“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-০৯
Writer:-Hassab bin Ahmed.
……কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না ……
কিছু সময় পর পর আমার কানে শব্দ হচ্ছে ” এই উঠেন না , মনে হচ্ছে কেউ ডাকছে তাই অনেক কষ্ট করে চোখ মেলে দেখার চেষ্টা করলাম ‘ মনে হচ্ছে কোন পরী আমাকে ডাকছে কিন্তু পরী আমার রুমে আসবে কেন ? আর এই মেয়েটা আমার রুমে কি করছে?🤨
ও এটা তো আমার বউ , কাল তো বিয়ে করলাম যাক চিৎকার করার আগেই মনে পরে গেছে নাহলে অন্য এক ঝামেলা হয়ে যেতো ।
সুবহা:- কি হলো , এতো কি ভাবছেন ? উঠেন ?
আমি কোন কথা না বলে হাত ধরে টান দিলাম , সুবহা নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে আমার উপর পড়ে গেলো । সুবহার চুল গুলো আমার মুখের উপর এসে পড়েছে ।
সুবহা:- এই কি করছেন সকাল সকাল , উঠেন তারাতাড়ি আব্বা কিন্তু অনেক রাগ করতেছে ।😠
আব্বুর কথা শুনে রোমান্স সব পালিয়ে গেছে। তারাতাড়ি করে উঠে রেডি হয়ে সবার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম ,
শুরু হয়ে গেলো সবার উল্টো পাল্টা কথা যার মুখে যা আসছে তাই বলছে। কিরে নতুন বর বউ রেখে বাইরে কেন?, এতো সময় ধরে ঘুমাচ্ছিলি কেন , রাতে কি ভাবি ঘুমাতে দেই নাই ? আমি তো রাগে ফুলছি। নিজেকে শান্ত করে হাসি মুখে সবার সঙ্গে কথা বলে চলে এলাম খিদে পেয়েছে অনেক। তাই আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম
আমি:- খিদে পেয়েছে অনেক খেতে দাও ।
আম্মু:- হুম খিদে পেয়েছে, খিদে কি শুধু তোর একার পায় আর কারো পায় না , মেয়েটা এখনো কিছু খাইনি সে খেয়াল আছে তোর ।
আমি:- শুধু খেতে দিতে বলেছি তাই এতো কথা কেন? 🙄সুবহা খায়নি কিছু?
আম্মু:- না , ডেকে নিয়ে আয় এক সঙ্গে খাবি।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি ।
রুমে এসে দেখি সুবহা খাটে বসে আছে একা একা।
আমি:- আপনি কিছু খাইনি কেন? চলেন কিছু খেয়ে নেই ।
সুবহা কিছু বললো না চুপ চাপ আমার পিছু পিছু আসতে লাগলো । দিন শেষে সন্ধ্যায় সুবহাদের বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে এলো ।
সুবহার খুশি দেখে কে?
আজকে আমি ড্রাইভিং করছি ,আর সুবহা আমার পাশের সিটে বসে আছে। গাড়িতে আমরা দুজন ।
আমি:- তুমি মনে হয় আজ অনেক খুশি?
সুবহা:- হুম 🤗 । নিজের বাসায় যাবো খুশি তো হবোই ।
আমি:- তার মানে আমার বাসা তোমার নিজের বাসা না ?
সুবহা:- আমি ঐটা বুঝাতে চাইনি সরি ।😔
আমি:- আরে না , আমি তো মজা করলাম ।
কথা বলতে বলতে সুবহাদের বাসা পৌঁছে গেলাম । সবাই দাড়িয়ে আছে আমাদের জন্য । সুবহা তো এক দৌড়ে গিয়ে ওর আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁন্না শুরু করে দিয়েছে ।
সুবহা:- আব্বু তোমাদের কত দিন পরে দেখলাম ।
সুবহার আব্বু:- কত দিন শুধু একদিন দেখিস নি।
সুবহার আম্মু:- কি শুরু করলে ,
আরিফ ভাইয়া কে বড় আপুর রুমে নিয়ে যাও।
আরিফ আমাকে সুবহার রুমে নিয়ে গেল । পিছনে পিছনে সুবহাও এলো । উঃফ এতো গরম ,তার উপর মাথা ঘুরছে অল্প অল্প । তাই ভাবলাম গোসল করে নেই ভালো লাগবে ।
আমি:- হুমাইরা ?
সুবহা:- হুম ,
আমি:- আমি গোসল করতে চাচ্ছিলাম ,বাথ রুম কোন দিকে ।
হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো ।
গোসল করে বেরিয়ে এলাম , সামনে দেখি সুবহা শাড়ীর আঁচলটা কোমড়ে গুঁজে দাড়িয়ে আছে , হঠাৎ আবার রাগি চোখে তাকানোর মানে কি?
আমি:- কি কি হয়েছে?😕
সুবহা:- কি হবে , গোসল করে মাথা মুছেন নাই কেন?😤
আমি:- না মাথা মুছেছি তো ?
সুবহা:- তাহলে মাথায় পানি কেন ? এই দিকে আসেন আমি ভালো করে মাথা মুছে দিচ্ছি ।
সুবহা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মাথা মুছে দিচ্ছে , যেন আমি ছোট বাচ্চা ।
তার পর খেতে গেলাম খাওয়ার কথা কি বলবো । এতো কি মানুষ খেতে পারে। যাই হোক খেয়ে রুমে এসে খাটে বসে আছি এমন সময় আরিফ আর নিশি এলো ওদের সঙ্গে অনেক গল্প করলাম অনেক ভালো লাগলো ,
ওরা চলে যাওয়ার পর হঠাৎ আমার হাত সুবহার শরীরে লাগলো , সুবহার শরীর অনেক গরম অনুভব হলো , কপালে হাত দিয়ে দেখি অনেক জ্বর ।
আমি:- আরে তোমার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ?
সুবহা:- আরে না আমি ঠিক আছি ।
আমি:- না তুমি ঠিক নেই , তুমি ঘুমাও কাল রাতে একটুও ঘুমাও নি , এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
সুবহা:- না আপনি এতো অস্থির হবেন না আমি ঠিক আছি ?
আমি:- অনেক হয়েছে আর কোন কথা নেই, ঘুমিয়ে পড়ো বাস।
সুবহা:- ঠিক আছে এক শর্তে.
আমি:- কি ? মাথা টিপে দিতে হবে? কোন অসুবিধা নেই বান্দা হাজির ।
সুবহা:- না মাথা টিপে দিতে হবে না গান শুনাতে হবে ?
আমি:- কি ? আমি কিভাবে গান শুনাবো ?
সুবহা:- দেখুন আমার সঙ্গে নাটক করে লাভ নেই আমি জানি আপনি অনেক ভালো গান করেন। তানিশা বলেছে আমাকে .
আমি:- হুম …… পারবো না ।
সুবহা:- তাহলে আমিও ঘুমাবো না।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে শুয়ে পড়ো ,
সুবহা আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো , আমি বসে আছি
সুবহা:- কি হলো, গান কোথায় ,
আমি:- হুম বলছি
কোনো এক বাদলা দিনে
আমি তোর ছাতা হবো,
রাজি তুই থাকলে পরে
প্রণয়ের কথা কবো।
রিমঝিম বৃষ্টি ফোঁটায়
দৃষ্টি রাখবো ধরে,
কাজলে লেপ্টে যাবো
দু’চোখের মিষ্টি ঘোরে
তুই যদি হোসরে আমার
আমি ঠিক তোরই হবো
দমকা বাতাস এলে
আগলে রাখবো ঠিকই,
আমি তুই হাত মিলিয়ে
হাঁটবো চারিদিকই।
শ্রাবণের অঝর ধারায়,আমি রোজ তোরই রবো
আকাশের ধূম্র কালোয়
যদি হারিয়ে যাস্,
চোখজোড়া দেখিস খুলে,
আছি ঠিক তোরই পাশ।
মেঘেদের ভেলায় চড়ে
আমি তোর সাথেই যাবো।
রাজি তুই থাকলে পরে
প্রণয়ের কথা কবো।
(Abu Ubayda)
সুবহা দেখি আমার দিকে চেয়ে আছে
আমি:- কি হয়েছে পছন্দ হয়নি?
সুবহা:- বলেন কি , এতো সুন্দর গান আমি কখনো শুনিনি , অসাধারণ ।
আমি:- হুম হয়েছে আর পাম দিতে হবে না , এখন ঘুমাও , এইটাই তো কথা ছিল ।
সুবহা:- না মানে , আসলে মাথা টা একটু ঘুরছে তাই ঘুম ধরছে না ।
আমি:- ওও , আচ্ছা ঠিক আছে , আমি মাথা টা টিপে দেই তুমি ঘুমাও .
সুবহা:- আরে না না কি বলেন আপনি আমার স্বামী , আপনি কেন আমার মাথা টিপে দিবেন? এমনি ঠিক হয়ে যাবে ।
আমি:- তুমি আমার মাথা টিপে দিতে পারলে আমি কেন পারবো না ? চুপ চাপ শুয়ে থাকো আমি মাথা টিপে দিচ্ছি.
সুবহা:- লাগবে না ।
আমি:- চুপ আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা ।
সুবহা শুয়ে পড়লো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি , কিছু সময় পর দেখি সুবহা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম ।
পরদিন আমাদের বাসায় চলে আসলাম ।
আমাদের বাসায় সুবহা দুই দিন ছিল , কাল বাসায় চলে যাবে
আমি:- হুমাইরা ?
সুবহা:- হুম বলেন শুনছি।
আমি:- বারান্দায় যাবে?
সুবহা:- আপনি যান আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি .
আমি বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখছি . কি সুন্দর , মনরম দৃশ্য । আজকের আকাশ পরিষ্কার হয়ে আছে , একটু ও মেঘ নেই । কিন্তু আমার আকাশ পুরোটাই অন্ধকার ।
হঠাৎ কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে ।
কে আর ধরবে , বুঝতেই তো পারছেন । আমি কিছু বললাম না ।
সুবহা:- কি হয়েছে ? মনে খারাপ?
আমি:- না এমনি , কাল না গেলে হয় না ।
সুবহা:- কেন , কাল না গেলেও তো পরশু যেতেই হবে । তাহলে কাল চলে গেলে কি সমস্যা ।
আমি:- বলছিলাম কি , আমাদের এখান থেকেও কলেজ করতে পারো ।
সুবহা:- কিভাবে , প্রতেক দিন ৪ ঘন্টা করে জার্নি করতে হবে।
আমি কিছু বললাম না সুবহা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
সুবহা:- এই মন খারাপ করছেন কেন ? এই কয়টা দিনেরেই তো ব্যাপার। দেখতে দেখতে চলে যাবে। মন খারাপ করবেন না প্লিজ । নিন চা খান ।
আমি:- তুমি খাও আমার খেতে ইচ্ছে করছে না ।
সুবহা:- আমি জানি আপনি চা খেতে ভালোবাসেন । নিন খান বলছি.
আমি চায়ের কাপ নিয়ে এক চুমুক খাওয়ার পর
সুবহা:- কিরকম হয়েছে?
আমি :- হুম , ভালোই হয়েছে কিন্তু , কিরকম একটা গন্ধ করছে তাইনা ।
সুবহা:- কই আমার কাছে তো ঠিকই লাগছে ।
আমি:- তাহলে আমার চা এরকম লাগছে কেন?
সুবহা:- আচ্ছা কাপটা আমাকে দিন চা নতুন করে অন্য কাপে দেই । হতে পারে কাঁপে কোন কিছু ছিল ।
আমি :- হুম ঠিক , কিন্তু আমার মনে হয় তোমার একটু খেয়ে দেখা দরকার । হয়তো তুমি বুঝতে পারবে এইটা কিসের গন্ধ।
সুবহা:- আরে না লাগবে না আমি পরিবর্তন করে দেই ।
আমি:- আরে একটু খেয়ে দেখোই না ।
সুবসা :- আচ্ছা ঠিক আছে।
সুবহা একটু খেয়ে
সুবহা:- কই , আমার কাছে তো ঠিকই মনে হচ্ছে।
আমি:- তাই নাকি দেখি তো ।
এই বলে খেতে শুরু করলাম
আমি:- হুম , এখন ঠিক আছে ।
দেখি হুমাইরা আমার দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে
আমি:- কি হয়েছে ?
সুবহা:- আপনি তো অনেক বদমাশ।
আমি:- আমি আবার কি করলাম ।
সুবহা:- আমাকে বললেই হতো যে একটু খেয়ে দাও এতো নাটক করার কি দরকার ।
আমি:- ও খোদা, তুমি বুঝতে পেরেছো । আর কি ধরা যখন পড়েই গেছি । শুনো, এর পর থেকে যখনি চা দিবে সঙ্গে তোমার ঠোঁটের মিষ্টি টাও দিবে বুঝতে পেরেছো ।
সুবহা:- হুম , চলেন ঘুমতে যাই অনেক রাত হয়েছে ।
আমি:- না আজকে ঘুমাবো না। এখানেই থাকবো ।
সারারাত ধরে দুজনে গল্প করলাম , বুঝতেই পারলাম না কখন রাত শেষ হয়ে গেছে । সত্যি সুন্দর মুহূর্ত গুলো তারাতাড়ি পার হয় ।
সকালে সুবহা চলে গেল ।
এখন রাত হয়ে গেছে । ঘুমতে ইচ্ছে করছে না । মনে হচ্ছে কি যেন নেই।
চলবে……………….
Leave a Reply