে।প্রচুর টাকা তো আছেই কিন্তু তার পাশাপাশি আফনান খুব ভদ্র আর সংযমী একটা ছেলে।মেয়েদের প্রতি আগ্রহ কম,একটু ধার্মিক প্রকৃতিরও।ইরিনার কাছে ওর এই গুনগুলো ইউনিক লাগে।সে নিজে যদিও ধার্মিকতার ধারেকাছে নেই তবু আফনানের গাম্ভীর্য, ব্যক্তিত্ব আর ওর দাড়ী সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত পারসোনালিটি।ইরিনা দাড়ি পছন্দ করেনা কেবল আফনানের দাড়িটাই ওর চরম ভালো লাগে।ওকে দাঁড়িতে হেব্বি মানায়।হঠাৎ ভাবনার জ্বাল ছিন্ন হলে ইরিনা চারপাশে আফনানকে খুঁজল,গেল কোথায়??

জারাকে খুঁজতে রান্নাঘরে চলে এল আফনান।জারা বুয়াদের কে খাবারের ব্যপারে কি যেন বুঝাচ্ছে হাত নেড়ে নেড়ে।আফনানকে দেখে বুয়ারা ত্রস্তে সরে গেল।জারা হেসে বলল-“আরে আপনি? কখন ফিরলেন?”
কিন্তু আজ জারার হাসিতে মন গললোনা আফনানেরর।সে জবাব না দিয়ে দাঁতে দাঁতত চেপেপে তাকিয়ে রইল।তারপর বলল-“দুমিনিটের জন্য ঘরে এসো!”বলে চলে গেল।
জারা ধীর পায়ে ঘরে এলো,ঘরে ঢুকতেই আফনান ওকে হেঁচকা টানে নিজের বুকের ওপর টেনে নিল।জারা টাল সামলাতে না পেরে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।আফনান ওকে জড়িয়ে ধরে কোনরকম রকম বোঝার অবকাশ না দিয়ে ওকে সেই প্রথম দিনের মত চেপে ধরল।জারা ছটফটিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করল,পারলোনা।কয়েক মিনিট পর আফনান তার বাধন ঢিল করল। জারা অস্থির হয়ে বলল-“বাড়ী ভর্তি মেহমান আর আপনি…!”
-“মাথা খারাপ হলে আমি কি করবো?”
জারা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।-“আমাকে ছেলেমানুষ বলেন আর আপনি নিজে কি?”
..
ইরিনা আফনানকে খুঁজতে খুঁজতে ওর ঘরের কাছে চলে এল।দুজন নরনারীর ফিসফিসানী ইরানীকে কৌতুহলি করে তুলল।সে কান পাততেই আফনানকে কিছুটা ক্ষোভের সাথে বলতে শুনলো-“ছেলেমানুষী তাই না?আমি যে দিনের পর দিন ধৈর্য্য ধরে আছি সেটার কি? শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে যে আমাদের এতদিন ধরে বিয়ে হয়েছে অথচ আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই??তুমি কি আমার উপর অবিচার করছো না?বলো,আজ বলতেই হবে!”
উত্তেজনার আবেগে ইরিনার চোখ গোল হয়ে গেল।ডান হাতটা আপনা হতেই উঠে এল হা করা মুখে।তাতে ওর হাতের ধাতব ব্রেসলেট পরস্পর বাড়ি খেয়ে রিনঝিন শব্দ করে উঠল।আফনান চুপ হয়ে গেল-“কিসের শব্দ এটা ?”সে উঠে এসে বাইরে তাকাল।কেউ নেই।কিন্ততুআফনান নিশ্চিত একটু আগেই এখানে কেউ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিল।পারফিউমের একটা গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে,এবার আফনানের মনে হলো গন্ধটা তার চেনা!
.
মেহমান বিদায় নিতে নিতেই রাত একটা বেজে গেছে।জারা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমাতে এসে দেখে আফনান ঘুমিয়ে পড়েছে।কোনরকম কাপড় বদলে ঝিমুতে ঝিমুতে বাবুটাকে ফিডার খাওয়ালো তারপর নিজেও একপাশে শুয়ে পড়ল।
..♠…
পরদিন সকালে সাবিহা হন্তদন্ত হয়ে জারার দরজা নক করলেন।জারা উঠে দ্রত দরোজা খুলে দিয়ে বলল-“কি হয়েছে আম্মু?”
-“জারা ফিনকে ডাকো তো,তাড়াতাড়ি!”
-“ওকে আমার রুমে পাঠাও!”সাবিহাকে কিছুটা অস্থির মনে হলো।জারা মনে মনে আল্লাহর কাছে দুআ চাইল সব কিছুর অকল্যান থেকে।
আস্তে করে আফনানকে ডাকল-“এই যে উঠবেন?”
আফনানের একটা ভালো অভ্যাস হলো একবার ডাকলেই ঘুম ছুটে যায়।বেশি ডাকাডাকি করতে হয় না।
সে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমে আসে।-“কি হয়েছে মা?”

জারার বুকটা অকারনেই ধুকপুক করছে।কেন যেন মনে হচ্ছে কি একটা ঘটতে চলেছে।সে মনে মনে তার সদা সহায়ক রবের দ্বারস্থ হলো।অকল্যান থেকে পানাহ চাইল।আধাঘন্টা পর আফনান ঘরে ঢুকল।ওর চোখে মুখে পেরেশানীর চিহ্ন স্পষ্ট।জারা সহসাই প্রশ্ন না করে অপেক্ষা করল,হয়ত আফনান নিজেই বলবে!
আফনান ধপ করে খাটে বসে দুহাতের আঙ্গুলগুলো চুলে চালিয়ে দিলো।জারা ভয়ে ভয়ে বললল-“কি হয়েছে?”
আফনান কিছুক্ষণ চুপ করে রইল তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“জারা আমাকে আজ অথবা কালই দেশের বাইরে যেতে হবে।সেজানের ওখানে।ওর অবস্থা খারাপের দিকে।ওকে যার দায়িত্বে রেখে আসা হয়েছে সে খবর পাঠিয়েছে।ইটস আর্জেন্ট।
জারার বুকের ভেতরের বাতাস যেন থেমে গেল।তবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“কদিনের জন্য যেতে হবে?”
আফনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল-“তোমাকে বাবুকে একা রেখে যেতে মন চাইছেনা কিন্তু কোনো উপায়ওতো দেখছিনা।আম্মু বয়স্ক মানুষ তার উপর অসুস্থ।তার পক্ষে হুট করে এভাবে রওনা দেয়াটা অসম্ভব প্রায়।আমাকেই যেতে হবে,কিছু ক্রিটিক্যাল বিষয়ে ডিসিসান নিতে হতে পারে।
আফনান এবার কাতর চোখে তাকালো জারার দিকে-“কটা দিন থাকতে পারবেনা?আম্মুর সাথে তো তোমার ভাবও হয়েছে আজকাল।পারবেনা? “বলতে গিয়ে আফনান নিজেই আবেগাপ্লুত হয়ে গেল।জারার মাথাটা টেনে বুকে লাগালো।।-“শিগগিরই ফিরবো সোনা! আমার জন্য দুআ করো তুমি।”
জারা প্রবল চেষ্টা করেও কান্না দমাতে পারলোনা।নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলো।কাছে পেয়েও তাকে আপন করতে পারলিনা এবার তো সে বহুদুরে চলে যাচ্ছে। এখন কি দিয়ে বাঁধবি??

পরিচিত লোক থাকাতে আজ রাতেরই টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে গেল।জারা নিরব কান্নায় ভাসতে ভাসতে আফনানের লাগেজ গুছিয়ে দিল।যাবার সময় আফনান শুধু ওর গালে হাত রেখে বলল-“নিজের দিকে খেয়াল রেখো।”
জারা ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকালো।-“আপনিও”!
-“পৌঁছে ফোন দিবো”!
রাত একটার ফ্লাইটে আফনান কানাডার উদ্দেশ্যে উড়াল দিল।
..♠..
জারার মনে হলো দিনগুলো যেন একেকটা বছর আর রাতগুলোও সুদীর্ঘ হয়ে গেছে।রাতে খুব কমই ঘুমায় জারা।তাহাজ্জুদের পাটিতে ওর রাতের একটা বড় সময় কাটে।কেঁদে কেঁদে প্রিয় মিলনের ফরিয়াদ জানায়।
.
আফনান যাবার দিন থেকেই ইরিনের আনাগোনা বেড়ে গেছে।সারাক্ষণই সাবিহার রুমে।জারা ঢুকলেই চুপ করে থাকে।দুদিন হয়ে এল আফনানের কোনো ফোন মেল কিছুই পাচ্ছেনা জারা।আম্মুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল সে পৌঁছেছে।তবে জারাকে ফোন না দেয়ায় সে কিছুটা হতাশ হলেও দুয়া জারী রাখল।
.
আজ অনেকদিন পর ফুপির কথা মনে পড়ল।চোখ মুছে ফোন দিল ফুপিকে।অনেক কথা বলল।ফুপি ওর বন্ধুর মত, সব শুনে তিনি জারাকে বললেন-“একবার সিলেটে বেড়িয়ে যা”!
-“না,ফুপি ও না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবোনা! তাছাড়া আম্মু এদিকে একা!”
-সাবিহাও আজকাল চুপ চাপ থাকেন,কিছুটা অসুস্থও হয়ে পড়েছেন।মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলেন,তারপর শুয়ে বসেই থাকেন।জারা পীড়াপীড়ি করে তাকে খাওয়ায়।
.
আজ আম্মু ডাক্তারের কাছে গেছেন।জারা বাড়ীতে একাই বলতে গেলে।কাজের লোকেরা ভেতরে কম আসে কেবল কমলা ছাড়া।জারা বাবুকে খাইয়েছে এমন সময় ফোন বাজল।ধরার কেউ নেই বলে জারা নিজেই সালাম দিয়ে রিসিভ করলো!”
কোনোরকম সম্ভাষণ না বলেই কেউ একজন খসখসে গলায় বলল-“মন দিয়ে শুনুন,ও বাড়ীতে যদি থাকেন তো আজ রাতেই খুন হয়ে যাবেন আপনি অথবা আপনার বাচ্চা।ভালো চান তো পালান।যদি বেশি বুঝে কাউকে জানাতে যান তো বিপদ বাড়বে!
-“জ্বী,আ..আপনি কে?”কে আমাকে বা আমার বাচ্চাকে মারবে??”
-“ও বাড়ীতে আপনার শত্রুতো একজনি,সাবিহা চৌধুরী!”
-“কিন্তু আপনি কে?”
-“আফনানের শুভাকাঙ্খী।”বলে লাইনটা কট করে কেটে দিল।

জারার পা যেন চলতে চাইছেনা।মাথাটা ঠিকমতো কাজ করছেনা।এমন সময় কমলা এসে চারপাশ তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল-“মামী,মামার ঐ বোইনটা না ফুনের মধ্যে আপনের নামে মন্দ কথা কইতাছিল কার লগে জানি”!
জারা জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি তাই মাথা ঠান্ডা করে কিছু ভাবতেও পারছেনা।হঠাৎ মনে পড়ায় ফুপিকে ফোন দিল।দ্রুত হাতে ব্যাগ গুছালো, যা হবে পরে দেখা যাবে।একটা চিরকুট লিখলো কাঁপা হাতে, কমলার হাতে দিয়ে বলল-“কেবল মামা ফিরলে তার হাতে দিবি আর কারো হাতেনা”!
-“যাতো মা,ড্রাইভার চাচাকে ডেকে আনতো!”
জারা অসুস্থ বোধ করছে।ড্রাইভার চাচা এত ভেতরে কখনো আসেননি,তিনি সসংককোচে বাইরে থেকে বললেন-“আম্মা,ডেকেছেন?””
জারা বোরকা নিকাব পড়ে তৈরী।ঘর থেকে বেরিয়ে কাতর স্বরে বলল-“আমার খুব বিপদ চাচা,আমাকে কোনোভাবে সিলেট শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবেন?”
চাচা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে মিনিট খানেক ভেবে বললেন-“আপনি আসেন আম্মা”!
জারার গাড়ী বেরোনোর পরপরই ইরিনের গাড়ী ঢুকল।
জারা এখন সিলেটের পথে।
একা.!অসহায়!
….

চলবে……..


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *