Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 13
তানহা : দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসিনা,আর ঐ দিন একটা দুর্ঘটনাবশত আমাদের বিয়ে হয়ছে। দয়া করে আমার সাথে এমন করবেন না।আমি শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা করতেছি। রেজাল্টটা হয়ে গেলেই আমি চলে যাবো। আর আপনি আমার সাথে জোর করলে আমি এখনই আবার রাজশাহী চলে যাবো।
এ কথা শুনার পর ডাইরিটা দিয়ে দিলাম।
অর্ণব : তা রেজাল্ট কবে দিবে? শুধু একটা কাজের জন্য বাসা ভাড়া নেওয়ার কি দরকার ছিলো?
তানহা : ডাইরিটা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়।
অর্ণব : বাইরে নাজিম আছে। ও এমনিতেই বাড়িতে “কবে বিয়ে করবি? আমি ভাবিকে দেখবো” এই বলে মাথা খারাপ করে দেয়। যদি শুনে মিস তানহা ওর নিজের ভাবী। তাহলে ভেজাল হয়ে যাবে।
তানহা : কেনো ভেজাল হবে? কাউকে বলে দিবে নাকি? কোনো মেয়েকে?
অর্ণব : তোমরা মেয়েরা এতো সন্দেহ করো কেনো বলতো?
তানহা : যেটা জিজ্ঞাসা করলাম সেটার উত্তর দেও।
অর্ণব : আজব! আমার কেউ নাই এটা তুমিও জানো। আর তুমি নিজে বিষয়টাকে গোপন রাখতে চাচ্ছো। তাই বললাম! নইলে আমার কোন সমস্যা নাই ওকে বলতে।
তানহা : এটাও ঠিক। ওকে বলিয়েন না প্লিজ। আর আমি তো আপনাকে ভালোবাসিনা। ওকে বলে লাভ কি?
মনে মনে,
অর্ণব : আসলে মানুষ ঠিকই বলে। ভালোবাসা প্রচুর কষ্ট দেয়। যার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে সে আমাকে মেনে নিচ্ছে না। তানহার প্রতি প্রচুর ভালোবাসা কষ্টের পরিমানটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই আমি প্রচুর খুশি ছিলাম। কিন্তু এখন ঠিক উল্টোটা! তবুও আমি ধৈর্য ধরে স্বাভাবিক কথা বলতেছি। এটা নিয়ে তানহার সাথে বাড়াবাড়ি করা যাবে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চই আমাকে সাহায্য করবেন। কেননা ধৈর্যশীলদের আল্লাহ স্বয়ং সাহায্য করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তবে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করলে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।”
-(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২৫)💕
আমার অন্তরের অবস্থা আল্লাহ তায়াল স্বয়ং ভালো জানেন। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আমি জানি যে আপনি তাদের কথাবর্তায় হতোদ্যম হয়ে পড়েন(অন্তরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়)। অতএব আপনি পালনকর্তার সৌন্দর্য স্মরণ করুন এবং সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যান।
-(সূরা আল-হিজর ৯৭-৯৮)💕
যদি তানহা আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনে তাহলে নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তানহার মন আমার জন্য ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন।
তানহা : কি ভাবতেছেন?
(জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই করতেছি। আল্লাহ আমাকে শক্ত থাকার তৌফিক দাও)
তানহার কথায় বাস্তবে আসলাম,
অর্ণব : না কিছু না। ঠিক আছে আমি নাজিমকে কিছু বলবোনা। এখন তারাতারি বলো কবে তোমার রেজাল্ট দিবে?
তানহা : কয়েকদিনের মধ্যেই দিবে।
অর্ণব : সরকারি কলেজেই?
তানহা : হুম। এতো কিছু মনে রাখছেন আমার ব্যাপারে?
অর্ণব : তোমার ব্যাপারে কাটানো প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমার মনে আছে! ইনশাল্লাহ কখনো ভুলবো না।
তানহা : এখন আপনি যান, নাজিম বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর অংক করা মনে হয় শেষ।আর দয়া করে আমায় ডিস্টার্ব করবেন না।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।নিজের খেয়াল রাখিয়েন।
তানহা : অলাইকুম আসসালাম।
বাইরে এসে দেখলাম নাজিম ব্যাগ গুছায় তৈরী হয়েছিলো। নাজিমকে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।হাটতে হাটতে ভাবতেছি,
এটা কি হলো? তাহলে কি সত্যিই তানহা আমাকে ভালোবাসেনা! আমাকে চায় না? যদি সত্যিই তানহা আমাকে না চায় তাহলে তো আমি জোড় করতে পারবো না। জোড় করে কি করবো? তাহলে আমাদের সাংসারিক জীবন মোটেও সুখের হবে না। আমাদের সংসার তানহার কাছে একটা সমঝোতা ছাড়া কিছুই হবে না। তানহাকে পেলে আমি খুশি হবো, কিন্তু তানহা? তানহা তো কখনোই এই সম্পর্কে সুখী হবে না। আর এক তরফাভাবে কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। যদি তানহা ম্যাটুরিটির পরিচয় দেয় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে কেউই সুখী থাকবো না। কেননা জোর করে ভালোবাসা হয় না। জ্ঞানের দরজা খ্যাত আলী (রা) বলেছেন,
“তার পিছনে দৌড়িও না যে তোমাকে এড়িয়ে চলে।”
-[হযরত আলী (রা:)]💕
তাহলে কালকের কথাগুলোর মানে কি ছিলো? তানহা জানতো যে এটা আমি। তবুও কেনো বললো আমার বউ ভাগ্যবান হবে। এটাতো পরোক্ষভাবে নিজেকেই বলা হচ্ছে। আবার আমার সাথে খুব সুন্দরভাবে কথা বার্তা বললো, এমনকি মিষ্টি হাসি হেসেছিলোও, ঢুকতেও দিলো! তাহলে এগুলা কি ছিলো? শুধু কি বউ হিসেবে নিজের কর্তব্য পালন আর স্বামী হিসেবে আমার অধিকারের জন্য? যদি না ভালোবাসতো শেষে আমাকে সন্দেহ করলো কেনো? আর নেগলার সাথে যেদিন কথা বলতেছিলাম সেদিন নেগলার নাম না বলাতে রেগে গেছিলো কেনো?
এমন হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরতেছিলো! আমি কোন কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারতেছিলাম না। তবে উনার সাথে কথা না বলে কিছুই সিধান্ত নিতে পারবো না। কেননা,
কুরআনে আছে,
পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
-(৪২ঃ ১৩)💕
আমাকে এর গভীর পর্যন্ত যেতে হবে।
এমন সময় নাজিম বলে উঠলো,
নাজিম : ভাইয়া কিছু ভাবতেছিস?
অর্ণব : না কিছুনা।
নাজিম : তুই আর ম্যাডাম অতক্ষণ ধরে রুমে কি করতেছিলা?
(মারছে রে! আমি তো এই শয়তানটার কথা ভুলেই গেছিলাম। যদি বাড়িতে বলে দেয় তাহলে আব্বু-আম্মু উল্টা-পাল্টা ভাববে! এখনই বিষয়টাকে এর মাথা থেকে সরাইতে হবে)
অর্ণব : তোর পড়াশুনা কেমন চলতেছে এই ব্যাপারে কথা বলতেছিলাম।
নাজিম : আমার পড়াশুনার কথা বলতে এতক্ষণ লাগে?
(এমনি আমি একে বিচ্ছু বলি?!)
অর্ণব : হুম। তুই কেমন পড়তেছিস, আরো বেশি পড়তে হবে নাকি কম, বেশি পড়লে কতটুকু পড়তে হবে এগুলা। আবার তুই কিসে ভালো পারিস, তোর ভবিষ্যত নিয়েও কথা বলতেছিলাম। কোথায় গেলে তুই সুবিধা পাবি এগুলাই আরকি। এজন্যই দেরী হইলো।
নাজিম : হইছে পট্টি পড়াইতে হবে না। আমার ভবিষ্যত না নিজের ভবিষ্যত সেট করতেছিলা এইটা বুঝছি। আমাকে কি বাচ্চা মনে হয়?
(আমি তো নির্বাক!)
অর্ণব : কি…ই। তুই কি বলতে চাচ্ছিস।
নাজিম : ম্যাডামকে আমারো অনেক ভালো লাগে। আমাকে প্রচুর আদর করে! যদি সাহায্য লাগে আমাকে বলিস।
কথা শুনে তো আমি পুরাই হতবাক। আল্লাহ! এগুলা এ কি বলে? নাহ! আজকের যুগের বাচ্চারা অনেক দ্রুত আগাচ্ছে। আমাকে বলতেছে প্রেমে.….! ছিঃ ছিঃ। তওবা তওবা। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দান করুক।
অর্ণব : তুই খুব বাড় বাড়ছিস। ইসলামে এগুলা হারাম বুঝলি। বিয়ের পূর্বে মেয়ের চেহারা দেখলেও পাপ হয়। তুই এখন নাবালক,তাই তোর কোন পাপ হবে না। কিন্তু তুই যখন সবকিছু বুঝতে শিখবি, সাবালক হবি তখন পাপ হবে।কেননা,
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
“তিন শ্রেণীর মানুষ থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত, নাবালেগ বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ও পাগল ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত।”
-(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩০১৬)💕
বুঝলি?
নাজিম : বুঝছি ভাইয়া। আর হবে না।
অর্ণব : হুম এখন সোজা বাড়ি চল।
(আল্লাহ এ যেনো সবকিছু ভুলে যায়। নইলে আমি শেষ।)
বাসায় আসলাম। নাজিম কিছু বলেনি। আল্লাহ বাঁচাইছে। রাতের খাবার আর এশার নামাজ শেষ করে রুমে ঢুকবো এমন সময় বাবা কোথা থেকে এসে বললো,
রফিক সাহেব:- আমার বউ মা কোথায়?
নাহাজুল:- ১৫ দিন সময় নিয়েছি না! ইনশাল্লাহ এনে দিব।শুধু তো একদিনই হলো।
(আল্লাহ জানে কি যে হবে। আপনার বউমাকে তো পাইলাম। কিন্তু বউ হিসেবে পাবো কি না জানিনা। কত খুশি ছিলাম যে “উনা” -র অপেক্ষাটা শেষ হলো। কিন্তু আবার নতুন করে অপেক্ষা শুরু হলো। অপেক্ষাটা এবার বউ হিসেবে পাওয়ার!)
রফিক সাহেব:- ঠিক আছে। যায়ে ঘুমা।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
রফিক সাহেব : অলাইকুম আসসালাম।
রুমে গিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলাম। দেখলাম #ক্ষণিকের_মুসাফির পেজটিতে “গুণাহগার বান্দী” আইডি থেকে অনেক গুলা মেসেজ দিয়েছে।
তানহা :- আপনি কি ভাব নেন নাকি?
(“গুণাহগার বান্দী” আইডির মেয়েটার নাম তানহা।)
অর্ণব :- না ভাব নিব কেন। এমনি ব্যস্ত থাকি তাই কথা বলিনা তেমন।
তানহা :- নাম তো বলেননি আপনার , বাসা কোথায় এটাও বলবেন না নাকি?
অর্ণব :- আমার বাসা দিনাজপুর.. আপনার?
তানহা :- কি বলেন?! আমার বাসা রাজশাহীতে কিন্তু এখন দিনাজপুরেই আছি।
(এটা আমার বউ তানহার আইডি নাকি?)
অর্ণব : আপনার সম্পূর্ণ নাম বলুন তো!
তানহা :- তাসনিয়া ইসলাম তানহা। আপনার নামতো বলবেন না। আপনার গল্পগুলা সত্যিই অসাধারণ। ইসলামিক গল্পও এতো সুন্দর ও রোমাঞ্চকর হতে পারে তা না পড়লে জানতেই পারতাম না। তাই একজন ভালো বন্ধু হিসেবে বলতেছি।
(অন্য সময় হলে নিশ্চই অনেক খুশি হতাম। কিন্তু কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলার জন্য আমি অনেক দুঃচিন্তায় আছি। তবে নিজের বউয়ের মুখে নিজের গল্পের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে! মনে হচ্ছে আমার গল্প লিখা সার্থক। তবে তানহাকে আমার নাম বা পিকচার কিছু বলা যাবেনা। এটা গোপন থাকুক)
অর্ণব : এর জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমি আমার নাম বলিনা আর কাউকে ছবিও দেইনা। নিজেকে গোপন রাখতে ভালোবাসি।
তানহা :- নাম বললে কি এমন হবে?
অর্ণব :- আপনি আমার নাম,ছবি দিয়ে আমার পেজটা নষ্ট করে দিতে পারেন।
তানহা :- আমি এমন না, আর আমি ফেসবুক সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আপনি অযুহাত দেওয়ার আর জায়গা পান না। আর ভাইয়া আপনার ছবি কখন চাইলাম? আজব!
এইটা কি হলো? ভাইয়া বললো কেনো। এটা ঠিক না। ইসলামে স্ত্রীকে আপু বা স্বামীকে ভাইয়া বলে ডাকা নাজায়েজ করা হয়েছে। এটা কোনভাবেই করা যাবে না। এটা মাকরূহ। কেননা
হাদীস শরীফে এসেছে,
এক লোক তার স্ত্রীকে বোন বলে ডাকলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেয়ে তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেছেন।
-(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২০৪)💕
তানহা না জেনেশুনে পাপ করতেছে।
অর্ণব : আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবেন না দয়া করে।
তানহা : ভাইয়া ডাকলে সমস্যা কি? দেখুন আমি বিবাহিতা। আমার স্বামী আছে। ভাইয়া, আপনি যদি অন্য কিছু চিন্তা করে থাকেন তাহলে খুব খারাপ হবে। নাউজুবিল্লাহ। আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে। ছিঃ
অর্ণব : দয়া করে আমাকে ভাইয়া ডাকবেন না। সমস্যা আছে। আমিও একজন বন্ধু হিসেবেই থাকতে চাই। অন্যকিছু ভাবিও নি। কিন্তু ভাইয়া ডাকিয়েন না। শেষবারের মতো বলতেছি।
(সমস্যা আছে মানে? ভাইয়া ডাকলে আবার কি সমস্যা? ইসলামে একমাত্র স্বামীকে ভাইয়া ডাকা যায় না। তাহলে কি এটা অর্ণব?! আল্লাহ! যদি এটা অর্ণব হয় তাহলে তো…! আল্লাহ মাফ করুক।)
তানহা : আপনি কে? সত্যি কথা বলবেন না হলে খুব খারাপ হবে কিন্তু😡
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply