তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-১৩
Writer:-Hassab bin Ahmed.
সুবহা এখন আমাদের বাসায় থাকে, অনেক বড়ো অনুষ্ঠান করে সুবহাকে বাসায় এনেছে আব্বু,আমাদের বিয়ের এক বছর পরের ঘটনা, সুবহা রাতে আমাকে বললো ,
সুবহা:- শুনছেন , আমার মনটা অনেক খারাপ , আম্মুর কথা মনে পড়ছে চলেন কাল একটু বাসায় গিয়ে আম্মু আব্বুকে দেখে আসি,
আমি :- আচ্ছা ঠিক আছে, তোমাকে তোমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি কলেজে যাবো নে ,
সুবহা:- হুম 🤗 🤗 🤗🤗🤗
সকালে প্লান অনুযায়ী সুবহাকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি কলেজে আসলাম , কলেজ শেষ করে আমি আবার সুবহাদের বাসায় যাবো,
কলেজ গিয়ে , ক্লাছ রুমে যাওয়ার ১৫ মিনিট পর সুবহার ফোন
আমি:- আসসালামুয়ালাইকুম
সুবহা:- কোথায় আপনি , এখনি বাসায় আসেন , ( বলেই কেটে দিলো)
সুবহার কন্ঠ শুনে মনে হলো সুবহা অনেক ভয় পেয়েছে, কিছু একটা তো হয়েছে , ক্লাছ বন্ধ করে , সুবহাদের বাসায় গেলাম …..
গিয়ে দেখি সুবহা আর নিশি বসে আছে সুবহার আব্বু আম্মু রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আমি গিয়ে সুবহাকে জিগ্গেস করলাম কি হয়েছে? কিন্তু কোন উত্তর দিচ্ছে না ” পরে একটু জোর গলায় জিজ্ঞেস করলাম , কিন্তু কিছু না বলে সুবহা দারিয়ে সবার সামনে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ,
সুবহার আব্বু:- সুবহা ওকে এই বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বল , এটা ভদ্র লোকের বাসা , এখানে কোন চরিত্র হীন, লোকের যায়গা নেই ,
সুবহা তো অজরে কাঁদছে ,
আমি:- আব্বা কি বলছেন এই সব ?
সুবহার আব্বু:- ঐ বাজে মুখে আমাকে বাবা বলবে না , এখান থেকে বেরিয়ে যাও , তোমার বাবার সঙ্গে কথা হয়ে গেছে , তোমাদের ডিভোর্স হবে , কারণ কোন চরিত্র হীন লোকের ঘরে আমার মেয়েকে দিব না ।
আমি:- আম্মা , আপনি তো কিছু বলুন , আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না , কি হচ্ছে এই সব , কি করেছি আমি ,
সুবহার আম্মু :- ছি ছি ঐ মুখে আমাকে মা বলে ডাকছো , লজ্জা করে না তোমার , আমি কখনো কল্পনাও করিনি , যে তোমার মতো ছেলে এই রকম করতে পারে ।
আমি:- কি বলছেন এই সব আপনারা , আমি কিছু বুঝতে পারছি না , কি হয়েছে ভালো করে বলেন , ?
নিশি:- বুঝতে পারছেন না , না বুঝতে চায়ছেন না ? এইটা দেখুন হয়তো কিছু মনে পড়ে যাবে ! ( বলে নিশি একটা মোবাইল আমার হাতে দিলো )
মোবাইলে একটি ভিডিও চলছে , ভিডিওতে একটি মেয়ে বলছে ” আমার নাম অনিকা সাজিদ আমাকে তাদের কম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে, কিন্তু আমাকে চাকরি দেয় নি , সাজিদ আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমাকে ধোঁকা দিয়েছে, আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু কোন লাভ হয় নি , তাই আপনারাই আমাকে সাহায্য করুন , ” আমি তো শুনে জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা , মেয়েটি প্রমান হিসেবে কিছু ফটো দিয়েছে , কোন এক রেস্টুরেন্টে আমি আর মেয়েটি কফি খাচ্ছি । আমার পুরো শরীর থেকে ঘাম ঝরছে , আমি মোবাইল টি নিশির হাতে দিয়ে দিলাম ,
নিশি:- আমার ভাবতেই খারাপ লাগছে , আপনার মতো জঘন্য মানুষ আমার শিক্ষক ছি, !!!!
সুবহা :- এবার বলুন , আপনি কিছু করেন নাই !!!!
আমি:- সুবহা , দেখো আমার কিছু বলার নেই , কি হবে বলে , আর আমি বললেই কি তুমি বিশ্বাস করবে, আমি একটি কথায় বলতে চাই , আমি এই মেয়েটিকে চিনি না দেখা করা তো অনেক দূরের কথা !!!!!
সুবহা:- আমি জানি আপনি এইটাই বলবেন !! ঐ ফটো গুলো কোথা থেকে আসলো ,!!!
আমি:- আমি জানিনা !!! তুমি বিশ্বাস করো আর না করো , এইটাই সঠিক আমি ঐ মেয়েটি কে চিনি না!!!!
সুবহার আব্বু:- দেখো তোমার এই নাটক দেখার জন্য কেউ বসে নেই এখানে , এই বাসা থেকে বেরিয়ে যাও , আর কখনো এই বাসায় প্রবেশ করার চেষ্টা করবে না !!!
আমি:- আম্মা , আপনি তো কিছু বলুন !!
সুবহার আম্মু:- ঐ মুখে আমাকে মা বলবে না !! আমি তোমার মা না !
আমি:- হুমমমম, ঠিক আছে চলো সুবহা!!
সুবহার আব্বু:- আমার মেয়ে কোথাও যাবে না , তুমি বেরিয়ে যাও
আমি:- দেখো সুবহা , তুমি আমাকে কতটুকু জানো , তা আমি জানিনা কিন্তু হয়তো এইটা জানো তুমার বিশ্বাসের অসম্মান আমি কখনো করবো না ! বাকি তোমার ইচ্ছে !!!
সুবহা :- আব্বু, আমি ওনাকে কে ডিভোর্স দিবো না , আমি ওনার সঙ্গে যাচ্ছি !
সুবহার আব্বু:- এইটা সিনেমা না , এখানে সিনেমার ডায়লগ বলিস না !
সুবহা :- আমি সত্যি ওর সঙ্গে যাবো .
সুবহার আব্বু:- বুঝতে পারছি ! ঠিক আছে , কিন্তু কখনো এই বাসায় আসার চেষ্টা করবি না !!!
আমি আর সুবহা বাসা থেকে বেরিয়ে এলেম , সুবহা এখনো কাঁদছে ,
আমি:- দেখ সুবহা….
সুবহা:- প্লিজ ! এই বিষয়ে আমি আর কোন কথা বলতে চাচ্ছি না !!
মোবাইল বেজে উঠলো , রিছিভ করার কোন ইচ্ছাই নেই , কলেজ থেকে কল করছে , তাই ধরলাম
আমি:- হুম ,
ঐ পাস থেকে:- সাজিদ স্যার আপনাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে . কাল থেকে কলেজে আসতে হবে না . আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম কি করবো বুঝতে পারছি না , আমার মাথা কাজ করছে না ! আমার অবস্থা দেখে সুবহা জিগ্গেস করলো
সুবহা:- কি হলো?
আমি:- আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে !
সুবহা:- এইটা তো হোওয়ারি ছিলো !
আমার শরীর ধিরে ধিরে অবস হয়ে আসছে!
তার পর বাসায় আসলাম , আব্বু দরজা খুলে দিল আম্মু, তানিশা ভিতরে কান্না করছে
আব্বু:- ভিতরে আসার কোনো প্রয়োজন নেই , চলে যা !
আমি:- আব্বু?
আব্বু:- চুপ , তোর সঙ্গে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই ! তোর মতো ছেলে থাকার থেকে না থাকায় ভালো !
হঠাৎ আম্মু এসে আমাকে ধরে কান্না করছে ! তানিশাও কান্না করছে ! আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে , কিছু সময় এই ভাবেই চলে গেল !
আব্বু :- তুই যদি এই বাসা থেকে এখন না যাস তাহলে আমি চলে যাবো ? আর সুবহা মা তুমি তোমাদের বাসায় চলে যাও!
( সুবহা তো কান্না করতে করতে অস্থির হয়ে গেছে)
আমি:- আমি চলে যাচ্ছি ,!
আব্বু:- গাড়ির চাবি দিয়ে যা , আর এই বাসা আর আমার কম্পানিতে কোখনো আসার চেষ্টা করবি না !
আমি:- হুম ………….…
আমি আর সুবহা হেঁট যাচ্ছি , কোথায় যাচ্ছি জানিনা , কোথা থেকে কোথায় চলে আসলাম , মাত্র তিন ঘণ্টায় আমি সব হারিয়ে ফেলেছি , নিজের বাসা, বাবা ,মা , শশুর বাড়ী, চাকরি , নিজের কম্পানি। কিছু সময় আগেও সব কিছু ছিল আমার , কিন্তু এখন আমার কাছে কিছু নেই , সুধু আমার প্রিয়তমা আছে আমার পাশে । সুবহা কান্না করতে করতে আমার হাত ধরে হাঁটছে ,
আমি:- প্রিয়তমা , এখন জীবন টা বাংলা সিনেমার মতো মনে হচ্ছে তাই না !!
সুবহা:- আপ, আপনি কেন করলেন এমন?……
আমি:- তুমি বিশ্বাস করো , আমি কিছু করি নাই !
সুবহা কিছু বললো না , মাথায় হাত দিয়ে আমার হাতের উপর পরে গেলো , আমি ডাকছি কিন্তু কিছু হচ্ছে না , কোন কথা বলছে না , হঠাৎ কি হয়ে গেল , আমার ভয় আর বের গেলো , হয়তো….. না আর ভাবতে পারছি না .
সামনের এক হসপিটালে নিয়ে গেলাম ।
স্যালাইন দেওয়ার আধা ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো সুবহার , সুবহা বেডে শুয়ে আছে , আমি পাসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । কিছু সময় পর নার্স রুমে প্রবেশ করলো , আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
নার্স:- রোগী আপনার কি হয়?
আমি:- জি আমার স্ত্রী!!!
নার্স:- Congratulations , আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন , আর ডা: আপনাকে ভিতরে ডাকছে,
বলেই নার্স চলে গেল , আমি এতো খুশি হয়েছি কি বলবো , সুবহাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছি , আমার জীবনের প্রথম খুশীতে কাদলাম , সত্যি বলতে পুরো পৃথিবীর সুখ এক তরফ আর বাবা হওয়ার সুখ এক তরফ ,! অল্প কিছু সময় আগেও আমি ছিলাম একজন নিঃসঙ্গ দুখি মানুষ আর এখন আমি সবথেকে সুখি মানুষ । সুবহাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ।
আমি ডাক্তারের রুমে গেলাম
ডাক্তার:- দেখুন , মিস্টার সাজিদ , আপনাকে এখন কিছু কথা বলি , মন দিয়ে শুনবেন
গর্ভাবস্থায় মহিলার দেহে ও মনে যে পরিবর্তনগুলি ঘটে তা আমাদের ধারনার বাইরে। আপনার স্ত্রী নিজেকে অনেকটা আলাদা মানুষের মতো বোধ করতে পারেন যা সঠিকভাবে নিজের যত্ন নেওয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে,গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জীবনে পরম আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। এ সময়ে তারা গুরুজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর উপদেশ মানতে গিয়ে বুঝতে পারেন না কোনটি তাদের করা উচিত। এসব উপদেশ অনেক সময় মা ও বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য কনসিভের পরপরই একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে প্রেগনেন্সি নিশ্চিত করার পাশাপাশি কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর (যা মা অথবা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ) আছে কিনা দেখে নিতে হবে। গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে তা হছে গর্ভপাত। এজন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন, যেমন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না।
আমি:- জি ম্যাম বুঝতে পারছি !!
ডাক্তার :- তাহলে আপনারা এখন আস্তে পারেন !
এখন তো আরো চিন্তা বেড়ে গেলো , সুবহাকে নিয়ে এখন কোথায় যাবো ,
নাছির ( আমার বেস্ট ফ্রেন্ড) কে ফোন দিলাম ” আসলামুল আলাইকুম নাছির , একটু ছলাচ হসপিটালে আসতে পারবি ?
নাছির :- জি আমি ফ্রি আছি , আসতেছি , !!!!
চলবে………….
Leave a Reply