নিল প্রজাপতি পর্ব:০৯

নিল প্রজাপতি

পর্ব:০৯

লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!

এইভাবেই মিষ্টি র সাথে দুষ্টুমি করতে করতেই  কিছু দিন কেটে গেল! মিষ্টির এক্সাম শেষ! কাল আমাদের বিয়ের বড়ো আয়োজন করা হয়েছে! এই খুশিতে বাসায় অনেক মানুষের আনা গুনা! রাজু ও ওদের বাসার সবাই এসেছে! অনেক দিন পর রাজুর সাথে দেখা! তাই দু’জনে হাঁটতে বের হলাম!

আমি: তো রাজু বল কি খবর?

রাজু: আলহামদুলিল্লাহ ভালো? কিন্তু ছোট  একটা প্রব্লেমে পরেছি?

আমি: কেন? কি হয়েছে?

রাজু: আর বলিস না? তোর ভাবি অনেক ঝগড়াটে ও উচ্চস্বরে কথা বলে!

আমি: আচ্ছা রাজু শোন তোকে একটা ঘটনা বলি

হযরত ওমর রাঃ এ-র খেলাফত আমলে একবার একটা বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে, যা আবু লাইস সমরকন্দি তাঁর রচিত কিতাব

” তানবিহুল গাফেলীন” এ উল্লেখ করেন; 

জনৈক ব্যক্তি তার ঝগড়াটে ও উচ্চস্বরে কথাবলা স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে হযরত ওমর রাঃ দরবারে হাজির।লোকটির আগমনের খবর দেয়া হলে হযরত ওমর রাঃ আসছি বলে তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। আগন্তুক বসা অবস্থায় ঘর হতে হযরত ওমরের  সাথে তাঁর স্ত্রীর বাদানুবাদের শব্দ শুনতে পায় সহজেই অনুভূত হচ্ছে যে,ওমর এর উপর তাঁর স্ত্রী চড়াও হয়েছেন। ওমর নীরব নিস্তব্ধ। ওমর এর উপর তাঁর স্ত্রীর চড়াগলা শুনতে পেয়ে সে বিস্ময়ে হতবাক। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,আমি যে বিপদে পড়ে খলিফার শরণাপন্ন হলাম, সে বিপদ তো এখন স্বয়ং খলিফার ঘরে।খলিফার যদি এ অবস্থা হয়,তাহলে সেখানে আমি কি ? এ বলে  সে চলে যেতে উদ্যত হলে খলিফা তাকে ডেকে পাঠান।খলিফা তাকে জিজ্ঞেস করেন ,তুমি চলে যাচ্ছো কেন? লোকটি বললো,হুজুর! আমি এসেছিলাম আমার স্ত্রী আমার উপর চড়াগলায় কথা বলার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। এখানে এসে দেখি আপনি নিজেই ওই বিপদে আটকা পড়ে  আছেন।আপনার উপর আপতিত বিপদ দেখে আমি চলে যাচ্ছি। ওমর রাঃ তখন তাকে বলেন, মনযোগ দিয়ে শোন, 

তুমি এক্ষুনি আমার উপর আমার স্ত্রীর যে চড়াগলা শুনতে পেয়েছো,তার এসব আচরণ আমি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ক্ষমা করে দিই।সে গৃহে প্রতিদিনই দায়িত্ব বর্হিভূত অনেকগুলো অলিখিত কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে।

সে অঘোষিত আমার ঘরের পাচিকা।ঘরের সব রান্নাবান্নার সব কাজগুলো সে স্বহস্তে করে থাকে। 

সে সার্বক্ষনিক পাহারাদার হিসেবে ঘরের সব কাজ আনজাম দিয়ে থাকে। সে ঘরের অঘোষিত খাদেমা। 

সে আমার ঘরের একজন অঘোষিত ধোপিনী।ছেলে মেয়েসহ আমার ও আমার  পরিবারের সকলের কাপড় ছোপড় ধৌত করে ও তা রোদে শুকিয়ে নেয় এবং আলাদা আলাদা প্রত্যেকের কক্ষে গুছিয়ে রেখে আসে। 

নিজ দায়িত্বের বাহিরে সে আমার দুগ্ধ পোষ্য সব সন্তান সন্ততিদেরকে দুধ পান করিয়ে থাকে।  

তার কারণেই আমি হারাম থেকে বেঁচে থাকি। তাকে ঘিরেই আমার হৃদয় প্রশান্ত থাকে। সে আছে বিধায় পর নারীর প্রতি  আমার চোখ যায় না।আমার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে সে হচ্ছে একমাত্র  অন্তরায়। 

তার কাজের পরিধি এতো বিস্তৃত যে তা সম্পন্ন করতে সে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে এবং সবার শেষে ঘুমায়।

সুতরাং যে নারী প্রতিদিন নিজ দায়িত্ব বর্হিভূত এতগুলো কাজ করে থাকে, সে মাঝে মধ্যে রাগান্বিত হলে এবং আমার উপর চড়াও হলে তা আমি নীরবে সহ্য করি এবং তাকে ক্ষমা করে দিই।

লোকটি তখন বলে উঠে, হুজুর আমার স্ত্রী ও তো এসব কাজগুলো প্রতিনিয়ত করে থাকে। তখন ওমর রাঃ বলেন, তাহলে  তুমিও তো  তাকে ক্ষমা করে দিতে পারো।  (আবু লাইস সমরকান্দি, কিতাব,তানবিহুল গাফেলীন)

সুতরাং যে মহিলা ঘরের মধ্যে এতগুলো কাজ এক সাথে করে,সে মাঝেমধ্যে মেজাজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে একটু চেঁচামেচি করলে তা আমলে নেয়া একজন পুরুষের জন্য মোটেই উচিত নহে।

তাই আমাদের প্রিয় নবী ﷺ বলেন,  

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন, কোন মুমিন স্বামী তার স্ত্রীকে ঘৃণা করতে পারে না। যার একটি আচরণ মনপুত না হয়ে থাকলে তার মধ্যে এমন অনেক গুণাবলী রয়েছে যা দেখে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।

রাজু: হুম,অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিস! সত্যি তোর ভাবি অনেক কাজ করে।

আমি: হুম চল বাসায় তাই!

••••

আজ আমার অফিসিয়ালি বাসর রাত বলতে পারেন!

রাত ১১টা বেজে ৩০ মিনিট, উঠোনে চেয়ার পেতে বসে আছি। এত রাতে ঠান্ডার মধ্যে উঠোনে বসে গল্প করছি। 

কারণ আজ আমার বাসর রাত, বাসর রাত নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা থাকলেও বসে থাকতে হচ্ছে, উপায় নেই সবাই নতুন বউ দেখার জন্য আমার ঘর জুড়ে বসে আছে। আমি বেচারা বাইরে বসে সবার গল্প শুনছি।

রাত প্রায় ১২ টার দিকে অনেক কাংখিত বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। মিষ্টি খাটের উপর বসে আছে। আমি  মুখের দিকে তাকালাম। ঘোমটা কিছুটা নেমে গেছে। দুজনেই নিরবতা পালন করছি।এই ঠান্ডার মাঝেও আমি ঘেমে যাচ্ছি। আমার অবস্থা দেখে মিষ্টি বললো

মিষ্টি:নার্ভাস লাগছে?এই নিন পানি খান।

মিষ্টির হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেলাম। নতুন বউ এর দেওয়া জিনিস না নিলে কেমন হয়! আমি ওর দিকে তাকালাম। ভাল করে দেখার চেষ্টা করছি।

পরনে কালো পাড়ের নীল রঙের হাফ সিল্ক শাড়ি , মেচিং ব্লাউজ, খোলা চুল , কানে ঝুমকো দুল, ঠোটে হালকা খয়েরী লিপস্টিক । আমি তো দেখেই হিতা হিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি 😮 🤯 🧟‍♂ মানুষ এতো সুন্দরী কিভাবে হয়। মিষ্টি কে দেখে মনে হচ্ছে নীল প্রজাপতি! কবি চন্ডী দাস বলেছিলেন – 

নীল শাড়ি মোহনা করি                  

উচ্ছলেতি দেখি পাশ            

কি আর পরানে সুপিনু চরনে                    

দাস করি মনে আশ

আমি তো এক পলকে তাকিয়ে আছি মিষ্টি র দিকে । মিষ্টি মনে হয় কিছু বলছে আমাকে কিন্তু আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না আমি দেখেই যাচ্ছি এক নয়নে। মিষ্টি এসে আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো

মিষ্টি:- কি হয়েছে  এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো ? কত সময় ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছেন না?

আমি:- ( তখন আমার ধ্যান ভাংলো ) আমি জে সেন্সলেস হয়ে যাই নি এটাই তো অনেক । তোমাকে এই রুপে দেখে আমি আমার ভিতরে নেই। এই বলে আমি মিষ্টির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

মিষ্টি:- কি হচ্ছে । এদিকে আসবেন না । ( বলতে বলতে পিছিয়ে যাচ্ছে)

আমি:- কেনো?

মিষ্টি:- দেখুন ভালো হবে না কিন্তু 

আমি:- খারাপ কি হবে? 

মিষ্টি খাট থেকে নেমে ঘরের ভিতরেই দৌড়াতে আরম্ভ করলো । সঙ্গে আমিও পিছন পিছন ছুটছি । একটা সময় মিষ্টি কে ধরে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরলাম ।

মিষ্টি:- ছেড়ে দেন প্লিজ  

আমি:- এতো কস্ট করে ধরলাম ছেড়ে দেওয়ার জন্য নাকি? 

মিষ্টি:- আজকে ছেড়ে দেন । কালকে আপনার যতো ইচ্ছে ‌আদর দিবো ।

আমি:- ও সব বাহানা চলবে না । এভাবে তুমি আমাকে বহুত  ঠকিয়েছো ।

মিষ্টি যদিও মুখে মুখে ছেড়ে দেয়ার কথা বলছে কিন্তু ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করছে না । হয়তো মিষ্টি ও চাইছে আমি যাতে ছেড়ে না দেই।

আমি:- ও গো 

মিষ্টি:- কি( ভয়ে ভয়ে)

আমি:- তোমার ও ঠোঁটের মিষ্টি টা অল্প নেই ।

( বলেই  দুজনের ঠোঁট এক করে দিয়েছি 🙈)

কত সময় ছিলাম মনে নেই হবে হয়তো ১০ মিনিটের মতো )

মিষ্টি:- আপনি মানুষ নাকি রাক্ষস।( হাঁপাতে হাঁপাতে)

আমি:- আমি তোমার রাক্ষস ।

আমি:- ও গো আমার টুনটুনি পাখি?

মিষ্টি:- কি? ( আবার মনে হয় আরো ভয় পেয়েছে)

আমি:- চোলো না একটু দুষ্টুমি করি!

মিষ্টি:-ছেড়ে দেন না।

আমি :- এই নাও ছেড়ে দিলাম।

(  এই বলে আমি পিছন দিকে ঘুরে যখনি চলে যেতে চাইছিলাম  তখনি মিষ্টি আমাকে ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে নিল। আমি চেয়ে আছি মিষ্টি র দিকে মিষ্টি চেয়ে আছে আমার দিকে কতক্ষণ এভাবে ছিলাম বলতে পারবো না। হঠাৎ মিষ্টি নিজে ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটের মধ্যে ডুবিয়ে দিল। আমি তো মনে হয় সপ্ন দেখতেছি। 😍 

এখন কি আর অভিমান করে থাকা যায়!

এভাবেই দুটি অন্তর মিসে গেলো ভালবাসার সাগরে । যেভাবে বৃস্টির পানি মিশে যায় মাটির সঙ্গে।

আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমি এবং আমার নীল প্রজাপতি যেনো জান্নাতেও এক সঙ্গে থাকতে পারি!

            ………………… সমাপ্ত……………….


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *