আমার হাতে লাগে ব্যথা রে, হাত ছেড়ে দাও সোনার দেউরা রে

আমাদের সমাজে ভাবিকে মায়ের চোখে দেখে হয়। দেখা হয় বললে ভুল হবে, বলতে হবে দেখা হতো। পৃথিবীর যেকোন সুস্থ সমাজ দেবর ভাবির অনৈতিক সম্পর্ক কেউ মেনে নেয় না। আশা করি কেউ মেনে নিবেন না। এটাই আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু সত্যি যদি আমরা দেবর ভাবির অনৈতিক সম্পর্ক মেনে না নেই তাহলে এই সম্পর্ক টিকে সবার সামনে রোমান্টিসাইজ কিভাবে করি? কিছু গান দেখলেই বুঝতে পারবেন আমরা কিরকম সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ

1.ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে গাওয়া ভাসুরের গান-
“তৈ তৈ তৈ তৈ তৈ
আমার বৈয়ম ফাখি খৈ”
( 86 lakh + views)
২.কোক স্টুডিও নিয়ে আসলো, স্বামীর ছোট ভাইয়ের উদ্দেশ্যে গাওয়া ভাবীর গান-
“হাত ছাইরা দাও সোনার দেওরা রে
আমারও এই নরম হাতে লাগে ব্যথা রে
হাত খানি ছাইড়া দিয়া ধরো আমার মাজা”
(2.7 crore + views)

উপর দিয়ে সবাই পরকীয়ার বিরুদ্ধে বলে, সমাজে তার ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু তারাই আবার এই সব অশ্লীল পরকীয়ার ইঙ্গিত সমৃদ্ধ গান ছড়িয়ে দেয়। সমাজে ছোট-বড় সবার মুখে এসব গান ট্রেন্ডিং। কিন্তু এসব গানের মাধ্যমে যে পরকীয়াকে সমাজে নরমালাইজ করা হচ্ছে, সেই খবর কি রাখে ?
এখন আপনি চিন্তা করেন এই গান গুলো আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে??. প্রশ্ন টা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করবেন !!

•আমরা মনে করি ভাবি মায়ের মতো , দেবর ছোটো ভাইয়ের মতো । কিন্তু আমরা সবাই যদি চাঁদ কে সূর্য বলি তাহলে কি চাঁদ সূর্য হয়ে যাবে ? না । আমরা কি বলি তা দিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই হয় না । আমরা যতোই ভাবিকে মা বলি ভাবি কখনো মা হয়ে যাবে না। আর দেবর কে ছোট ভাই মনে করলেই দেবর ছোটো ভাইয হয়ে যায় না । আমরা কি চিন্তা করি বা বলি তা দিয়ে ইসলাম চলে না । ইসলাম চলে তার নিজের নিয়মে।

  • দেবরের সামনে ভাবির পূর্ণ পর্দ করতে হবে। কথাটি খেয়াল করবেন আমি কিন্তু পর্দ করতে হবে তা বলিনি । আমি বলেছি সম্পূর্ণ পর্দা করতে হবে। কারণ আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন দেবর তো মৃত্যু তুল্য । তাঁর মানে মৃত্যু যতো ভয়ংকর তার তার থেকে বেশি ভয়ঙ্কর হলো দেবর। আপনি যে পরিস্থিতিতে থাকুন না কেন আপনাকে আপনার দেবরের সামনে সম্পূর্ণ পর্দা করতে হবে। আর একটি কথা পর্দা কোনো নফল ইবাদত না । এটা কিন্তু ফরজ । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।

