গল্প:-“অধিকার”
পর্ব:-৩
Writer:-Hassab bin Ahmed.
এইভাবেই কেটে গেলো দুই দিন , হুমাইরার সঙ্গে আর কথা হয় নি । সকালে খাবার টেবিলে গিয়ে খেতে বসলাম ।
আম্মু :- সাজিদ কাল কি কোন কাজ আছে?
আমি:- না আম্মু ! কেন?
আম্মু:- কাল সকাল ১০ টায় হুমাইরার পরিক্ষা আছে ! তাই কাল তোকে হুমাইরা কে নিয়ে কলেজে দিয়ে আসতে হবে । হুমাইরার আব্বু এক কাজে ব্যাস্ত থাকবে ।
আমি:- আমি প্রথমে হুমাইরাদের বাসায় যাবো , তার পর ওকে নিয়ে কলেজে যাবো? ,
আম্মু:- হুম , শুধু নিয়ে জাবি না নিয়েও আসতে হবে।
আমি:- আমি কি পাগল , আমি পারবো না । ওর ছোট ভাইকে নিয়ে যেতে বলো ।
আম্মু: তোর আব্বুকে বলবো?? , আর সজিব তো ড্রাইভিং করতে পারবে না !( সজিব হুমাইরার ছটো ভাই)
আমি:- আরে আব্বুকে ডাকার কি আছে , আমি নিয়ে যাবো কোন অসুবিধা নেই।
আসলে আমি আব্বুকে অনেক ভয় পাই।
রুমে এসে হুমাইরা কে ফোন দিলাম ।
হুমাইরা:- হ্যালো
আমি:- জি আমি সাজিদ ,
হুমাইরা:- হুম ,
আমি:- কি করেন ?
হুমাইরা:- এই তো পড়তে বসলাম। আপনি কি করেন ?
আমি:- কিছু না , এমনি ! তাহলে কাল কখন যেতে হবে ?
হুমাইরা:- একটু আগেই যেতে হবে ! আমাদের এখানে ৯ টায় আসলে হবে .!
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে , একটা কথা ছিল ?
হুমাইরা:- হুম বলেন ?
আমি:- কাল আমাদের সঙ্গে সজিব কে নিয়ে গেল ভালো হয় । আসলে আমাদের এভাবে একা একা দেখা করা ইসলাম সমর্থন করে না ।
হুমাইরা:- হুম , ঠিক আছে !
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে পড়েন তাহলে।
সকালে হুমাইরা কে নিয়ে গেলাম কলেজের সামনে ।আমি আর সজিব , পিছনে হুমাইরা বই খুলে দেখতে দেখতে যাচ্ছে , আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি । কলেজ পাওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে কলেজের ভিতর যাচ্ছিলো আমি পিছন থেকে ডাকলাম
আমি:- হুমাইরা , best of luck
হুমাইরা কিছু বললো না , আমার দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল । এখন আর কি পরিক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষা , সজিব তো আমার মোবাইল নিয়ে ভিডিও গেম খেলতে শুরু করলো । পরিক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগেই দেখি হুমাইরা চলে এসেছে । আমি আর সজিব গাড়িতেই বসে ছিলাম ।
হুমাইরা:- সজিব তুই পিছনে যা !
সজিব:- কেন? আমি পারবো না তুমি বসো পিছনে !
হুমাইরা:- এই নে মোবাইল আর ইয়ার ফোন , পিছনে গিয়ে বস।
সজিব তো মোবাইল পেয়ে খুশি , সজিব গিয়ে পিছনের ছিটে বসলো ।
আর হুমাইরা আমার পাশের চিটে বসলো ।
আমি:- পরিক্ষা কিরকম হলো? এতো আগেই চলে এলেন যে?
হুমাইরা:- ভালোই হয়েছে , লেখা শেষ তাই চলে এলাম ,
আমি গাড়ি চালাতে শুরু করলাম , কিছু দূর যাওয়ার পর
হুমাইরা:- আসলে একটা কথা জানার ছিল !
আমি:- জি বলুন কি জানতে চান ?
হুমাইরা:- আ.. আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
আমি:- এই চেহেরায় কি গার্লফ্রেন্ড থাকবে?( মুচকি হেসে)
হুমাইরা:- আপনার চেহারা অনেক
সুন্দর , যে কোন মেয়েই আপনাকে পছন্দ করবে , আমিও করেছিলাম ! সত্যি করে বলেন প্লিজ!
আমি:- ধন্যবাদ এই প্রথম কোন মেয়ে আমাকে সুন্দর বললো , আর আপনি হয়তো জানেন যে বিয়ের আগে প্রেম হারাম ।
হুমাইরা:- হুম শুনেছিলাম , যে বিয়ের আগে প্রেম হারাম । কিন্তু ক্রাশ তো নিশ্চয় আছে?
আমি:-চোখ দিয়ে ধর্ষন করাকে ভদ্র সমাজ নাম দিয়েছে ক্রাশ।
আর তাতেই নাকি মেয়েরা খুশি।
সমাজের মানুষ বিদ্যা ও বুদ্ধি কোন কাজে লাগায় বুঝতে পারি না!!!
হুমাইরা:- আমি এই উত্তরের অপেক্ষায় ছিলাম , আজ দুই দিন ধরে আমার এই চিন্তায় আমার মাথা খেয়ে দিচ্ছে ।
আমি:- এখন ভালো লাগছে ?
হুমাইরা:- এখন যে কি পরিমান ভালো লাগছে বুঝতে পারবো না । আচ্ছা আরো একটি প্রশ্ন করি ?
আমি:- অবশ্যই!
হুমাইরা:- আপনি কি নারীবাদের বিপক্ষে?
আমি:- আমি কোনটার পক্ষেই নই। না সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীদের ডিজিটাল পণ্য বানানোর পক্ষে, না আমরা রাস্তায় উত্যক্ত করা বখাটে লোকটার পক্ষে। আমরা নারীদের সত্যিকার মর্যাদার কথা বলি। নারী হলো মুক্তো। ঝিনুকের মধ্যেই সে সুরক্ষিত। নারী চাঁদ নয় যার জোছনার প্রশংসা সবাই করে, নারী হলো সূর্যের মতো, যার দিকে চোখ পড়লেই চোখ নামিয়ে ফেলতে হয়।
হুমাইরা:- হুম ঠিক আমিও একমত , আচ্ছা নারীবাদ সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
আমি:- এখনকার নারীবাদীরা সেটার মিনিংটাই জানেনা। আগে যারা নারীবাদী ছিল তারা মহিলাদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করে শুধু মহিলাদের জন্যই স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার পিছনে কাজ করে গেছে। তারা যেন খারাপ কোন পরিস্থিতির স্বীকার না হয় সে জন্য আত্মরক্ষার্থে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষন নেওয়ার ব্যপারে কাজ করে গেছে। মহিলারা যাতে পুরুষ ডাক্তারের কাছে হেনস্তা না হয় সেজন্য নারীর ডাক্তার হওয়ার জন্য তাদের ইনস্পায়ার করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছে। যৌতুক প্রথা বন্ধের পিছনে কাজ করে গেছে। এই ছাড়াও শুধু নারীর কল্যানে আরো অনেক অনেক কাজ করে গেছে।
এখনকার নারীবাদী হচ্ছে প্রকাশ্যে কেন ব্রা পেন্টি শুকানো যাবেনা,শর্ট ড্রেস কেন পরা যাবেনা?মাথায় কেন ঘোমটা দিতে হবে?বোরকা কেন পরতে হবে? পর্দা কেন করতে হবে? ওড়না পড়ে কেন বুক ঢেকে চলতে হবে এইসব। পৃথিবীতে এত পরিমান রেপ হচ্ছে, যেখানে সেখানে নারীরা হেরেজমেন্ট হচ্ছে এইগুলাতে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তখন মুখে কুলুপ এটে রাখে। আর তাদের সাথে কিছু মুরগীর স্বাধীনতা চেয়ে মুরগীলোভী শিয়ালরা তো আছেই যারা রোমিও সেজে মুখে নারীবাদী বলে নিজেকে দাবি করে।অথচ এরাই ছিপ ফেলে সোনা,ময়না,জানু দের ধরার চেস্টা চালায় যা আমাদের দেশের অনেক মেয়েরা জানেই না।
কারন শিয়াল রা ভাবে মুরগী খোয়াড়ছাড়া হলেতো তাদেরই লাভ।
আসলে এইগুলারে নারীবাদী বলেনা।
বলে অশ্লীলতাকে প্রমোটকারি
হুমাইরা:- হুম , সত্যি এখন সেই আগের নারীবাদী নেই,
আমি:-আমি বুঝিনা ,
– একজন সুন্দরী মেয়েকে ঘর থেকে বাহির করে এনে দুই পুরুষের মাঝখানে রিক্সায় বসতে দেয়া নাকি নারী স্বাধীনতা !
.
.
– বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল স্লোগান দিতে গিয়ে একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরে ফটোসেশন করা নাকি নারী স্বাধীনতা !
.
.
– বিলবোর্ড থেকে শুরু করে পণ্যের অ্যাডে নারীর দেহ উপস্থাপন করে পণ্যের মত নারীকে পণ্য বানিয়ে প্রোডাক্টের প্রচারণা চালানো নাকি নারী স্বাধীনতা !
হুমাইরা:- হুম ,
এইভাবেই কথা বলতে বলতে হুমাইরাদের বাসায় পৌছে গেলাম , হুমাইরাকে রেখে আমি বাসায় আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমার হবুশাশুড়ি না খেয়ে আসতে দিলো না । তাই খেতে বসতে বাধ্য হলাম , খেতে গিয়ে দেখি অনেক আইটেম , আমি খাচ্ছি হুমাইরার আম্মু খাবার দিচ্ছে আর হুমাইরা ওর আম্মুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে ,
হুমাইরার আম্মু:- আসলে বাবা তুমি আসবে বলে সকালে হুমাইরা নিজের হাতে সব বানিয়েছে , কিন্তু তুমি তো সকালে কিছু মুখেই দিলে না !
এই কথা শুনে হুমাইরা লজ্জা পেয়ে ওর মার দিকে রাগান্ত চোখ দেখিয়ে চলে গেল ।
খাওয়া শেষে বিদায় নিয়ে হুমাইরাদের বাসা থেকে বের হলাম , পিছনে পিছনে দেখি , হুমাইরা ও আসলো , হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে , প্যাকেট টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে
হুমাইরা:- এইটা নিয়ে যান আম্মুর জন্য ।
আমি প্যাকেট টা হাতে নিয়ে
আমি:- রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছিল । বিশেষ করে গাজরের হালুয়া।
হুমাইরা:- প্রথম বার বানিয়েছি ভয় পাচ্ছিলাম , পছন্দ হবে কি না !
আমি:- আবার খাবার জন্য অপেক্ষা করবো !
তার পর হুমাইরা চলে গেল, আমিও বাসায় চলে আসলাম ।
রাতে আম্মু জানিয়ে দিলো ১৫ দিন পর আমাদের বিয়ে , আমার কোন কথাই শুনলো না , এই কয়দিন হুমাইরার সঙ্গে আর কোন কথা হয়নি , দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো । সব ব্যাস্ততা পাড়ি দিয়ে হুমাইরাকে জান্নাতের সঙ্গি করে নিয়ে আসলাম , কিন্তু আমার মনে একটি ভয় থেকেই গেলো হুমাইরা কি ইসলাম কে মন থেকে মেনে নিতে পারবে??
চলবে……..
Leave a Reply