“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-০৮
Writer:-Hassab bin Ahmed.
…..যাই হোক সব কিছু ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ ঝামেলা হয়ে গেলো…….
পরে জানতে পারলাম ছেলে পক্ষের ( মানে আমাদের ) কিছু লোক ঝামেলা করছে, মাংসে ঝাল বেশি হয়েছে তাই তারা খাবেনা। এই কথা শুনে তো আমি লজ্জায় শেষ। এতো ছোট মনের পরিচয় দিলাম আমরা। আব্বু উঠে ঝামেলা সমাধান করার চেষ্টা করছে। সব ঠিক করে এখন বিদায় বেলা। এখন আর কি ঐতো কান্না শুরু হয়ে গেল , যদিও আমার এই গুলো ভালো লাগে না তবুও অনুভব করলাম এইটা অনেক কষ্টের একটি মুহূর্ত। বিদায় শেষে গাড়ি ছুটলো আমাদের বাড়ির উদ্দেশে। এক বড়ো ভাই ড্রাইভিং করছে। পিছনে আমি আর সুবহা। সুবহা এখনো মন খারাপ করে বসে আছে। তাই সুবহার হাতের উপর আমার হাত রেখে ইশারা করলাম “আমি তো আছি” গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলাম যাতে সুবহা একটু ফ্রেশ বাতাস পেতে পারে। বাসায় পৌছে সব নীতি নিয়ম মেনে তানিশা সুবহাকে আমার ঘরে নিয়ে গেল। এখন আমার রুমে ঢুকার পালা। কেমন যেন নার্ভাস লাগছে। এই প্রথম নিজের রুমে ঢুকতে ভয় করছে। ঘরে ঢুকে দেখি সুবহা বসে আছে আমি সালাম দিলাম সুবহা শুধু মাথা ঝাঁকালো। আমি কাছে গিয়ে মুখের উপরে থাকা কাপড় উঠিয়ে দিলাম , দেখি কান্না করছে। সুবহা এমনি সুন্দরী কিন্তু আজ একটু বেশিই মায়াবী লাগছে। আর সেই চোখ যে চোখের দিকে তাকিয়ে সারা জীবন পার করা যায় । সেই চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছে। আর লাইটের আলোয় জল গুলো ঝিক মিক করছে। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ভুলেই গেছি যে এখন সুবহা কে সান্ত্বনা দেওয়া উচিৎ , আমি উঠে গিয়ে,
আমি :- হুমাইরা আপার জন্য এনেছিলাম।
এই বলে সুবহার হাতে একটা কাঠের বাক্স ধরিয়ে দিলাম।
আমার মুখে হুমাইরা নাম শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বাক্সাটা হাতে নিয়ে খুললো… সাথে সাথে বাক্স থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকী বের হয়ে সারা ঘরময় ছড়িয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো আমাদের ঘরটা একটা আকাশ… আর জোনাকীরা তারার ফুল ফুটিয়েছে! কান্না থামিয়ে সুবহা অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে, “আপনি এতো পাগল কেনো!?”
আমি:- আপনার মুখে এই হাসিটা দেখার জন্য পৃথিবীর সব পাগলামি করতে রাজি ।
সুবহা:- এহ্ হয়েছে 😒 আর পাগলামি করতে হবে না। এখন আমাদের দু রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
আমি :- তাই নাকি। 🤔 কই আমি তো জানতাম না।
সুবহা:- হুম চলেন। কিছু না জেনেই বাসর ঘরে ঢুকে গেছেন 😒
নামাজ আদায় করে খাটে এসে বসলাম
সুবহা :- আচ্ছা শুনেন আর কিছু সময় পরেই তো ফজরের আজান দিবে তো আজকে আর ঘুমাবো না চলেন আজকে গল্প করে কাটাই ,
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু শুধু কি গল্প ই করবো। আর কিছু করবো না,😒
সুবহ:- কেন আর কি করবো 🤔 আজ শুধু গল্প ই করবো ।
সুবহা খাটের মাঝে বসে আছে আর আমি খাটের এক কোনায় বসে আছি।
সুবহা:-আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?
আমি:- সত্যি বলবো না মিথ্যা?
সুবহা:- সত্যি 😤
আমি:- সত্যি বলতে ঐ আপনার কলেজের ঘটনার উপর একটু অভিমান ছিল কিন্তু আপনার মায়াভরা মুখটা দেখে সব রাগ অভিমান পালিয়ে গেছে ।
সুবহা:- ওওও তাহলে সত্যি যদি রাগ নেই আমার উপর তো আমি আপনার প্রিয়তমা নই?
আমি:- মানে কি সব উল্টা পাল্টা বলছেন , কিছুই বুঝলাম না 😟
সুবহা:- যদি আমি আপনার প্রিয়তমা হতাম আর আমার উপর রাগ না থাকতো তাহলে তো এতো দুরে বসে থাকতেন না। আর আমাকে আপনি করেও বলতেন না 🙄 কারণ আপনি বলেছিলেন আপনার প্রিয়তমা কে তুমি করে বলতেই পছন্দ করেন ।
আমি:- ও 😯 এই কথা , আচ্ছা সরি সরি সরি সরি সরি 😅
আমি উঠে গিয়ে আরো একটি বক্স এগিয়ে দিয়ে সুবহার পাশে গিয়ে বসলাম
সুবহা:- বাবাহ এতো উপহার পেলে তো আমি হার্ট অ্যাটাক করবো 😵
আমি:- কেন তোমার পছন্দ হয়নি ?
সুবহা:- পছন্দ হবে না কেন , আপনি আমাকে যা দিবেন তাই পছন্দ হবে 🙂
সুবহা পেকেট খুলে দেখতে পেলো “একটি কাগজে বড়ো করে লেখা “আই লাভ ইউ” সুবহা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, পেকেটে আরো ছিলো তাজা কদম ফুল, একটি “হীরের আংটি”, একটি কাঁচের তাজমহল।
আমি:- পছন্দ হয়েছে?
সুবহা:- হুম অনেক। সব থেকে বেশি কদম ফুল গুলো পছন্দ হয়েছে ☺
আমি:- শুধু আপনার জন্য অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করেছি । আর আংটি পছন্দ হয়নি? আমি নিজে ডিজাইন পছন্দ করেছি ।
সুবহা :- অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এতো টাকা খরচ করার কি খুব দরকার ছিল ?
আমি:- কেন দরকার থাকবে না । আমি চাই আমার প্রিয়তমাকে সুন্দর লাগুক। এটা কি অপরাধ?
সুবহা কিছু বললো না
আমি:- হুমাইরা সত্যি করে একটা কথা বলবে?
সুবহা:- জি বলেন, কি জানতে চান?
আমি:- তোমার কি মন খারাপ ?
সুবহা:- না না তেমন কিছু না , জানেন আমি কখনো আব্বুকে কাঁদতে দেখি নাই কিন্তু আজ প্রথম কাঁদতে দেখেছি। একজন মেয়ের কাছে এটা অনেক কষ্টের ।
কথা বলতে বলতে সুবহা আমার এক হাত সুবহার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে।
আমি:- হুমাইরা আমি অনেক স্বার্থপর তাইনা 😔 আমি সব সময় নিজের কথা ভেবেছি । কখনো তোমার কথা ভেবে দেখেনি । আমি ভেবেছি তোমাকে নতুন ফ্যামেলি দিব। নতুন বেড , নতুন কম্পিউটার দিবো। কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনি তুমি তোমার ফ্যামেলি , তোমার কম্পিউটার , এমন কি তোমার বেডরুম পর্যন্ত ছেরে চলে এসেছো কেন? শুধু আমার জন্য ।
সুবহা:- আমাদের জন্য। এতে মন খারাপ করার কি আছে। আমি শুধু আপনার জন্য আসি নি, আমাদের জন্য এসেছি ।
আমি:- হুমাইরা আমি জানি তুমি অনেক জ্ঞানী একজন মেয়ে। আমি তোমাকে কখনই আমার বাবা মার সেবা করতে বলবো না। কিন্তু আমি এই অনুরোধ করবো তুমি এমন কিছু করবে না যার জন্য আমার বাবা মার মনে কষ্ট লাগে।
সুবহা:- আমি আমার নিজের বাবা মা কে রেখে চলে এসে নতুন বাবা মা পেয়েছি তাদের সেবা না করে আমি কিভাবে থাকবো ?
আমি :- হুম তোমার যা ভালো লাগে। আর একটি কথা ভবিষ্যতে কি হবে জানিনা কিন্তু আমি এইটুকু কথা তোমাকে দিলাম তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না। আমি তোমাকে এমন ভাবে আগলে রাখবো যেমন করে একটা বিকট বড় গাছ খুব নরম লতা আকঁড়ে থেকে।
সুবহা:- কি হলো হাত এভাবে টানছেন কেন? আমি হাত ধরাতে কি অসুবিধা হচ্ছে ?
আমি:- না মানে এই ভাবে কোন মেয়ে আমার হাত ধরে নি তো তাই 😅
সুবহা- বাহ আপনি দেখি লজ্জা পাচ্ছেন
আমি মাথা নিচু করে বললাম
আমি:- তুমি চেঞ্জ করতে চাইলে করতে পারো এতো গরমে এগুলো পরে আর কতো সময় থাকবে।
সুবহা:- জ্বি আমিও তাই ভাবছিলাম , আপনি তাহলে বাইরে যান ।
আমি:- কেন?
সুবহা:- তো কি আমি একজন পুরুষের সামনে কাপড় চেঞ্জ করবো নাকি ? 🙄
আমি:- বাহ , আরে আমি তোমার স্বামী , আমার সামনে চেঞ্জ করলে কি সমস্যা ? আমি বাইরে যাবো না 😇,
সুবহা:- প্লিজ বাইরে জান। আমার লজ্জা করে না বুঝি? 😟
আমি:- আরে বাইরে অনেক মানুষ ঘুর ঘুর করছে এখন যদি আমি বাইরে যাই তাহলে অনেকে অনেক ধরনের প্রশ্ন করবে ।
সুবহা:- হুম তাও ঠিক 😔 আপনি এক কাজ করেন আপনি উল্টো দিকে ঘুরে বসেন। খবর দার আমার দিকে তাকাবে না কিন্তু 😤
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে , তাকাবো না 🙂
অল্প সময় পর
সুবহা:- এই যে শুনছেন ?
আমি:- কি হয়ে গেছে ?
সুবহা:- না একটু হেল্প করেন তো , আমার ব্লাউজের পিছনের হুক টা খুলে দেন না প্লিজ?
আমি:- আমি? 😃
সুবহা:- তো এখানে অন্য কেউ কি আছে ? আপনাকেই বলছি . কিন্তু চোখ বন্ধ করে 🙄
আমি:- মানে ? 🤔 চোখ বন্ধ করে কিভাবে সম্ভব ? আমি পারবো না 🙄
সুবহা:- আপনাকে পারতেই হবে 😤
আমি:- ও আল্লাহ! আরো যে কতো কি দেখতে হবে? 😌
সুবহা:- কত কি দেখতে হবে মানে ? 🤨 🤨 🤨 আপনি কি দেখেছেন? 🧐 আমি তো এখনো কাপড়ই খুলি নাই 🙄
আমি:- আরে ওটা কথার কথা 😐
সুবহা:- আচ্ছা ঠিক আছে , আপনি আগে হুক টা খুলুন। হুক খুলে আবার উল্টো দিকে ঘুরে তাকাবেন , ঠিক আছে?
আমি:- ঠিক আছে 😠
কিছু সময় পর
সুবহা:- হুম হয়ে গেছে। এবার তাকাতে পারেন 🙂
আমি চেয়ে দেখি আকাশী রঙের সারি পরেছে , অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই চেয়ে আছি 🤤
সুবহা:- আচ্ছা এভাবে চেয়ে আছেন কেন 🙄 এর আগে কি মেয়ে মানুষ দেখেন নাই ? 🙄
আমি আবার মাথা নিচু করে নিলাম .
