Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 24
বৃদ্ধাকে সিট বুঝায় দিয়ে উপর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে পিছনে চলে আসলাম।
বৃদ্ধার সিট ছিলো বাসের একদম পিছনে। এজন্যই বৃদ্ধা এত ঝাঁকি খাচ্ছিলো। পিছনের সারিটা পুরোটাতেই সিট থাকে মাঝে ফাঁকা থাকে না, আর ভালো লাগলো যে সবগুলা সিটই ফাঁকা। তারমানে এখানকার সবাই নেমে গেছে বা সামনে চলে গেছে। উনার জন্য মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছিলো। কিন্তু এটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। আরাম করে বসলাম। উনার পাশে তো খুব সাবধানে বসতে হইতো। এক তো নন মাহরাম তাই ষ্পর্শ জায়েয নাই তার উপর আবার উনিই প্রথমে ভেটো বসায় দিছিলেন যাতে উনার শরীরে যাতে ষ্পর্শ না লাগে। এখন হাত – পা ছাড়ে বসতে পারবো। আবার উনার দিকে তাকানো যেত না, যদি আবার উনার উপর চোখ পড়ে যাইতো। এখন যে দিকে খুশি তাকাইতে পারবো। ইয়াহু! সব মিলায় নিজেকে স্বাধীন লাগতেছে।
আরামে বসে বইটা পড়তেছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনতে পাইলাম কে যেন বলতেছে,
: দুঃখিত।
আমি বই থেকে চোখ সরায় সামনে তাকাইলাম। সামনে তানহা দাঁড়ায় আছে। মাথায় ওরনা আর ওরনার একাংশ দিয়ে মুখ ঢাকায় রাখছে,শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে।
অর্ণব : কি হলো আবার।
তানহা : আসলে ঘুম থেকে উঠছিলাম, এক তো কাঁচা ঘুম থেকে উঠাইছেন আবার আমার রাগটা একটু বেশি তো তাই উল্টা-পাল্টা বলে ফেলছি। Sorry!
অর্ণব : জি আমি মাফ করে দিছি আপনি যান ঘুমান।
(এখন আর কথা বলার ইচ্ছা নাই। তাই এখন কোনমতে উনাকে ভাগাইতে পারলেই বাঁচি।)
তানহা : ধন্যবাদ!
দেখলাম তানহা আমার পাশে বসলো। সাথে উনার ছোট ব্যাগটাও আছে।
অর্ণব : এখানে বসলেন কেনো? আপনার সিটে বসেন। আপনাকে আমি মাফ করে দিসি। প্লিজ যান। তার উপর আবার আপনার কালকে ভাইভা আছে, যায়ে ঘুমান।
তানহা : আসলে ওখানে বৃদ্ধা ঘুমাচ্ছে। উনার নাক ডাকার শব্দে আমার ঘুম আসতেছিলো না। তাই এখানে আসলাম। আশা করি আপনার সমস্যা হবে না।
আমি আর কি বলবো বুঝতে পারতেছিলাম না। আমি এতটা তো নিষ্ঠুর না যে উনার কালকে পরিক্ষা আর আমি উনাকে ঘুমাতে দিবো না। তাই বাধ্য হয়ে উনাকে এখানেই বসতে বললাম।
অর্ণব : তাহলে আপনি এখানে ঘুমান। আমি আপনার জায়গায় যায়ে বসতেছি।
রাগী স্বরে,
তানহা : একদম না। আমি এখানে একা ঘুমাবো? এটা পাবলিক বাস। ঘুমের ভিতর যদি কেউ…। আপনার দায়িত্ববোধ নাই?
অর্ণব : আচ্ছা বাবা আপনি ঘুমান। আমি এখানেই আছি।
তানহা : একটু সরে বসেন আমি লম্বালম্বিভাবে শুবো।
আমি সরে বসলাম। ধুর আবার সেই আটসাট হয়ে বসা। এগুলা ভালো লাগে?
উনি ঘুমাচ্ছেন আর আমি বই পড়তেছি। দেখলাম ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজে। বাস চলতেছে।
পড়তে পড়তে কখন যে এগারোটা বেজে গেলো বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ তানহা ডাক দিলো,
তানহা : কয়টা বাজে?
ঘড়ি দেখে,
অর্ণব : এগারটা। আপনি কখন ঘুম থেকে উঠলেন।
তানহা : এখনি। আপনি ঘুমান নি?
অর্ণব : একটা মেয়ে পাবলিক বাসে আমার উপর ভরসা করে পাশে শুয়ে আছে আর আমি ঘুমাবো! আজব কথা বললেন তো আপনি।
(আমি যত দেখতেছি তত উনার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছি। একটা ছেলে এতটা দায়িত্বশীল আর পরিণত হতে পারে জানা ছিলো না। তখন থেকে সব কথাগুলা বইটার দিকে তাকিয়েই বলতেছে। কতটা আল্লাহভীরু হলে তা সম্ভব!)
তানহা : নেন আপনি এখন ঘুমান!
অর্ণব : আরে নাহ। আমি এই বইটা শেষ না করে ঘুমাইতেই পারবো না। আপনি ঘুমান।
তানহা : বললাম না ঘুমান। আপনার অযুহাত শুনতে চাইনি।
বলে আমার হাত থেকে বইটা কারে নিতে আসলো।
এই সময় প্রচন্ড জোরে একটা আওয়াজ হলো। তানহা ভয়ে আমার হাতটা শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধরে ফেললো। আমি হাতের ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম। দেখলাম তানহা চোখ বন্ধ করে আছে।
অর্ণব : ছাড়ুন আমার হাত কেনো ধরছেন?
তানহা : Sorry sorry! আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম। এটা কিসের আওয়াজ ছিলো?
দেখলাম বাসও থেমে গেছে। যারা ঘুমাচ্ছিলো সবাই জাগে উঠছে।
হেল্পার : পিছনের চাকা বাস্ট হয়ে গেছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
ওহ এজন্যই এখানে এতো জোরে শব্দ হইছিলো। তানহার তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে গেছিলো।
তানহা : রাত হয়ে গেলো,আবার গাড়ির চাকাও ফুট্টুস! ভাবছি আমি কি কাল পরিক্ষা দিতে পারবো?
অর্ণব : ফুট্টুস?😁 মজা পাইলাম। আরে চিন্তা করিয়েন না ২০ মিনিটের ভিতর নতুন চাকা লাগাবে ততখন বসে পড়ুন।
তানহা : আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি পরিক্ষা দিতে পারব না।
অর্ণব : এসব ভাবা বাদ দিয়ে পড়তে বসেন আর না হলে চলেন বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
তানহা : হুম চলেন।
রাগে,
অর্ণব : আজব মেয়েতো! পাগল হলেন নাকি?
তানহা : কেনো আপনিই তো বললেন যাইতে।
অর্ণব : আমি বললেই যাইতে হবে? ভুল করে বলে ফেলছিলাম। আর একটা অচেনা জায়গায় একটা মেয়েকে নিয়ে এত রাতে রাস্তায় হাটবো! বাবারে বাবাহ। ভাবতেও গা শিউরে উঠতেছে।
মনে মনে,
তানহা : আসলেই তো! কি পরিমানে উনার উপর ভরসা করে ফেলতেছি আল্লাহ! উনার সাথে রাতেরবেলা হাটতে প্রচন্ড ইচ্ছা করতেছিলো। তাই কিছু ভাববার আগেই হ্যাঁ বলে দিছিলাম। আমরা মেয়েরা যার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি বা যাকে ভালোবাসি তার কাছে নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করি। আল্লাহকে শুকরিয়া যে এমন একজনের প্রতি আমাকে দূর্বল করছে যার কাছে আমি আসলেই নিরাপদ। দুনিয়া ও আখিরাত দুই দিক থেকেই। সত্যিই আনি ভাগ্যবতী!
অর্ণব : আপনি পড়েন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
বাস থেকে নিচে নামলাম। হেল্পার বললো সমস্যা দেখা দিছে তাই আধা ঘন্টার আগে এটাই বলা যাবে না যে আরো কতক্ষণ লাগবে। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আর গাড়িটা থামছে একটা নির্জন জায়গায়। তবে একটু দূরে একটা বাজার আছে। আমি সেদিকে হাঁটা শুরু করলাম। মাঝে মাঝে দু-একটা বাস,ট্রাক বা লরি পাশ দিয়ে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে বাজারে পৌঁছে গেলাম। একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম। যদিও চা তেমন একটা খাইনা। মাঝে মাঝে খাই। তবে আজকে রাত জাগতে হবে মনে হচ্ছে তাই দোকানদারকে বললাম ১ টা চা দেন।
দোকানদার :- বসেন দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর দোকানদার চা দিল।
এমন সময় ৫-৬ টা ছেলে আসলো। এসেই দোকানদার কে বাজে ভাবে গালাগালি শুরু করল। তারপর বলল কিরে তুই কি চাস কাললেই তোর মেয়েকে রাস্তায় বিরক্ত করি, বাজে কথা বলি।
দোকানদার :- না বাবারা, ওই ছোট মানুষ। দোহায় তোমাদের, ওর সাথে এমন করোনা।
ছেলেগুলা:- তো তুই চা পাঠাসনি কেন।
দোকানদার :- তোমরা টাকা দেওনা, কাপ ভেঙ্গে ফেলো। তাই আজ চা দিতে যাইনি।
ছেলেগুলা:-কাল তোর মেয়ে যেন স্কুলে না আসে, আসলে তো বুঝতেই পারতেছিস।
আর বসে থাকা যায় না।
অর্ণব : এই যে ভাইসব এদিকে একটু শুনো তো।
একজন : কি হলো তোর আবার?
অর্ণব : ইভ টিজিং। অর্থাৎ, নারীকে উত্যক্ত করা। আসলে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, নারীরা তো মাল হয়, তারা তো ভোগের জিনিস। তাই না? তাহলে তো আপনার মা-বোনটিও মাল, তাই না?
একজন : তোর মাথা ঠিক আছে? তুই কাকে কি বলতেছিস জানিস?
অর্ণব : আমি ঠিক বলতেছি। তারাও তো ভোগের জিনিস। তাহলে তাদের যেয়ে টিজ করেন। তাদের মাল বলে ডাক দিন। একটু রসে মাখা খারাপ মন্তব্য করুন!
একজন তো রীতিমতো আমার কলার ধরে বললো,
: কি বললি আরেকবার বল।
অর্ণব : কি আমার কথা শুনতে কি খারাপ লাগছে? এজন্যই তো আমার কলার ধরে আছেন। খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।
বাজার এলাকা তাই চারপাশে ভীর জমে গেলো। মানুষদের দেখে কলার ছেড়ে বললো,
: অনেক বড় ভুল করতেছিস।
অর্ণব : আর আপনারা কি ভালো কাজ করতেছেন? নিজেদের মা-বোনেকে টিজ করার সময় কি আপনাদের হাত পা কাপবে না? তাহলে আপনারা কোন সাহসে আরেক জনের মা-বোনকে টিজ করেন? আপনারা নিজেকে কি ভাবেন?
মাথা নিচু করে আছে। আমার কথার জন্য না লোকের ভয়ে আল্লাহ জানে।
লোকজনকে উদ্দেশ্য করে,
অর্ণব : আর আমাদের সমাজের মানুষের একটা প্রধান সমস্যা হচ্ছে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না। যার জন্য এরা এতো সাহস পায়। একজন নারী যেখানে হেনস্তার শিকার হচ্ছে সেখানে পাবলিকের উচিত হেনস্তাকারিকে উচিত শিক্ষা দেওয়া। আর আপনারা তা না করে দেখে থাকেন ঠিক এখন যেমন দেখে আছেন।
কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলো আসল ঘটনা কি! আসল ঘটনা বলাতে লোকজন ফুসে উঠলো। মারে মারে অবস্থা। শেষ পর্যন্ত কিছু বিজ্ঞজনদের কথায় কান ধরে উঠা বসা করাইলো সবাইকে। তারপর সবাই ওদেরকে সতর্ক করলো যদি দোকানদারের মেয়ের কিছু হয় আর আরেকবার গুন্ডামি করতে আসে তাহলে কঠিন শাস্তি হবে ওদের।
শেষে আমি ওদের বললাম,
অর্ণব : কিছু কথা শুনে রাখো,
*যে তোমাদের পাশে ঘুমায় সে তোমার স্ত্রী।
*ভবিষ্যতে যে তোমাদের বুকে ঘুমাবে সে হবে তোমাদের মেয়ে।
*তোমরা অসুস্থ হলে যার ঘুম হারাম হয়ে যায়, সেই ব্যাক্তিটি হচ্ছেন তোমাদের মা।
- যে নারী আপনার পাশের রুমে ঘুমিয়ে আছেন সে তোমাদের বোন।
তাহলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া মেয়েটি মাল হয় কিভাবে? সেওতো কারো মা,বোন,মেয়ে বা স্ত্রী। একজন ভদ্র এবং আদর্শ নারীর সন্তান কখনো অন্য কোনো নারীকে হেনস্তা করার চিন্তাও করতে পারে না। তাদের সম্মান দিতে শিখো।
ওরা মাথা নিচু করে চলে গেলো। বুঝলাম যদি আমাকে ধরতে পারে তাহলে রোস্ট করে চিবায় খাবে। লোকজনের ভীরও ফাঁকা হয়ে গেলো।
আমি দোকানদারকে চায়ের টাকা দিয়ে চলে আসতে ধরলাম,এমন সময় দোকানদার বলল,
দোকানদার : তুমি জানোনা ওরা কতটা খারাপ তারাতারি এ শহর থেকে চলে যাও।
অর্ণব : আমার চিন্তা করিয়েন না। আর শুনুন আপনার মেয়েকে চোখে চোখে রাখবেন। আর পারলে নিজে যায়ে স্কুলে রাখে আসবেন। বলা যায় না মাথা গরম আছে ওদের, কি করতে কি করে ফেলে।
দোকানদার : ঠিক আছে বাবা।
অর্ণব : আপনার দোকানে আর জ্বালাইতে আসবে না আশা করি। ঐ সাহস আর হবে না ওদের।
দোকানদার : তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো। তবে ঝুঁকিটা নেওয়া উচিৎ হয় নি তোমার।
অর্ণব : হুম আংকেল। আরেকটা কাজ করিয়েন। পুলিশে একটা সাধারণ ডাইরি করিয়েন ওদের নামে। গুন্ডামি আর ইভটিজিং এর হুমকি দুটারই। তাহলে ওরা ভুল করেও কিছু করবে না। আর সাক্ষী হিসেবে তো আজকে পুরা বাজারের লোক ছিলো। তাই কালকেই ডাইরিটা করে নিবেন।
দোকানদার : ঠিক আছে বাবা। আমি কালকেই করবো। তুমি এখন যাও। আর দ্রুত এই এলাকা ছাড়ো। ওরা খুব খারাপ।
অর্ণব : ঠিক আছে। আসসালাম অলাইকুম।
দোকানদার : অলাইকুম আসসালাম।
সালাম দিয়ে দোকান থেকে চলে আসলাম। তারপর একটা ষ্টেশনারী থেকে কিছু খাবার কিনে বাসের দিকে হাটা শুরু করলাম। ভাগ্য ভালো যে, ছেলেগুলা বাস যেদিকে আছে তার উল্টো দিকে গেছে। এতক্ষণে তো ওরা আমাকে মনে মনে ধুয়ে দিচ্ছে এটা নিশ্চিত। এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পারি চলে যেতে হবে। আল্লাহ করে বাসের চাঁকা ঠিক হয়ে গেলে বাঁচি।
এগুলা ভাবতে ভাবতে বাসের কাছে চলে আসলাম। বাসের ভিতর ঢুকে দেখি
বাসের ভিতর কেউ নাই, সাইমা একা একা কান্না করতেছে।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য তো আমি নির্বাক হয়ে গেছিলাম। কিছু উল্টা-পাল্টা হয়ে যায় নি তো মেয়েটার সাথে। নাহ! মেয়েটাকে রাখে যাওয়া একদম উচিৎ হয় নি। নিজের প্রতি প্রচুর রাগ হচ্ছিলো। তাড়াতাড়ি তানহার কাছে যায়ে,
অর্ণব : তানহা…. এই তানহা কি হইছে।
তানহা মাথা নিচু করে, মুখে হাত দিয়ে, কোন কথা না বলে কেঁদেই যাচ্ছে।
(চলবে…..)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁
💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞
Leave a Reply