নিল প্রজাপতি
পর্ব:০৬
লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!
আমি: আচ্ছা বাদ দাও চলো ঘুমিয়ে পরি!!
দুজনে ইশার নামাজ আদায় করে নিলাম তারপর আমি শুয়ে পড়লাম মিষ্টি ও শুয়ে পড়লো মাঝে কোল বালিশ
আমি: এইটা না দিলে হয়না?
হুমাইরা:না হয়না । আর আপনি আমার জায়গায় আসবেন না?
আমি:আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো না কিন্তু যদি আপনি আসেন?
মিষ্টি: গেলে যাবো আমার স্বামীর কাছে আমি যেতেই পারি?
আমি:স্বার্থপর ( বিরবির করে)
মিষ্টি: কিছু বললে?
আমি: বললাম যে আপনি “মাছ বিক্রেতা”
মিষ্টি: মাছ বিক্রেতা মানে?? কি বলেন
আমি: মাছ বিক্রেতা মানে selfish
মিষ্টি: কিভাবে?
আমি: দেখো sale মানে বিক্রি করা আর fish মানে মাছ! তো যে মাছ বিক্রি করে তাকেই তো মাছ বিক্রেতা বলে!
আমার কথা শুনে মিষ্টি তো হাসতে হাসতে বেহুঁশ!
মিষ্টি: আপনি এতো পাগল কেনো?? এইসব বাদ দিয়ে ঘুমান!
ফজরের আযানে ঘুম ভেংগে গেলে দেখি মিষ্টি আমার বুকের উপর শুয়ে আছে । কোল বালিশ কোথায় আছে আপাতত বলতে পারছি না । আমি শুয়ে শুয়ে বললাম
আমি:- ঘুম কি রকম হলো?
এই কথা বলার পর মিষ্টি আমার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে আমি অবাক হঠাৎ আবার কি হলো.
আমি:- কি হয়েছে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?
আমার বুকের উপর শুয়ে শুয়েই বললো।
হুমাইরা:- আপনি এতো খারাপ??
আমি আবার কি করলাম তাও আবার আমার বুকে শুয়ে আমাকেই খারাপ বলছে ?
আমি: আমি আবার কি করলাম? বিশ্বাস করুন আমি কিচ্ছু করিনি?
মিষ্টি: তো আমি এইখানে কেনো?
আমি:- আপনি আমার বুকের উপর শুয়ে আছেন । আমি তো আর আপনার বুকে শুই নি? আপনি উঠে গেলেই তো হয়।
মিষ্টি: আমি উঠতে পারলে কি আর আপনার মতো মানুষের উপর শুয়ে আছি । আমার কাপড় আপনি জরিয়ে নিয়েছেন। কাপড় ছেড়ে দেন ভালোই ভালোই না হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে.😡
(ওওও এই ব্যাপার তাই তো বলি )
আমি:- ঠিক আছে আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন আমি কাপড় দিবো না । দেখি আপনি কি করতে পারেন? আর আমার কিন্তু ভালোই লাগছে ।
(কিছু সময় নিজেই সরাতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না কি ভাবে পারবে আমি তো একেবারে পেচিয়ে গেছি। )
মিষ্টি: দেন না প্লিজ । এরকম করেন কেনো?
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে দিতে পারি এক শর্তে? আমি তোমাকে যা বলবো তুমি আমাকে তাই বলবে?
মিষ্টি: আচ্ছা ঠিক আছে বলেন.
আমি: আই লাভ ইউ ♥️।
(মিষ্টি কিছু্ই না বলে আমার বুকে ভালো করে শুয়ে পড়ল। বলি কি আর হয় কি )
আমি: কি হলো বলবেন না?
মিষ্টি: জানিনা।
(এই দিকে আবার নামাজের শুময় হয়ে যাচ্ছে। )
আমি:বলবেই না?
মিষ্টি: আমার লজ্জা করেনা বুঝি? আর কিছু কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।
আমি:আচ্ছা ঠিক আছে বুঝেই নিলাম।
সুধু নামাজের সময় হয়ে গেছে তাই ছেড়ে দিলাম না হলে তোমার লজ্জা কে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম 😡।
কিছু সময় পর
আমি: আপনার কি খিদে পেয়েছে??
মিষ্টি: আমার এতো ঘন ঘন লাগেনা!!
আমি: এজন্য ই তো স্বাস্থ্য নেই, আপনার!!
মিষ্টি: হুম, আপনাকে বলেছে!! আচ্ছা আমাকে তুমি করে বলবেন প্লিজ!!
আমি: আচ্ছা চেষ্টা করবো!! তো আমার প্রমোশন কি কেবল এ “তুমি ” বলা পর্যন্তই নাকি আরো কোন সুযোগ সুবিধা আছে???
মিষ্টি: প্রথম দিন আপনাকে দেখে অনেক ভদ্র এবং গম্ভীর মনে হয়েছিল!
আমি: ওওও তাহলে কি এখন অভদ্র হয়ে গেছি??
মিষ্টি: না তবে মনে হয় অনেক দুষ্ট হয়ে গেছেন!!
আমি: আমাকে অভদ্র আপনি বানিয়েছেন!! আপনাকে দেখলে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চলে আসে তো আমি কি করব!! আচ্ছা তৈরি হয়ে নিন বাইরে বের হবো!
মিষ্টি: আমার আর তৈরি, কেবল বোরকাটাই তো পড়বো!!
কিছু সময় পর ঘুরতে গেলাম আমার এক পছন্দের যায়গায়!! ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে,একটা রিসোর্ট আছে । ওখানে বসার জন্য ছোট ছোট বেঞ্চ বানানো হয়েছে!! সেখানে বসে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়!! দুজনে একটা বেঞ্চে বসলাম!! সামনে ব্রহ্মপুত্র নদী, আশেপাশে গাছপালা, গাছের ফাঁক দিয়ে আসা বিকেলের মিষ্টি রোদ,, ঝিরিঝিরি বাতাস- সব যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল আমাদেরকে, গাছগুলোতে বসন্তের হাওয়া লেগেছিল বলেই নতুন পাতা উকি দিয়ে যাচ্ছিল ডালে ডালে, পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ ভেসে আসছিল কানে, বেশ সুন্দর পরিবেশটা এই মনোরম পরিবেশে দুজনে অনেক সময় পার করলাম!! আরো অনেক যায়গা ঘুরলাম! সিটি সেন্টার, কলাক্ষেত্র, তারকাগৃহ, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সময়ের অভাবে আরো অনেক কিছু দেখা হলো না!! রুমে ফিরতে ফিরতে রাত ৭ টা হয়ে গেল! রুমে এসে মিষ্টি বাথরুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ মিষ্টির পা খাটের সঙ্গে লেগে মিষ্টি ছোট একটা চিৎকার দিয়ে আমার উপর পড়ে গেল!! মিষ্টি আমার গায়ের উপর পড়েছে বলে ব্যথা পায়নি বেশি,, কিন্তু লজ্জায় এতটুকু হয়ে গেছে,, আমি দুহাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি,, মিষ্টি নিজের মুখটা লুকিয়ে রেখেছে,, মিষ্টি একটু একটু কাঁপতে শুরু করেছে,, ওর মুখ দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ করলাম ,,মিষ্টি মুখটা গুঁজে রেখেছে আমার বুকে!! আমি মিষ্টির কানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম- অজ্ঞান হয়ে গেছো নাকি আমার বুকে থাকার জন্য এটা চালাকি!!
মিষ্টি দ্রুত উঠে যেতে চেষ্টা করল কিন্তু কোনভাবেই উঠতে পারল না!! আমি ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি!!
আমি মিষ্টি কে উঠিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিলাম!!
আমি: ব্যথা পেয়েছেন?
মিষ্টি: বা পায়ের নোখে অল্প লেগেছে মনে হয়!!
আমি দেখে তো অবাক।
আমি: এইটা অল্প লেগেছে??এই টুকু সময়ের মধ্যে ই যায়গা টা কাল হয়ে গেছে?? আপনি বসুন আমি ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে আসি!!
ফার্মেসি থেকে ঘুরে আসার পর, মিষ্টি কে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম!!
আমি গিয়ে মিষ্টি র পায়ের কাছে বসে,ব্যথা লাগা নোখ টায় মলম লাগাতে শুরু করলাম!!
মিষ্টি: এই আপনি কি করছেন!!
আমি: কেন মলম লাগাছি!!
মিষ্টি: দরকার নেই আমি নিজেই করে নিচ্ছি!!
আমি: কেন আমি মালিশ করে দিলে কি অসুবিধা??
মিষ্টি: আপনি আমার স্বামী হয়ে আমার পা ধরবেন এইটা কি করে হয়!!
আমি: আপনাকে একটা হাদিস বলি
সাফিয়্যা (রা.) ছিলেন, নবীজির অন্যতম স্ত্রী। তিনি কিছুটা খাটো ছিলেন, ফলে উটের পীঠে আরোহন করতে কষ্ট হতো। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাহায্য করার জন্যে নিজের হাঁটু পেতে দিতেন। সাফিয়্যা (রা.) সেই হাঁটুতে পা রেখে উটের হাওদায় ওঠে বসতেন [সহিহ বুখারি: ৪২১১]
চিন্তা করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মানুষ, পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ! সে তার স্ত্রী কে সাহায্য করার জন্য যদি তার হাঁটু পেতে দিতে পারেন তাহলে আমি আমার প্রিয়তমা নীল প্রজাপতির জন্যে কি এইটুকু করতে পারবো না??
মিষ্টি প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেও পেরে উঠলো না!!
আমি: আরে পায়েই তো দিচ্ছি,অন্য কোথাও তো দিচ্ছি না!! চুপচাপ শুয়ে থাকো!
মিষ্টি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!!
আমি: আচ্ছা মিষ্টি আমার একটু বাইরে যেতে হবে!!
মিষ্টি: এতো রাতে কোথায় যাবেন?
আমি: কাল তো চলেই যাবো,, কাজ আছে একটু ,কাজটা করে গেলেই ভালো হবে!!
মিষ্টি: তাহলে আর দেরি করিয়েন না, এখুনি যান!!
আমি: জি !! তাহলে তুমি থাকো!! কোন প্রয়োজন হলে কল করলো!!
°°°°
Leave a Reply