সুবহা:- এই আপনি তো দেখি মেয়ে মানুষের মতো লজ্জা পান 🤨 আরে আমার দিকে তাকান। আপনি আপনার স্ত্রীর দিকে তাকাবে না তো কার দিকে তাকাবেন 🤨 তবে আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালে চোখ উগরে নিবো 😤
আমি:- হুমাইরা একটি কথা বলি রাগ করবেন না তো ?
সুবহা:- আমার কাছে অনুমতি নেয়ার কি আছে। আমি পুরোপুরি আপনারি।
আমি:- তোমার গাল দুটো একটু ধরি ? তোমার গাল দুটো অনেক কিউট । ( চোখ বন্ধ করে বলে ফেললাম 😑)
সুবহার ছোট্ট হাসি শুনে চোখ খুললাম 😶
সুবহা:- আপনি অনেক বোকা। অবশ্য আমার জন্য ভালো। বোকা হাজবেন্ড গুলো স্ত্রী কে অনেক ভালোবাসে 🙂 আমি আপনার স্ত্রী । আমি পুরো টাই আপনার আপনার যা খুশি তাই করতে পারেন ।
আমি:- জি আমি সত্যি অনেক বোকা . ( গাল দুটো ধরে )
সুবহা:- উঃ উঃ
আমি:- কি হলো ? 😮
সুবহা:- আরে এতো শক্ত করে গাল ধরে ? 🤢
আমি:- ও সরি 😅 আসলে তোমার গাল অনেক নরম , লেগেছে অনেক?
সুবহা:- আরে না , আচ্ছা আপনি আমাকে সুবহা না বলে হুমাইরা বলেন কেন ?
আমি:- তোমার নাম তো হুমাইরা বিনতে আব্দুল্লাহ। তো আমার হুমাইরা নাম পছন্দ । তাই আমি তোমাকে হুমাইরা বলেই ডাকবো। হুমাইরা বলে ডাকলে কি তোমার খারাপ লাগে ।
সুবহা:- আরে না খারাপ লাগবে কেন , আমার অনেক ভালো লাগে। আপনার মুখে হুমাইরা শুনতে ।
আমি:- আচ্ছা আমরা কি শুধু গল্পই করবো ? অন্য কিছু করবো না ?
সুবহা:- আর কি করবো?, ( লজ্জা পেয়ে ☺)
এর মধ্যে ফজরের আজান হয়ে গেলো ,
সুবহা:- শুধু গল্প করবো না নামাজ ও পরবো , চলেন , অজু আছে ?☺️
আমি:- হুম অজু তো আছে , কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি রাত শেষ হয়ে গেল কিভাবে ? আমার মনে হয় কি জানো আজান টা মনে হয় তারাতাড়ি দিছে।
সুবহা:- ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখুন ৫ টা বাজে , আজন ঠিক সময়ে দিছে , যান মসজিদে যান 🙂 ( মিস্টি একটা হাসি দিয়ে)
আমি:- হুম। আজ যদি মযজিদে যাই তাহলে তো সবার প্রশ্নর উত্তর দিতে দিতে শেষ হবো , কারণ আমি শুধু ঈদের দিন ফজরের নামাজ পড়তে যাই , আর আমি যদি বিয়ের দিন ফজরের নামাজ পড়তে যাই তাহলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে । আজকে বাসায় পড়ি প্লিজ 🤕
সুবহা:- আচ্ছা ঠিক আছে। চলেন।
নামাজ আদায় করে আমি বিছানায় বসলাম ,
সুবহা:- কি হলো আবার বিছানায় কেন ? বাইরে যান সবার সঙ্গে দেখা করেন ।
আমি:- না আমি একটু ঘুমাবো মাথা টা ঘুরছে …. তুমিও তো সারারাত ঘুমাও নি তুমিও একটু ঘুমিয়ে নাও ।
সুবহা:- না না আমি এখন ঘুমাবো না , আপনি ঘুমান আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
সুবহা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছি , সত্যি অসাধারণ মুহূর্ত , কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না 
……
চলবে……
Leave a Reply