গল্প:-পরিপূর্ণ জীবন
লেখক- হাছাব বিন আহমেদ
আমার নাম সজিব , ছোট একটি বিজনেস করি, আজ রবিবার অফিস বন্ধ, কোন কাজ নেই , তাই ভাবলাম একটু ভালো করে ঘুমিয়ে নেই । কিন্তু আয়শার দুস্টমিতে তা আর সম্ভব হলো না । আয়শা আমাদের একমাত্র সন্তান, প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। আয়শা এসে একবার আমার নাক টিপে দিচ্ছে আবার কান ধরে টানছে। উপায় না পেয়ে উঠে গেলাম। কিন্তু আমার প্রিয়তমা হুমাইরা কে দেখছি না , তাই হুমাইরা কে ডাকলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না , আমি একটু বিস্মিত হলাম কারণ আমি ঘুম থেকে উঠেই হুমাইরা কে একটি আদর দেই🙈, কিন্তু আজ ডাকছি তাঁর পরেও আসছে না কেন? তাই আয়শা কে বললাম
আমি- তোমার আম্মু কোথায় ?
আয়শা – আম্মু আজকে একা একাই রান্না করতেছে আর অনেক কান্না করতেছে।
একা একা রান্না করছে, এইটা শুনে তো আমি আরো বিস্মিত কারণ সকালের রান্না আমি আর হুমাইরা এক সঙ্গে করি । মানে হুমাইরা রান্না করে আর আমি হুমাইরা কে জরিয়ে ধরে থাকি। তাই বিছানা থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে গেলাম । দেখি হুমাইরা কান্না করছে আর রান্না করছে , হুমাইরার গালে চারটি নখের দাগ লাল হয়ে ফুলে আছে, মেয়েটা অনেক অভিমানী , কাল রাত থেকে অভিমান করে আছে , এখন আপনারা হয়তো ভাবছেন হুমাইরা কেন অভিমান করেছে ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে আপনাদের একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে , শুনেন তাহলে-
আমি ইশার নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরলাম , হুমাইরা এসে আমার কাপড় খুলে দিতে দিতে বললো-
হুমায়রা- এখন আপনার বাসায় আসার সময় হলো ?
আমি- কেন কি হয়েছে?
হুমায়রা- কি হয়েছে মানে , আপনি কি ভুলে গেছেন? আজকে আমাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ?
আমি- ও সরি ভুলে গেছি , কাল নিয়ে যাবো ।
হুমায়রা- হবে না, আপনি একটি সাপ্তাহ ধরে বলছেন ,কাল নিয়ে যাবো,কাল নিয়ে যাবো , কিন্তু আপনি নিয়ে যান না ।
আমি- কিছু দিন ধরে একটু ব্যাস্ত আছি, কালকে ঠিক নিয়ে যাবো।
হুমায়রা- ওহু হবে না আজকে এখনি নিয়ে যেতে হবে ।
আমি- দেখো ভালো লাগছে না , বেশি কথা বলো না ।
হুমায়রা- হুম এখন তো আর আমাকে ভালো লাগবেই না , এখন তো আমি পুরোনো হয়ে গেছি ।
আমি- কি সব ফালতু কথা বলো।
হুমায়রা- সত্যি কথা বললে খারাপ লাগে তাই না ?
আমি- দেখো ভালো লাগছে না জ্বালিও না তো এখন?
হুমায়রা- আমি তোমাকে জ্বালাই তাই না , আমাকে যদি তোমার এতোই অপছন্দ তাহলে তালাক দিয়ে দাও ,
কথাটা শুনে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না একটা থাপ্পর দিয়ে দিলাম হুমায়রা কে । তাঁর পর আমি এসে শুয়ে পড়লাম। আর আমার মহারানী অভিমান করে আছে । এই ছিল ঘটনা ,
হুমায়রা রান্না করছে আমাকে দেখতে পায়নি , হুমাইরার গালে দাগ দেখে আমার অনেক কষ্ট লাগলো , কেন যে হাত তুলতে গেলাম , মেয়েটা তো আমার কাছে বেশি কিছু চায়নি শুধু একটু সময় চেয়েছে।
আমি গিয়ে হুমাইরা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। হুমায়রা চমকে উঠলো , তার পর নিজেকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো ।
আমি হুমাইরার সামনে দুই হাঁটু গেড়ে বসলাম , তার পর বললাম-
হুমায়রা প্লিজ আমার কথা গুলো শুনো , দেখ আমি দুঃখিত, আমি ভাবতে পারি নাই যে তোমার উপর হাত উঠে যাবে , আসলে সারাদিন ব্যাস্ততার পার যখন তোমার মুখে ঐ কথা শুনলাম নিজেকে আর সামলাতে পারি নাই , কারণ আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া একটি মুহূর্ত যে ভাবতে পারি না , তুমি যখন ডিভর্জ চাইলে তখন আমার মনে একটি শুন্যতা কাজ করেছে ,যে শুন্যতা নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব না । কারণ আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি চাইলে আমাকে যতো খুশি থাপ্পর দিতে পারো আমি কিছু মনে করবো না , তাও এইভাবে আমার সঙ্গে কথা না বলে থেকো না ,
হুমাইরার কান্না আরো বেড়ে গেছে, কথা গুলো বলতে বলতে আমিও কেঁদে ফেলেছি। হুমায়রা আমাকে উঠিয়ে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো ।
হুমায়রা- জানেন আপনি অনেক ক্ষারাপ , আপনি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কে আছে , আমি তো আপনার সঙ্গেই অভিমান করবো তাইনা, কাল রাতে আপনি আমার অভিমান না ভাঙিয়ে ,না খেয়ে শুয়ে পরলেন । জানেন আমার কতো কষ্ট হয়েছিলো ।( কান্না জড়িত কন্ঠে)
আমি- সরি, ( কপালে একটা চুমু দিয়ে)
হুমায়রা- আমি যে আপনাকে ছাড়া একা হয়ে পড়ি।
আমি- আই লাভ ইউ
হুমায়রা- আমিও
এমন সময় আয়শা বলে উঠলো আব্বু তুমি কি কাঁদছো?
আমি হুমাইরা কে ছেড়ে দিয়ে হেসে বলল , না তোমার আম্মুর রান্নার জন্য পিঁয়াজ কাটলাম তো তাই !
দুপুরে আমরা তিনজন ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে একটি পার্কে গেলাম , আমরা মাঝে মধ্যেই এই পার্কে আসি কারণ এখানে সবাই ফেমেলি নিয়ে আসে , কোন অশ্লীলতা নেই । তার পর ওখান থেকে গেলাম শপিংমলে , কিছু কিনা কাটা করে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে তার পর বাসায় আসলাম ।
হুমায়রা বাসায় এসে আমাকে একটা আদর দিয়ে বলল , ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি দিন উপহার দেওয়ার জন্য। আমি হুমাইরা কে আদর দিতে যাবো এমন সময় অন্য রুম থেকে আয়শা হুমাইরা কে ডাকছে, দুজনেই আয়শার রুমে গেলাম –
আয়শা- আম্মু আমি ঘুমাবো !
হুমায়রা- আচ্ছা ঠিক আছে !!
আয়শা- একটা গল্প শোনাও!!
আমার মিষ্টি মেয়েটার এইটা অভ্যাস হয়ে গেছে , ঘুমের আগে গল্প শোনাতে হবে । হুমায়রা খুব সুন্দর করে গল্প বলে আমিও শুনি মাঝে মাঝে । আয়শা শুয়ে পড়লো হুমাইরা আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গল্প করছে , আমিও শোনার জন্য পাশে বসে পরলাম।
হুমায়রা-
প্রথমে আল্লাহ ছিলেন আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিলো না, এমন কোন মুহূর্ত ছিলো না যখন তিনি ছিলেন না। তিনি ব্যাতিত কোন বাস্তবতা ছিলো না, কোন এক পর্যায়ে অসিম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সৃষ্টি করবেন ,যিহেতু অসিম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৃষ্টি বলে কিছু থাকবে তার মানে সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাটাই স্রেও, সেই সৃষ্টি ভালো কিছুই করুক বা খারাপ কিছু , আল্লাহ তার আরশ সৃষ্টি করলেন, পানি সৃষ্টি করলেন ,কলম সৃষ্টি করলেন এবং সেই কলম কে আদেশ করলেন লিখ, কলম বলে উঠলো আমার রব আমি কি লিখব? আল্লাহ বললেন সময়ের শেষ পর্যন্ত। আরশ শব্দের অর্থ সিংহাসন, পানি, কলম, এই শব্দ গুলোর অর্থ আমরা জানি কিন্তু শুরুর সময়ের সেই আরশ ,কলম, পানি কেমন তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাঁর পর আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করলেন ( ২১:৩০) , অতঃপর কোন এক পর্যায়ে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন ফেরেস্তা দের । আল্লাহ নুর থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি করার পর আরো কিছু সময় পার হলো এবং এরপর এক নতুন জাতি সৃষ্টি করলেন এবং তাদের সৃষ্টি করলেন এক ধরনের ধোঁয়া বিহীন আগুন থেকে। এই জাতীর নাম হলো- জ্বীন , ফেরেস্তা আর জ্বীন জাতির মূল পার্থক্য হলো জ্বীন জাতি জন্মগত ভাবেই আল্লাহর ইবাদত করে না বরং তারা চাইলেই আল্লাহর অমান্য করতে পারে। আল্লাহ জ্বীনদের দুনিয়াতে খলিফা হিসেবে পাঠালেন। আগুন থেকে তৈরি এই সৃষ্টি ছিলো উত্তেজনা প্রবন, তাঁরা ঘন ঘন যুদ্ধ করেতে শুরু করলো এবং দুনিয়াতে অন্যায় অনাচার ছরিয়ে পরলো, কিছু পূণ্যবান জ্বীন থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ জ্বীন আল্লাহ কে অমান্য করতে লাগলো, কিন্তু একজন জ্বীন ছিলো যে বিশেষ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করতো এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করতো। এক পর্যায়ে আল্লাহ তার ইবাদতের পুরস্কার স্বরূপ তার এতোটা কাছে আসার অনুমতি দিলেন যে সে ফেরেস্তাদের অবস্থানে গিয়ে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেলো। অন্য দিকে দুনীয়াতে জ্বীন জাতির অপকর্ম চলতে থাকায় আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদের হুকুম দিলেন, দুনিয়াতে গিয়ে অন্যায় অত্যাচার করা জ্বীন দের ধংস করার জন্য। এর পর কতোটা সময় পার হলো তা আমরা জানিনা, এক পর্যায়ে আল্লাহ ঘোষনা দিলেন আল্লাহ নতুন এক জীব সৃষ্টি করবেন তার পর আল্লাহ নিজ হাতে আমাদের ( মানুষ) সৃষ্টি করলেন।
আয়শা গল্প শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে গেছে বলতে পারবো না। আমিও মন দিয়ে হুমাইরার গল্প বলা শুনছিলাম।
আমি- অসাধারণ সুন্দর। এতো সুন্দর করে সাজানো কোরআনের কথা গুলো কোথায় পেলে?
হুমায়রা- baseera ইউটিউব চ্যানেল থেকে!
আমি- ও আচ্ছা, চলো না রাস্তায় যাই।
হুমায়রা- এই রাত করে?
আমি- জি !!
নীরবভাবে হাত ধরে হাটছি কিন্তু আমি জানিনা গন্তব্য কোথায়।
হুমায়রা- আমাকে কোলে নিতে পারবা?
গ্ৰামের রাস্তায় এতো রাতে কেউ বের হয়না তাই আমি কিছু না বলেই হুমাইরা কে কোলে তুলে নিয়ে হাটা শুরু করলাম। হুমায়রা হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে।
আমিঃ হুমাইরা, তোমার ওজনতো বেশ বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে।
হুমায়রা: কি! আমার ওজন বেশি হয়ে
গেছে? নামাও আমাকে। আমি আর তোমার কোলে চড়বোনা।
আমিঃ কিন্তু আমিতো নামাবো না।
কিছু সময় পর…
আমিঃ হুমু!
হুমায়রা: কি?
আমিঃ বাসায় চলো।
হুমায়রা: আরেকটু পর যাই প্লীজ। ভালো লাগছে তোমার কোলে।
আমিঃ আচ্ছা আরেকটু পরেই যাই।
..
হাটতে হাটতে পা ব্যাথা হয়ে
গেলো কিন্তু এই ব্যাথার মধ্যেও অন্যরকম একটা আনন্দ পাচ্ছি। এই
আনন্দটা পাওয়ার জন্য সাড়া জীবন
এই রকম ব্যাথা পেতে রাজী আমি।
********* সমাপ্ত**********
( বি:দ্র: – অনুমতি না নিয়ে কপি করা নিষেধ। অনেকেই আমার গল্প নিজের নামে পোস্ট করেন , ইসলামে এইটা সম্পূর্ন হারাম, ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। )
আমার লেখা গুলো যদি আপনাদের ভালোলাগে তাহলে আমার লেখা বই কিনে আমাকে সমর্থন করতে পারেন।
Leave a Reply