আমরা কিছু হাদিস দেখে নেই।

(১)‘উকবাহ ইব্‌নু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! দেবরের ব্যাপারে কি হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য। [মুসলিম ৩৯/৮, হাঃ ২১৭২, আহমাদ ১৭৩৫২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫২)ফুটনোটঃ[২২] ———- শব্দের অর্থের ব্যাপারে ইমাম তিরমিযী বলেছেন- ‘হামো’ মানে স্বামীর ভাই –স্বামীর ছোট হোক বা বড়। ইমাম লাইস বলেছেন- ‘হামো’ হচ্ছে স্বামীর ভাই, আর তার মত স্বামীর অপরাপর নিকটবর্তী লোকেরা যেমন চাচাত, মামাত, ফুফাত ভাই ইত্যাদি। বরং এর সঠিক অর্থে বুঝা যায় – স্বামীর ভাই, স্বামীর ভাই পো, স্বামীর চাচা, চাচাতো ভাই, ভাগ্নে এবং এদেরই মত অন্যসব পুরুষ যাদের সাথে এ মেয়েলোকের বিয়ে হতে পারে- যদি না সে বিবাহিতা হয়। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদের মৃত্যু বা মৃত্যুদূত বললেন কেন? এর কারণস্বরূপ বলা হয়েছে –সাধারন প্রচলিত নিয়ম ও লোকদের অভ্যাসই হচ্ছে যে, এসব নিকটাত্মীয়ের ব্যাপারে উপেক্ষা প্রদর্শন করা হয়। (এবং এদের পারস্পরিক মেলামেশায় কোন দোষ মনে করা হয় না) ফলে ভাই ভাইর বউ – এর সাথে একাকীত্বে মিলিত হয়। এভাবে একাকীত্বে মিলিত হওয়াকে তোমরা ভয় কর যেমনভাবে তোমরা মৃত্যুকে ভয় কর। আল্লামা কাযী ইয়ায বলেছেন – স্বামীর এসব নিকটাত্মীয়ের সাথে স্ত্রীর (কিংবা স্ত্রীর এসব নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে স্বামীর) গোপন মেলামেশা নৈতিক ধ্বংস টেনে আনে। ইমাম কুরতুবী বলেছেন- এ ধরনের লোকদের সাথে গোপন মিলন নীতি ও ধর্মের মৃত্যু ঘটায় কিংবা স্বামীর আত্মসম্মানবোধ তীব্র হওয়ার পরিণামে তাকে তালাক দেয় বলে তার দাম্পত্য জীবনের মৃত্যু ঘটে। কিংবা এদের কারো সাথে যদি জ্বেনায় লিপ্ত হয়, তাহলে তাকে সঙ্গেসার করার দন্ড দেয়া হয়, ফলে তার জৈবিক মৃত্যুও ঘটে। আল্লামা তাবারী বলেছেন, যে কোন অপছন্দনীয় ব্যাপারকে আরবরা মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করত।সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৩২হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

(২)উকবাহ্‌ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! (বেগানাহ) নারীদের নিকট তোমরা প্রবেশ করা পরিত্যাগ করো। সে সময় আনসারীদের এক লোক বলল- দেবর সম্পর্কে আপনার কি মতামত? তিনি বললেন- দেবর তো মৃত্যু তুল্য।(ই.ফা. ৫৪৮৭, ই.সে. ৫৫১১)সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৬৭হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

(৩)ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) বলেন, লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি যে, (–) শব্দের অর্থ স্বামীর ভাই (দেবর-ভাসুর) এবং স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তার (স্বামীর ভাইয়ের) সমপর্যায়ের চাচাত ভাই প্রমুখ। (ই.ফা. ৫৪৮৯, ই.সে. ৫৫১৩)সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৬৯হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

(৪)উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! মহিলাদের সাথে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না। আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বললেনঃ সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)।সহীহ্, গায়াতুল মারাম (১৮১), বুখারী, মুসলিমফুটনোটঃউমার, জাবির ও আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। অবাধে স্ত্রীলোকদের সাথে মেলা-মেশার খারাপ পরিণতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের একইরকম হাদীস আরও আছে। তিনি বলেনঃ ‘একজন স্ত্রীলোকের সাথে একজন পুরুষ একাকী থাকলে তাদের মধ্যে শাইতান তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে যোগ দেয়”। “হাম্উ” অর্থ হচ্ছে স্বামীর ভাই। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাবীর সাথে দেবরকেও একাকী থাকতে নিষেধ করেছেন।জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১১৭১হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

(৫)উকবাহ ইব্‌নু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! দেবরদের ব্যাপারে কি নির্দেশ? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১১২ হাদীস নং ৫২৩২; মুসলিম ৩৯/৮, হাঃ ২১৭২)আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ১৪০৩হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *