“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-০৭
Writer:-Hassab bin Ahmed.
…..সুবহা চখে কিছু দেখতে পারছে না । কেমন যেন সব ঝাপসা দেখাচ্ছে।
সুবহার বান্ধবীরা সুবহাকে বাসায় নিয়ে গেল ,
সুবহা কিছু সময় পর শান্ত হলো , আবার সাজিদ কে ফোন করলো এখনো সুইচ অফ বলছে, এখন কি করবে ভেবে তানিশার কাছে কল দিয়ে তানিশাকে সব বলল । তানিশা সাজিদের রুমে গেলো . সাজিদ রুমে শুয়ে আছে
…………………
তানিশা :- ভাইয়া, ভাবী কথা বলবে এই নে ( তানিশার হাতে থাকা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে)
আমি:- কিসের ভাবী, কোন ভাবী ?
তানিশা:- কথা বলে দেখ কোন ভাবী .
আমি মোবাইল হাতে নিয়ে ……
আমি:- কি রে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন , ? যা এখান থেকে ।
তানিশা:- যাচ্ছি যাচ্ছি , হুম তোর এই গোয়াল ঘরে কে থাকতে চায় ? আর শোন তারাতাড়ি কথা বলা শেষ করে আমার মোবাইল দিয়ে আসবি ।
আমি:- আসসালামু আলাইকুম।
সুবহা:- ওয়ালাইকুম আসলাম( কান্না কন্ঠে)
কারো কোনো কথা নেই , তাই আমি বললাম
আমি:- কিছু বলবেন ? ( অভিমানের সুরে)
সুবহা:- সরি , আমাকে মাফ করে দেন , আমি ভাবতে পারি নাই যে এতো খানি হয়ে যাবে , আপনি এর জন্য যে শাস্তি দিবেন আমি তাই মনে নিবো , কিন্তু আমার উপর রাগ করে থাকবেন না .( কান্নার জন্য কথা গুলো বলতেও পারছে না)
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে , কান্না করেছেন কেন? কান্না বন্ধ করেন ।
সুবহা:- আপনি কি আমাকে মাফ করেছেন?
আমি:- জি , আপনার উপর আমার কোন রাগ নেই ।
সুবহা:- সত্যি তো ?
আমি:- হুম সত্যি ।
সুবহা:- তাহলে ফোনের সুইচ আফ কেন?
আমি:- এখনি চলো করছি । আর কান্না বন্ধ করে শান্ত হোন।
সুবহা:- আচ্ছা ঠিক আছে , থাকেন তাহলে ।
এই ছিলো মূল কথা সুবহার উপর কোন রাগ না থাকলেও সুবহাকে ফোন করে কথা বলি না । কারণ রাগ না থাকলেও অভিমান টা নিশ্চয় রয়ে গেছে ।
……………….
বাইরে বৃষ্টি দেখছি আর ভাবছি , অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনে কাল আমার আর সুবহার এক হওয়ার দিন। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। সুবহা ফন করছে কি করবো ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে গেল । দ্বিতীয় বার রিং করার সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে……
আমি:-আসসালামু আলাইকুম।
সুবহা:- ওয়ালাইকুম আসলাম , কোথায় আপনি ?😠( রাগি কন্ঠে)
আমি:- এ এই তো বাসায় । কেন কি হয়েছে?
সুবহা:- আপনি এখনিই আমার সঙ্গে দেখা করবেন ?
আমি:- কেন? কোথায় ?
সুবহা:- কাজ আছে . আগের বার যে রেস্টুরেন্টে দেখা করছিলাম এই খানে।
আমি:- কিন্তু বাইরে তো অনেক বৃষ্টি হচ্ছে ?
সুবহা:- আমি ওসব বুঝিনা আপনি দশ মিনিটের ভিতরে আমার সঙ্গে দেখা করবেন । রাখি আসসালামু আলাইকুম।
বলেই ফোন রেখে দিলো । কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না । কি আর করার , বেরিয়ে পরলাম । গিয়ে দেখি সুবহা আর আরিফ আগেই পৌঁছে গেছে । আমি সালাম দিয়ে সুবহার সামনে গিয়ে বসলাম ,
সুবহা:- আপনি এভাবে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে পারলেন ? আমি প্রথমেই বলেছিলাম মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না । আমি ভাবতেই পারি নি এতো বড় মিথ্যার মাঝে রেখেছিলেন আমাকে ।
আমি :- দেখুন আমি আপনাকে কোন মিথ্যা কথা বলেছি বলে মনে হয় না । আর মিথ্যা বলা আমিও পছন্দ করি না ।
সুবহা:- আপনি বলেন নাই , যে আপনি ধূমপান করেন না ।
আমি:- জি বলেছি , কিন্তু এখানে মিথ্যা কথায় পেলে।
সুবহা:- আচ্ছা কাল বিকেল ৩ টায় আপনি কোথায় ছিলেন ?
আমি:- আমার কিছু পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম ।
সুবহা:- হুম , ওখানে কাল আপনি সিগারেট খেয়েছিলেন , আরিফ নিজের চোখে দেখেছে . এখনো কি বলবেন যে আপনি ধূমপান করেন না ।
আমি:- বলার আর কি আছে ? আমি বলেছি আমি ধূমপান করি না , এইটা আপনার বিশ্বাস হয় নি , এখন যদি বলি আমি কাল ওখানে সিগারেট খাই নি , তাহলে কি আপনি বিশ্বাস করবেন ? অবশ্যই করবেন না । একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল । আমি তখন হায়ার সেকেন্ডারি তে পড়ি ,এক রাতে আমি স্বপ্নে সিগারেট খেয়েছিলাম , তার পর আমার মনে হলো আমি তো সিগারেট খেয়েছি এখন আম্মু কে কি বলবো , এইটা চিন্তা করে , আমি আত্মহত্যা করব জন্য বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম , তাঁর পর ঘুম ভেঙ্গে যায় ।
তো আপনাকে যা বুঝতে চাইলাম , আমি স্বপ্নে ছিকেরেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলাম , তাহলে আমি বাস্তবে নিশ্চয় আমি সিগারেট খাবো না ?
সুবহা:- আপনি বিশ্বাসের কথা বললে না, আমি আপনাকে কোতটা বিশ্বাস করি তা বুঝতে পারছি না আপনাকে ? আমি মানি ও মনে প্রানে বিশ্বাস করি আপনি ধূমপান করেন না, কিন্তু আজ সকালে আরিফ আমাকে বলল , যে ভাইয়াকে নিজের চোখে দেখেছি সিগারেট খেতে .
আরিফ:- আমি সরি ভাইয়া আমি যা দেখেছি তাই বলেছি?
আমি:- না না তোমার সরি বলার প্রয়োজন নেই। আচ্ছা আরিফ আমি তোমাকে দুটো প্রশ্ন করবো , ভেবে উত্তর দিবে.
আরিফ:- আচ্ছা ভাইয়া।
আমি:- তুমি কি আমার মুখে সিগারেট দেখেছো ?
আরিফ:- না ভাইয়া , আপনার হাতে ছিল ,
আমি:- তারপর আমি কি করেছিলাম ?
আরিফ:- আপনার পাশের লোকটাকে দিয়েছিলেন । আমি ভাবেছিলাম যে আপনি খেয়ে ঐ লোকটাকে দিয়েছিলেন।
আমি:- জি এক দম ঠিক ।
সুবহা ৩ টি বিষয় খেয়াল করেন ?
১. আরিফ আমাকে সিগারেট অন্য কাউকে দিতে দেখেছে খেতে দেখে নাই !
২. আরিফ ভেবেছিলো আমি খেয়েছি , মনে মনে ভাবা আর বাস্তব এক নয়
৩. বাস্তবে আমি আমার এক পাশে থাকা বন্ধুর থেকে নিয়ে অন্য পাশে থাকা বন্ধুকে দিয়েছিলাম।
সুবহা:- সরি , আমি জানি আপনি আমার উপর রেগে আছেন ? তার পরেও যদি পারেন ক্ষমা করে দিয়েন । আমি আর এখানে থাকতে পারবো না । যেতে হবে আমাকে ।
আমি:- কেন? আর একটু থাকেন না , এখনি তো এলেন ,
সুবহা:- আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আজ আমাদের গায়ে হলুদ . আমি আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে এসেছি বাসায় ,
আমি:- হুম , কিছু হবে না , আমিও তো আছি 😁
সুবহা:- আপনি ছেলে মানুষ , আর আমি মেয়ে , কাল বিয়ে আর আজ মেয়ে বাসায় নেই এটা যে কতোটা বড়ো বেপার তা আপনি বুঝতে পারবেন না।
থাকেন যাই । চল আরিফ ।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে , তাহলে আমি তোমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি ?
সুবহা:- না না থাক লাগবে না , যেতে পারবো ,
আমি:-কেন?
সুবহা:- বাসার কেউ দেখলে অনেক খারাপ হয়ে যাবে?
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে ,কি আর করার ।
আমিও বাসায় চলে এসেছি , বাসায় এসে দেখি আত্মীয়-স্বজন দিয়ে বাসা ভর্তি হয়ে গেছে , সবাইকে অনেক দিন পর দেখছি ভালোই লাগলো, অনেকর সঙ্গে দেখা করতে লজ্জাও পাচ্ছি সবার সঙ্গে দেখা করে রুমে গেলাম । সঙ্গে সঙ্গে তানিশাও রুমে প্রবেশ করেলো।
তানিশা:- ভাইয়া আব্বু তোকে যেতে বললো।
আমি:- কেন?
তানিশা:- আমি কি জানি?
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছি যাচ্ছি ।
আব্বুর রুমে গিয়ে দাঁড়ালাম আব্বু বললো
আব্বু:-সাজিদ তুমি হয়তো জানো যে সুবহাকে আমাদের বাসায় আনা হবে না ,
আমি:- জি আব্বু।
আব্বু:- কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সুবহাকে নিয়ে আসা হবে , সব নিতি নিয়ম মেনে বিয়ে সম্পূর্ণ করা হবে তার পর সুবহা তার নিজের বাসায় চলে যাবে । যিহেতু বড়ো অনুষ্ঠান করা হলো না তাই সুবহার পরিক্ষার পর বড়ো অনুষ্ঠান করা হবে ,
আমি:- জি ঠিক আছে আব্বু ।
সারাদিন ব্যস্ততার মাঝে দিয়ে কাটলো , সত্যি বলতে ভালোই লাগলো মানুষের জীবনের সব থেকে আনান্দর সময় হলো বিয়ের সময় , নিজেকে অনেক স্পেশাল মনে হচ্ছে । এই দেখুন না আমি বসে আছি সবাই আমার খবর নিতে ব্যাস্ত ,
এখন হলুদ দিয়ে গা ধুয়ার পর্ব চলছে । এটাও একটা স্পেশাল মুহূর্ত , অনেকেই আমার মুখে হলুদ লাগাচ্ছে , তবে সারাদিন ব্যস্তার মাঝে পার করে গা ধুতে ভালোই লাগলো । অনেক রাত হবার পর সবাই আমাকে ছেড়ে দিলো সবে মাত্র একটু ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই ফজরের আজান হয়ে গেলো । যাক ভালোই হলো নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লাম । সকাল হতে না হতেই সবাই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে । এর ভিতর কি ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব । উঠে পরলাম ।
এখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে , এতো গুলো বছর অপেক্ষার পর আমার প্রিয়তমা কে নিয়ে আসতে যাচ্ছি ।
অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনে কিছু সময় আগে কাজি সাহেব আমার বিয়ের কার্যক্রম শেষ করলেন । এই মুহূর্তো থেকে সুবহা আমার , আর কোন বাধা নেই । ভাবতেই ভালো লাগছে । যাই হোক সব কিছু ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ ঝামেলা হয়ে গেলো…….
(চলবে)
Leave a Reply