“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-০৫
Writer:-Hassab bin Ahmed.
আর আমি ও বাসায় চলে আসলাম.
সুবহা বাসায় গিয়ে সাজিদের দেওয়া পেকেট টা খাটে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল । এই সময় নিশি সুবহার রুমে এসে দেখেতে পেলো সুন্দর একটি পেকেট তাই ও খুলে ফেললো। নিশি একটি চিঠি আরো একটি ছোট পেকেট দেখতে পেলো । নিশি চিঠি টা খুল পড়ে তো হাসতে হাসতে বেহুঁশ অবস্থা । নিশি হাসতেছে আর আপু আপু বলে চিৎকার করছে।
সুবহা রুমে এসে
সুবহা:- কি হয়েছে এতো হাসি কেন ? তোকে না বলেছি এভাবে এতো উচ্চ গলায় হাসতে নেই .
নিশি:- সরি আপু । কিন্তু দেখ তোমার পাগল তোমাকে চিঠিতে কি লিখেছে 😁😁😁😁😁।
সুবহা:- আমার পাগল মানে ? ( চিঠি টা হতে নিয়ে)
নিশি:- আমি বলিনি ? এখানেই লেখা আছে তোমার পাগল .
সুবহা চিঠি টা পড়তে লাগলো
প্রিয়তমা,
আশা করি উন্মুক্ত ধরায় মুক্ত বিহঙ্গের মত সুখেই আছো। তোমার ওই নিশাচর চোখের, রক্তিমধমনী মুগ্ধ করেছে আমায়। হয়তো কনো কবিতা নয়,কোন কাব্য নয়, হয়তো হিমাবতী কন্যা হয়েই আমার হৃদয়ে হিমসাগরের মাঝে তুমি রক্তিম আভায় ভরিয়ে দিয়েছো আমায়। “তোমাতে খুঁজে পেয়েছি আমি আমার মনের চারী দেয়াল, তুমি আমার স্বপনে আঁকা সুখের কার্নিবাল।” আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে এইভাবে কোন মেয়েকে চিঠি লিখবো। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমার কোন মেয়েকে প্রপোজ করার সাহস হয় নি, তাই আমি ভেবে নিয়েছিলাম আমার জীবনে প্রেম ভালবাসা বলতে কিছু নেই। আর এই কথাটাই আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম , কিন্তু…… হঠাৎ তুমি আমার জীবনে আসলে , যেভাবে রাত কে জয় করে সূর্য উঠে। সত্যি বলতে তোমাকে যখন প্রথম দেখি, সেই এক দেখাই আমি তোমার চোখের মায়ায় পরে যাই, আমি যখনি চোখ বন্ধ করি তখন তোমার মায়াভরা চোখ দুটো আমার সামনে ভেসে ওঠে। ইচ্ছে করে সারা জীবন এই মায়ায় জড়িয়ে থাকি ।
তুমি জানো আমার প্রিয়তমা কে ঘিরে আমার অনেক ইচ্ছা আছে ………
আমার প্রিয়তমা আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে, 🥰
আমার লংড্রাইবে ঘূরতে যাবো।,
আমার ঘড়ি হাতে পরিয়ে দিবে , টাই বেঁধে দিবে,
মাঝে মাঝে আমরা একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজবো,
এক সঙ্গে সূর্য উদয় দেখবো,
ফিস ফিস করে কথা বলবো😁,
আমরা একে অপরকে ভালোবাসবো ও সন্মান করবো,
আমার প্রিয়তমা মাঝে মাঝে আমার জন্য সাজগোজ করবে,
আরো অনেকে আছে এখন মনে নেই ।
আর এখানে তুমি করে বলার জন্য দুঃখিত , সত্যি বলতে আমার প্রিয়তমা কে তুমি করে বলতেই বেশি ভালো লাগে ।
শেষে একটাই প্রশ্ন – আপনি কি আমার প্রিয়তমা হবেন?
ইতি,
আপনার পাগল
এই চিঠি পড়ে তো সুবহা আর নিশি দুজনেই হাসতে হাসতে শেষ, এতো অদ্ভুত চিঠি আগে কখনো দেখেনি ।
নিশি:- দেখলে আপু , আমি কি এমনি এমনি হাসলাম ।
সুবহা :- আচ্ছা খাটের উপর ঐ টা কি?
নিশি:- ওওওও আপু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। চিঠির সঙ্গে এই পেকেট ও ছিলো।
নিশি পেকেট খুলে …
নিশি:- ওয়াও আপু , এটা তো একটা রিং ( আংটি ) ,
সুবহা:- বাহ , পাগলের তো পছন্দ আছে বলতে হতে ।
নিশি:- অনেক কিউট তাই না আপু ,?
সুবহা:- হুম 🤗 , তোর কি পছন্দ হয়েছে তাহলে তুই নিয়ে নে .
নিশি:- না আপু লাগবে না , আমি পরে কিনি নিবো নে , তোমার পাগল যদি যানতে পারে যে তার দেয়া প্রথম উপহার এভাবে আমি হাতিয়ে নিয়েছে তাহলে তো পাগলের একেবারে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে.😁😁😁😁😁😁
…………………………………………………………………..
এই দিকে সাজিদ সুবহার দেয়া গিফটের প্যাকেট খুলতে লাগলো —-
পেকেট খুলে দেখতে পেলাম অনেক গুলো বই , এখন আমার খুশি দেখে কে , আপন জনের কাছ থেকে প্রিয় বস্তু উপহার পাওয়ার মজাই আলাদা । অনেক আগ্রহ নিয়ে বই গুলো দেখতে লাগলাম –
১ . বাংলা কুরআন .
(কোরআন দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল , জীবনের এতো গুলো বছর পার করে দিলাম না জানি কতো বই পরেছি , কিন্তু যে বই টা আমার সবথেকে আগে পরা উচিৎ ছিল তা কখনো হাত দিয়েও দেখেনি , যে বই টা আমার সৃষ্টি কর্তার কাছে থেকে এসেছে তা দেখার কোন সময় হয়ে উঠে নাই. জানিনা আল্লাহ আমাকে এর জন্য কোত শাস্তি দিতে পারে । কথা গুলো মনে মনেই ভাবছিলাম ।
ভাবতে ভাবতে কোরআন টা রেখে অন্য বই গুলো দেখতে লাগলাম। )
২.প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ( আরিফ আজাদ)
৩.প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ (আরিফ আজাদ)
৪. ইসলামী আকিদা ( ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর)
৫.বেলা ফুরাবার আগে ( আরিফ আজাদ)
৬.ফেরা( সিহিন্তা শরীফাহ ,নাইলাহ আমাতুল্লাহ)
৭.প্রত্যাবর্তন( আরিফ আজাদ)
৮.সালাত নবিজীর শেষ আদেশ ( শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল )
বই গুলো দেখে আমি ভাবতে পারছি না , কোনটা আগে পড়তে শুরু করবো । ভাবলাম আগে সুবহার সঙ্গে একটু কথা বলে নেই যেই ভাবা সেই কাজ,কল করলাম
সুবহা:-আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
আমি:-ওয়ালাইকুম আসলাম?
সুবহা:- ভালো আছেন?
আমি:- জি ভালো আছি । আপনি?
সুবহা:- জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আর আপনি তো সত্যি পাগল , আপনাকে এতো দামি রিং কে দিতে বলেছে?
আমি:- কেন? আমি কাউকে কি উপহার দিবো , ওটা কি লোকের কাছে শুনে দিতে হবে?
সুবহা:- তা বলি নি , এতো টাকা খরচ করার কোন মানে হয় না ।
আমি:- কেন আপনার কি পছন্দ হয় নি?
সুবহা:- আপনার ইচ্ছা গুলো আমার পছন্দ হয়েছে ।
আমি :- তাই নাকি ? তাহলো আমার প্রশ্নর উত্তর দিলেন না তো?
সুবহা:- কোন প্রশ্ন?
আমি:- কেন , ওখানে তো লেখাই আছে ? আপনি কি আমার প্রিয়তমা হবেন?
সুবহা:- ওওও, না হলে কি আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলতাম?😌 আচ্ছা বাদ দেন কি করেন এখন?
আমি:- আপনার সঙ্গে কথা বলি?
সুবহা:- ওওওওও, ঠিক আছে আপনি কথা বলেন তাহলে আমি যাই?
আমি:- কেন?
সুবহা:- ঐ যে মাহরাম না ।
আমি:- হুম,,😢, একটি কথা বলে যান?
সুবহা:- হুম বলুন?
আমি:- আপনি এতো কিছু জানেন তাহলে আমাদের বিয়ের তারিখ এতো দেরি করে রাখলো আপনি প্রতিবাদ করলেন না কেন ? আপনি কি জানেন না বিয়ে ঠিক হলে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইবো ?
সুবহা:- হুম জানতাম , কিন্তু কি করবো. সিদ্ধান্ত তো আমার হাতে নেই, পরিবার থেকেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপায় নেই .
আমি:- আর যা হবার হয়েছে , এই তো মাত্র ১৫ টা দিন তার পর আপনি আমাদের বাসায় থাকবেন ?
সুবহা:- মাত্র ১৫ দিন মানে?
আমি:- ১৫ দিন পর আমাদের বিয়ে?
সুবহা:- কিন্তু বিয়ের পর তো আমি এখানেই থাকবো ।
আমি:- মানে ? কেন?
সুবাহা:- কেন মানে কি? আপনি জানেন না সামনে মাসে ১০ তারিখে শুধু আমাদের বিয়ে পরানো হবে? কোন অনুষ্ঠান হবে না। আমার পরিক্ষার পর বড়ো করে অনুষ্ঠান করে আপনাদের বাসায় নিয়ে যাবে আমাকে ?
আমি:- মানে কি? আমাকে তো এইসব কিছু বলে নাই. আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখতেছি আপনি ফোন রাখতে পারেন ।
ফোন কেটে দিয়ে আম্মুর রুমে গেলাম ।
আম্মু আম্মু………..
আম্মু:- কি হয়েছে এভাবে চিল্লাচিল্লি করিস কেন?
আমি:- শুনলাম ১০ তারিখে আমাদের বিয়ে হবে কিন্তু সুবহা কে বাসায় আনা হবে না?
আম্মু:- হুম ঠিক। আসলে হয়েছে কি মেয়েটার পরিক্ষার আর মাত্র ২ টা মাস আছে তাই আমরা সবাই ভাবলাম যদি পরিক্ষার আগ মুহূর্তে এখানে নিয়ে আসি তাহলে ওর পড়াশোনার উপর প্রভাব পরতে পারে তাই ভাবলাম পরিক্ষ শেষ হলে বড়ো করে অনুষ্ঠান করে বৌ মাকে ঘরে নিয়ে আসবো .
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে , এই কথা আমাকে আগে বলো নাই কেন?
আম্মু:- যদি তুই রাগ করিস তাই বলা হয় নি?
আম্মুর কথা শুনে রাগ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু ঘুম আসছে না তাই ভাবলাম একটা বই পড়ি ।
তাই সব থেকে ছোট বই ( সালাত নবীজীর শেষ আদেশ ) টা পড়তে বসলাম । প্রথম পাতা উল্টিয়ে যা দেখতে পেলাম । এইটা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না । আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে , ভয় ও পাচ্ছি , চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো । প্রথমেই লেখা ছিল-
যারা সালাত আদায় করে না, তাঁরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করুন- কে উত্তম? আমি নাকি শয়তান? আপনারা জানেন ইবলিশ অত্যন্ত ইবাদত গুজার একজন ছিলো। আল্লাহ যখন ফেরেস্তাদের আদমের প্রতি সাজদাবনত হতে আদেশ দিলেন ইবলিশ তা প্রত্যখান করে বসলো। কেবল একটি সাজদা করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে ইবলিশ হয়ে গেল সবচাইতে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।
৫ উয়াক্ত মিলিয়ে ১৭ রাকাত সালাত সর্বমোট ৩৪টি সাজদা। কাজেই যে ব্যক্তি একদিন সালাত ছেড়ে দেয় সে ৩৪ টি সাজদা ছেড়ে দেয়। ইবলিশ কেবল একটি সাজদার আদেশ অমান্য করেছিলো। একটি মাত্র সেজদার আদেশ অমান্য করে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়েছিলো সে। আর যে ব্যক্তি দৈনিক সলাত আদায় করে না,সে ৩৪ টি সাজদার বিধান কে অবজ্ঞা করে। তাহলে বলুন কে নিকৃষ্ট? যে দিনে ৩৪ বার সাজদা ছেড়ে দেয়,ওই ব্যক্তি? নাকি যে একবার ছেড়ে দেয় সে?
আমার কোন কিছুর দিকে খেয়াল নেই, আমি এক নাগাড়ে বই পড়ে শেষ করলাম । বই পুরোটা পরতে যে কত বার কেঁদেছি কে জানে । আমি কিছু বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিৎ । আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমি কাঁপা কাঁপা হাতে সুবহাকে কল করলাম । সুবহা রিসিভ করে সালাম দিয়েছে কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছি না গলা টা ধরে এসেছে । আমি একেবারে কেঁদেই দিলাম।
সুবহা:- কি হয়েছে কাঁদছেন কেন?
আমি :- (কান্না জড়িত কন্ঠে বলল ) আমি “সালাত নবীজীর শেষ আদেশ ” বই টা পরলাম । আমি তো কখনো নামাজ পরি না , আমার কি হবে? আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন ? আমি এখন কি করবো ?
সুবহা:- ওওও বুঝতে পারছি । আপনি শান্ত হোন । কিছু হবে না । আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে মাফ করবেন ? আপনি এক কাজ করেন এখন অজু করে দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করেন । দেখবেন ভালো লাগবে ।
আমি কল কেটে দিয়ে দুরাকাত নামাজ আদায় করতে বসলাম । অনেক সময় নিয়ে কান্না করে ক্ষমা চাইলাম । এখন একটু মনটা হালকা হয়েছে । নামাজে এতো শান্তি আগে জানা ছিল না । আমি প্রতিজ্ঞা করলাম আর কখনো নামাজ ছেড়ে দিব না ,ইনশাআল্লাহ।
চলবে……..
Leave a Reply