অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 8

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 8

অর্ণব :-আমি আজ আপনাকে দেখেই ছাড়ব?
এই বলে সামনে এগোচ্ছি!

অচেনা মেয়েটি:-আল্লাহর দোহাই আমার কাছে আসবেন না।

আমি থেমে গেলাম। এটা আমি কি করতে যাচ্ছি? “উনা”-র জন্য কি আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এভাবে একটা মেয়েকে আমি কোনভাবেই দেখতে পারি না! আর চেহারা দেখার পর যদি দেখি এটা উনি না তাহলে? সবচেয়ে বড় কথা ইনি নাজিমের ম্যাডাম। উনার একটা সম্মান আছে। যদি বাড়িতে জানা পায় ব্যাপারটা, তাহলে খুব খারাপ হবে। আল্লাহ! আমি অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।

একসাথে এতোগুলো কথা আমার মাথায় বিদ্যুতের মতো খেলে গেলো!…..পিছন ঘুরে বললাম নাজিম চল বাসায় যাব.. একটু বাইরে দাঁড়িয়ে থাক।

নাজিম:- ওকে ভাইয়া চল।

(নাজিম বাইরে গেলো)

অর্ণব : আমাকে মাফ করে দিয়েন প্লিজ! আমি নিজেও বুঝতে পারি নি আমি কি করতে যাচ্ছিলাম। আসলে আমার বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু আমার উনি হারিয়ে গেছে! উনার অপেক্ষায় আমি দিন গুনতেছি। আর আপনার সব কিছু একদম উনার মতো! কন্ঠ,হাসি,কথা বলার ভঙ্গিমা সব কিছু। এজন্য আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি। আমি মনে করছিলাম আপনিই উনি।

(আমি পিছনে ঘুরেই কথা গুলা বললাম। উনি উল্টা দিকে নিজের মুখ হাত দিয়ে ঢাকে রাখছিলেন)

অচেনা মেয়েটি : উনাকে কি খুব ভালোবাসেন?

অর্ণব : দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যানের জন্য তাকে প্রচুর ভালোবাসি। এজন্যই আমি এই ভুলটা করতে যাচ্ছিলাম! আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।

অচেনা মেয়ে : হুম বুঝছি! উনি সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী যে আপনার মতো কাউকে পেয়েছে। এখন আপনি যান। বাইরে নাজিম দাঁড়ায় আছে।

অর্ণব : কোথায় ও কিভাবে হারিয়ে গেছে তা তো জিজ্ঞাসা করলেন না। আমার মনে হচ্ছে আপনিই “উনি”!

অচেনা মেয়ে : আমি আপনার “উনি” না। রাত হয়ে যাচ্ছে বলে জিজ্ঞাসা করিনি। কালকে আসলে জিজ্ঞাসা করতাম। এখন আপনি যান প্লিজ!

অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।

অচেনা মেয়ে : অলাইকুম আসসালাম।

তারপর আমি বাড়ি থেকে বেড় হয়ে নাজিমকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি আর বলছি,

অর্ণব : নাজিম তোর মেডামের নাম কি রে?

নাজিম:- নাম দিয়ে কি করবি?

অর্ণব :- এমনি মাথা গরম আছে, থাপ্পর খাসনা যা বলছি চুপচাপ উত্তর দে।

নাজিম:- মেডামের নাম তানহা!

মনে মনে,
অর্ণব :- তানহা?…….না এ নামে তো আমি কাউকে চিনিনা তাহলে কন্ঠ এত চেনা চেনা লাগল কেন? আরে ধুর আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি “উনা” -র নামটাও জানি না। হুম আমিই বোধহয় পৃথিবীর প্রথম স্বামী যে তার স্ত্রীর নামটাও জানে না। ধুর অন্ততপক্ষে নামটাতো শুনে নিতে হতো।

নাজিম:- ভাইয়া তুমি কি কিছু বলছো?

অর্ণব : নাহ কিছু না।

এই সময় মশিউর এর কল আসলো।

অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।

মশিউর : অলাইকুম আসসালাম।

অর্ণব : আমি চাচ্ছিলাম তোকে কল দিবো। তুই নিজে থেকে দিয়ে ভালো কাজ করছিস!

মশিউর : কেনো?

আমি নেগলার সাথে যা যা ঘটছে তা বললাম।

মশিউর : তাহলে এখন কি করবি।

অর্ণব : কালকে কলেজে যাই আগে। তবে শান্তভাবে বিষয়টাকে মিটমাট করতে হবে। তিতুমির অনেক খারাপ ছেলে। যেকোন কিছু করতে পারে, তাই নেগলা পরবর্তীতে বিপদে পড়তে পারে।

মশিউর : ঠিক বলছিস। কেননা

কুরআনে আছে,

কাফেররা সন্ধি বা চুক্তি বা শান্তি চাইলে মুসলমানদের ও একই পথে চলতে হবে।
-(সূরা আনফাল, আয়াত : ৬১,৬২)💕

এই আয়াত দ্বারা যুদ্ধ বা মারামারি না করে সন্ধির দিকে বেশি উৎসায়িত করা হয়েছে।

অর্ণব : তবে আমাদেরকে সব কিছুর জন্য তৈরী থাকতে হবে।

কুরআনে আছে,

যুদ্ধ করলে যুদ্ধ হবে,যুদ্ধ না করলে যুদ্ধ হবে না।
-(সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৯১)💕

তাই সবাইকে কালকে তৈরী থাকতে বলিস। যদি পরিস্থিতি বেগতিক হয় তাহলে শক্তি দেখাতে হবে।

মশিউর : ঠিক আছে। আমি সবাইকে বলে দিবো। কিন্তু..

অর্ণব : কিন্তু?

মশিউর : কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইংলিশ ম্যাডামকে নিয়ে। মনে নাই? ২ মাস আগে তিতুমিরদের সাথে মারামারির কথা, ইংলিশ ম্যডাম ঐ মারামারির জন্য কত বড় ঝামেলা করছিলো!

অর্ণব : মনে আছে।তাই বলে অন্যায় চুপচাপ সহ্য করবো না। যা হবে দেখা যাবে! আর আমরা মারামারি করতে যাচ্ছি না। শুধু বুঝাইতে যাবো। ওদের উপর ভরসা নাই। তাই তৈরী হয়ে যাবো।

মশিউর : ঠিক আছে। কিন্তু এবার আর তখনকার মতো কলেজে মারামারি করবো না। বাইরে করলে কেউ কিছু বলতে পারবে না। তবে ঐবার যে মারটা মারছিলাম ওদের, এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে। হাহাহা।

অর্ণব : ঝামেলাটার কারনে আমি রাজশাহীতে গেছিলাম। ঐ সফর আমি কোনদিনও ভুলতে পারবো না।

মশিউর:- হুম…মনে আছে তো। রাজশাহীতে যায়ে কি এমন দেখলি যে সারাজীবন মনে থাকবে,কখনো ভোলা যাবেনা?

অর্ণব : পরে বলবো।
(ওখানে না গেলে তো আমার “উনা”-র সাথে দেখাও হতো না,আর তার সাথে বিয়েও হতোনা। উনার সাথে পার করা প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমার স্মৃতির পাতায় এখনো জ্বলজল করতেছে। সেগুলা কি আর আমি ভুলতে পারি!)

মশিউর:- ওকে বলতে হবেনা। বাই

অর্ণব : ইনশাল্লাহ একদিন বলবো।
আসসালাম অলাইকুম।

মশিউর : অলাইকুম আসসালাম।

আসলে ২ মাস আগে তিতুমিররা আমাদের ব্যাচের রোকন নামের একটা ছেলেকে র‍্যাগ দেয়। ছেলেটা ছিলো খুব ভদ্র আর খুব সহজ-সরল। তাই আমরা তিতুমিরদের কাছে যাই কথা বলতে। তারা উল্টা আমাদেরকে র‍্যাগ দেবার ভয় দেখায়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওরা লাঠিসোটা বেড় করে। আমরাও বসে থাকে নি। লাঠি, হকি স্টিক যা পাইছি সব নিয়ে মারামারি শুরু হয়ে যায়। ওরা আমাদের সাথে পারেনি। যার ফলে ওদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছিলো। আর তাই আমরাও ফেঁসে যাই। পরের দিন ইংলিশ ম্যাডাম তিতুমিরদের আর আমাদের সবাইকে গভর্নিং কমিটির কাছে বিচারের জন্য নিয়ে যায়।

কলটা কেটে,
অর্ণব : নাজিম বাড়িতে এগুলা কথা একদম বলবি না। ঠিক আছে?

নাজিম : ঠিক আছে! কিন্তু তাহলে আমাকে কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলতে দিতে হবে।

অর্ণব : সকালে তুই যে কাজটা করছিস ঐটার জন্য আর কোনদিনও তোকে খেলতে দিতাম না। কিন্তু বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে।

নাজিম : হি হি হি।

অর্ণব : একদম হাসবি না।

কথা বলতে বলতে আমরা বাড়িতে চলে আসলাম। ডাক দিলে আম্মু দরজা খুলে দিলো।

মিস রাদিয়া : আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম। এই যে ধরো তোমার ছোট বিচ্ছুকে।
(মানে নাজিমকে)

নাজিম : আমি আম্মুর একমাত্র কলিজার টুকরা। বিচ্ছুনা বুঝলি।

অর্ণব : একমাত্র? বাব্বাহ!

মিস রাদিয়া : হইছে। আসেই দুই নবাবজাদার ঝগড়া শুরু। অর্ণব তুই উপরে যায়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খাবার দিবো। আর নাজিম তোমার নতুন ম্যাডাম কেমন পড়াচ্ছে?

নাজিম : জি আম্মু খুব ভালো। আমার উনার কাছে বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আর আপুটা অনেক ভালো!

মিস রাদিয়া : ঠিক আছে। তুমি যায়ে ব্যাগ রাখে হাত-মুখ ধুয়ে আসো।

নাজিম : ঠিক আছে আম্মু।

খাওয়া দাওয়া করে আর এশার নামাজ পড়ে রুমে গিয়ে একটু ফেসবুকে আসলাম!ফেসবুকে আমার একটা পেজ আছে যেখানে আমি গল্প লিখি।

পেজের ইনবক্সে দেখলাম “গুনাহগার বান্দী” নামে একটা আইডি থেকে, আমার #ক্ষণিকের_মুসাফির পেজটিতে মেসেজ দিয়েছে। মেসেজটি এমন ছিল,
“আসসালাম অলাইকুম।এই যে শুনছেন আপনি অনেক ভালো গল্প লেখেন, আমি আপনার ভালো বন্ধু হতে চাই।”

(আমি আইডি টা চেক করলাম।মেয়েটার বাসা কোথায়,কিসে পড়ে তেমন কিছুই নাই। আর বন্ধুও দেখলাম মাত্র ১৩ জন। ভাবলাম আমার ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ দিব,পরে ভাবলাম না ফেক আইডি হতে পারে)
সব কিছু চেক করে আমার পেজ থেকেই রিপ্লাই দিলাম,
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম হুম পারেন!

মেয়েটি :- তো আপনার ফেসবুক আইডির নাম জানা যাবে কি?

অর্ণব:-না, যা বলার এখানেই বলেন?

মেয়েটি :- ওকে লাগবে না,কি করেন আপনি?

অর্ণব : একটু আগে বোকা খাইলাম। তাই মাথা ঠান্ডা করার জন্য ফেসবুকে ঢুকলাম।

মেয়েটি :- কার কাছ থেকে বোকা খেলেন?

অর্ণব : আম্মুর কাছ থেকে।

মেয়েটি :- কেনো?

অর্ণব : সকালে উঠে নামাজ পড়ি না তাই!
(জি হ্যাঁ আবার খাবার সময় বোকা দিছে এ কারনে)

মেয়েটি :- একটা রিকোয়েস্ট করবো। প্লিজ সকালে উঠে ফযরের নামাজটা পড়িয়েন!

অর্ণব :- তার আগে বলেন তো আপনার নাম কি?

মেয়েটা :- আমার নাম তানহা…

(চলবে…)

মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝

[আগের পর্বগুলো Page এর Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞


Comments

One response to “অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 8”

  1. […] Chapter 3 Chapter 4 Chapter 5 Chapter 6 Chapter 7 Chapter 8 Chapter 9 Chapter 10 Chapter 11 Post navigation […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *