নিল প্রজাপতি
পর্ব:০৭
লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!
°°°°
এইদিকে দেখতে দেখতে রাত ১০ টা বাজে গেলো,,আছিফের ফেরার কোন নাম নেই!! মিষ্টি অনেক বার ফোন দিলো, কিন্তু সুইচড অফ দেখাচ্ছে!! সময় গরাতে গরাতে রাত ১১ টা বেজে গেছে!! চিন্তায় মিষ্টি ছটফট করতে লাগলো! অস্থিরতায় মিষ্টির দু চোখ দিয়ে পানি আসতে চাইছে!! দুশ্চিন্তায় মিষ্টির মুখ শুকিয়ে গেছে, বারবার আল্লাহর কাছে দুয়া করছে! যাতে কোন ধরনের অসুবিধা না হয়। এমন সময় বেল বেজে উঠলো! মিষ্টি আইভিউ দিয়ে দেখে একটানে দরজা খুলে ফেললো !! মিষ্টির চখে পানি!
আমি: কি হয়েছে চোখে পানি কেন?
মিষ্টি: আপনি সেই সন্ধ্যায় গেছেন, না কোন ফোন,না কোন খবর, আমার বুঝি চিন্তা হয় না!
আমি: আমার জন্য তুমি এতো কষ্ট পেয়েছো?
মিষ্টি কিছু বললো না ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে
পড়লো!! মিষ্টি মিশে গেলো আমার বুকের সাথে!!
মিষ্টি: কোন জরুরী কাজ ছিল?
আমি: হুম বিজনেসের জন্য একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম!! আচ্ছা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও
মিষ্টি গ্লাসে পানি ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিলো ,
আমি: এইটায় না, অল্প আগে তুমি যে গ্লাসে পানি খেলে এই গ্লাসে দাও!
মিষ্টি: কেন,এইটায় খান ,ঐ গ্লাছে আমি ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেয়েছিলাম!
আমি: তোমাকে দিতে বলেছি তুমি দাও!!
মিষ্টি আমাকে ওর আধা খাওয়া গ্লাসটা আমাকে দিলো! আমি গ্লাছ টা নিয়ে গ্লাছ থেকে অর্ধেক পানি খেয়ে নিলাম!
মিষ্টি: এই রকম কেন করলেন?
আমি: তুমি কি ঐ হাদিস টা জানো না??
মিষ্টি: কোন হাদীস?
আমি: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হায়েজ অবস্থায় পানি পান করে সে পাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। আমার মুখ লাগানো স্থানে তিনি তাঁর মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আমি হায়েজ অবস্থায় হাড়ের টুকরা চুষে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে তার মুখ লাগাতেন।(মুসলিম, হাদীস নং ৩০০)
মিষ্টি: সত্যি, ইসলামে ছোট ছোট বিষয় গুলোও খুব সুন্দর করে বলা হয়েছে!!
আমি: আমার একটা কথা মনে পড়লো!
মিষ্টি: কি কথা?
আমি: একবার এক গার্লফ্রেন্ড এন্ড বয়ফ্রেন্ড ১০ মিনিট লিপ কিছ করার পর ছেলেটি মেয়েটির কাছে পানি চাইলো, মেয়েটি পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো, বতল উঁচু করে পানি খাও বতলে যাতে ঠোঁট নালাগে! আমি ও পানি খাবো!😀😀
আমার কথা শুনে মিষ্টি হাসতে হাসতে বেহুঁশ হবার অবস্থা!
মিষ্টি: আপনি যে কোথ থেকে যে এই ধরনের উদ্ভট কথা বলেন!!!
আমি: আচ্ছা তাহলে কাল আমাদের বাসায় থেকো তারপরদিন তোমাকে তোমাদের বাসায় দিয়ে আসবো! কি বলো?
মিষ্টি: ঠিক আছে!!
•••••••••
সকালে উঠে দুজনে বাসার দিকে রওনা দিলাম, সত্যি বলতে এই তিন দিন কিভাবে গেল বুঝতেই পারলাম না!! একটা কথা সত্যি যখন আপনি খুব সুন্দর সময় কাটাবেন তখন আপনার সময় গুলো খুব দ্রুত পার হয়। মন বার বার চাচ্ছে মিষ্টির সঙ্গে আরো কিছুদিন এখানে থেকে যায় কিন্তু উপায় নেই।সময়ের কাছে সবাই হার মেনে যায় ,যাই হোক তিন ঘন্টা জার্নি করার পর আমাদের বাসায় এসে উপস্থিত হলাম, আমাদের বাসায় আসার পরে আব্বু-আম্মু ছোট বোন সবাই মিষ্টিকে নিয় নিয়েই পড়ে আছে, আমি যে এই বাড়ির ছেলে তা কারো কোন খবর নেই,, আমি কেমন আছি তিনদিন কিভাবে থাকলাম কি করলাম একটাবারের জন্য কেউ জিজ্ঞাসা করল না ,দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল সারাদিন মিষ্টির সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা থাকলেও একবারের জন্যও মিষ্টিকে কাছে পাইনি!!
মাগরিবের নামাজের পর আম্মু আমার রুমে এসে বলল “তোর হাকিম ভাই এসেছে !! হাকিম ভাই আমার চাচতো ভাই,, আমার বড়!! অনেকদিন পর আমাদের বাড়িতে আসলো! তাই দেরি না করে দেখা করতে চলে গেলাম!!
কিছু সময় পর মিষ্টি চা নিয়ে আসলো আমাদের এখানে,, মিষ্টি নিকাব পরে এসেছে হঠাৎ হাকিম ভাই মিষ্টি কে বলে উঠলো নিকাবটা সরাও,
আমি: আমি বললাম কোন দরকার নেই, মিষ্টি ভিতরে যাও!
আমার কথা শুনে হাকিম ভাই রাগ করে দাঁড়িয়ে গেলো। দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলতে লাগলো আমি অনেক অভদ্র হয়ে গেছি, বড়লোক হয়ে গেছি, বড় ভাইদের সম্মান দিতে জানিনা, আমি তাকে অপমান করেছি, আমার মতো ভাই থাকার থেকে না থাকাই ভালো!! এই ধরনের অনেক কথা বলল আমি কিছু বললাম না শেষে বলল এই ফালতু মেয়েটার জন্য তুই আমাকে অপমান করলি?
আমি: কেউ আপনার সামনে চুপ করে থাকে,এর মানে এই নয় যে সে আপনাকে ভয় পায়, এমনো হতে পারে সে আপনাকে সন্মান করে, তাই আপনার সঙ্গে তর্কে জড়ায় না।
কারো ভদ্রতাকে তার দূর্বলতা ভাবা ঠিক নয়।
দেখুন আমি অনেক ক্ষণ ধরে আপনার কথা শুনতেছি আমি কিছু বলিনি কিন্তু আপনি আমার স্ত্রীকে আমার সামনে ফালতু বলেছিন, এটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারি না, আপনি আমার ভাই আপনাকে আমি সম্মান করি ভালোবাসি কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আপনি আমার স্ত্রীকে গালি দিবেন,, যাই হোক আপনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করার কোন ইচ্ছা আমার নেই তবে একটা হাদিস বলি “‘উকবাহ ইব্নু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল! দেবরের ব্যাপারে কি হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য। [মুসলিম ৩৯/৮, হাঃ ২১৭২, আহমাদ ১৭৩৫২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫২)””
আর যাওয়ার সময় খাওয়া দাওয়া করে যাবেন আমার কাজ আছে উঠি আসসালামু আলাইকুম।
Leave a Reply