Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 18
পুরো দিন রাজিবকে নিয়ে তন্ন তন্ন করে মেয়েটাকে খুজছি। কিন্তু সেদিন আর পরের দিন মানে সপ্তম দিনেও ” উনা” -র কোন খোঁজ পেলাম না।
তবুও ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা রাখছি। কেননা
হাদিসে এসেছে,
“তোমাদের কেউ দুয়া করলে তার জবাব ততক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হতে থাকে যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে, আমি দুয়া করেছি কিন্তু কবুল হয় না।”
-(সহীহ বুখারী, ৬৩৪০ ও সহীহ মুসলিম, ৭১১০)💕
অন্যদিকে আব্বু জোর দিচ্ছে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কোনমতে উল্টা-পাল্টা বুঝায় আরো একদিন সময় নিলাম।
শেষ দিন আমি একটু ভোরেই বেড় হলাম। পদ্মার পাড়ে হাঁটতেছি। বাতাসটাও দারুণ করতেছে। অনেকে বুজুর্গই সকালের স্বাস্থ্যকর বাতাস খেতে বেড় হয়েছেন।
আজকে একটু খারাপ লাগতেছে। কারণ আজকেই শেষ দিন। কালকেই আমি চলে যাবো। পদ্মার পাড়ের এই দৃশ্যকে খুব মিস করবো। বিশেষ করে সকালের পরিবেশটা। ভাবতেছি আর কয়েক দিনে আমার প্রিয় হয়ে যাওয়া পাহাড়ের মতো উঁচু ঢিবিটাতে উঠতেছি।
ঢিবিটাতে উঠেই চারদিকে দেখলাম। এখান থেকে তো চারপাশের দৃশ্য আরো সুন্দর লাগে। মনে হচ্ছে কোন শিল্পীর আঁকা শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম। হ্যাঁ এটা শিল্পীরই তৈরী করা শিল্পকর্ম। আর সেই মহান কারিগর হলেন হলেন সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। এখানে ঘুরতে না আসলে আল্লাহর এই সুন্দর সৃষ্টি অদেখাই থেকে যাইতো। এজন্যই তো,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।”
-(সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০)💕
আমি সকালের বাতাসটাকে উপভোগ করতেছিলাম আর চারপাশটা দেখতেছিলাম। হঠাৎ থমকে গেলাম। আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেলো। আমার ভয় করতে শুরু করলো। কিসের যে ভয় ছিলো সেটা, তা আজও বুঝতে পারলাম না।
একটু দূরে চারটা মেয়ে কাঁশবনের পাশে বসে গল্প করতেছে।
আমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে নেমে কাঁশবনের কাছে গেলাম। আজকে চার জনেই বোরখা পড়ে আছে। তবে মুখ না দেখেই দুই জনকে চিনছি।ওরা আজকেও শুধু হিজাব পড়ছে। যদিও সেদিনও মুখ দেখিনি কিন্তু এরাই তারা। অন্যজনও মুখ খোলা রাখছে। এটাই বোধহয় সেদিন যে বোরখা পড়ে আসে নি। কিন্তু চতুর্থ জন! হ্যাঁ সেই একই রকম পোষাক। সম্পুর্ণ শরীর ঢাকা। এক পায়ে নুপুর। হ্যাঁ বাম পায়ে। আর সেই মায়বী দুই চোখ, যা আমি কখনো ভুলবো না। এটাই তো “উনি”। যাক আল্লাহ তাহলে আমার দোয়া কবুল করছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযিক দিয়েছি তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহ্র জন্য শোকর করো যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।”
-[সূরা বাকারা; ২ : ১৭২]💕
আমি রাজিবকে কল দিলাম। যাতে ও তাড়াতাড়ি চলে আসে। আজকে “উনা”-র বাড়ি দেখতেই হবে। মানে ঠিকানা নিতে হবে। তারপর আবার উঁচু ঢিবিটার উপর উঠলাম। সেখান থেকে তাদের উপর ভালো মতো নজরও রাখা যাবে আর ওরা সন্দেহও করবে না।
নদীটার দিকে তাকায় অনেক কিছুই ভাবলাম। তারপর সবকিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে ইনিই হবেন আমার বউ। কয়েকদিনের মধ্যেই আব্বুকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।আমি সবসময় চেয়েছিলাম উনার মতো প্রকৃত দ্বীনদার আর পর্দাশীল। শুধু সমস্যা উনার পরিবার মানবে কি না। একটা দুঃচিন্তা থাকেই গেলো।
ওদের দিকে লক্ষ্য রাখতেছিলাম আর নদীতে জেলেদের মাছ ধরা দেখতেছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনলাম। আমি নিশ্চিত এটা “উনা”-র চিৎকার ছিলো। ঢিবিটা কাঁশবন থেকে একটু দূরে। তাই আমি ওদের দেখতে পেলেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম না।
আমি সাথে সাথে কাঁশবন দিকে মুখ করে খুব জোড়ে দৌড় দিলাম। আমার খেয়ালই ছিলোনা আমি ঢিবি থেকে নামতেছি। যা বিপদজনক হতে পারে। কিন্তু আমি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ওদের দিকে দৌড়াচ্ছি আর ভাবতেছি চিৎকারটা কি জন্য দিতে পারে! নিরাপদে ঢিবি থেকে নামলেও সামনে একটা গর্তে উস্টা খেলাম। কিন্তু আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায় আবার দৌড়।
আমার মাথায় তখন একটা জিনিসই কাজ করতেছিলো কোন বড় বিপদ না তো! নাকি সাপ বা সেরকম কিছু। নদী এলাকা তাই সাপের সম্ভাবনা বেশি। তাই মনে মনে দোয়া করতেছি যাতে উনার কিছু না হয় আর প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি।
কিন্তু যখন উনাদের কাছে গেলাম তখন যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। এটা দেখার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
“কি হয়েছে আপনাদের? কোন সমস্যা?” হাঁপাতে হাঁপাতে এটা বলতেই “উনি” আমার দিকে ঘুরলো।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আর উনি আমার দিকে। আর উনার নিকাব গায়েব!
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। কেউ এতটা সুন্দর হতে পারে এটা আমার কল্পনারও বাইরে। আমি তো চোখ বড় বড় করে দেখতেছিলাম আর হাঁপাচ্ছিলাম।
আর উনি আমার থেকেও বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায় আছেন, মনে হচ্ছে আমাকে পাইলে আস্ত চুলায় ঢুকায় দিবেন। আমি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারতেছিলাম না।
আসলে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ছিলো এরকম। উনার একটা বান্ধবী দুষ্টামি করে উনার নিকাব টান মারে খুলে দৌড়ে পালাইছে। আর উনি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠছিলেন। আর সেই চিৎকার শুনে আমি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঢিবিটা দৌড়ায় নামলাম তাও আবার ফুল স্পিডে! আর একবার উস্টা খাইলাম, শরীরের সম্পুর্ণ ক্যালরি শেষ করে, উলটা পালটা চিন্তাভাবনা করে ঝড়ের বেগে আসলাম। তাও আবার এমন সময় যখন উনি নিকাব নিতে ব্যস্ত।
উনাকে দেখে আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম। আমি হাঁপাচ্ছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য আমার ক্লান্তি দূর হয়ে গেছিলো। উনার বান্ধবী কাকে যেন ডাকলো “তাসনিয়া” বলে কিন্তু আমি এতোটাই ঘোরের মধ্যে ছিলাম যে কাকে ডাকলো আর কে উত্তর দিলো আমি বুঝতেই পারিনি।
(হ্যাঁ এটাই আমার তাসনিয়া ইসলাম তানহা!)
ঘোর কাটলো “উনা”-র কথায়।
তানহা : এই যে মিস্টার। আপনি এখানে কেনো?
বাস্তবে ফিরতেই দেখলাম তানহা নিকাব পড়ে নিছে। কখন যে পড়লো বুঝতে পারলাম না।
অর্ণব : জি ম্যাডাম। আপনি চিৎকার করে উঠলেন তাই বাঁচাতে আসলাম। মানে কোন বিপদে পড়ছেন নাকি তার জন্য।
তানহা : বৃদ্ধ মানুষ বা কোন লোক সাহায্য চাইলেও তো আপনারা আসেন না। আর মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে আসছেন।
কথাগুলা শুনে তো মাথাটাই খারাপ হয়ে গেলো। আমি কি জন্য আসছিলাম আর ইনি কি ভাবতেছেন। এতো বড় অপমান! আমাকে কি ভাবছে? আমার কাজকর্ম নাই যে মেয়ের পিছনে ঘুরবো? আমার তো উনার সাথে কথা বলার ইচ্ছাটাও মরে গেছিলো। তবুও অপমানটা সহ্য করে শান্ত হয়ে বললাম,
অর্ণব : জি আপনার অসুবিধার জন্য আমি দুঃখিত। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। আসসালাম অলাইকুম।
বলে চলে আসলাম। কেননা,
পবিত্র কুরআনে আছে,
“লোকদের সাথে ধীরস্থির হয়ে শান্তভাবে কথা বলুন।”
-(২০ঃ ৪৪)💕
দোষ না করেও ক্ষমা চাইলাম। এতোটাই মাথা গরম ছিলো যে সালামের উত্তর দিছে নাকি তাও শুনিনি।
রাজিবকে কল দেওয়ার জন্য ফোনটা বেড় করলাম। বেড় করে দেখলাম রাজিবের নয়টা মিস কল।এই ঝামেলার মধ্যে পকেটে ফোন বাজতেছিলো বুঝতেই পারলাম। তাড়াতাড়ি রাজিবকে কল দিয়ে নদী পাড়ের সানটার ওখানে ডাকলাম।
রাজিব : কি রে ভাবী কই? চল আজকে তৈরী হয়ে আসছি। ভাবীর বাড়ি দেখেই আজকে নিজেদের বাড়ি যাব।
অর্ণব : ধুর তোর ভাবী। বাদ দে।
তারপর সবকিছু খুলে বললাম।
রাজিব : তুই ভাবীকে বিনা নিকাবে দেখছিস তে রাগতো হবেই। তা এখন কি করবি?
অর্ণব : আচ্ছা বাদ দে। চল আজকে তো আমি চলে যাবো দুজনে নৌকায় উঠি।
তারপর নৌকা ভাড়া করে আমরা প্রচুর গল্প করলাম। যদিও মেয়েটা মুডটা নষ্ট করে দিলো তবুও রাজিবের জন্য ওগুলা ভুলে যায়ে মনটাকে ফ্রেশ করলাম। অহেতুক মানুষের জন্য নিজের দিনটা কেনো খারাপ করবো। তার উপর রাজিবকেও সময় দিতে হবে৷ রাজিব আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই সময় যে কিভাবে চলে গেলো বুঝতেও পারলাম না। আর রাজিব একজন খুব ভালো পার্টনার, আমাকে বুঝে তাই আমার মন ভালো করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি।
“উনা”-র ব্যবহারটা আমার আত্মসম্মানে লাগছে। আর উনি অনেক সুন্দর। নিশ্চিতভাবে আমার থেকে ভালো কাউকে পাওয়ার দাবী রাখেন। আর সুন্দরী মেয়েরা সচরাচর সিঙ্গেল হয় না। তাদের পিছনে তো ছেলেদের লাইন থাকে। আমি যদি এখন প্রস্তাব নিয়ে যাই উনি ভাববেন আমি উনার চেহারার সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে প্রস্তাব নিয়ে গেছি। আসলে তো তা কখনোই না। কিন্তু উনাকে কে বুঝাবে। উনার কাছে আরেকবার অপমানিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সেদিনই বাসের টিকেট কাটলাম। দুপুরে বাস ছাঁড়বে। দুপুরের কিছুক্ষণ আগে রাজিবের পরিবারকে বিদায় দিয়ে বেড় হলাম। রাজিব আমাকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আগায় দিলো।
রাজিব : তাই বলে এত ভালো মেয়েটাকে হাতছাড়া করবি?
অর্ণব : ওর মতো কত মেয়ে পাওয়া যাবে। আমার আমার কোন ইচ্ছা নাই ওর মতো অহংকারী মেয়েকে বিয়ে করার।
রাজিব : এখানে অহংকারের কি দেখলি? মেয়েটার চেহারা দেখছিস তার মানে জানিস? মেয়েটার ব্যাপারে যা শুনছি তার থেকে এটাই বুঝলাম মেয়েটা কঠোরভাবে পর্দা করে। ওর কাছে এটা কোনভাবেই একটা সাধারণ ব্যাপার না। তাই বাধ্য হয়ে তোকে অপমান করছে। আর এখানে অপমানের কি হলো। শুধু তো তিনটা মেয়ে ছিলো। যারা তোকে চিনেও না।
অর্ণব : “তিনটা মেয়ে” তোর কাছে শুধু? তিনটা মেয়ে মানে একটা না দুইটা না তিন তিনটা মেয়ে। আর ওদের সামনে অপমান। তোকে করলে বুঝতি।
রাজিব : তুই তো মেয়েটাকে পছন্দ করতি। মাফ করে দেনা। আর তুইও তো পাপ করছিস মেয়েটাকে দেখে। আর তোকে অতক্ষণ ধরে দেখে থাকতে কে বলছিলো?
অর্ণব : আচ্ছা তুই কার পক্ষে?
রাজিব : আমি তোদের বিয়ের পক্ষে😁
অর্ণব : ঐ সুন্দরী তার উপর আবার অহংকারী মেয়েকে জীবনেও বিয়ে করবো না। Never ever!
রাজিব : ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে। কি করবি করিস। যদিও চলেই তো যাচ্ছিস, আর সম্ভবও না। আর হ্যাঁ আল্লাহর কাছে মাফ চায় নিস। বাস স্ট্যান্ড চলে আসছে।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। ভালো থাকিস। মেয়েটার কথা মনে করায় মেজাজ খারাপ করে দিলি। পরে ফোনে তোর সাথে কথা বলবো।
রাজিব : হাহা। বাড়িতে পৌছায় ফোন দিস। অলাওকুম আসসালাম।
আমি বাসে উঠলাম।…
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply