Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 15
তিতুমিরকে নিয়ে আমি একটু সাইডে গেলাম…..
অর্ণব : কি বলতে ডাকলেন?
তিতুমির আমার হাতটা ধরে,
তিতুমির : ধন্যবাদ তোকে।
অর্ণব : আরে এইটা কি করতেছেন বড় ভাই। আমাকে তো আপনাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আপনি ম্যাডামকে আসল ঘটনা না বললে আজকে আমাকে সম্ভবত কলেজ থেকেই বেড় করে দেওয়া হত।
তিতুমির : আর তুই যদি আসল ঘটনাটা বলে দিতি তাহলে আজকে আমি কলেজ ছাড়া হয়ে যেতাম।
অর্ণব : মানে?!
(হুম। আমার পরিকল্পনা কাজে আসছে। আমি পুরো ঘটনাটাতে সম্পূর্ণ দোষ নিজের ঘাড়ে নিছিলাম। একবারের জন্যও তিতুমিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি বা আমার কোন দোষ নাই এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করিনি। সবাই বিষয়টা নজরে না আনলেও তিতুমির বিষয়টা খেয়াল করছে। আমি এইটাই চাচ্ছিলাম। আমি চাইলেই ম্যাডামকে বলতে পারতাম সম্পূর্ণ ঘটনা আর প্রমাণও করতে পারতাম এখানে আমার কোন দোষ ছিলো না। কিন্তু আমি তা করেনি। আমি তিতুমিরের আবেগটাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছিলাম। অনেক সময় যে কাজ শক্তি দিয়ে হয়ে উঠে না তা আবেগকে ব্যবহার করে হয়ে যায়। ইংরেজিতে ইমোশনালি ব্লাকমেইল যাকে বলে। তিতুমিরের ক্ষেত্রে তা হয়েছে।)
তিতুমির : ম্যাডামকে আসল ঘটনাটা বলে দিলে তোর সাক্ষীরও অভাব হইতো না। ওখানে অনেকেই প্রথম থেকে পুরো ঘটনাটা দেখেছিলো। তাও তুই কিছু বলিস নি।
(আমি মুচকি হাসলাম)
তিতুমির : আমাদেরকে দুই মাস আগে কড়া নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। তুই বলে দিলে নির্ঘাত আমাদের বহিষ্কার করে দিতো। আর নেগলাকে উত্যক্ত করছি এটা জানতে পারলে ম্যাডাম যে কি করতো এটা ধারণার বাইরে। তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারতেছিনা।
হাতটা ছাঁড়িয়ে বললাম,
অর্ণব : ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমি সবকিছু নেগলার জন্য করছি। ও আমার বোনের মতো। আর আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক এটা আমি কখনোই চাই না। আপনার ক্যারিয়ার আছে, আপনাদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দিলে আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। আপনাদের বাবা-মায়ের এতো বছরের কষ্ট, ত্যাগ, আশা সব মাটি হয়ে যাবে। শুধু আপনাদের ভুলের জন্য ওদেরকে কষ্ট দিতে পারি না।
তিতুমির চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ পর বললো,
তিতুমির : তাই বলে নিজের ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে?
অর্ণব : হাহা। আমার কোন ধরনের ঝুঁকিই ছিলো না। অন্য একদিন এটা নিয়ে অনেক গল্প করবো। অনেক কথাও জানতে পারবেন। কিন্তু এখন না। তাহলে কি নেগলা এখন থেকে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে?
তিতুমির আবার আমার হাতটা ধরে,
তিতুমির : আজ থেকে তোর কাছে আমি ঋণী। আর নেগলার চিন্তা করতে হবে না। আমরা কেনো, এই শহরে ওকে কেউ উত্যক্ত করবে না এটা আমি কথা দিচ্ছি।
আর যেকোন সাহায্য লাগলে আমাকে বলিস। আমি আমার বেস্ট দিয়ে সাহায্য করবো ইনশাল্লাহ।
যদিও শেষের কথাটা শুনে হাসি পেলো তাই বললাম,
অর্ণব : ধন্যবাদ। ইনশাল্লাহ যদি লাগে তাহলে বলবো।
হাতটা ছেঁড়ে দিয়ে,
তিতুমির : আর হ্যাঁ সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
অর্ণব : আচ্ছা ম্যাডাম কিছু বলেনি আপনাকে।
তিতুমির : হুম বোকা দিছে। কিন্তু নিজে যায়ে সত্যিটা স্বীকার করছি তাই শেষ বারের মতো মাফ করে দিছে। আর হেড স্যারের সাথে আমার হয়ে কথা বলবে বলছে।
অর্ণব : ওহ! আর নামাজ পড়িয়েন ঠিক মতো। নামাজে আমার আর ম্যাডামের জন্য দোয়া করিয়েন। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেম,
“এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে।”
-(সুরা আনকাবুত -৪৫)💕
এ দুনিয়ায় ক্ষমতার দম্ভে খারাপ কাজ করে বেড়াতে পারবেন কারণ আল্লাহ আপনাকে ছেঁড়ে দিছেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে এর জন্য আফসোস করবেন। আর
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“মৃত ব্যক্তিরা এই বলে আর্তনাদ করবে আমাদের আরেকবার পৃথিবীতে পাঠান, আমি ভালো করে ইবাদত করে আসি।”
-(সূরা মুমিন-৯৯)💕
কিন্তু তখন আর কোন পথ থাকবে না। বুঝলেন?
তিতুমির : হুম। ইনশাল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো। ওহ যেটার জন্য আসছিলাম সেটাই তো ভুলে গেলাম।
অর্ণব : কি কাজ?
চেহারাটা মলিন করে,
তিতুমির : সুজার থাপ্পরের জন্য দুঃখিত। ওর হয়ে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আর পুরো ঘটনার জন্য। তোকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না এটা আমি কথা দিচ্ছি। পারলে আমাদের মাফ করে দিস। সত্যিই আমি অনুতপ্ত। এরকমটা আর হবে না।
অর্ণব : আরে কি বলেন। আমি তো ঐটা ভুলেই গেছি। আর আমি ঐদিনই আপনাদের সবাইকে মাফ করে দিছিলাম। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ ও জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।”
(সূরা আল আরাফ – ১৯৯)💕
আবার,
হাদিসে এসেছে,
“ক্ষমা করলে আল্লাহ তা’আলা বান্দার ইজ্জত সম্মান আরো বৃদ্ধি করে দেন।”
-(মুসলিম)💕
আমি রাগ বা তোমাদের ব্যাপারে খারাপ মানসিকতা কোনটাই পুষে রাখিনি। কেননা,
পবিত্র কুরআনে আছে,
“অন্তরে পরশ্রীকাতরতা পুষে রাখবেন না।”
-(০৪ঃ ৫৪)💕
সাথে সাথে তিতুমির আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
তিতুমির : আমি আজকে প্রথম কারো জন্য চোখের পানি ঝরাচ্ছি।
আসলেই ও কাঁদতেছিলো।
অর্ণব : আমার জন্য কাঁদে লাভ নেই। ইসলামের সুশীতল ছাঁয়ায় আপনি আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন যা আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে সফলতা দিবে।
আমাকে ছেঁড়ে দিয়ে,
তিতুমির : হুম।
(হ্যাঁ আমি জানবো। যে ইসলামের ছাঁয়ায় অর্ণব এতো ভালো চরিত্রের অধিকারী হয়েছে, এতোটা সংযত, এতটা উদার হৃদয়ের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে, যে ইসলামের বাণী সমূহ এতোটা বাস্তবধর্মী সে ইসলামে আরো কত কিছু না লুকায় আছে। আমাকে জানতে হবে, আমাকেও হতে হবে অর্ণবের মতো একজন প্রকৃত মুসলিম। আল্লাহকে শুকরিয়া যে অর্ণবের মতো একজনকে আমার জীবনে পাঠায় দেওয়ার জন্য। যার উছিলায় আমি আজ সঠিক পথের হদিস পেলাম।)
অর্ণব : ঠিক আছে তাহলে আমি গেলাম। ওরা দাঁড়ায় আছে। আসসালাম অলাইকুম।
তিতুমির : অলাইকুম আসসালাম।
তারপর আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। সেদিন নেগলাকে উত্যক্ত না করার জন্য বুঝানোর ফলে তিতুমিরের মনটা নরম হয়েছিলো। কিন্তু ওর বন্ধুগুলা আসে সব ভেস্তে দিছিলো। কিন্তু রেশটা ছিলো, যা এবারের ঘটনাটাতে ওর মানে গভীরভাবে প্রভাব ফেলতে সাহায্য করেছে। যার কারণে ছেলেটা বদলে গেছে। যাক পরিকল্পনাটা কাজে আসছে।
হাদিসে এসেছে,
“আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ ঘটান।”
-[মুসনাদে আহমদ]💕
যেটা ঘটেছে তিতুমিরের ক্ষেত্রে। আল্লাহ সকলকে হেদায়েত দান করুক।
দেখলাম মশিউররা দাঁড়ায় আছে। যায়ে ওদের সব কিছু বললাম।
বেলাল : হ্যাঁ আমারো বিষয়টা মাথায় আসছিলো যে তুই ম্যাডামকে সত্যি কথা বলিস নি কেন! এক বার চেষ্টাও করিস নি। এবার বুঝলাম কেনো।
রিপন : তাই বলে সুজাকে মাফ করে দিলি কেনো? ও সবার সামনে তোকে থাপ্পড় মারছে। এটা হবে না। এত সহজে ছাড়বো না।
অর্ণব : দেখ মাফ করে দে। রাগ করতে তোকে আগেও মানা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন।”
-(০৩ঃ১৩৪)💕
আর কাউকে মাফ করে দিলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও মাফ করে দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তাদের মাফ করে দেওয়া উচিৎ এবং তাদের দোষ না ধরা উচিৎ। তোমরা কি চাও না, আল্লাহ তোমাদের মাফ করুক। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।”
-(সুরা : আন-নূর, আয়াত : ২২)💕
বুঝলি?
রিপন : হুম বুঝলাম।
নেহা : এটাতো আব্দুর কাদের জিলানীর ছোট বেলার ঘটনার মতো!
বেলাল : ইনি আবার কে হন?
নেহা : আব্দুল কাদের জিলানী ইসলামের অন্যতম প্রচারক ও বিজ্ঞ পন্ডিত ছিলেন।
মশিউর : হুম মনে পড়ছে। আব্দুল কাদের জিলানী ছোটবেলায় যখন বাগদাদে যাচ্ছিলেন তখন একদল ডাকাত ওদের আক্রমণ করে। উনার মা স্বর্ণমুদ্রা ফতুয়ার নিচে সেলাই করে দেওয়ায় ডাকাত দল তা পাই নি। ডাকাত সর্দার উনাকে সাথে কিছু আছে কি না তা জিজ্ঞাসা করলে উনি সত্যিটা বলে দেয়। স্বর্ণমুদ্রাগুলা হাতে পেয়ে ডাকাত সর্দার অবাক হয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করে কেনো সত্য বললো, চাইলে তো মিথ্যা বলে স্বর্ণমুদ্রাগুলো বাঁচাতে পারতো। তখন আব্দুর কাদের জিলানী বলে,
“আমার মা যত বড় বিপদই আসুক তাও মিথ্যা কথা বলতে মানা করেছিলেন।”
নেহা : হুম। তারপর আব্দুর কাদের জিলানীর সত্যবাদিতায় মুগ্ধ হয়ে পুরো ডাকাত দল ভালো হয়ে যায়।
এখলাস : হ্যাঁ। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ব্যাপারটা একই ঘটছে।
অর্ণব : হুম। আমি একটু শুধু চেষ্টা করেছি। বাকিটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিছিলাম। আমার কাজ চেষ্টা করা বাকিটা আল্লাহর উপর। এজন্যই তো আমাদের দয়ার নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“(হে মুহাম্মদ), তোমার কাজ শুধু আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া, আর বাকি হিসাবনিকাশ তো আমার কাজ।”
-[সূরা জ্বাছিয়াহ : আয়াত ১৪]💕
মশিউর : হুম ঠিক বলছিস। এখন সবাই ক্লাশে চল। আমরা যে একটা ক্লাশ মিস করলাম এটা তোদের খেয়াল আছে?
আমরা সবাই অবাক। আসলেই তো! এসবের মধ্যে আমরা ভুলেই গেছিলাম ক্লাস করার কথা। সবাই একসাথে দৌড় দিলাম।
সন্ধ্যার নামাজ পড়ার পর হৃদয় আমার খুব ভালো বন্ধু কল দিলো। কল ধরতেই,
হৃদয় : তাড়াতাড়ি “জিলা স্কুল” -এর পিছনে আয়।
(চলবে…)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply