Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 23
তানহা আর আমি একসাথেই মসজিদে ঢুকলাম। আমি আগে আর তানহা আমার পিছনে।
মসজিদটা খুব সাদামাটা। ভিতরে মূল কক্ষ আর বাইরে বারান্দার মতো করে কিন্তু বড় জায়গা জুড়ে নামাজ পড়ার জন্য রাখা হয়েছে, যার চারপাশ খোলা আর বেতের বেড়া দেওয়া এবং উপরে টিন। মূল কক্ষটা বিশাল বড় কিন্তু ছিটকিনি দেওয়া। বাইরে সারি সারি মাদুর বিছানো নামাজ পড়ার জন্য। একটা মৃদু ডিম লাইটের আলো জ্বলতেছে। পাশেই একটা বিশাল পুকুড়। পরিবেশটাও দারুন। পাশে একটা অনেক বড় বট গাছ। স্বস্তি পেলাম যে কোন মানুষ নেই। সামনে ছোট মাঠ আছে যার একপাশে ওযু করার জন্য রাখা হয়েছে।
তানহাকে বললাম,
অর্ণব : তাড়াতাড়ি যায়ে ওযুটা করে নেন। আমি এখানেই আছি।
তানহা : আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো। এখানে তো ছেলেদের ওয়াশরুম৷ আপনি একটু বাইরে দাঁড়ায় থাকলে ভালো হতো।
আমারো মনে পড়লো আমাকেও একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।
অর্ণব : ঠিক আছে চলেন।
উনি ওয়াশরুমে ঢুকলেন আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাগ্য ভালো উনি বাইরে আসা পর্যন্ত কেউ আসে নি। যাক আল্লাহকে শুকরিয়া।
উনি বাইরে আসতেই,
অর্ণব : আপনি একটু যান। ওযুটা করেন আমি আসতেছি।
তানহা : না। আপনি আসেন। আমাকে ওযু করার জন্য নিকাব,হিজাব,জুতা-মুজা খুলতে হবে। কেউ চলে আসলে সমস্যা আছে। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।
তাড়াতাড়ি করতে হবে তাই আমি কথা না বাড়ায় তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে মসজিদের গেটের কাছে দাঁড়ায় থাকলাম। একটু পর দেখলাম তানহা ওযু শেষ করে নামাজ পড়তে গেলো। ঘড়িতে দেখলাম আর দশ মিনিট বাকি আছে। তাই ওযু করে আমিও নামাজটা পড়ে নিলাম।
সফরকারীর জন্য শরিয়তের বিধি-
বিধানে কিছু শিথিলতা রয়েছে,
যথা চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ
নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে।
মুসাফির ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত সফর
অবস্থায় চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গুনাহ হবে। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পূর্ণ করে নেয়,
তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না,
আবারও পড়তে হবে। আর ফজর ও মাগরীবের নামাজ পুরাটাই পড়তে হবে।
-(বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)💕
এজন্য আমি আছরের দুই রাকাত কাজা ও মাগরিবের তিন রাকাত কাজা আদায় করে নিলাম।
তানহার আগেই আমার নামাজ আদায় হয়ে গেলো। মৃদু আলোতে দেখলাম এখনো নামাজ পড়তেছে। মাথায় ওরনা দেওয়া। আমি গেটের কাছে চলে আসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তানহাও চলে আসলো।
আমি তানহাকে দেখে অবাক। ও শুধু ওরনাটা মাথায় দিছে। আর হাত দিয়ে ওরনাটার একটা অংশ এমনভাবে মুখে ধরে আছে যেন চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আর অন্য হাতে হিজাব আর নিকাব। আমি উনাকে যত রূপে দেখতেছি তত রূপে আরো বেশি পরিমানে উনার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাকে হেফাজত করুক।
বুঝলাম হিজাব আর নিকাব পড়ার সময় নাই এটা উনার মাথায় আছে। তাও জিজ্ঞাসা করলাম,
অর্ণব : কি ব্যাপার ওরনা দিয়ে এত কষ্ট করে পর্দা করলেন যে। হাত ব্যাথা হয়ে যাবে তো।
তানহা : শরিয়তে বলা হয়েছে সব দিক পর্যালোচনা করে বিবাহের বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেলেই তবে ছেলে মেয়েকে দেখতে পারবে।
হাদিসে আছে,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে-যা তাকে আগ্রহশীল করবে, তবে সে যেন তা করে নেয়।”
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, “আমি বনী সালামা গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং তাকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য খেজুর গাছ তলায় লুকিয়ে থাকি ।একদিন আমি তাকে দেখে ফেলি, যা আমাকে তার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে।ফলে আমি তাকে বিবাহ করে নিই।”
-{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৭}💕
বলেই তানহা হাটতে শুরু করলো!
আল্লাহ! আমি তো শুনে পুরাই হতবাক। এটা কি ছিলো? আমি নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। প্রোপজ করার স্টাইলটা তো আরো মাথা নষ্ট করে দেওয়ার মতো। হাদিসের দ্বারা প্রোপজ?! কেউ কখনো কল্পনা করছিলো! নাহ আমার বউটা সত্যিই অনেক ট্যালেন্টেড।
কিন্তু আমি আর কথা বাড়াইলাম না। কারন বাস ছেড়ে দিলে আমরা দুইজনে বিপদে পড়বো। তাড়াতাড়ি করে উনার সামনে গেলাম। আমি সামনে হাটতেছি আর তানহা আমার পিছনে। উনি যেহেতু বোরখার উপর ওরনা পড়ছেন তাই খুব ভালোভাবে কভার করতে হচ্ছিলো যাতে কারো নজর না যায়। পুরো রাস্তা আমরা আর কোন কথা বলিনি।
দেখলাম বাসের হেল্পার দাঁড়ায় আছে,
হেল্পার : তাড়াতাড়ি আসেন ভাই। আপনারা তিন মিনিট লেট।আর দুই মিনিট দাঁড়াইতাম। নাহলে রাখেই চলে যাইতাম।
অর্ণব : একটু দেরি হয়ে গেলো। আল্লাহ আপনার ভালো করুক।
হেল্পার : যখন দেখলাম ভাবীকে নিয়ে যাচ্ছেন তখনই বুঝছিলাম আপনাদের দেরী হবে।
হেল্পারের কাছে “ভাবী” ডাক শুনে তানহা আমাকে রেখে তাড়াতাড়ি বাসের ভিতর চলে গেলো। আমিও বাসে উঠে নিজের সিটে গেলাম। সিটে বসে কিছুক্ষণ আমরা কোন কথা বলিনি।
নিরবতাটা আমিই ভাঙ্গলাম,
অর্ণব : হাদিসটা যখন আমি পড়ছিলাম তখন অটোমেটিক্যালি হাসি বেড় হয়ে গেছিলো, খেজুর গাছের নিচে লুকায় থাকার বিষয়টাতে।
তানহা : হাহা। আমারো হাসি বের হয়ে গেছিলো ঘটনাটাতে। আর আমি দুঃখিত সেদিনের ঘটনার জন্য।
অর্ণব : কোনদিনের?
তানহা : দ্বিতীয় দিন যখন আপনি আমাকে দেখছিলেন। আসলে আমি কাউকেই আমার চেহারা দেখাই না। কঠোরভাবে পর্দা করি। আর আপনি আমাকে সাহায্য করতে আসে ভুল করে দেখে ফেলছিলেন তাই বোকা দিছিলাম।
অর্ণব : হাহা। আমি রাগেই গেছিলাম। তাই আপনার সাথেও খারাপ ব্যবহার করছি। আমাকেও মাফ করে দিয়েন। আর হ্যাঁ “বাবার গাড়িতে যাবেন…” কথাটা বলা যদিও উচিৎ হয় নি তবে আমি লক্ষ্য করছিলাম কথাটা উঠাতে আপনি চুপ হয়ে গেছিলেন। কারণ কি?
(কথা গুলো আমি নিচের দিকে আর তানহা বইয়ের দিকে তাকিয়েই বলতেছিলাম। কারণ তানহা শুধু ওরনা পড়েছিলো আর মুখ খোলা ছিলো।)
তানহা : আমার বাবা-মা খুব ছোটবেলায় মারা গেছে। একটা এতিম খানায় মানুষ হয়েছি। মনে হয় বুঝতে পারছেন।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। সামনের দিকে তাকায়ে চোখ বন্ধ করে নিছিলাম। নিজের উপর খুব রাগ উঠতেছিলো। মনের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করছি।
অর্ণব : আমি বুঝতে পারিনি বিষয়টা। আমি সত্যিই দুঃখিত।
তানহা : না ঠিক আছে। এতক্ষণে ভুলে গেছি ঐটা।
(এইবার তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম ইনাকেই বিয়ে করবো। আমি তানহার পরিবারকে নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। ওরা মানে নিবে কি না! এখন আর কোন অসুবিধা নাই। দিনাজপুরে যায়ে কালকেই সব কিছু করে নিবো ইনশাল্লাহ! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম)
উপরে তাকিয়ে বললাম,
অর্ণব : যাক আম্মুর বউয়ের আশা পূরণ হলো। কালকেই বউ দেখতে পাবে।
আমি বুঝতে পারলাম অর্ণব কি বলতে চাচ্ছে তাই আমিও সাংকেতিক ভাষায় উত্তর দিলাম,
তানহা : Permission দেওয়া হলো।
বুঝলাম তানহা উনাকে দেখার পারমিশন দিছে। শুভ কাজে আর দেরী কেনো। আল্লাহর নাম করে তানহার দিকে প্রথম বার ভালো মতো তাকাইলাম,
আমি ওর দিকে তাকাতেই আমার মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনূভুত হলো। যদিও সেদিন উনার চেহারা দেখছিলাম। কিন্তু আজকে আর সেদিনের দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে। এত সুন্দর চেহারা, তানহা কলম দিয়ে ঠোঁটে আঘাত করতেছে আর পড়তেছে। বাইরের হালকা বাতাসে ওরনার সাইড দিয়ে চুলগুলা মুখের কাছে বার বার আসছে,আর সে বাম হাত দিয়ে বার বার চুলগুলো সরায় দিচ্ছে। আমি অপলক দৃষ্টিটে তাকিয়ে আছি,মনে হচ্ছে এই ভাবে তানহাকে দেখতে দেখতে আমার সারাটা জীবন পার করে দিতে পারবো।
তানহা : হইছে আর না। আমাকে পড়তে দিন। পড়তে পারতেছিনা আপনার জন্য।
আমি উনার কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম। অনেক্ষণ আমরা কোন কথা বলিনি।
অনেক্ষণ পর,
তানহা : আমি একটু ঘুমাবো। সকালে আমার কলেজের ইন্টারভিউ আছে। একটু দেখে রাখিয়েন।
অর্ণব : আপনি কথায় যাচ্ছেন আর কোন কলেজে?
তানহা : আমি দিনাজপুরে যাচ্ছি আর দিনাজপুর সরকারি কলেজের এসিস্ট্যান্ট ইংরেজি শিক্ষিকার পদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ। তার জন্যই পড়াশুনা করতেছিলাম। আপনি?
প্রথমটা শুনে যদিও খুশি হইছিলাম। কিন্তু পুরোটা শুনে আমি হাসবো না কাদবো তা ঠিক করতে পারতেছিলাম না। আমি যে কলেজে পড়ি আমার বউ সেখানকার শিক্ষিকা? আমি শেষ!
অর্ণব : আমার বাসাও দিনাজপুরে। আপনি ঘুমান।
তানহা পাশেই হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছে। আমি “Christ In Islam” বইটা পড়া শুরু করলাম।
প্রায় আধা ঘন্টা পর, আমি বই পড়তেছি এমন সময় পাশে একজন বৃদ্ধা আসলো। বললো,
: বাবা। বাসটার পিছনের দিকের সিটে একটু বেশি ঝাঁকি খাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। খুব অসুবিধা হচ্ছে তুমি যদি আমার সাথে সিট পাল্টাতে তাহলে খুশি হতাম।
বৃদ্ধার কাছে এটা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারতেছিলাম না! কোন চিপায় পড়ে গেলাম। তানহাকে ছাড়তেও ইচ্ছা করতেছে না। আবার বৃদ্ধার কথাও ফেলতে পারবো না। কেননা,
হাদিসে আছে,
“আল্লাহ তায়ালা বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করাকে পছন্দ করেন।”
-(জামে সগীর/ মাকাসিদে হাসানা)💕
শেষ পর্যন্ত সাহায্য করাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিলাম। তানহাকে ডাকলাম,
অর্ণব : এই যে শুনছেন?
ঘুম থেকে চোখ খুলে,
তানহা : কি হলো? এতক্ষণ পর যা একটু ঘুম আসলো আপনার জন্য ভেঙ্গে গেলো। ডাকাডাকি করতেছেন কেনো? আপনাকে বিয়ের জন্য শুধু চেহারা দেখাইছি এর মানে এই না যে আপনি আমার সাথে যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন। জ্বালাইলে আমি প্রস্তাব ফিরায় দেবো।
আমি তো পুরাই অবাক! এই মেয়ে কি বলে। মেজাজটা আবার গরম হয়ে গেলো। বললাম,
অর্ণব : দেখুন আমি এটা বলার জন্য ডাকলাম যে এই বৃদ্ধার পিছনে বসতে কষ্ট হচ্ছে। তাই ইনি আমার জায়গায় বসবে। আপনার নিরাপত্তার খাতিরে বিষয়টা জানায় দিতেই ডাকতেছিলাম। ভালো থাকুন। আসসালাম অলাইকুম।
তারপর বৃদ্ধাকে সিট বুঝায় দিয়ে উপর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে পিছনে চলে আসলাম।
(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply