Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 20
দুজনেই চুপ করে থাকলাম কিছুক্ষণ। এভাবেই শুরু হলো আমাদের টম এন্ড জেরীর মতো একটা সম্পর্ক। টক-ঝাল সম্পর্কটার কথা মনে পড়লে এখনো বেশ মজাই লাগে।
তানহা পড়তেছিলো,আমিও বসে বসে বইটা পড়তেছিলাম। এমন সময় আম্মু কল দিলো। কলটা রিসিভ করে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আম্মু।
রাদিয়া বেগম:- অলাইকুম আসসালাম বাবা কোথায় তুমি?
অর্ণব : আম্মু আমি বাসে যাচ্ছি কাল সকালের ভিতর পৌঁছে যাব ইনশাল্লাহ।
রাদিয়া বেগম : বাবা তুমি এখন সফরে আছো। তাই অনেক মানুষের সাথে তোমার দেখা-সাক্ষাৎ হবে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবা। কাউকে ছোট করে দেখবা না। মানুষকে তুচ্ছ ভাবা বা ঘৃনা করা থেকে বিরত থাকবা। কোন মানুষ তোমার সাথে কথা বললে তার থেকে বিমুখ বা কথোপকথনের সময় নিজ মুখকে অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখবা না। এটা খুব খারাপ।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।”
-[সূরা লোকমান: আয়াত: ৩১:১৮]💕
আর মনে রাখবা এমনভাবে বিচরণ ও চালচলন করবা না যাতে ধন-সম্পদ, পদ বা বংশ মর্যাদা অথবা শক্তিমত্তা, ক্ষমতার বড়াই ও অহংকার ফুটে ওঠে,কারন তা আল্লাহ তায়ালা কখনো এগুলা পছন্দ করেন না। আল্লাহ তাআলা এটাই পছন্দ করেন যে, সে নিজের মান ও অবস্থা অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে এবং তা অতিক্রম করে অহংকার প্রদর্শন করবে না। কারণ মানুষ একজন আল্লাহর বান্দা মাত্র। এ ব্যাপারে
হাদিসে এসেছে,
“আল্লাহ তায়ালা বলেন, গৌরব ও গর্ব খাস আমার গুণ। সুতরাং যে তাতে আমার অংশী হতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’
-(মুসলিম ২৬২০)💕
বুঝলা?
অর্ণব : জি আম্মু।
রাদিয়া বেগম : উচ্চস্বরে কথা বলবে না। এতে পাশের জনার অসুবিধা হতে পারে। আর চালচলন ও আচার-ব্যবহারে শালীনতা প্রদর্শন করবে। খারাপ ব্যবহার করবে না। এ ব্যাপারে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘‘(আল্লাহর বান্দাগণ) পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’’
-(সূরা ফুরকান ৬৩ আয়াত)💕
অর্ণব : জি আম্মু আমি বুঝতে পারছি।
রাদিয়া বেগম:- ঠিক আছে বাবা সাবধানে আসিস একটু,আজ আটটা দিন হলো তুই নাই, বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে তোকে ছাড়া।
অর্ণব : হুম আম্মু আমি খুব তারাতাড়ি আসছি। মুরগির মাংস রান্না করিও। কালকে নিশ্চিত খুব খিদা লাগবে।
রাদিয়া বেগম : আগে তুই ভালোমতো আয়।
অর্ণব : ঠিক আছে আসসালাম অলাইকুম।
রাদিয়া বেগম:- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কথা বলা শেষ করতেই তানহা বলে উঠল..
তানহা :- আস্তে কথা বলতে পারেন না?
অর্ণব :- আপনার সমস্যা কি?
(এবার উনার একটা দূর্বল দিক পাইছি সব বদলা সুদে-আসলে নিবো)
তানহা : Please! Don’t Bother me.I need to study.
Bother বললো কেনো? Disturb বললেই তো পারতো। বুঝলাম ভালোই ইংরেজী পারে। ট্যালেন্টেড হ্যান্ডেল(বোকা) একটা।
না বুঝার ভান করে,
অর্ণব : কি যে বললেন আপনি কিছুই বুঝলাম না। শুধু বুঝলাম ইংরেজিতে গালি দিলেন। শুনেন গালি দেওয়া পাপ কাজ।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“কাউকে গালাগালি করবেন না।”
-(০২ঃ ৬০)💕
বুঝলেন?
(আল্লাহ! এ কি বলে। অনেক কষ্টে হাসি চাপে রাখলাম। নিকাবের কারণে উনি বুঝতে পারেন নি। তবে উনি ভালো কথাই বলছে। গালি দেওয়া মন্দ কাজ। তার মানে কি উনি শুধু আমার উপর রাগের কারণেই আমাকে জ্বালাচ্ছে। কথাবার্তা আর ব্যবহার তো অনেক ভালো। তাহলে?)
তানহা : জি না আপনাকে গালি দেই নি। আপনাকে ডিস্টার্ব করতে মানা করলাম।
অর্ণব : ঠিক আছে আপু।
(বুঝলাম না ওর আপু ডাক শুনে কেমন জানি লাগলো এরকম কেনো হলো। তারমানে কি? আল্লাহ মাফ করুক)
তানহা : হুম।
মনে মনে,
অর্ণব : ইসস! এতো সহজে ছাড়বো?! কেবল তো শুধু শুরু।
একলাসকে কল দিলাম,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম বড় ভাই।
একলাস : অলাইকুম আসসালাম। কি খবর? শুনলাম তুই নাকি বাড়ি আসতেছিস?
অর্ণব : হুম। ইনশাল্লাহ কালকে সকালেই যাবো।
একলাস : ট্রিট দিবি না?
অর্ণব : হুম দিবো। তুই তো একদিনও দিলিনা।
একলাস : হাহা। দিবো দিবো।
একলাসের সাথে কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করতেছিলাম তানহা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে দেখতেছে আর রাগে ফুসতেছে। এটা দেখে আমি আরো জোরে কথা বলতেছিলাম। আমার সাথে পাঙ্গা? এবার বুঝো ঠেলা।
একলাসের সাথে কথা বলা শেষ করে ফোনটা কাটতেই,
তানহা : অভদ্রের মতো ব্যবহার করছেন কেন?
অর্ণব : আমি অভদ্র না। আমি ভদ্র ঘরের ভদ্র সন্তান বুঝলেন?
তানহা : হুম জানি। ভদ্র ঘরের অভদ্র শয়তান।
অর্ণব : কি বললেন? আপনার সাহস তো কম না! শুনুন আমি এতটাই ভদ্র ছিলাম যে আজ পর্যন্ত কোন প্রেম করিনি। আজকালকার ছেলেরা-মেয়েরা তো আবার প্রেম ছাড়া নাই।
(একটু বাজিয়ে দেখতে চাইলাম ইনারও আবার কেউ আসে নাকি!)
তানহা : মেয়ে পটানোর ধান্ধা তাই না। সবাই এগুলাই বলে। কিন্তু তলে তলে ট্রাক চালায়।
অর্ণব : হাহা। আমার কাজ নাই তো আপনাকে পটাইতে যাবো। আর হারাম কাজ আমি করিনা। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়।”
-[ সূরা মায়িদা : ৫ ]💕
তানহা : হুম এগুলা হারাম। আল্লাহ যেন সবাইকে এটা বুঝার তৌফিক দেন।
বুঝলাম ইনি প্রেম থেকে দূরেই থাকেন। কি ব্যাপার রাগটা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেলো কিভাবে? আমি তো ইনার প্রতি প্রচুর রাগে ছিলাম। এখন দেখতেছি কখন যে রাগ পানি হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। রাগ করার পরিবর্তে উনার সঙ্গ ভালোই লাগতেছে।
আসলে জীবনে প্রথমবার কোন মেয়েকে এত কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। আর সেদিনই প্রথমবার কাউকে ভালো লাগছে। আর সেই “কেউ” -টা হচ্ছে তানহা। প্রথম যেদিন তানহাকে দেখছিলাম সেদিনই আমার পুরা সত্তা অন্যরকম এক অনূভুতির সাক্ষী হয়েছিলো। যা ছিলো আমার জীবনে একদম নতুন। এমনকি আল্লাহর কাছে বউ হিসেবে পাওয়ার জন্য দোয়াও করেছিলাম। আর বাকিটা তো ইতিহাস! বুঝলাম আবার সেই ভালো লাগাটা কাজ করতেছে।
তানহা : কি ভাবতেছেন?
অর্ণব : না কিছুনা। তোমার না পড়া আছে তুমি পড়ো।
(আল্লাহ! ঘোরের মধ্যে নিজের অজান্তেই তুমি বলে ফেললাম। নিশ্চিত রাগে ভূত হয়ে যাবে।)
তানহা : কি বললেন আপনি?😡
অর্ণব : পড়তে বললাম।
তানহা : তার আগে কি বললেন?
অর্ণব : কিছু না তো।
তানহা : তুমি করে বললেন কেনো? আপনি তো আমার নামটাও জানেন না।
এমন সময় আমার ফোন বাজলো। কলটা রিসিভ করতে যাবো,
তানহা : আমার কথার উত্তর না দিয়ে কল ধরতে পারবেন না। আর আপনার এতো কল আসে কেনো? শান্তিতে আমি পড়তেও পারতেছি না।
কথার উত্তর না দিয়ে কলটা রিসিভ করলাম। নেগলা কল দিছে। তাই তানহাকে রাগানোর জন্য নেগলার সাথে জোরে জোরে কথা বলতে শুরু করলাম। তানহা আগের মতোই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকায় রাগে ফুঁসছে।
হঠাৎ ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো।
অর্ণব : ধুর চার্জটাই শেষ হয়ে গেলো।
বুঝলাম তানহা প্রচুর খুশি হইছে। কিন্ত নেগলার সাথে কথা বলাটা জরুরি। ওর বিয়ে নিয়ে কিছু কথা ছিলো। মেয়েটাকে চিন্তিত শুনাচ্ছিলো। মোবাইলের চার্জটাকেও এখনই যাইতে হবে? ভাগ্যটাই খারাপ।
হঠাৎ চোখে পড়লো তানহার হাতে মোবাইল। বাধ্য হয়ে তানহাকে বললাম,
অর্ণব : আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে। কথা বলেই দিয়ে দিবো। একটু জরুরি কথা ছিলো।
তানহা : বাব্বাহ! কিছুক্ষণ আগের বাঘ এখন ভেজা বিড়াল কিভাবে হয়ে গেলো?
অর্ণব : আগের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। খুব দরকারি কথা ছিলো তাই বলছি। আর হবে না এটা আপনাকে কথা দিচ্ছি।
তানহা : আমার মোবাইল দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আমি চাই আপনি কথা না বলেন, আপনি কথা না বললে আমি মন দিয়ে পড়তে পারবো। তাই আমার মোবাইল দিবো না।
চিন্তাভাবনা করলাম যেহেতু পরিচয়টা অনেক গভীর হয়ে গেছে তাই কাজটা করাই যায়। আর যেহেতু খুব প্রয়োজনের কথা বলছি সেহেতু তানহা কিছু মনে করবে না। এইটা ভেবে,
তানহার হাত থেকে মোবাইলটা কেরে নিলাম।
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply