“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 22

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 22

মনে পড়লো যে মশিউরকে কল দিতে হবে। তানহাকে বললাম,
অর্ণব : অসুবিধা না হলে আরেকটা কল দিতে হইতো। একটু দেওয়া যাবে?

তানহা : হুম নিতে পারেন। চার্জ কিন্তু একদম শেষের পর্যায়ে। আমার প্রয়োজন নাই বলেই দিচ্ছি।

তানহাকে ধন্যনাদ দিয়ে নেগলাকে বললাম এই নাম্বারটা ডিলেট করে দিতে আর এই নাম্বারে মশিউরের নাম্বারটা মেসেজ করে দিতে। কিছুক্ষণ পর নেগলা মশিউরের নাম্বারটা তানহার মোবাইলে মেসেজ করে দিলো। তারপর মশিউরকে কল দিলাম,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।

মশিউর : অলাইকুম আসসালাম। কি রে তুই বেলে আজকে আসতেছিলি?

অর্ণব : না কালকে যাবো ইনশাল্লাহ। একটা কারণে একদিন পিছিয়ে দিছিলাম।

মশিউর : তুই আয় আমি এবার তোদের ট্রিট দিবো।

অর্ণব : বাব্বাহ। মশিউর ট্রিট দিবে ব্যাপার কি!

মশিউর : একটা প্রাইভেট পাইছি। সামনে মাস থেকে আমারও একটা ইনকাম হবে। এই খুশিতে।

অর্ণব : আলহামদুলিল্লাহ।

মশিউর : আচ্ছা বাদ দে। আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমাইতে হবে কালকে সকালেই প্রাইভেটটা পড়াইতে যাইতে হবে।

অর্ণব : আচ্ছা আর শুন রাতে ওযু করে ঘুমাইস।

হাদিসে আছে,

“কেউ ওজু করে ঘুম গেলে সারারাত তার পাশে থেকে একজন ফেরেশতা ঘুমন্ত ব্যক্তির ক্ষমার জন্য আল্লাহর দরবারে দুয়া করতে থাকে।”
-(আত তারগিব ৫৯৭)💕

ছোট একটা কাজ কিন্তু বিশাল ফযিলত।বুঝলি?

মশিউর : সুবহানআল্লাহ। ঠিক আছে। আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : নাম্বারটা ডিলেট করে দিস কারনটা পরে বলবো এখন ঘুমা। ওলাইকুম আসসালাম।

কলটা রাখতেই তানহা বলে উঠলো,
তানহা : আচ্ছা আপনি কি মানুষ নাকি রাক্ষস?

কথাটা শুনে একটু ভড়কে গেলাম,
অর্ণব : মানে? দেখতেই তো পাচ্ছেন! আমাকে কি রাক্ষস মনে হয়?

তানহা : আম্মুকে বললেন একটা রান্না করতে, একজনকে বললেন আপনি পার্টি দিবেন আর আরেকজনকে বললেন যে উনি বেলে পার্টি দিবে। একটা মানুষ এতো খাই খাই করে কিভাবে? রাক্ষস একটা। তাও তো একটুও মোটা হন নি। খাবার গুলা কোথায় যায়? হাহ?

অর্ণব : তো কি আপনার মতো হবো? আর শরীরটা তো আমার থেকে শুকনা। ফু দিলেই তো উঠে যাবেন। কাঠি একটা।

রাগে,
তানহা : কি বললেন? আর আমার মতো মানে?

অর্ণব : না কিছু দেখতেছিলাম।

তানহা : কি দেখতেছিলেন?

অর্ণব : দুপুর থেকে একটা বিস্কিটের প্যাকেট শেষ করতে পারেন নি। আর কথা বলতে আসছেন।

তানহা : তার মানে, আপনি চুপি চুপি আমার খাওয়া দেখছিলেন!

অর্ণব :- পাশে যেহেতু বসে আছেন দেখা তো যাবেই,তাইনা।

তানহা :- তাও ঠিক।

অর্ণব : আর আমি আম্মুকে সকালের খাবারের কথা বলছি। আর ওদের আলাদা আলাদা সময়ে। বুঝলেন!

এই সময় মনে পড়লো মাগরিবের নামাজ পড়তে হবে। আছরেরটাও মিস গেছে। আর মাগরিবের নামাজের সময়ও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাস যে দ্রুত যাচ্ছে আর তানহার সাথে গল্প করতে করতে ভুলেই গেছিলাম। হেল্পারকে ডাকলাম,
অর্ণব : রাতের খাবারের জন্য বাস থামবে না?

হেল্পার : হুম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। ১৫ মিনিটের জন্য।

১৫ মিনিট যথেষ্ট সময়।তাই বললাম,
অর্ণব : দয়া করে একটু পাশেই মসজিদ আছে এরকম জায়গায় থামাবেন।

হেল্পার : জি আমরা যেখানে থামাই তার পাশেই মসজিদ আছে। শুধু সাবধান করে রাখলাম তাড়াতাড়ি করিয়েন। ১৫ মিনিটের এক মিনিটও বেশি সময় দেওয়া হবে না।

অর্ণব : ঠিক আছে।

হেল্পার চলে গেলো।

তানহা : আচ্ছা আমিও নামাজ পড়বো। আছর আর মাগরিব দুইটাই পড়া হইনি। আমার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন?

অর্ণব : জি কেনো নয়। আপনি মসজিদেই নামাজ পড়তে পারেন। প্রথমের দিকে তো নারীরা মসজিদেই নামাজ পড়তো।

হাদিসে এসেছে,

“উম্মু সালমাহ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন সালাম ফিরাতেন তখন মহিলারা তার সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ না দাঁড়িয়ে বরং কিছুক্ষণ বসে থাকতেন যাতে পুরুষদের যাওয়ার পূর্বেই নারীরা চলে যেতে পারে।”
-(বুখারী -হাদিস নং-৮৭০)💕

তারপর

অন্য এক হাদিসে এসেছে,

“ইবনু উমার রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উমর রাঃ এর স্ত্রী (আতিকা বিনতে যায়দ) শুধুমাত্র ফজর ও এশার সালাতে মসজিদে হাজির হতেন।”
-(বুখারী -হাদিস নং-৯০০)💕

কিন্তু পরবর্তীতে মহিলাদের জন্য বাড়িতে নামাজ পড়াকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু রাতের বেলা স্বামীর অনুমতির সাপেক্ষে যাওয়া যেত।

হাদিসে এসেছে,

“ইবনু উমার রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন নারীদেরকে রাতের বেলা যেতে বাধা দিওনা।”
-(মুসলিম-হাদিস নং-৮৭৮)💕

কিন্তু তখনকার মক্কা-মদীনা রাতের বেলা ছিলো ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন। যা এখনকার থেকে সম্পুর্ন আলাদা।

তানহা : হুম।
(আমি তো আপনার সাথে যাচ্ছি!

হাহ? আপনার সাথে?

আল্লাহ! আমি কি জন্য উনাকে এতটা আপন ভাবতে শুরু করছি?! কি জন্য উনার সাথে নিজেকে এতটা নিরাপদ ভাবতেছি?!

জানি না। কিন্তু নিজের মধ্যে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব করলাম।)

অর্ণব : শুধু একটু তাড়াতাড়ি করিয়েন। আর প্রথমে আমি যাব। যদি কেউ না থাকে তাহলে আপনাকে নিয়ে যাবো। আমার মনে হয় না এখন কেউ মসজিদে থাকবে। তাও দেখাটা দরকার।

(আল্লাহ! যদি সত্যি উনি আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে আমাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেও! আমি আর পারতেছিনা। কিছু একটা তো আছে উনার মধ্যে। যা আমাকে এতটা আকর্ষিত করতেছে।)
একটু বাজিয়ে দেখার জন্য,
তানহা : হুম ভাইয়া।

মুচকি হাসি দিয়ে,
অর্ণব : বদলা নিলেন?

তানহা : হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে আপু বলছিলেন।

অর্ণব : প্রেমে পড়লেন নাকি আবার!

তানহা : নাউজুবিল্লাহ। একদম না।

যদিও আমি ভালোমতো দেখিনি কিন্তু উনি লজ্জা পেলো এটাতো নিশ্চিত।
অর্ণব : হুম বুঝি বুঝি।

তানহা : দেখুন আমি সত্যি আপনার প্রেমে পড়িনি।

অর্ণব : আমি কখন বললাম আপনি আমারই প্রেমে পড়ছেন? আপনি তো নিজেই বললেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
: ঘরে কে?

আপনি জবাব দিলেন,
: আমি কলা খাইনি।

😆😆😆… আপনি নিজেই ধরা দিলেন।

তানহা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকে নিচে ঝুকলো।

আল্লাহ! আসলেই তো। আমিও হই একটা বিশাল বড় মানের একটা বোকা। কি দরকার ছিলো জবাব দেওয়ার। নিজেকে সংযত করে,
তানহা : আমি আসলে প্রেম করবো না কারো সাথে। যাকে বিয়ে করব তার সাথেই প্রেম করবো। বিয়ে করার পর।

(আমিও তোমার প্রেমে পড়ছি প্রথম দিনই। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলাম। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো। আমিও বিয়ের জন্যই অপেক্ষা করতেছি মিস তানহা)
অর্ণব : বিষয়টা পরোক্ষভাবে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব হয়ে গেলো না?😜

আল্লাহ! উনি তো দেখতেছি শয়তানের চাচাতো ভাই, ফাজিলের হাড্ডি। ঠিকই ধরছে কিন্তু লজ্জা বলে কিছু নাই। এভাবে সরাসরি বলতে হবে? বললাম,
তানহা : Are you made?

অর্ণব : আমাকে কি পাগল মনে হয় আপনার?

তানহা : Excuse me! আপনি নাকি ইংলিশ বোঝেন না! তাহলে এটা বুঝলেন কিভাবে?

অর্ণব : ই….ইয়ে মানে এ…টা আগে থেকে জানি। অনেক বার শুনেছি🙄

বাবারে বাবাহ! কি মাল্টি ট্যালেন্টেড রে বাবাহ! আর কথা বলা যাবে না। নাহলে ফাঁসে যাবো।

এমন সময় গাড়ি থামলো।

আমরা মসজিদে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম।তানহা ব্যাগ থেকে একটা উড়না বের করে হাতে নিলো। আমরা একসাথে বাস থেকে নামলাম। বাসটা একটা মার্কেট প্লেসে থামাইছে। পাশের একটা রেস্টুরেন্টে সবাই ঢুকলো। আমি তো খাবার আগে থেকেই নিয়ে রাখছি তাই আমার প্রয়োজন নাই। আর তানহা তো কবুতরের মতো খায় তাই ওরও প্রয়োজন নাই। তাই আমরা তাড়াতাড়ি মসজিদটা খুঁজে বেড় করলাম হাতে সময় নেই। মসজিদটা একটু ভিতরে। যদিও চাইছিলাম আমি আগে যায়ে ভিতরটা দেখে আসবো। কিন্তু তা করিনি। বাজার এলাকা আবার অচেনা জায়গা তাই তানহাকে একা কোথাও দাঁড়িয়ে রাখাটা নিরাপদ না। একসাথেই মসজিদে ঢুকলাম।

(চলবে….)

মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝

[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞


Comments

One response to ““অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 22”

  1. […] 17 Chapter 18 Chapter 19 Chapter 20 Chapter 21 Chapter 22 Chapter 23 Chapter 24 Chapter 25 Chapter 26 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *