গল্প:- গন্তব্য
পর্ব:-০২
লেখক:হাছাব বিন আহমেদ
সজিব বেশি সময় একা একা থাকতে পারে না। সবসময় আড্ডা, গল্প গুজব নিয়ে ব্যস্ত থাকে।সজিব ও ওর বন্ধুরা মিলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আড্ডা দেয়। কিন্তু আজ কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। সজিব একা একা অনেক সময় ধরে বসে আছে। কিছু সময় পর আরিফ আর নাছির আসলো।
কিরে এতো সময় কোথায় ছিলি গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ছিলি না কি??
নাছির: আর বলিস না আরিফের সঙ্গে লাইব্রেরীতে ছিলাম।ওর তো কিছু দিন পর ফাইনাল পরীক্ষা। ওখান থেকে আবার নামাজে গেলাম।আর আমার কপাল কি তোর মতো যে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘুরবো।
সজিব:- থাক আর বলতে হবে না বুঝতে পারছি। আরিফ তুই তো বিজ্ঞানের ছাত্র আর তুই তো বিজ্ঞান নিয়ে খুব সিরিয়াস।সব সময় বিজ্ঞান বিজ্ঞান করিস,তার পরো নামাজ পড়োস কোরআন মেনে চলিস। যেখানে কোরআন বিজ্ঞানের বিপরীত।
আরিফ:- তাঁর মতে তুই বলতে চাস বিজ্ঞান ও কুরআন সামানজস্যপূর্ণ না।
সজিব:- জি তাই তো বললাম ।
আরিফ:- তুই নিজে কখনো কোরআনের অর্থ নিজে পড়ে দেখেছিস?
সজিব:- না
আরিফ:- তাহলে তুই কি করে জানলি যে কোরআনের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোন মিল নেই??
সজিব:- কিছু ব্লগে পড়েছিলাম।
আরিফ:- তুই নিজেকে এতো আধুনিক মনে করছ। তুই নিজে কখনো চেক না করেই বিশ্বাস করে ফেললি।যে সৃষ্টি কর্তা নেই, কোরআন বিজ্ঞানের বিপরীত।এটা কিরকম বিচার?
সজিব:- দেখ আরিফ, সত্যি বলতে কি কালকের যে যুক্তি গুলো উপস্থাপন করেছিলি,এই গুলো অনুধাবন করার পর সৃষ্টি কর্তা নেই। এই কথার ওপর টিকে থাকতে পারতেছি না। আমি কালকে অনেক ভেবেছি, সৃষ্টি কর্তা নেই এর কোন যুক্তি পূর্ণ কারণ খুঁজে পাই নাই। কিন্তু আমার জানা মতে কোরআন বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আরিফ:- আচ্ছা আমি যদি তোকে মিল দেখাতে পারি তুই কি করবি?
সজিব:- তুই যা বলবি তাই করব।
আরিফ:-তোকে পুরো কোরআন অর্থ সহহো পড়তে হবে।
সজিব:- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তোকে অন্তত ১০ টি কারণ দেখাতে হবে!
আরিফ:- আচ্ছা ঠিক আছে ১০ টা পয়েন্ট ই বলবো।
১.চামড়ার ব্যথা অনুভবকারী উপাদান:-
ধারণা করা হয় যে,অনুভূতি ও বেদনার উপলব্ধি মস্তিষ্কের উপর নির্ভরশীল।সাম্প্রতিক আবিষ্কার প্রমাণ করেছে যে,চামড়ার মধ্যে বেদনা অনুভবকারী উপাদান রয়েছে।ঐ উপাদান ছাড়া ব্যক্তি ব্যথা বেদনা অনুভব করতে পারে না।
ডাক্তার যখন আগুনে পুড়ে যাওয়ার ফলে ক্ষত স্থানের চিকিৎসা করেন,তিনি একটি সরু পিন দ্বারা পোড়ার মাত্রার পরিমান পরীক্ষা করে দেখেন।রোগী ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তার খুশী হণ।কেননা এর দ্বারা বুঝা যায় যে,ভাসাভাসা পুড়েছে এবং ব্যথা অনুভবকারী উপাদান অক্ষত আছে।পক্ষান্তরে রোগী ব্যথা অনুভব না করলে,বুঝা যায় যে,গভীরভাবে পুড়েছে এবং ব্যথা অনুভবকারী উপাদান নষ্ট হয়ে গেছে।
পবিত্র কোরআন চামড়ার ব্যথা অনুভবকারী উপাদানের কথা সুষ্পষ্টভাবে বলেছে।আল্লাহ বলেন:
“এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নির্দশন সমূহের প্রতি যে সব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে,আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করবো।তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে পুড়ে যাবে,তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে,যাতে তারা আবার আযাবের আস্বাদন করতে থাকে নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী,হেকমতের অধিকারী।”সূরা আননেসা -৫৬
থাইল্যাণ্ডের চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের Anatomy বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক তাগাতাত তিজাসেন চামড়ার ব্যথা অনুভবকারী উপাদানের উপর দীর্ঘ দিন ব্যাপী গবেষণা করেছেন।প্রথমদিকে,তিনি বিশ্বাস করেননি যে,১৪০০ বছর আগে কোরআন এ বিষয়ে কথা বলেছে।তিনি কোরআনের এই আয়াতের অনুবাদ পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি কোরআনের আয়াতের এরূপ বৈজ্ঞানিক যথার্থতায় এত বেশী মুগ্ধ হন যে, রিয়াদে অনুষ্ঠিত কোরআন ও সুন্নার বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বিষয়ক ৮ম সম্মেলনে প্রকাশ্যে ঘোষণো করেন।
“আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।”
২.আঙ্গুলের ছাপ
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড় সমূহ একত্রিত করব না ? বরং আমি তার আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।” -সূরা কেয়ামাহ-৩-৪
কাফেররা প্রশ্ন করে যে,মানুষ মরে গেলে তার হাড় পৃথিবীতে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন হয়ে যায়।ফলে,কেয়ামতের দিন কিভাবে এসকল লোকদেরকে চিহ্নিত করা হবে ?সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন,তিনি কেবল তোমাদের হাড় – হাড্ডিকে একত্রিক করা নয় বরং তোমাদের আঙ্গুলের ছাপ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে সক্ষম।
ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারণের ব্যাপারে কোরআন কেন আঙ্গুলের ছাপ সম্পর্কে কথা বলেছে ? ১৮৮০ সালে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট এর গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আঙ্গুলের ছাপকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।পৃথিবীতে এমন দু’জন ব্যক্তি নেই যাদের আঙ্গুলের ছাপ এক রকম।এমন কি দুই যমজ ভাইয়েরও না।একারণে বিশ্বব্যাপী পুলিশ বাহিনী অপরধীদেরকে চিহ্নিত করার জন্য আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে।
আজ থেকে ১৪০০বছর আগে কে জানত যে প্রত্যেক মানুষের আঙ্গুলের ছাপ স্বতন্ত্র ?অবশ্যই মহান স্রস্টা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তা জানেনা।
৩.ভ্রূণ অন্ধকারের তিন পর্দার আড়ালে সুসংরক্ষিত
মহান কুদরতে অধিকারী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন
‘তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।সূরা আয যুমার -৬
অধ্যাপক কেইথ মুরের মতে, কোরআনে উল্লেখিত অন্ধকারের তিনটি পর্দা বলতে বুঝায়ঃ
১।মাতৃগর্ভের সম্মুখ দেয়াল
২।জরায়ুর দেয়াল
৩।জরায়ুতে ভ্রূণকে আবৃতকারী গর্ভফুলের আভ্যন্তরীণ অতি পাতলা পর্দা।
ভ্রূণের পর্যায়সমূহ
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি।অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে পরিণত,এরপর সেই মাংসপিণ্ড থেকে হাড় সৃষ্টি করেছি,অতঃপর হাড়কে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি।অবশেষে তাকে এক নতুন সৃষ্টিরূপে দাঁড় করিয়েছি।নিপুণতম সুষ্টির্কতা আল্লাহ কত কল্যাণময় ? সূরা আল মোমিনূন- ১২-১৪
এ আয়াতদ্বয়ে মহান স্রষ্টা বলেন তিনি মানুষকে ক্ষুদ্র পরিমাণ তরল পদার্থ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং একে এক সুরক্ষিত বিশ্রামের স্থানে সংরক্ষিত করেছেন।এ অর্থ বুঝানোর লক্ষ্যে তিনি আরবী শব্দ (আরবী)ব্যবহার করেছেন। জরায়ু সর্বদাই পেছন দিক থেকে মেরুদণ্ড দ্বারা সংরক্ষিত। মেরুদণ্ড আবার পেছনের মাংসপেশী দ্বারা সমর্থিত।তাছাড়া ও ভ্রূণ গর্ভফুলের রস সম্পন্ন গর্ভথলি দ্বারা সংরক্ষিত।এর দ্বারা বুঝা যায় যে,ভ্রূণ একটি সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করে।
এই স্বল্প্ পরিমাণ তরল পর্দাথ পরে (আরবী ) বা মাংশপেশীতে পরিণত হয়।‘আলাকা’শব্দের অর্থ হল,যা আটকে থাকে।ভিন্ন কথায় বলা যায়,এটা যেন ‘জোঁক সদৃশ নির্যাস।’এই উভয় অর্থই বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত।প্রাথমিক পর্যায়ে,ভ্রূণ দেয়ালে আটকে থাকে এবং দেখতে জোঁকের আকৃতি মনে হয়।আর এটা রক্তচোষা জোঁকের মত আচরণ করে।মূলত তা মায়ের গর্ভফুলের মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ লাভ করে। (আরবী ) শব্দের ৩য় আরেকটি অর্থ হল,রক্তপিণ্ড।গর্ভ রক্তপিণ্ডের স্তরে থাকা অবস্থায় অর্থাৎ গর্ভেব ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে রক্তপিণ্ডে বদ্ধ থলিতে অবস্থান করে।ফলে,ভ্রূণ রক্তপিণ্ডের আকার গ্রহণ করে এবং একই সময়ে তা জোঁকের আকৃতিও ধারণা করে।কোরআনের জ্ঞানের সাথে বিজ্ঞানের সত্য লাভের জন্য মানুষের চেষ্টাকে তুলনা করা যায়।
১৬৭৭ সালে, সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী হাম এবং লিউওয়েন হোয়েক মাইক্রোষ্কোপ দ্বারা মানবীয় শুক্র কোষ পর্যবেক্ষণ করেন।তারা ভেবেছিলেন যে,শুত্রুকোষ যা ক্ষুদ্রকৃতির মানুষ হিসেবে বিবেচ্য তা নতুন শিশু জন্মের জন্য জরায়ুতে বিকাশ লাভ করে।এটা perforation তত্ব হিসেবে পরিচিত।কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন আবিষ্কার করলেন যে শুক্রের চাইতে ডিম বড়,তখন বিজ্ঞানী ডি গ্রাফ সহ অন্যরা ভাবলেন যে,ডিমের মধ্যে ভ্রূণ ক্ষুদ্রাকৃতিতে অবস্থান করে।পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৮০০ শতাব্দীতে,বিজ্ঞানী মাওপেরটুইস মাতা পিতার দ্বৈত উওরাধিকার তত্ব (theory of biparental inheritence)প্রচার করেন।(আরবী) পরে (আরবী) -য় রূপান্তরিত হয়। মুদগাহ’র অর্থ হল, ১। যা দাঁত দিয়ে চিবানো হয় এবং ২। যা আঠালো ও ছোট এবং যা মুখে দেয়া হয় । যেমন গাম । এই দুটিই ব্যাখ্যাই বৈজ্ঞানিক ভাবে বিশুদ্ধ । অধ্যাপক কেইথ মুর প্লাষ্টার সীল সিল নিয়ে একে ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ের আকৃতির মত বানিয়ে দাঁত চিবান এবং একে মুগদায় পরিনত করার চেষ্টা করেন। তিনি এর মাধ্যমে এর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রূণের ছবিকে তুলনা করেন। তার চিবানো ঐ প্লাষ্টার সীল somites এর মত দেখা গেল যা মেরুদণ্ডের প্রাথমিক গঠন স্তর।
এই (আরবী) পরবর্তীতে (আরবী) বা হাড়ে পরিনত হয়।বাস্তবেই হাড় কে গোশত বা মাংসপেশী পরানো হয়েছে।আল্লাহ পরে একে অন্য সৃষ্টিতে পরিনত করেন।
অধ্যাপক মশর্অল জনসন যুক্তরাষ্টের একজন খাতনামা বিজ্ঞানী Anatomy dept-এর প্রধান এবং ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দানিয়েল ইনিষ্টিটিউটের পরিচালক।তাকে ভ্রূণতত্ব সম্পর্কে কোরআনের এই আয়াতের উপর মন্তব্য করার অনুরোধ করা হলে, তিনি প্রথমে বলেনঃ ভ্রূণের পর্যায় গুলো সম্পর্কে কোরআনের বর্ণনা গুলো শুধুমাত্র সমকালের সংঘটিত কোন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যাবেনা। সম্ভবত মোহাম্মদ (ছঃ) এর নিকট খুবই শক্তিশালী কোন মাইক্রোস্কোপ ছিল। যখন তকে স্মরন করিয়ে দেয়া হলো যে, কোরআন ১৪০০ বছর আগে অবতীর্ণ হয়েছে, আর মাইক্রোস্কোপ আবিস্কার হয়েছে নবী মোহাম্মদ (ছঃ) এর বহু শতাব্দী পর।তখন তিনি হেসে দেন, এবং স্বীকার করেন যে, প্রথম দিকে আবিস্কার মাইক্রোস্কোপ ১০ বারের বেশী সময়ের ক্ষুদ্র জিনিসকে বড় করে দেখতে পারেনী এবং যাও দেখিয়েছে, তাও আবার পরিস্কার ছবি দেখাতে পারেনি।তারপর তিনি বলেন ,মোহাম্মদ (ছঃ) যখন কোরআন পাঠ করেন, তখন তার উপর ঐশী বাণী নাযিল হওয়ার বিষয়ে কোন বিরোধ নেই।
ডঃ কেইথ মুর বলেন বিশ্বে গৃহীত আধুনিক কালের ভ্রূণ বিষয়ক উন্নয়ন স্তর সহজে বোধগম্য নয়।কেননা এতে স্তর গুলোকে সংখ্যাতাত্বিক ভাবে পেশ করা হয়েছে। যেমন , ১ম স্তর ইত্যাদি। কিন্তু কোরআনে বর্ণিত স্তরগুলো পার্থক্য বোধক এবং সহজে এর আকার -আকৃতি চিহ্নিত করা যায়।এইগুলো জন্মপূর্ব বিকাশের বিভিন্ন স্তরের উপর ভিত্তিশীল ও বোধগম্য এবং বাস্তব, বৈজ্ঞানিক ও মার্জিত বর্ণনার অধিকারী।
নীচের উল্লেখিত আয়াতে ও মানুষের ভ্রুণ বিকাশের স্তরগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেনঃ
“সে কি স্থলিত বীর্য ছিল না? অতঃপর সে ছিল রক্তপিণ্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যাস্ত করেছেন।অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।” – সূরা কিয়ামাহ – ৩৭-৩৯
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাবে সুবিন্যাস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। -সূরা আল ইনফিতার- ৭-৮।
৪.লিঙ্গ নির্ধারণ
ভ্রূণের লিঙ্গ শুক্রের আকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়,ডিম দ্বারা নয়।শিশু পুরুষ লিঙ্গ বা স্ত্রী লিঙ্গ যাই হোক না কেন তা নির্ভর করে xx অথবা xy জাতীয় ৩৩ জোড়া ক্রমোজমের উপর।যদি x বহনকারী শুক্র ডিমকে করে,তাহলে,ভ্রূণ হবে স্ত্রীলিঙ্গ এবং যদি তা y বহনকারী শুক্র হয়,তাহলে,ভ্রূণ হবে পুংলিঙ্গ।এ মর্মে আল্লাহ বলেনঃ
‘এবং তিনিই সুষ্টি করেন যুগল পুরুষ ও নারী।এক বিন্দু বীর্য থেকে যখন স্থলিত করা হয়।সূরা নাজম ৪৫-৪৬
এখানেও ‘নোতফা’শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে,যার অর্থ হল,সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ।আর (আরবী ) মানে ,স্থলিত বা নিক্ষিপ্ত।সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে,‘নোতফা’ দ্বারা শুক্রকেই বুঝানো হয়েছে।কেননা,শুক্রই স্থলিত বা নিক্ষিপ্ত হয়।
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“সে কি স্থলিত বীর্য ছিলনা ?অতঃপর সে ছিল রক্তপিণ্ড,অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।” -সূরা কেয়ামাহ – ৩৭-৩৯
এখানে পূনরায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এক ফোঁটা শুক্র যা (আরবী) পুরুষ থেকে নির্গত ও নিক্ষিপ্ত হয় সেটাই ভ্রণের লিঙ্গ নির্ধারন করে ।
পাক ভারত উপমহাদেশের শ্বাশুড়ীরা প্রায়ই নাতী ছেলে কামনা করে এবং নাতিন কন্যা হলে হলে সে জন্য বৌমাকে দোষারূপ করে।আফসুস !তারা যদি জানত যে,লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য পুরুষের শুক্রই দায়ী,নারীর ডিম নয়।যদি তারা দোষারূপ করতেই চায়,তাহলে ,তাদের ছেলেদেরকেই দোষারূপ করা উচিত,বৌ মাদেরকে নয়।কেননা কোরআন এবং বিজ্ঞান উভয়েই লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য পুরূষের শুক্রকেই দায়ী করে।
৫.মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে অন্তরায়
এমর্মে আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“তিনি পাশাপাশি দু’সাগর প্রবাহিত করেছেন উভয়ের মাঝে রয়েছে অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করেনা।”সূরা আর রাহমান -১৯-২০ আরবী ভাষার (আরবী )মানে ,আড়াল বা অন্তরায়।অবশ্য এটা কোন দৈহিক অন্তরায় নয়।(আরবী )শব্দের অর্থ হল,তারা উভয়ে (দু’সাগর )এক সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়।’প্রাথমিক যুগের তাফসীরকারকরা পানির দু’টো ধারার দু’টো বিপরীতমুখী অর্থের ব্যাখ্যা করতে অপারগ ছিলেন।অর্থাৎ কিভাবে তারা মিশে একাকার হয়ে যায়,অথচ উভয়ের মধ্যে রয়েছে আড়াল।আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে,যেখানে দু’সাগর এসে মিলিত হয় সেখানে উভয়ের মাঝে একটি আড়াল বা অন্তরায় থাকে।ঐ অন্তরায় দু’সাগরকে বিভক্ত করে রাখে।ফলে দেখা যায়,প্রত্যেক সাগরের রয়েছে নিজস্ব তাপমাত্রা,লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব।(1.principles of oceanography, Davis,pp 92-93)সাগর বিশারদদের পক্ষে এ আয়াতের ব্যাখ্যা দানের উত্তম সুযোগ রয়েছে।সাগরের মাঝে প্রবাহমান ঢালু পানির অদৃশ্য আড়াল আছে যার দিয়ে এক সাগরের পানি অন্য সাগরে যায়।
কিন্তু যখন এক সাগরের পানি অন্য সাগরে প্রবেশ করে তখন সে পানি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং অন্য সাগরের পানির বৈশিষ্ট্যের সাথে একাকার হয়ে যায়।দু’পানির ধারার মধ্যে ঐ অন্তরায় একটি অন্তবর্তীকালীন একাকারকারী জোন হিসেবে কাজ করে।
কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতেও এই বিষয়ের উল্লেখ এসেছে।আল্লাহ বলেনঃ (আরবী )“তিনি সে সত্তা যিনি দু’সাগরের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন।” সূরা নমল -৬১
এ অবস্থা বা অন্তরাল বিভিন্ন সাগরে দেখা যায়।জিব্রাল্টারে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন স্থলে,কেপ পয়েন্ট,কেপ পেলিনসুলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে আটলান্টিক মহাসাগর ভারত মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে সেখানে।
কিন্তু কোরআন যেখানে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির কথা বলে,তখন তা ঐ অন্তরালের সাথে নিষেধকারী প্রতিন্ধকতার কথা উল্লেখ করে।আল্লাহ বলেন,
“তিনি সমান্তরালে দু’সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট,তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা,বিস্বাদ ;উভয়ের মাঝেখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়,একটি দুভের্দ্য আড়াল।” সূরা ফোরকান- ৫৩
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার অনুযায়ী দেখা যায়,মিষ্টি পানি যেখানে লবণাক্ত পানির সাথে গিয়ে মিশে, সে স্থানের অবস্থা ঐ স্থান থেকে ভিন্ন যেখানে দু’লবণাক্ত পানি গিয়ে মিশে।নদীর মোহনার লবণাক্ত পানি ও মিষ্টি পানি মিলিত হলে যে পার্থক্য সূচিত হয়,তার কারণ হল, সেখানে দুটো স্তরকে পৃথককারী চিহ্নিত ঘনত্বের ধারাবাহিতাবিহীন pycnocline zone রয়েছে।(oceanography, Gross, p.242,introductory ocanograpry, Thurman pp300,301) আর এই আড়াল সৃষ্টিকারী জোনে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির লবণাক্ততার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।(do)
এদৃশ্য মিসরের নীল নদ ভূমধ্যসাগরের যে মিলিত হয়েছে,সেখানে সহ আরো বহু জায়গায় দেখা যায়।কোরআনে উল্লেখিত এই বৈজ্ঞানিক বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্বেবিদ্যালয়ের প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ও ভূতত্ব বিদ্যার অধ্যাপক ডঃ উইলিয়াম হের বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে।
৫.বিশ্ব সৃষ্টি ও মহা বিস্ফোরণ (বিগ ব্যাংগ)
বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জ্যোতিবিদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা ব্যাপকহারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নভোচারী ও জ্যোতিবিদদের সংগৃহীত ও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষামূলক উপাত্ত দ্বারাও তা সমর্থিত হয়েছে। মহা বিস্ফোরণ তত্ত অনুযায়ী মহাবিশ্ব ছিল প্রথমে একটি বিশাল নীহারিকা। পরে ২য় পর্যায়ে তাতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে ছায়া পথ তৈরী হয়। এগুলো পরে তারকা, গ্রহ, সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদিতে রুপান্তরিত হয়। বিশ্বের সূচনা বিষ্ময়কর এবং দৈবক্রমে তা ঘটার সম্ভাবনা শূন্য পর্যায়ে।
পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে,
“কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মূখ বন্ধ ছিল, তারপর আমি ঊভয়কে খুলে দিলাম।” – সূরা আম্বিয়া-৩০
৬.ছায়াপথ সৃষ্টির আগে প্রাথমিক গ্যাস পিন্ড
বিজ্ঞানীরা একমত যে ,মহা বিশ্বে ছায়াপথ তৈরীর আগে আকাশ সম্পর্কিত পদার্থগুলো গ্যাস জাতীয় জিনিস ছিল।সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিপুল সংখ্যক গ্যাসজাতীয় পদার্থ কিংবা মেঘ, ছায়া পথ তৈরীর আগে বিদ্যমান ছিল।আকাশ সম্পর্কিত প্রাথমিক পদার্থকে গ্যাস অপেক্ষা ধুঁয়া বলা বেশী সঙ্গত।কোরআন মজীদ ধুঁয়া দ্বারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঐ অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
“তার পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা কিছু ধূঁম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবী বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা সেচ্ছায় আসলাম। – সূরা হা-মীম সাজদাহ-১১
এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এ অবস্থায় মহাবিস্ফোরণেরই ফল এবং মহানবী মোহাম্মদ (ছঃ) এর আগে এ বিষয়টি কারো জানা ছিল না।তাহলে প্রশ্ন জাগে, এ জ্ঞানের উৎস কি ?
৭.পৃথিবীর আকার গোল
প্রথম যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল।বহু শতাব্দী ব্যাপী মানুষ দূরে সফরে যেতে ভয় পেত কি জানি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যায় কিনা।স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমান করেন যে, পৃথিবী গোলাকার । তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমন করেন।আমরা দিবা রাত্রির আবর্তনের ব্যাপারে কোরআনের নিন্মোক্ত আয়াতটি বিবেচনা করতে পারি।
“আপনি কি দেখেনা আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? -সূরা লোকমান – ২৯
অর্থাৎ রাত আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিন ও আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী গোলাকৃতির হলেই কেবল এ ঘটনা ঘটতে পারে ।
নিম্নের আয়াত দ্বারাও পৃথিবী যে গোলাকার তা বুঝা যায়্ আল্লাহ বলেনঃ
তিনি আসমান ও জামিন কে সৃষ্টি করেছেন যথার্থভাবে। তিনি রাতকে দিন দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।” সূরা যোমর -৫
আয়াতে ব্যবহৃত (আরবী) শব্দের অর্থ হলো কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। রাত ও দিনের আবর্তন তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হয়।
পৃথিবী বলের মত গোলাকার নয়, বরং মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা।
নিম্নের আয়াতে পৃথিবীর আকৃতির বর্ননা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
“তিনি পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।” সূরা নাযিআত -৩০
আরবী শব্দ এর দুটো অর্থ আছে। একটি অর্থ হলো উঠপাখির ডিম।উটপাখীর ডিমের আকৃতির মতই পৃথিবীর আকৃতি মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা । অন্য অর্থ হল ‘সম্প্রসারিত করা’। উভই অর্থই বিশুদ্ধ।
কোরআন এভাবেই পৃথিবীর আকৃতি বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করেছে।অথচ যখন কোরআন যখন নাযিল হয় তখন প্রচলিত ধারনা ছিল পৃথিবী হচ্ছে চেপ্টা।
৮.চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো
আগের সভ্যতা গুলোর ধারণা ছিল,চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।কিন্তু বিজ্ঞান বর্তমানে আমাদেরকে বলে যে,চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো।এ সত্যটি কোরআন আমাদেরকে আজ থেকে ১৪শ বছর আগে বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমণ্ডলকে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।”- সূরা ফুরকান-৬১
আরবীতে সূর্যকে (আরবী ) বলে।কোরআনে (আরবী )শব্দ দ্বারাও সূর্য বুঝানো হয়েছে।এর অর্থ হল,বাতি বা র্মশাল।অন্য জায়গায় ,সূর্যকে (আরবী) উল্লেখ করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘জ্বলন্ত কিরণোজ্জল বাতি বা মশাল।’অন্য আরেক জায়গায়, একই অর্থ বুঝানোর জন্য (আরবী ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘কিরণোজ্জল সূর্য ’।এই তিনটি বর্ণনাই সূর্যের উপযোগী।কেননা,সূর্য নিজ দহনক্রিয়ায় ব্যাপক তাপ ও আলো উৎপাদন করে।
চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ হল (আরবী ) কোরআন চাঁদকে (আরবী ) বলেছে।এর অর্থ হল‘ স্নিগ্ধ আলোদানকারী।’অর্থাৎ প্রতিফলিত আলো দেয়।কোরআনের বর্ণনা চাঁদের আসল প্রকৃতির সাথে খাপ খায়।চাঁদ নিজ থেকে আলো দেয় না।বরং তা এমন এক নিষ্ক্রীয় জিনিস যার উপর সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব ঘটে।কোরআনে কখনও চাঁদকে (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি এবং সূর্যকেও (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি।
এর দ্বারা বুঝা যায় যে,কোরআন সূর্য ও চাঁদের আলোর মধ্যকার পার্থক্যকে স্বীকার করে।
নিম্নের আয়াত,চাঁদ ওসূর্যের আলোর প্রকৃতি উল্লেখ করেছে।আল্লাহ বলেনঃ“তিনিই সত্তা যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জল এবং চাঁদকে স্নিন্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।”সুরা ইউনুস-৫
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেনঃ
“তোমরা কি লক্ষ্য করনা যে,আল্লাহ কিভাবে সাত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন,সেখানে চাঁদকে রেখেছেন স্নিন্ধ আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে ?”- সুরা নূহ-১৫-১৬
মহান কোরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান চাঁদ ও সূর্যের আলোর ব্যবধানের ব্যাপারে অভিন্ন কথা বলে।
৯.সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব
১৯২৫খৃঃ জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবেল পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণের সাহায্যে বলেছেন,প্রতিটি ছায়াপথ অন্য ছায়াপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এর অপর অর্থ হল,মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এখন বৈজ্ঞানিক সত্য। কোরআন মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে একই কথা বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“আমি নিজ ক্ষমতা বলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই এর সম্প্রসারণকারী।”সূরা যারিয়াত-৪৭
আরবী শব্দ (আরবী) এর বিশুদ্ধ অনুবাদ হল,‘সম্প্রসারণকারী।’ এটা মহাবিশ্বের ব্যাপক সম্প্রসারণশীলতার প্রতি ইঙ্গিতবাহী।
প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ স্টিফেন হকিং তার A Brief History of time বইতে লিখেছেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর মহান বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব। মানুষ কর্তৃক টেলিষ্কোপ আবিষ্কারের পূর্বে কোরআন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, আরবরা যেহেতু জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রসর ছিল, সেহেতু কোরআনে জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কিত সত্যের উল্লেখ আশ্চর্যের বিষয় নয়। জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার প্রতি তাদের স্বীকৃতি সত্য বটে। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার কয়েক শতাব্দী পূর্বে কোরআন নাযিল হয়েছিল। অধিকন্তু আরবরা তাদের বৈজ্ঞানিক শৌর্যবীর্যের সময়ে ও উল্লিখিত বিগ ব্যাং -এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু জানত না। জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির কারণে কোরআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোতে আরবদের কোন অবদান ছিল না। বরং বিপরীতটাই সত্য। আর তা হল,তারা জ্যোতির্বিদ্যায় এজন্য অগ্রগতি অর্জন করেছে যে, কোরআনে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
১০.পানি চক্রঃ
১৫৮০ খৃঃ বর্ণার্ড পলিসি সর্বপ্রথম বর্তমান যুগের পানি চক্র সম্পর্কে আলোচনা করেন।তিনি সাগর থেকে বাষ্পাকারে পানির উড়ে যাওয়া এবং পরে ঠান্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।মেঘমালা সাগর থেকে দূরবর্তী ভূখন্ডের উপর ঘনীভূত হয়ে পরে বৃষ্টি আকারে নীচে পতিত হয়।বৃষ্টির পানি খাল-বিল ও নদী-নালায় জড় হয়ে অব্যাহত নিয়মে সাগরে প্রবাহিত হয়।খৃষ্টপূর্ব ৭ শতাব্দী আগে,মিলেটাসের থেলসের মতে সাগরের উপরিভাগের ছিঁটানো পানি কণাকে ধারণকারী বাতাস, ভূখন্ডে তা বৃষ্টি আকারে ছড়িয়ে দেয়।
আগের যুগের লোকেরা ভূগর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে জানতনা।তারা ভাবত যে,সাগরের পানি দমকা বাতাসের মাধ্যমে সজোরে ভূখন্ডে এসে পতিত হয়।তারা আরও বিশ্বাস করত যে,গোপন পথে কিংবা গভীর জলরাশি থেকে পানি পুনরায় ফিরে আসে যা সাগরের সাথে জড়িত।প্লেটোর যুগ থেকে এটাকে ‘তারতারুস’ বলা হত।এমন কি ১৮শ শতাব্দীর বিখ্যাত চিন্তাবিদ ডেস কার্টেজও এমত পোষণ করতেন।১৯শতকে এরিষ্টেটলের তত্ব সর্বত্র বিদ্যমান ছিল।ঐ তত্বে বলা হয় যে, পাহাড়ের ঠান্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটির নীচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে।বর্তমান যুগে আমরা জানতে পেরেছি যে, বৃষ্টির পানি মাটির ফাটল দিয়ে ভেতরে চুইয়ে পড়ার কারণে ঐ পানি পাওয়া যায়।
একথাই কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ
“তুমি কি দেখনি যে,আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন,এর দ্বারা বিভিন্ন রংয়ের ফসল উৎপন্ন করেন?- সূরা যোমার -২১
তিনি আরো বলেনঃ
“তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং মৃত্যুর পর ভূমির পূনরুজ্জীবন করেন।নিশ্চয়ই এতে, বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী।” (সূরা আর রুম -২৪ )
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত, তারপর তাকে যমীনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। -সূরা আল মুমিনূন -১৮
১৪০০ বছর আগের অন্য কোর বই পানি চক্রের এরূপ নিখুঁত বর্ণনা দেয়নি।
আরিফের বলা শেষে সাজিদ আর দেরি করলো না।
চলবে……………………..