অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 16

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 16

সন্ধ্যার নামাজ পড়ার পর হৃদয় আমার খুব ভালো বন্ধু কল দিলো। কল ধরতেই,
হৃদয় : তাড়াতাড়ি “জিলা স্কুল” -এর পিছনে আয়।

অর্ণব : আসসালাম ওলাইকুম। এই তুই সালাম দিলিনা কেন? জানিস না সালামের কত ফযিলত।

হাদিসে এসেছে,

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলেয়ে দেব যা করলে, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর।”
-[মুসলিম]💕

বুঝলি?

হৃদয় : অলাইকুম আসসলাম। মাফ করে দে ভাই। ভুল হয়ে গেছে।

অর্ণব : বেটা ভালো হয়ে যা। এখনো সময় আছে। হাহা।

হৃদয় : তুই তো দেখতেছি এখনো কথায় কথায় জ্ঞান ঝাড়িস। এখনো শুধরাইলি না।

অর্ণব : তোদের কাছে তো এগুলা ভালো লাগবে না এইটা জানি। তোরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বেড় করে দিস। তাও যদি আল্লাহ তোদের হেদায়াত দেয়।

হৃদয় : আচ্ছা কথা বাড়াইস না জলদি আয়।

কি জন্য এটা জানতে চাওয়ার আগেই কল কাটে দিলো। আজকে নাজিম তানহার কাছে পড়তে যায় নি। এজন্য খারাপ লাগতেছিলো আর নাজিমের প্রতি মেজাজটাও গরম হচ্ছিলো। তানহা তো বোধহয় আমাকে একা ঢুকতেই দিবে না। এগুলা ভাবতে ভাবতে জিলা স্কুলের দিকে যাচ্ছি।

জিলা স্কুলের পিছনে যায়ে আমি অবাক! আমার পুরোনো বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে আর সেদিন যারা কলেজে আমাকে মারার জন্য তিতুমিরের সাথে ছিলো, সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়ায় আছে।

বন্ধুদেরকে উদ্দেশ্য করে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। কিরে তোরা এখানে? কেমন আছিস সবাই?

জুবায়ের : অলাইকুম আসসালাম। কি রে তোর তো কোন খবরই পাওয়া যায় না। আমাদেরকে তো ভুলেই গেছিস!

অর্ণব : পাগল হইছিস। তোদেরকে ভুলা যায়? তোরাই তো ব্যস্ত মানুষ। একেক জন বউ,ব্যবসা,চাকরি, কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকিস। আর আমাকে বলতেছিস আমি ব্যস্ত?

সবাই হেসে উঠলো। জীবন তারপর সবার খোঁজ-খবর,ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করার পর,
অর্ণব : এদেরকে কেন ধরে আনছিস?

প্রবাল : এরা বেলে তোকে মারার চেষ্টা করছিলো? থাপ্পড়ও বেলে মারছে।

অর্ণব : তোরা কিভাবে জানলি?

জুবায়ের : আমাদের শহরে তোকে মারবে আর আমরা খবর পাবো না? আমার তো শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। এখন পর্যন্ত এদের কিছু করেনি এটাই যা। তোর অপেক্ষা করতেছিলাম।

তিতুমিররা কলেজের বড় ভাই হতে পারে, কিন্তু জুবায়ের আর প্রবালরা আমাদের এই শহরের বড় ভাই। রাজনীতির সাথে জড়িত বলে ক্ষমতাও অনেক। আর বড় কথা আমার অনেক ভালো বন্ধু। তিতুমিরদের দিকে তাকায় দেখলাম ভয়ে চুপসে গেছে সবগুলা।

অর্ণব : আরে বাচ্চা মানুষ ভুল করছে। না জানেশুনে করছে মাফ করে দে।

পবিত্র কুরআনে আছে,

“অন্যকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা করুন।”
-(০৭ঃ ১৯৯)💕

অন্য এক আয়াতে,

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“‘আমি আসমান ও জমিনকে এবং এ দুটির মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুই হক ছাড়া আর কোনো ভিত্তিতে সৃষ্টি করিনি ফয়সালার সময় অবশ্যই আসবে, তাই (হে নবী!) আপনি তাদের ভদ্রভাবে মাফ করে দিন।”
-(সুরা : আল-হিজর, আয়াত : ৮৫)💕

তাই যাইতে ওদেরকে।

কাওসার : না। তুই এখনো বদলাইলি না। আর নিজে যে দুই মাস আগে এদের মারছিলি ঐটা কি ছিলো?

অর্ণব : ঐ খবরও পাইছিলি। আরে ঐটাতো এরা একটা ভালো ছেলেকে র‍্যাগ দিছিলো।

অন্য এক হাদিসে এসেছে,

“হজরত আয়শা (রা.) নবীজি (সা.)-এর ক্ষমাগুণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি কখনো নিজের ব্যাপারে কারো থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি । তবে আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর বিধিবিধানের অবমাননা করা হলে তিনি সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।”
-(সহিহুল বুখারি)💕

তাও তো আমি বুঝানোর জন্য গেছিলাম। ওরাই মারাপিট শুরু করছিলো। এ বিষয়ে

পবিত্র কুরআনে আছে,

“কেবল তাদের সাথেই লড়াই করুন, যারা আপনার সাথে লড়াই করে।”
-(০২ঃ ১৯০)💕

বুঝলি?

জুবায়ের : হুম। আমি তো এদেরকে তখনই শিক্ষা দিতে চাইছিলাম। তুই নিজেই মিটমাট করে নিছিলি বলে আমি আর গুরুত্ব দেয় নি।

প্রবাল : এই তোরা যা। আর হ্যাঁ পরের বার যদি এরকম হয় তাহলে তো বুঝতেই পারতেছিস। হাড্ডি একটাও আস্ত থাকবে না।

সুজা : ভাই আমরা একদম জানতাম না অর্ণব ভাইয়া আপনাদের বন্ধু। যদি একবার বলতো তাহলে আমরা উনার সামনেও আসতাম না। এরকমটা আর কোনদিনও ভুল করেও হবে না।

এদের মুখে “ভাইয়া” কথাটা শুনে আমার হাসি পাইলো। বললাম,
অর্ণব : এর পর থেকে কাউকে র‍্যাগ দিবি না আর তোরা থাকতে কলেজ ক্যম্পাসে কোন মেয়ে যেন উত্যক্ত না হয় এটা কথা দে! আর আজকে থেকে ভালো হয়ে যাবি। তোদের ব্যাপারে কোন ধরনের নালিশ বা খারাপ কিছু যেন না শুনি।

রিফাত : জি ভাই। কথা দিলাম। আর আজকে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। ইনশাল্লাহ।

অর্ণব : যা। আর এখানকার কথা যেনো কোনভাবে বাইরে না যায়। বিশেষ করে আমার কথা। গেলে তোদের ধরবো। আমার সাথে কলেজে আমি জুনিয়র হিসেবেই কথা বলবি।

তিতুমির : ঠিক আছে ভাই। আসসালাম অলাইকুম

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

ওরা চলে যাওয়ার পর আমার বন্ধুদের সাথে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম। পুরানা বন্ধুরা অনেকদিন পর একসাথে হলে যা হয় আরকি। কথায় কথায় তানহার কথা উঠলো।
অর্ণব : হুম। “আজম আবাস” -এ ভাড়া থাকে। তোদের ভাবীকে একটু দেখেশুনে রাখিস। মানে লক্ষ্য রাখিস। একাই থাকে তো। কেউ যেন উত্যক্ত না করে।

প্রবাল : বলছিস মানে হয়ে গেছে। ভাবী আজকে থেকে ঐ বাড়িতে নিরাপদ। তবে আজকে ট্রিট দিতে হবে।

সবাইকে ট্রিট দিয়ে বাড়ি ফিরার সময় দেখি তিতুমিররা রাস্তায় দাঁড়ায় আছে।

ওদের কাছে যাওয়ার সাথে সাথে সুজা আসে বললো,
সুজা : ভাই আমি জানতাম না জুবায়ের ভাইদের বন্ধু তুমি। থাপ্পড় মারার জন্য দুঃখিত। প্লিজ মাফ করে দেন। এরকমটা আর কখনো হবে না। কথা দিলাম। আপনি শুধু একবার বলতেন যে আপনি ওদের বন্ধু তাহলেই আমরা নিজে আসে নেগলার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতাম।

আমি মুচকি হাসলাম,
অর্ণব : আরে আমি তো তখনই মাফ করে দিছিলাম। আমি যদি তখনই বলে দিতাম তাহলে তোমাদের নৈতিক শিক্ষাটা হইতো না। এজন্যই

পবিত্র কুরআনে আছে,

“মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করুন হিকমা ও উত্তমভাবে।”
-(১৬ঃ ১২৫)💕

আমি চাইলে মারামারি করে বা জুবায়েরদের দ্বারা তোমাদের শিক্ষা দিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করে নি। আমি চাচ্ছিলাম আল্লাহর রহমতে তোমরা নিজে থেকে ভালো হও। এজন্যই তো নবীজিকে উদ্দেশ্য করে,

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।”
-(সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯)💕

আল্লাহর উপর ভরসা করে উনার উপর বাকিটা ছেড়ে দিছিলাম। দেখো আজকে তোমরা আল্লাহর রহমতে কতটা হেদায়েতপ্রাপ্ত! বুঝলা?

রিফাত : হুম বুঝছি। একটা জিনিস খটকা লাগতেছে। আপনার সাথে জুবায়ের ভাইদের বন্ধুত্ব কিভাবে? নাকি আমি যেটা ভাবতেছি সেটা ঠিক!

আমি মুচকি হাসলাম,
অর্ণব : তিতুমিরকে বলছি যে একদিন অনেক গল্প করবো। তোমরাও আসিও। সেদিন অনেক কিছুই বলবো। যা শুনে অবাক হয়ে যাবা। তবে এখন না। পরে দেখা হবে। এখান যাই।

সবাই বলল,”ঠিক আছে। সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।”

তিতুমির : আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।সবাই ভালো থেকো আর হ্যাঁ গোপন রাখিও কিন্তু। কেউ যেন না জানতে পারে।

বাড়ির দিকে হাটা দিলাম এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বেড় করে দেখলাম হেড স্যার ফোন দিছে। ম্যাডাম চলে যাওয়ার জন্য গালি দিবে নাকি আবার?

ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম স্যার!

স্যার : অলাইকুম আসসালাম। তোমার ম্যাডাম আমাকে সব কিছু বলছে। তুমি যে মারামারি করোনি তাই তোমার কাজে আমি সত্যিই খুশি হয়েছি। নেগলার উচিৎ ছিলো বিষয়টা আমাকে জানানো।

অর্ণব : যেহেতু তিতুমির কলেজের বড় ভাই হয় তাই আপনাকে বললে কোন কাজ হবে নাকি তা নিয়ে ওর সন্দেহ ছিলো। প্রমাণ না ছাড়া তো আপনারা কিছু করতে পারতেন না।

স্যার : হুম তাও ঠিক। তিতুমিরকে কি শেষ বারের মতো মাফ করবো?

অর্ণব : জি স্যার। ওরা এখন থেকে আর খারাপ কাজ করবে না। ওরা ভালো হয়ে গেছে।

স্যার : হুম। তোমার আর ম্যাডামের কথায় আমি ওদের শেষ বারের মতো মাফ করলাম।কলেজের সেদিনের ঘটনাটার জন্য আমি দুঃখিত। আমার কলেজে তোমার সাথে এরকমটা ঘটে গেছে এটা আমি জানতেও পারিনি। তাই তোমার হয়ে ম্যাডামের ট্রান্সফারের জন্য আমি সুপারিশ করছিলাম এজন্যই উনার ট্রান্সফারটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। এখন সবাই খুশি।

অর্ণব : জি স্যার। আর স্যার আব্বু যেন ঘটনাটা না জানতে পারে৷ আসসালাম অলাইকুম।

স্যার : ঠিক আছে। অলাইকুম আসসালাম।

কলটা কাটে রিপনকে কল করে বলে দিলাম কালকে কলেজে দুই মাস আগের ঘটনাটা বলবো আর বাকি সবাইকে বললাম কালকে রিপনের জানা সেই গোপন কথা বলবো সবাই যেন আসে, নেগলাকে বললাম কালকে একটা রোমাঞ্চকর ঘটনা বলবো।তারপর বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।

পরের দিন,
সবাই মিলে কলেজ মাঠের একপাশে বসলাম….

(চলবে….)

মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝

[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞


Comments

One response to “অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 16”

  1. […] 11 Chapter 12 Chapter 13 Chapter 14 Chapter 15 Chapter 16 Chapter 17 Chapter 18 Chapter 19 Post navigation […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *