অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 19

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 19

আমি বাসে উঠলাম। বাসে দুইটা সারি। একটা সারিতে তিনটা করে সিট আর আরেকটা সারিতে দুইটা করে সিট। আমার সিট পড়ছে দুইটা করে সিট আছে ঐ সারিতে!

যাক বাবা বাঁচা গেল আমার সিট জানালার ধারেই পড়ছে। এক কথায় পুরো সফরটা অসাধারণ যাবে। আমি আমার ব্যাগ গুছায় রাখে নিচে নামলাম। বাস ছাড়তে এখনো অনেক বাকি।

বাস থেকে নামতেই একটা দৃশ্য দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দেখলাম তানহার মতো একটা মেয়ে আসতেছে। তানহার মতো না, এটা তানহাই। সম্পুর্ণ শরীর ঢাকা। শুধু চোখ দুইটা খোলা। এই চোখ জোড়া তো আমি কখনোই ভুলবো না। বাম পায়ে নুপুর। এখন ওকে দেখে মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। একটু টেনশনও শুরু হয়ে গেলো, যদি আবার এই বাসে উঠে। তাহলে মেজাজটা আরো বিগড়ে যাবে। ওকে আর সহ্য করতে পারবো না। যে অপমানটা ও করছে আমাকে। কিন্তু দেখে ভালো লাগলো যে ও পাশের বাসটাতে উঠলো।

আবার মনটা ভালো হয়ে গেলো। ফুরফুরে মেজাজে পাশের দোকান থেকে নাস্তা কিনলাম, রাস্তায় খিদা লাগবে। রাজিবরা একদম পেট ভর্তি করে খাওয়ায় তারপর আসতে দিছে। উফফ!

লাইব্রেরিতে ঢুকলাম বই কিনার জন্য। আমি আবার সফর করার সময় বই পড়ি। একটা বই কিনলাম, বইয়ের নাম “Christ in Islam” । আহমেদ দীদাতের লেখা একটা অসাধারণ বই। যাক আজকে সফরটা বইটা পড়তে পড়তে ভালোই কাটবে।

বইটা কিনে লাইব্রেরি থেকে বেড় হলাম। এখনই বাস ছেঁড়ে দিবে। আমি বাসের হ্যান্ডেল ধরে কোনমতে উঠলাম তাতেই বাসটা একটু একটু করে আগাতে শুরু করলো। হেল্পার এখনো নিচে যাত্রী জোগাড় করতে ব্যস্ত। এমন সময় দেখলাম তানহা এই বাসটার দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসতেছে। বুঝলাম বোকাটা ভুল বাসে উঠছিলো। বাসটা ছাড়েও দিছিলো। ভালোই হইতো, ওর একটা শিক্ষা হইতো। কিভাবে বুঝতে পারলো যে ও ভুল বাসে উঠছে? যদি মাঝ রাস্তায় যায়ে বুঝতে পারতো? তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না। কিন্তু ভাগ্য খারাপ এখানেই বুঝতে পারছে বা কারো কাছ থেকে জানতে পারছে। মেয়েটার বর যে কি পাপ করছিলো যে এই হ্যান্ডেলকে(বোকা) জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পাবে আল্লাহ জানে! কি ব্যাপার আবার ও এই বাসের উদ্দেশ্যে দৌড়াচ্ছে না তো? আমি এক দৃষ্টিতে দেখে আছি।

হেল্পার তখনো ওকে দেখতে পায়নি। আমি তানহাকে দেখে আছি কিন্তু কাউকে কিছু বলি নি। আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম অন্ততপক্ষে এই বাসে যেন তানহা না উঠে। নইলে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে যাবে। তাই হেল্পারকে তানহার কথা বলে তানহাকে সাহায্য করার কোন প্রশ্নই উঠে না। আমি মুখে বিরক্তির রেখা নিয়ে তাকায় আছি। তানহা যত কাছাকাছি আসতেছে তত মনে হচ্ছে ও এই বাসটার দিকেই দৌড়াচ্ছে। আর মেজাজ তত গরম হচ্ছে। ওর হাতে শুধু একটা ছোট ব্যাগ।

এতক্ষণে হেল্পারও তানহাকে দেখতে পাইছে। তানহা আসেই আমার উপর রাগ ঝাড়লো।
তানহা : Excuse me আপনি কি কোনদিন মেয়ে দেখেন নি?😡

অর্ণব : জি আমায় বলছেন?

তানহা : হুম আপনাকেই বলছি।

অর্ণব : হুম দেখেছি তো কালকেই তো আপনাকে দেখলাম, কিন্তু এসব আমায় কেন বলছেন?

তানহা : আপনি আমার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে ছিলেন, একটু হেল্পারকে বা ড্রাইভারকে বলতে পারেন নি আমার কথা?

আমি তো চাচ্ছিলাম আপনি যেনো না উঠেন এই গাড়িতে। কিন্তু কি আর বলবো আমার ভাগ্যটাই খারাপ।

তানহা : কি ভাবছেন,নাকি বোবা হয়ে গেলেন?

অর্ণব : কো…ই..না..তো! কালকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিলাম তাতে আমার উপর যে চটছিলেন। তাই আজকে আর সাহস হয় নি।

তানহা : ফাযলামি করেন?😡.. Do u hv any idea how fast i ran whole way?

যদিও বুঝলাম তাও বললাম,
অর্ণব : ইংরেজি বুঝি না। বাংলায় বলেন। ১৯৫২ সালে সালামরা ইংরেজিতে কথা বলার জন্য জীবন দিয়েছিলো?

তানহা : You are really a headache.

অর্ণব : বাংলায় বলেন না হলে এখান থেকে যান। আমার কাছে আসিয়েন বাংলা পড়াবো। খুব ভালো বাংলা পড়াইতে পারি।
(যদিও বাংলা ব্যাকরণের “ব” টাও জানি না)

বিরবির করে,
তানহা : আসছে একটা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আমাকে পড়াবে। শখ কতো।

অর্ণব : কি বিরবির করতেছেন? গালি দিচ্ছেন নাকি আবার?

তানহা : আপনার সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে। দয়া করে মাপ করেন! নিজের সিটে গিয়ে বসুন আর গেটটা ছাড়ুন,আমাকে আমার সিটে যেতে দিন, অনেক পড়া আছে,ফালতু কথা বলার সময় নাই।

ইচ্ছাতো করতেছিলো না যে গেট ছেঁড়ে দিয়ে উনাকে ভিতরে ঢুকতে দিই। কিন্তু বাসটাতো আমার না। আমার বাপের হইলে টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে বাড়ি পাঠায় দিতাম। বাধ্য হয়ে গেট ছেঁড়ে দিয়ে বাস থেকে নামলাম। হেল্পার এখনো লোক জোগাড় করতে ব্যস্ত।

অর্ণব : কি ভাই আর কতক্ষণ?

হেল্পার : এই তো ভাই হয়ে গেছে। ভিতরে বসেন এখনি ছাড়ে দিবে।

আমি ভিতরে ঢুকে নিজের সিটের দিকে গেলাম। আমার সিটে চোখ পড়তেই আমার মেজাজ সপ্তম আসমানে উঠে গেলো। তানহা আমার সিটে বসে আছে।

আমি রাগে গজগজ করতে করতে,
অর্ণব : এই যে Miss Whatever শুনছেন?

তানহা : আপনি কি লুচ্চা নাকি, তখন ঝগড়া করে হয়নি আবার করতে আসছেন?

আল্লাহ! আমি যে উনাকে সবার সামনে অপমান করে বা চিল্লায় কিছু বলিনি এটাই উনার ভাগ্য। কেননা,

পবিত্র কুরআনে আছে,

“উচ্চস্বরে কথা বলবেন না।”
-(৩১ঃ ১৯)💕

আরো এক

আয়াতে আছে,

“কথাবার্তায় কর্কশ হবেন না।”
-(০৩ঃ১৫৯)💕

তাই যথা সম্ভব নিজেকে সংযত রেখে বললাম,
অর্ণব : দেখুন ম্যাডাম আমি ঝগড়া করতে আসিনি। আমি আমার সিটে বসতে এসেছি। প্লিজ এখান থেকে উঠুন।

তানহা : What nonsense! এটা আমার সিট।

অর্ণব : আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এতক্ষণ ধরে আপনার সাথে যতটা পারি ভালো ব্যবহার করে আসতেছি। কিন্তু আর না। শুনেন টিকিটে আপনার সিট নাম্বারটা একটু দেখে নেন। এটা আমার সিট তেইশ নাম্বার। আমার সিট ছাড়েন আর এখান থেকে যান আমি বসবো। মাথা মোটা একটা। আপনার স্বামীর প্রতি আসলেই আমার আফসোস হচ্ছে। লোকটা মনে হয় প্রতিদিন আফসোস করে কি জন্য যে বিয়েটা করলাম।

টিকিট দেখে,
তানহা : আমি দুঃখিত। আপনার পাশেরটা আমার সিট। দেখুন আমাকে একটু আপনার সিটে বসতে দিন। আমি বাসে Journey করতে পারিনা। জানালার ধারে না বসলে আমার বমি আসে।

আমি আর কি বলবো। আমারো একই কাহিনী। বাসে সফর করতে পারিনা। জানালার ধারে না বসলে বমি হয়। কিন্তু উনাকে বললে তো উনার কাছে আমার মান-সম্মান যাবে। কি ভেজালে পড়লাম। যদিও এখন বাসে সফর অনেকটা সয়ে গেছে তাই বললাম,
অর্ণব : ঠিক আছে আপনি বসেন।

তানহা : ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ আমার এখনো বিয়ে হয় নি বুঝলেন। আর আমার স্বামী অনেক ভাগ্যবান হবে। আপনাকে উনার জন্য আফসোস করতে হবে না।

আমি আর কথা বাড়াইলাম না। আশেপাশে কোথাও সিট ফাঁকা আছে নাকি তা দেখার জন্য গেলাম। এই মেয়ের পাশে বসা যাবে না। নইলে আমার পুরা সফরটা মাটি। ইসস! কি আনন্দে ছিলাম যে জানালার পাশে বসে পুরো রাস্তা আরামে যাব! আর কি হইলো! ধুর কি জন্য যে এর সাথে পরিচয় হলো।

তানহা : কোথায় যাচ্ছেন?

অর্ণব : সিট খুঁজতে আপনার সাথে বসতে পারবো না। দরকার হলে পুরা রাস্তা দাঁড়ায় যাবো।

কিন্তু ভাগ্য খারাপ সিট ফাঁকা নাই। অনেককেই বললাম সিট বদলাবে নাকি। ভুল করেও কোন ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিনি। আমি এতটাও খারাপ না যে একজন যুবতী মেয়ের পাশে কোন পুরুষকে পাঠাবো। কারণ কার মনের ভিতর কি আছে তা তো বলা যায় না। খারাপরাও তো মানুষের মতোই দেখতে। কিন্তু কেউ রাজী হলো না।

বাধ্য হয়ে আমার সিটে ফিরে আসলাম। শেষে সামনের একটা লোককে জিজ্ঞাসা করলাম সিট বদলাবে নাকি। এখান থেকে তো আমি নিজে অন্তত মেয়েটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো, সমস্যা হবে না। লোকটাকে বলতেই লোকটা এক পায়ে রাজী। বুঝলাম কি জন্য।

কিন্তু তানহার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ থেকে আগুন বেড় হচ্ছে। আমি ভয়ে লোকটাকে বললাম,
অর্ণব : না ভাই ঠিক আছে দরকার নাই। অসুবিধার জন্য দুঃখিত।

তানহা : এই আপনি আপনার সিটে বসেন। আমি আমার সিটে বসতেছি।

অর্ণব : না ওখানেই থাকেন, আমি আপনার পাশে বসতেছি।

সিটে বসলাম।

তানহা : আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো? অচেনা একটা লোককে আমার পাশে বসাচ্ছেন।

অর্ণব : Oh hello Mam! আমি চাইলে ঐদিকে কোন ছেলের সাথে সিট চেঞ্জ করতে পারতাম। কিন্তু আমি সামনের জনকেই বললাম যাতে লক্ষ্য রাখতে পারি। আমাকে এতটাও খারাপ ভাববেন না। আর আমিও একজন অচেনা। উনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি?

তানহা : আপনাকে তাও তো চিনি।
(লক্ষ্য রাখতো মানে? যাক উনার মধ্যে দায়িত্ববোধ আছে। জানি আপনি ভালো মানুষ। এখন পর্যন্ত সবগুলা কথাই উনি অন্য দিকে তাকায় বলতেছেন,আমার দিকে একবারো তাকায় নি। আসলে সেদিন আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে অপমান করছিলাম।)

আমি চুপ করে থাকলাম।

তানহা : দেখুন আমার সাথে ঘেষে বসবেন না। আমার সাথে যেন একটুও Touch না লাগে।

অর্ণব : দেখুন! সব ছেলে কে এক রকম মনে করবেন না। আমার আপনার সাথে বসতে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। আমি শুধু ভালো ব্যবহার করতেছি কারণ

পবিত্র কুরআনে আছে,

“অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।”
-(০৪ঃ ৩৬)💕

আর এতো যদি সমস্যা হয় তাহলে পাবলিক বাসে উঠছেন কেনো? বাপের একটা গাড়ি নিয়ে একা বের হবেন তাহলে কেউ গা ঘেসে বসবে না।

(তানহা চুপ হয়ে গেলো!)

মনে মনে,
তানহা : বাব্বাহ! কুরআনের রেফারেন্স টানে কথা বলতেছে। ইনার তাহলে দ্বীনি জ্ঞানও আছে। তবে শেষের কথাটা খারাপ লাগলো। কারণ আমার অনেক ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছে। একটা এতিমখানায় বড় হয়েছি। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করছি। স্বপ্ন সেরকমভাবে কিছু দেখা না হলেও নিজের পায়ে দাঁড়ানো জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে গেছে। মেধার মূল্যায়নের থেকে এখন টাকাকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। বর্তমানে টাকা না ছাড়া চাকরি পাওয়া খুব দুঃসাধ্য।

দুজনেই চুপ করে থাকলাম কিছুক্ষণ। এভাবেই শুরু হলো আমাদের টম এন্ড জেরীর মতো একটা সম্পর্ক। টক-ঝাল সম্পর্কটার কথা মনে পড়লে এখনো বেশ মজাই লাগে।

(চলবে…)

মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝

[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞


Comments

One response to “অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 19”

  1. […] 14 Chapter 15 Chapter 16 Chapter 17 Chapter 18 Chapter 19 Chapter 20 Chapter 21 Chapter 22 Post navigation […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *