গল্প:- গন্তব্য পর্ব:-০৪

গল্প:- গন্তব্য
পর্ব:-০৪
লেখক:‌হাছাব বিন আহমেদ

সজিব:- আরিফ অল্প থাক কথা আছে।
আরিফ:- আচ্ছা ঠিক আছে। নাছির তুই যা।

নাছির চলে গেল,এই দিকে সজিবের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সজিব নিজেও ভাবতে পারছে না ও কি সত্যি কান্না করছে! আরিফ অবাক হয়ে সজিব কে দেখছে!
আরিফ:-সজিব প্লিজ এইভাবে কান্না করিস না,কি হয়েছে খুলে বল। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।
সজিব:- (কান্না করতে করতেই বলতে লাগলো) অল্প আগে তুই বল্লি না যে সেরা সম্পদ হলো পূণ্যবতী স্ত্রী!
আরিফ:- জি, তো?
সজিব:- আমি আমার সম্পদ নিজ হাতে হাড়িয়ে ফেলেছি।
আরিফ:- মানে!কি বলিস এসব?
সজিব:- আমি বিয়ে করেছি,আর আমার স্ত্রী কে শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে বসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি।
আরিফ:- আমি ঘটনার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।তুই বিয়ে করলি কবে??
সজিব:- তোকে শুরু থেকেই বলি।
আজ থেকে প্রায় এক মাস আগের কথা।আমার অধঃপতন দেখে বাবা আমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। আব্বু আর আমাকে কন্ট্রোল করতে না পারায় আমাকে বিয়ে করিয়ে দেয়, এইটা ভেবে যে বিয়ের পর আমার ভিতর দায়িত্ব বোধ আসবে। কিন্তু বিয়ের পর আমি ওকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করি। মেয়েটার নাম হুমায়রা ।এই ডায়েরি টা পড়। এই বলে আমি আরিফ কে হুমায়রার ডায়েরিটা দিলাম। আরিফ আমার হাত থেকে নিয়ে পড়া শুরু করলো।
প্রথম পেজ:
যে দিন থেকে বুঝতে শিখেছি একদিন বিয়ে হবে, সংশার হবে , তখন থেকেই মনের ভিতর সাজানো ছিল একটি বাসর রাত।আসলে আমার সপ্নের আগা গোড়া সবটুকু ঘিরেই ছিল একটি বিয়ে ও সুন্দর সংসার।
বিয়ের রাতে উনি বাসর ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি খাট থেকে নেমে এসে ওনাকে সালাম করি। কিন্তু উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল –
সজিব:-কেন বিয়ে করেছো আমাকে? আমাদের এতো বিশাল প্রপার্টি দেখে! কোনো কিছুর অভাব হবে না জীবনে!এসব ভেবেই বিয়েটা করে ফেলেছো রাইট? তোমাদের মতো মেয়েরা এরকম ওফার পেলে তো লুফে নিবেই তাইনা? টাকার জন্য তো সব করতে পারো তোমরা।
উনি আমাকে এইধরনের কথা শোনাবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।না চাইতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।
সজিব:-দেখো তোমার মতো লভী মেয়ের সঙ্গে কোনো কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।আমি তোমাকে,সরি তোকে তুমি বলছি কেন? যাইহোক আমি তোকে কখনো আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিবো না।তোর যা ইচ্ছে তাই তাই কর। এখন আমি ঘুমাবো আমাকে ডিস্টার্ব করবি না।
আমার তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছিলো। জীবনের পরিধি খুব একটা বেশি নয় আমার।এই অল্প বয়সে নিজেকে এতো ছোট কখনো কোনদিন মনে হয়নি যতটা আজ মনে হচ্ছে।
উনি খাটে ঘুমিয়ে গেলো।আমি ফ্লোরে বসে কান্না করতে করতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের সময় উনাকে নামাজ আদায় করার জন্য ডাকলাম। উনি উঠে রাগি কন্ঠে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
আমি:-ফজরের আজান দিয়েছে।তাই নামাজ আদায় করার জন্য ডাকলাম।
আমার কথা শুনে আমার গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়টা এতোই জোরে ছিলো যে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।তাই আমি ফ্লোরে বসে পড়লাম। উনি বললেন “তোকে না বলেছি আমাকে ডিস্টার্ব করবি না।আর আমি নামাজ পড়বো?আমি তো সৃষ্টিকর্তাই বিশ্বাস করি না। সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে তোদের মতো অশিক্ষিত ছোটলোক মানুষেরা।
আমার বিয়ে , সংসার নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। বিয়ের আগে এই ডাইরিটা কিনেছিলাম আমার আর আমার স্বামীর ভালো লাগা মূহুর্তু লিখে রাখার জন্য। কখনো ভাবিনি এই ধরনের লেখা দেখতে হবে।
এতোটুকু পড়েই আরিফের চোখে জল চলে এসেছে। আরিফ সজিব কে বললো
আরিফ:- আরিফ তুই কি মানুষ না দানব? তুই এতো খারাপ ব্যবহার কি করে করতে পারলি, একটি নিরিহো মেয়ের সঙ্গে??
সজিব কিছু বল্লো না সজিবের অজান্তেই সজিবের চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করেছে।
আরিফ ডাইরিটা আবার পড়া শুরু করলো।
তিনি নম্বর পেজ:-
আমি বিকালে উনাকে চা বানিয়ে দিলাম।
সজিব:- এটা কি বানিয়েছিস তোর মাথা?
আমি:- চিনি কি বেশি হয়েছে??
সজিব:- তুই জানিস না, চিনি বেশি না কম তোর বাবা মা জীবনে চা বানানোও শিখায় নাই?
(এই কথা বলেই চায়ের কাপটা ছুড়ে মারে আমার গায়ে)
সজিব:- যা আমার চোখের সামনে থেকে।
আমি:- আমাকে মাফ করে দিন এর থেকে আর ভুল হবে না।
সজীব:- এখান থেকে যেতে বলেছি তোকে।

আরিফ ডাইরিটা বন্ধ করে দিয়ে বল্ল “দেখ ভাই আমি আর পরতে পারবো না। আমার ভাবতেই লজ্জা লাগছে তোর মতো এতো জঘন্য লোকের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। এখন বল ভাবি কোথায়?

সজীব:- যিহেতু এখানে আমার ইউনিভার্সিটি,আর এখানেই পারটাইম জব করি।তাই হুমায়রা কে এখানে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর আমাদের দূরত্ব অনেক বৃদ্ধি পায়। আসলে আমি নিজেই দূরত্ব তৈরি করি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাগারাগি করতাম। মেয়েটা চুপচাপ সব মেনে নেয় । হুমাইরা চেষ্টা করতো আমার মন পাওয়ার।
যেমন মাঝে মাঝে সে বিরিয়ানী রান্না করতো। বিরিয়ানী আমার অনেক পছন্দের খাবার। কিন্তু আমি খাবার নিয়ে বসে।দু লোকমা খাবার মুখে দিয়েই খাবারের প্লেট ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলতাম:’কি ছাইপাশ করো।এর চাইতে তো বিষ খাওয়া ভালো। হুমাইরা ছলছলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে।আমি চলে যাই। এইগুলা রোজকার রুটিনে পরিণত হয়েছিল।

কোনদিন রাতে ঘুম ভাঙ্গলে শুনি, পাশের রুমে হুমাইরার চাপা কান্নার শব্দ। আমি বিরক্ত হয়ে রাগ করতাম” এইভাবে কান্নাকাটি করলে ঘুমাবো কখন?এসব ঢং বাদ দিয়ে ঘুমাতে দে আমাকে।

এভাবেই ওর উপর নির্যাতন করতে থাকি।আজ থেকে এক সপ্তাহ আগে হুমাইরা কে আমার পকেট টাকা চুরি করার মিথ্যা অভিযোগে ওকে ওদের বাসায় রেখে দিয়ে আসি। একজন মানুষ সাড়া জীবন যতো কান্না করে, আমার মনে হয় হুমাইরা ঐ দিন ওর থেকে বেশি কান্না করেছিলো।(সজীব কান্না করতে করতেই কথা গুলো বল্ল)
এদিকে আরিফের চোখ থেকেও পানি পরছে।
আরিফ:- আমি মনে করতাম এইগুলা শুধু গল্প সিনেমাতেই হয়। বাস্তবে হতে পারে তা কখনো ভাবতেও পারি নাই। কিন্তু কেন করলি??
সজীব:- আসলে আমি ওকে মেনে নিতে পারেনাই। আমি চেয়েছিলাম ও জেন নিজ ইচ্ছায় আমাকে সেরে চলে যায়।
আরিফ:- একটি কথা জানিস, শয়তান তখন খুব খুশি হয়,যখন স্বামী স্ত্রীর মাঝে কোলাহল ও বিভেদ সৃষ্টি হয়।
সজীব মন দিয়ে শোন, এখন থেকে যতো রাগারাগি হোক না কেন! কখনো দুজন দুজনকে ছাড়া থাকবি না। কারণ দূরত্ব দূরত্ব বাড়ায় -আর পাশাপাশি বাড়ায় মনের জোর।
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করবি না কেন? অবশ্যই করবি। কিন্তু ঝগড়াটা হওয়া উচিত মর্জিত। কেউ কখনো কারো সন্মানে আঘাত করবি না। দুজন -দুজনকে পূর্ণ বিশ্বাস করবি।আর শেষে একটি হাদীস বলি মানে রাখবি:-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি ভালো যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো।”

আমার মনে হয় এই একটি হাদীস ই যথেষ্ট স্ত্রীর মর্যাদা বোঝার জন্য।

সজীব:- আমি এখন কি করবো?
আরিফ:- এখন তুই ভাবির বাসায় যা।আর যিকনো প্রকারে ভাবিকে বাসায় নিয়ে আসবি।
সজীব:- জি! ঠিক আছে তুই তাহলে তোর বাসায় যা আর আমিও বেড়িয়ে পরি হুমায়রা দের বাসার উদ্দেশে!

চলবে……..


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *