অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 7

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 7

অর্ণব : নাজিম তাড়াতাড়ি করো। আম্মু ফোন করেছিলো, তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তারাতাড়ি, আম্মু তোমার জন্য চিন্তা করছে।

অচেনা মেয়েটি:- এখনো পড়া শেষ হয়নি, আপনি একটু বসুন অঙ্কটা শেষ হলেই নিয়ে যাবেন।

মেয়েটার কন্ঠ শুনে বুকের ভিতর কেমন জানি লাগল, মনে হলো হাজার বছরের চেনা! তার মানে কি এইটাই আমার বউ? ধুর কি উল্টা-পাল্টা ভাবতেছি। এতক্ষণ বউয়ের কথা ভাবতেছিলাম তাই বোধহয় এরকমটা মনে হয়েছে! এটা কখনোই সম্ভব না!

হঠাৎ নাজিমের কথায় বাস্তবে আসলাম,
নাজিম:- ভাইয়া তুই একটু দারা অঙ্কটা শেষ করি।

অর্ণব : ওকে কর, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি।

খটকা কিছুটা থেকেই গেলো,তাই অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বসে আসি।

এই চিন্তাটা মাথা থেকে সরানোর জন্য নেগলাকে কল দিলাম। মেয়েটা কেন আজ কলেজে আসে নি সেটা শুনতে হবে!

প্রথমবার কল ধরেনি। আবার কল দিলাম তখন কল রিসিভ করছে!

নেগলা :- হ্যালো কে?

অর্ণব :- এত টাইম লাগে কল ধরতে?

নেগলা:- কাজ করছিলাম, কি বলবি বল।

অর্ণব : কলটা ধরে সালাম দিতে পারিস না? তুই জানিস সালাম দেওয়ার কত ফযিলত?

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”।
-[সূরা নূর, আয়াত: ২৭]💕

নেগলা :- এরপর থেকে সালাম দিবো ইনশাল্লাহ। এটা বলার জন্যই কি কল দিছিস?

অর্ণব : আজকে কলেজে আসিস নি কেন?

নেগলা : এমনিতেই।

নাহাজুল:- সত্যি করে বল!

নেগলা:- আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,এক মাস পরে বিয়ে তাই!

অর্ণব :-এটা তো আগে থেকে শুনছি, কেন আসলিনা সেটা বল?

নেগলা:- বললাম না এমনিতেই!

অর্ণব :-বল বলছি,

নেগলা:- আগে বল মাথা ঠান্ডা রাখে কাজ করবি?

অর্ণব :- ঠিক আছে। আমি শান্ত ভাবেই সব করবো।

নেগলা :- তিতুমির….ভাই!

অর্ণব :-তিতুমির মানে, কি হয়েছে ওর?

নেগলা:- ওয় সেদিন ডিস্টার্ব করেছিল আমায় কলেজে, তাই যাই না!

অর্ণব : কি বলতেছিস? এটা কিভাবে সম্ভব? তুই তো বোরখার সাথে নিকাবও পড়ে যাস তাই না!

নেগলা : আসলে সেদিন আমি শাড়ি পড়ে গেছিলাম। আর তুই অসুস্থ ছিলি তাই আসিস নি কলেজে। আর সেদিনের ঘটনা এইটা। আমি তো পর্দার বিষয়ে একটু উদাসীন ছিলাম এটা তুই জানিস। তাই এরকমটা হয়েছে।

অর্ণব : আমি শুনছিলাম যে তুই নাকি একদিন শাড়ি পড়ে আসছিলি। এজন্যই তোকে ঐদিন পার্কে পর্দা নিয়ে এতোগুলা কথা বলছিলাম। পর্দা করার গুরুত্ব এবার বুঝতে পারছিস?

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে না। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সূরা আহযাব : ৫৯)💕

নেগলা : হুম বুঝতে পারছি।

অর্ণব : তে তুই আমাদেরকে এটা বলিস নি কেন?

নেগলা:- দেখ ওয় আমাদের সিনিয়র বড় ভাই, আমি চাইনা তুই ওর সাথে কিছু কর, কারণ ওই অনেক খারাপ আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ওই আমাদের বড়। হেড স্যারকে বললে তোদের বের করে দিবে।

অর্ণব : ঠিক আছে আমি ব্যাপারটা দেখতেছি।

নেগলা:- অর্ণব….উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।

অর্ণব : ঠিক আছে। তোর সাথে কলেজে দেখা হবে। আসসালাম অলাইকুম।

নেগলা : অলাইকুম আসসালাম।

কলটা কেটে ভাবতেছি,কি করা যায়! এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। তবে ঠান্ডা মাথায়। কেননা তিতুমির খুব খারাপ ছেলে। ও যে কোন কিছু করতে পারে। মারামারি করতে গেলে নেগলার বিপদ আরো বেড়ে যাবে। নেগলা একটা মেয়ে, তাই রাস্তায় সুযোগ পেলে ওর ক্ষতি করা খুব সহজ। মেয়েটার ভবিষ্যত জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই ঠান্ডা মাথায় সবকিছু করতে হবে!

হঠাৎ নাজিমের ম্যাডামের কথায় বাস্তবে ফিরলাম,
অচেনা মেয়েটি:- কে হয় মেয়েটি?

(আবার সেই কণ্ঠ)
অর্ণব : কোন মেয়েটা?

অচেনা : যার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন..
(কথা গুলো পিছনে না ঘুরেই বলতেছে)

অর্ণব :- কেউ হোক আপনাকে বলব কেন?

অচেনা মেয়েটি :- বললে বলেন নাহলে ভাইকে নিয়া চলে যান!

(বুঝলাম মেয়েটা রাগী)
অর্ণব : আমার বন্ধু ছিল।

অচেনা মেয়েটি:- আপনাকে যে মেয়ে স্বামি হিসাবে পাবে সে অনেক ভাগ্যবতী হবে।

অর্ণব : কেনো?

অচেনা মেয়েটি:- কারন যে ছেলে বন্ধুর বিপদের সময় সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়,সে তার বউ এর জন্য আরো কত কি করবে? এটাই ভেবে বললাম অনেক ভাগ্যবতী হবে আপনার বউ!

অর্ণব : বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। আর নেগলাতো আমার খুব ভালো বন্ধু।

অচেনা মেয়েটি : ঠিক বলেছেন। কেননা

হাদীসে আছে,

“যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্ত মহিলাদের সাহায্য করে অথবা গরীবের সাহায্য করে, সে এমন, যেমন জিহাদে চেষ্টা করছে।
-(মিশকাত)💕

অন্য এক হাদিসে এসেছে,

“যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের মুসীবত দূর করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার মুসীবত দূর করে দিবে । যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্ত লোকের সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাত তার জন্য সহজ করে দিবেন । যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে অর্থাৎ প্রকাশ করবে না, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ ঢেকে রাখবেন।”
-(মিশকাত)💕

অর্ণব : জি। আপনাকেও যে পাবে সেও অনেক ভাগ্যবান হবে।

অচেনা মেয়েটি : কেনো?

অর্ণব : আপনার ইসলামিক জ্ঞানের জন্য। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় দিক দিয়ে আপনার উনি ফায়দা পাবে।

অচেনা মেয়েটি : হাহাহা। আমি এতোটাও জ্ঞানী না। একজন প্রাকটিসিং মুসলিমাহ। আর আপনিও কম কিসে? সবই তো শুনলাম।

(উফফফ কি সুন্দর হাসির আওয়াজ। একদম আমার উনার মতো। ইনিই কি আমার উনি? ধুর আমিও না! এ দুনিয়াতে সব মেয়েদের কণ্ঠ বোধহয় একই রকম। জীবনে উনার পরে শুধু ইনার সাথেই এভাবে কথা বলতেছি। তাই এরকমটা লাগতেছে বোধহয়।)
অর্ণব : কি? আপনি সব শুনছেন?

অচেনা মেয়েটি : জি। আপনার কথা গুলো এখান থেকে খুব ভালোভাবেই শুনা যাচ্ছিলো। আপনি উনাকে সালামের ফযিলত বললেন কিন্তু আমাকে সালাম দিলেন না কেনো?

অর্ণব : জি আপনি অচেনা তো তাই আপনাকে সালাম দিতে একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম। কি না কি মনে করবেন। আর আপনি যদি গেট খুলতে আসতেন তাহলে ঠিকই দিতাম। আবার ভিতরে বসে আছেন তাই দেই নি।

অচেনা মেয়েটি : এর পর থেকে দিবেন। আর চেনা অচেনা সবাইকে সালাম দিবেন। এতে লজ্জার কিছু নাই।

আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন আমলটি সর্ব উত্তম? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চিনো আর যাকে চিনো না সবাইকে সালাম দেয়া।”
-[বুখারি ও মুসলিম]💕

বুঝলেন?

অর্ণব : জি আমি বুঝছি। এর পর থেকে আমি আসলে আপনাকে সালাম দিবো। তবে আমার বউ আমাকে পেলে ভাগ্যবতী হবে কি না জানি না। তবে উনাকে পেলে আমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ হবো এটা ঠিক।

অচেনা মেয়ে : ওহহো! তাহলে ইতোমধ্যে আপনার “উনি” -টা আছে?

অর্ণব : হাহাহা। না এখনো হয়নি। তবে অপেক্ষা করতেছি একজনের!

(নাজিম আছে তাই খুলে বললাম না)

অচেনা মেয়েটি : ওহ।

অর্ণব : আপনি কে বলুন তো, আপনার কথা বলার স্টাইল ভাব,ভঙ্গি সব আমার চেনা চেনা লাগে!
(আমি এতোক্ষণে অনেকটা নিশ্চিত এটাই আমার উনি!এবার আর ভুল হতেই পারে না। এই কন্ঠ,এই হাসি,এই কথা বলার ধাঁচ,মিষ্টি ব্যবহার আর এতো গভীর ইসলামিক ভাবধারা, সব কিছু একদম আমার “উনি” -টার মতো। মানে আমার বউয়ের মতো। আর এটা যদি আমার “উনি” না হতো তাহলে কখনোই আমার সাথে এতো কথা বলতো না। কেননা ইনি ভালোমতোই জানেন পর পুরুষের সাথে এতোটা মধুরতা মিশানো কন্ঠে কথা বলা জায়েয নাই।)

অচেনা মেয়েটি;- আমি তো চিনিনা আপনাকে? নিজের ভাইকে নিয়ে যান।

অর্ণব : আপনি একটু ঘুরে বসুন না, আপনার মুখটা একটু দেখি!

অচেনা মেয়েটি:- না,আমি অপরিচিত কাউকে নিজের মুখ দেখাই না। আসতে পারেন এখন!

এই রাগ দেখানোর ধাঁচ আমার উনার মতো,তাই আমি নিশ্চিত এটাই আমার উনি। আজকে আমি ইনাকে দেখেই ছাড়বো। দুই মাস অপেক্ষা করেছি আর না! আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেংগে যাচ্ছে।
মনে মনে এগুলা ভাবতেছিলাম আর সামনে এগুচ্ছিলাম।

অচেনা মেয়েটি:- আপনি এদিকে আসছেন কেন?

অর্ণব : আপনাকে দেখার জন্য?

অচেনা মেয়েটি:- আপনি আমার কাছে আসবেননা প্লিজ?

অর্ণব : আজকে আপনাকে আমার দেখতেই হবে।
(এটা বলছি আর সামনে এগোচ্ছি)

(চলবে….)

মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝

[আগের পর্বগুলো Page এর Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞


Comments

One response to “অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 7”

  1. […] Chapter 2 Chapter 3 Chapter 4 Chapter 5 Chapter 6 Chapter 7 Chapter 8 Chapter 9 Post navigation ← Previous […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *