Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 10
তিতুমির আর আরো একটা ছেলে আমাকে ধরে আছে। আমি কখনোই ৫-৬ জনের সাথে একা মারামারি করতে পারবো না।
সুজা : একটু পরেই বুঝবি আমরা তোর সাথে কি কি করি?
তিতুমির : শুন একে নিয়ে ঐ কোনটায় যাই। ওখান থেকে একে মারার সময় সহজে কেউ দেখতে পাবে না।
সুজা : কেউ দেখলে সমস্যা কি? সবাই আমাদের ভয় পায়। চিন্তা করিস না।
তিতুমির : ঠিক আছে।
ওনেকেই দেখতেছে যে আমাকে এরা ধরে রাখছে। কিন্তু কেউ কিছু বলতেছে না। কারন এরা আসলেই খুব খারাপ। তাই কারো সাহস নাই এদের বিরুদ্ধে কথা বলার।
কিছুক্ষণ পরেই রিফাত লাঠিসোটা নিয়ে আসলো। সবার হাতে একটা লাঠি দিলো।
অর্ণব : আমার সাথে ভেজাল করলে ভালো হবেনা বলে দিলাম। পরে কিন্তু সব সুদে আসলে তুলবো।
বলার সাথে সাথে সুজা আমার কলার ধরে বলল,
সুজা : তোকে আমরা ভয় করি নাকি, আর তোর কোন বাপ আছে এখানে ডাক।
বলেই দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিলো।
চুপচাপ সহ্য করে,
অর্ণব : তোরা আগুন নিয়ে খেলতেছিস বলে দিলাম।
রিফাত : কি বললি? তিতুমির ওকে ছাড় আর সর ওখান থেকে।
বলেই লাঠি নিয়ে মারতে আসলো।
এবার আর চুপ করে থাকা যায় না। যেভাবে হোক বাঁচতে হবে।
তিতুমির আমাকে ছাঁড়ার সাথে সাথে অন্য ছেলেটার হাত থেকে নিজেকে কোন মতে ছাড়িয়ে ছেলেটাকে দিলাম একটা থাপ্পর বসায়। রিফাত আমার খুব কাছে চলে আসছিলো।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওরা হতভম্ব হয়ে গেলো। আমি পালাতে পারতাম কিন্তু আমি কাপুরুষ না। মার খাবো কিন্তু পালাবো না।
ওদের হতভম্বতার সুযোগ নিয়ে পাশের একটা ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে হাত থেকে হকি স্টিক কেড়ে নিয়ে সাথে সাথে রিফাতের পায়ে খুব জোড়ে একটা ঘা বসায় দিলাম। রিফাত আমাকে মারার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারেনি। ও আমাকে মারার জন্য লাঠি উঠাবে এমন সময় আমি ওকে মারছি।
কাজগুলা সব শক্তি দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি করলাম। কারন আমি জানি এদের সাথে আমি কখনো পারবো না। কিন্তু নিজের মান সম্মান বাঁচাতে হবে। আগে আমি কয়েকটা মেরে নেই তারপর ওরা মারবে মারুক। পরে কলেজের বাইরে দেখে নিবো।
হকি স্টিক দিয়ে মারছি তাই রিফাতের চিৎকারে তারা একটু দমে গেলো।
সাথে সাথে আমি তিতুমিরের কলার ধরে ওকে থাপ্পর মারতে যাবো এমন সময়,
ইংলিশ মেডাম:- কি করছো এসব, মেরে ফেলবে নাকি তিতুমিরকে?
(ধুর মানুষের টাইমিং এতো খারাপ হয়? আরেকটু আগে আসুক। না হলে আরেকটু পরে আসুক। এর পরে তো আমিই মার খেতাম। কারন আর কয়েক সেকেন্ড পর ওরাও লাঠিসোটা নিয়ে আমাকে বেধরক পিটাইতো আমি এইটা নিশ্চিত ছিলাম। আর আমি কিছুই করতে পারতাম না। কিন্তু আসলো কখন? ভাগ্যটাই খারাপ)
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়ায় থাকলাম।
ইংলিশ ম্যাডাম : রিফাতকে এতো জোড়ে মারলা কেনো? তুমি তো একটা গুন্ডা। কলেজে আসো গুন্ডামি করতে?
মেডামের কাছে আমি আগে থেকেই খারাপ ছিলাম। তাই পুরা বিষয়টা উনি অন্য দিক দিয়ে দেখতেছেন। উনার মতে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলায়ে আমিই এখানকার দোষী।
অর্ণব : Sorry Mam! এর পরে আর হবে না। এবারের মতো মাফ করে দেন।
ইংলিশ ম্যাডাম : তোমার মতো নির্লজ্জ আমি আরেকটা দেখিনি। দুই মাস আগে কলেজ মিটিংয়ে তোমার বন্ধুরা আর তিতুমিরের বন্ধুরা বললা যে আর কোনদিনো কলেজে মারামারি করবা না। আর এখন হকি স্টিক নিয়ে ওদের মারতেছো।
আসলে পুরা ঘটানায় ম্যাডামের চোখ আমার উপর ছিলো। তাই সুযোগ বুঝে তিতুমীরের দলবল লাঠি লুকায় নিছে। শুধু রিফাতের লাঠি নিচে পড়ে ছিলো।আর আমার হাতে হকি স্টিক।
অর্ণব : ভুল হয়ে গেছে। এরকম আর হবে না। শেষ বারের মতো মাফ করে দেন। প্লিজ!
ইংলিশ ম্যাডাম : কখনোই না। সেবার বলা হয়েছিলো যদি আরেকবার এরকম করো তাহলে কলেজ থেকে বেড় করে দেওয়া হবে। এবার হয় তুমি এ কলেজ থাকবা নাহলে আমি।
অর্ণব : মানে,
ইংলিশ ম্যাডাম : মানে কলেজে তুমি থাকলে আমি এ কলেজে আর ক্লাস নিবনা আর থাকবো না কথা দিলাম। আর আমি থাকলে তোমাকে এ কলেজ থাকতে দিবনা। এটাই আমার শেষ কথা।
(আমি মাথা নিচু করে থাকলাম)
ইংলিশ ম্যাডাম এই কথা বলে চলে গেল। রিফাতকে ঘাড়ে করে ওর দলবল নিয়ে গেল। তিতুমির আমার দিকে একটু মায়া ভরা মুখে তাকিয়ে চলে গেলো। বুঝলাম না এর মানে কি ছিলো। তবে ছেলেটা আসতে আসতে হাটতেছিলো।
পুরা কলেজ চত্বরে ভিড় লাগে গেছিলো। আমি ওদের দৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। ভিড় ঠেলে এখলাস,মশিউর,রিপন,বেলাল এরা চার জন দৌড়ে আসলো।
মশিউর : কিভাবে ঘটলো এগুলা?
বেলাল : আমাদের জন্য অপেক্ষা করলি না কেন?
এখলাস : থাম তোরা। অর্ণব এখান থেকে চল। সবাই আমাদের দেখতেছে। আর অর্ণবের এখন একটু আরাম করতে হবে।
তারপর আমরা সেখান থেকে একটা ফাঁকা জায়গায় গেলাম।
এখলাস : এবার বলতো পুরা ঘটনাটা। বেলাল তুই একটু পানি নিয়ে আয়।
মশিউর : তোর গালে থাপ্পরের দাগ কেনো?
এখলাস : থাম এত উত্তেজিত হইস না। ওকে বলতে দে!
তারপর আমি পুরা ঘটনাটা ওদেরকে বললাম।
মশিউর : তুই আমাদের জন্য অপেক্ষা করিস নি কেন? এটা তুই একদম ভালো কাজ করিস নি।
অর্ণব : তাহলে আমার সাথে তোরাও ফাঁসে যাইতি। আর এটা আমি কখনো চাইনা!
মশিউর : ফাঁসে গেলে যাইতাম। এটা তোকে চিন্তা করতে হবে না বুঝলি।
এখলাস : তোকে সুজা থাপ্পর মারছে তাই না। লাঠি,রোড,হকি স্টিক সব বাইরেই আছে। একেকটাকে মেডিকেলে না পাঠাইলে আমার নাম পাল্টায় রাখিস।
রিপন : আমার তো রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। বেলালকে আসতে দে। কাটায় কাটায় হিসাব তুলবো।
মশিউর : আর অর্ণব তুইও হইস। কালকে আমাদের মধ্যে কি কথা হইছিলো? মারামারির জন্য আমাদেরকে তৈরী হইতে বলে একাই গেলি মাইর খাইতে? তোর কি মাথা খারাপ?
এই সময় বেলাল পানি নিয়ে আসলো। পানি খেয়ে,
অর্ণব : তোরা মাথা ঠান্ডা কর। ক্রোধ বা রাগ ভালো না।
হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সালালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। রাসূল সালালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগান্বিত হয়ো না। সে ব্যক্তি বারবার উপদেশ চাইলে রাসূল (একই উত্তর দিয়ে) তাকে বললেন, রাগান্বিত হয়ো না’।
-[বুখারী : ৫৬৫১]💕
এখলাস : তাহলে এখন কি করবো? তুই বল।
অর্ণব : দেখলি তো কি হলো। অনেক বড় ঝামেলায় ফাঁসে গেলাম। তারপর এখন আবার মারামারি করতে যায় আরো একটা ঝামেলা করবি?
মশিউর : তুই বলতে চাচ্ছিস এখন আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবো?
অর্ণব : এটা বিষয় পরে দেখা যাবে। আর এখন ওদের মাফ করে দে। এটা বিষয় নিয়ে পরে ভাবা যাবে। কেননা
কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।”
-{সূরা আলে ইমরান, আয়াত :- ১৩৪}💕
বেলাল : অর্ণব ঠিক বলছে। এখন এগুলা বাদ দে। মেডাম কি বলেছে মনে নাই? হয় আমরা থাকব নাহলে সে থাকবে? এটা ভাববার বিষয়!
রিপন : মনে হয় ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দিতে পারে।
মশিউর : অর্ণবের বাবাতো কলেজের গভর্নিং কমিটির সদস্য। কিছু হবে না।
অর্ণব : আব্বু দুই মাস আগে বলছিলো যে এবারই শেষ। এর পর থেকে তার আর কোন সুপারিশ কাজে দিবে না।
রিপন : এটা তো সত্যি চিন্তার বিষয়।
বেলাল : তাহলে তুই কলেজে কাহিনী করলি কেন। বাইরে হইলে কেলায় রাখে দিতাম। কেউ কিছু বলতেও পারতো না।
অর্ণব : বাদ দে। আমাকে বেড় করে দিলে আমার কোন ক্ষতি হবে না এটা তোরা ভালো করেই জানিস। এখন চল বাইরে যাই।
(এর পিছনে কারন আছে। কারনটা এখন রহস্যই থাক😁)
মশিউর : হুম। চল। আজকে ক্লাশ করার দরকার নাই।
বাইরে বেড় হয়ে আমাদের আড্ডা দেওয়ার জায়গায় গেলাম। দেখলাম লাঠি,হকি স্টিক যা লাগে মারামারির জন্য সব রেডি করে রাখছে।
অর্ণব : বাব্বাহ তৈরী হয়ে আসছিলি!
মশিউর : তো! আমরা কি কাঁচা খেলোয়াড়। শুধু পৌছানোর আগেই ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। নইলে একেকটার স্ট্যাম্প মানে হাড্ডি আস্তো থাকতো না।
অর্ণব : কি রে তোরা চাইনিজ কুড়াল কেন আনছিস?
রিপন : যদি লাগে।
অর্ণব : জেলে পাঠানোর ধান্ধা? তোদের যে মাথা গরম। আল্লাহ বাঁচাইছে।
(সবাই হেসে উঠলো)
অর্ণব : ধন্যবাদ তোদের। এতোটা সাপোর্ট করার জন্য।
মশিউর : নেগলা আমাদেরও বোনের মতো। তাই ধন্যবাদ দিতে হবে না। এখন বাড়ি চল সবাই।
অর্ণব : ওকে কালকে দেখা হবে। আসসালাম অলাইকুম।
বেলাল : অলাইকুম আসসালাম।
তারপর আমি,রিপন আর মশিউর মিলে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।
হঠাৎ মোবাইলে কল আসলো। দেখলাম কলটা আব্বুর। এতো তাড়াতাড়ি হেড স্যার আব্বুকে জানায় দিলো? আমি শেষ আজকে।
ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম…..
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply