অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 21

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 21

চিন্তাভাবনা করলাম যেহেতু পরিচয়টা অনেক গভীর হয়ে গেছে তাই কাজটা করাই যায়। আর যেহেতু খুব প্রয়োজনের কথা বলছি সেহেতু তানহা কিছু মনে করবে না। এইটা ভেবে,
তানহার হাত থেকে মোবাইলটা কেরে নিলাম।

আমি একটা চিৎকার শুনবো এটা ভেবে কানে হাত দিছিলাম। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরও চিৎকার শুনতে না পেয়ে কান থেকে হাত সরায় তানহার দিকে তাকালাম। এমনভাবে তাকায় আছে যে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে।

তানহা : আমার মোবাইল দেন বলছি😡

তাও ভালো তানহা বিষয়টাকে একটু স্বাভাবিকভাবেই নিছে। তানহার হাতে আমার মোবাইলটা দিয়ে,
অর্ণব : এই যে ধরেন আমার ফোন। আপনার থেকে দামী। আর এই যুগে কেউ বাটন ফোন ব্যবহার করে? আমাকে শুধু কথাটা বলতে দেন।

মনে মনে,
তানহা : ইচ্ছা তো করতেছে মোবাইলটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেই।

কল দিয়ে দেখলাম ফোনে টাকা নাই।
অর্ণব : আপনি মানুষ না আর কিছু। মোবাইলে টাকা নাই কেনো?

তানহা : না নেই,আমি কারো সাথে কথা বলিনা। তাই রাখি না। আর বাটন ফোনে কোন কাজ নাই তাই অতটা ব্যবহারও করিনা আর মনেও থাকে না টাকা ঢুকানোর। ভালো হইছে আপনি কথাও বলতে পারবেন না।
(আসলে আমার ফোনটা হারায় গেছে তাই নতুন ফোন না কিনা পর্যন্ত এটাই চালাচ্ছি।)

আমি কোন কথা বললাম না। রিপনকে রিকোয়েস্ট কল দিলাম। রিপনকে রিকোয়েস্ট কল দিতেই কল ব্যাক করলো।
অর্ণব : রিপন এই নম্বরে ১০০ টাকা ঢুকায় দে। আর নাম্বারটা ডিলিট করে দিস। একটা অপরিচিত মেয়ের নাম্বার তো।

মনে মনে,
তানহা : বাব্বাহ! উনার দায়িত্ববোধ আছে দেখছি। যতই রাগ থাকুক তাও মানবিকতার দিকটা ঠিকই লক্ষ্য রাখতেছে। যা বুঝলাম উনার মনটা ভালো।

প্রায় পনেরো মিনিট পর রিপন রিচার্জ করে দিলে নেগলাকে কল দিলাম।

তানহা : এই আমার মোবাইলেও কিন্তু চার্জ নাই। তাড়াতাড়ি করেন। আর দয়া করে একটু আস্তে কথা বলুন প্লিজ। আমার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে।

অর্ণব : জি এবার আর খারাপ কিছু করবো না। আপনি যে আমাকে কথা বলতে দিছেন এইজন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনি পড়েন।

তানহা : ধন্যবাদ।

এমন সময় নেগলা ফোন ধরলো,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।

নেগলা : অলাইকুম আসসালাম। কে অর্ণব?

অর্ণব : হুম। কি বলতেছিলি জানি বিয়ের বিষয়ে?

নেগলা : আমার জন্য পাত্র দেখতেছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলো যে কি ধরনের ছেলে আমার পছন্দ। আমি কোন উত্তর দেই নি। তুই বলতো কেমন পাত্র হলে ভালো হয়।

অর্ণব : দেখ বিয়ে জীবনের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে প্রভাব বিস্তার করে। জীবনের মাঝখান থেকে তোকে একজনের সাথে বাকি জীবন কাটানো শুরু করতে হবে। একজনের সাথে পুরোটা জীবন কাটাতে হবে তার মানে বুঝছিস?

নেগলা : হুম বুঝছি। বিষয়টার উপর আমার ভবিষ্যত নির্ভর করতেছে।

অর্ণব : এইতো সুন্দর বুঝছিস। বিয়ের জন্য দ্বীনদার ছেলে ভালো হবে এটা আমার অভিমত।

নেগলা : কেনো?

অর্ণব : একজন দ্বীনদার ছেলে সবসময় আল্লাহকে ভয় করে, জাহান্নামের ভয়ে ভীত হয়ে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। আর একজন মানুষের ভিতর যদি আল্লাহর ভয় না থাকে, যদি কবর, জাহান্নাম, সর্বোপরি আখিরাতের ভয় না থাকে তাহলে সে যেকোন গুনাহই অনায়াসে করতে পারে। আর বড় কথা যে আল্লাহ দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব পালন করে না সে তোর সারাজীবনের দায়িত্ব কিভাবে নিবে?

নেগলা : হুম।

অর্ণব : আর স্বামী হিসেবে একটি দ্বীনদারিত্ব সম্পন্ন ছেলেকে নির্বাচন করা মানে জান্নাতের সাথী নির্বাচন করা। আমাদের তো এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে সুখী থাকা লক্ষ্য নয়, আমাদের লক্ষ্য তো হচ্ছে জান্নাতের বাসিন্দা হওয়া। আর একজন প্রকৃত দ্বীনদার ছেলে তোকে জান্নাতে যেতে সাহায্য করবে। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?

নেগলা : হুম বুঝছি। তো এখন কি করবো?

অর্ণব : তুই পরিবারকে বল যে তোর জন্য একটা দ্বীনদার পাত্র খুজতে। ছেলের চরিত্রে যেন দ্বীনদারিত্বটা প্রথমে ফুটে উঠে। আর হ্যাঁ অন্যদের মতো দ্বীনদার বিল গেটস খুঁজতে যাইস না।

এমন সময় পাশ থেকে তানহার হাসির আওয়াজ পেলাম।

নেগলা : 😆😆.. দ্বীনদার বিলগেটস? মজা পাইলাম। আচ্ছা ঠিক আছে বলবো। আর হ্যাঁ ছেলেকে আমার চেহারা দেখানো যাবে?

অর্ণব : হুম। এটা জায়েয আছে! কেননা

হাদিসে এসেছে,

হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেই এবং বিষয়টা রাসূল (সাঃ) কে বলি।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছো?
আমি বললাম, না। তিঁনি বললেন, তুমি তাকে দেখে এসো।
কারণ-এ দেখাটা তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হবে।
ফলে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য যাই।তখন তার বাবা-মা সেখানে ছিল এবং মেয়েটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটিকে দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার এ-কথায় তার বাবা-মা নীরব রইলেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, যেন তারা আমারএ কথাকে অপছন্দ করলেন।
(তারা বিবাহের আগে পাত্রীকে দেখানোর পক্ষে ছিলেন না।)
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেয়েটি বললো,
যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে আদেশ করে থাকেন, তাহলে আপনার দেখার সুবিধার্থে আমি আপনার সামনে আসছি।
আর যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে নির্দেশ না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আমার দিকে দৃষ্টি দিবেন না।
হযরত মুগীরা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাকে দেখি এবং তাকে বিবাহ করি।
-{সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৮৬৬}💕

তবে তোকে শুধু পাত্র দেখতে পারবে।পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন মুরব্বী (পুরুষ) কিংবা অন্য কোন পুরুষ তোকে দেখতে পারবে না।
তা কিছুতেই জায়েয নাই।

নেগলা : পাত্রের সামনে কেমন পর্দা করতে হবে?

অর্ণব : তোকে শরয়ী পর্দা করতে হবে। শরয়ী পর্দা হলো,

  • নিজ চেহারা ও হাতের পাঞ্জা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ তার সামনে উন্মুক্ত না করা।
  • পাত্র ছাড়া অন্যকোন গাইরে মাহরামের উপস্থিতিতে পাত্রের সামনে না যাওয়া।
  • পাত্রের সঙ্গে নির্জনে একত্রিত না হওয়া।বরং সেখানে নিজের কোন মাহরামের উপস্থিতিতে যাওয়া।
  • অহেতুক আলাপচারিতা ও অনর্থক গল্প-গুজবে লিপ্ত না হওয়া।
    -{সূত্রঃ সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ৩০০৬/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}💕

আর হ্যাঁ তোকে যখন দেখতে আসবে সে সুযোগে তোকেও পাত্রকে দেখে নিতে হবে। বুঝলি?

নেগলা : হুম। পাত্রকে ষ্পর্শ করা যাবে?

অর্ণব : একদম না।

এমনকি পাত্রী দেখার পর পাত্রীকে সম্পুর্ন পর্দা করতে হবে। তখন আবার পাত্রের কাছে পাত্রী বেগানা নারী হয়ে যাবে।
আর বিবাহ-ইচ্ছুক ব্যক্তি বা পাত্রের দেখা ছাড়া আর কিছুর অনুমতি দেওয়া হয় নি।সুতরাং তাকে স্পর্শ করা কিংবা এ জাতীয় কিছু কোনক্রমেই বৈধ নয়। এমন কি তার হাত ধরা বা হাতে আংটি পরিয়ে দেয়াও জায়েয হবে না।
-{সূত্রঃ ফাতাওয়া শামী, ৬: ৩৭০}💕

বুঝলি?

নেগলা : হুম। বুঝছি ধন্যবাদ তোকে।

অর্ণব : এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। আল্লাহ যেন তোকে একজন প্রকৃত দ্বীনদার ছেলে জীবনসঙ্গী হিসেবে দেয় – আমিন।

নেগলা : তোকেও যেনো আল্লাহ একটা দ্বীনদার মেয়ে দেয়। আচ্ছা পরে কথা হবে অনেক কাজ আছে। আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

কলটা কেটে তানহাকে মোবাইলটা দিলাম।
অর্ণব : ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে কলটা করা জরুরি ছিলো। তাই আপনার কাছ থেকে মোবাইলটা কারে নিতে বাধ্য হইছিলাম। আশা করি মাফ করে দিবেন।

আমার মোবাইলটা ফেরত দিয়ে,
তানহা : আরে কি বলতেছেন। মাফ তো আমাকে চাওয়া উচিৎ। তখন থেকে আপনাকে ভুল বুঝতিছিলাম। আর আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।

(তখনই তানহার মোবাইলে কত টাকা বাকি আছে তার মেসেজ আসলো)

আরে প্রায় সব টাকাই তো পড়ে আছে। নেন শেষ করে তারপর আমাকে মোবাইল ফেরত দেন।

অর্ণব : আরেহ না। আমার আর দরকার নাই। আর বেকার টাকাটা অপচয় করে লাভ আছে? তার চেয়ে আপনার কাজে আসবে। আর পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।”
-(বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)💕

তানহা : হুম তাও ঠিক।
(ইনাকে যত জানতেছি তত ইনার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমি কোন ছেলের সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলিনা। কিন্তু প্রথম বার কারো সাথে এতটা কথা বলতেছি। সবচেয়ে অবাক লাগছে আমার, আমার সাথে কথা বলার সময় অন্যদিকে তাকায় থাকে। রাগে গেলে নিচের দিকে তাকায় চেহারাটা পেঁচার মতো করে কথা বলবে। শুধু ফোনে কথা বলার সময় চোখের কোন দিয়ে দেখে নিবে আমি দেখে বা রাগে আছি কিনা। একবারও আমার দিকে ভালোভাবে তাকায় নি। উনার ব্যবহার থেকে শুরু করে সব কিছু আমাকে ভালো লাগতেছে। বিশেষ করে উনার দ্বীনি জ্ঞান। আল্লাহ আমাকে সকল পাপ থেকে হেফাযত করো! ইয়া আল্লাহ! এমন কারো প্রতি আমাকে দূর্বল করিও না যার সাথে তুমি আমার বিবাহ সম্পর্ক ঠিক করে রাখনি।)

হঠাৎ আমার মনে পড়লো যে আমাকে মশিউরকে কল দিতে হবে। মশিউরকে বলছিলাম যে আমি সপ্তম দিনে মানে গতকাল যাবো আর আজকে রাতে আড্ডা দিবো একসাথে। কিন্তু আমি তো আজকে যাচ্ছি। আর এটা তো ওকে বলাই হয়নি। তাই তানহাকে বললাম,
অর্ণব : আরেকটা শুধু কল দিবো একটু দেওয়া যাবে?

(চলবে….)

মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝

[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞


Comments

One response to “অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 21”

  1. […] 16 Chapter 17 Chapter 18 Chapter 19 Chapter 20 Chapter 21 Chapter 22 Chapter 23 Chapter 24 Chapter 25 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *