অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 41

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 41

বিকালবেলা বাস রাজশাহী পৌছালো। তানহার সাথে বাস থেকে নামলাম। রাজীবকে খবরটা দিছিলাম। কিন্তু ওরা পুরো পরিবার নিয়ে বেড়াতে গেছে। তবে রাজীব চাবি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। একজন পরিচিত লোকের দারায় চাবিটা পাঠায় দিছে৷ চাবি নিয়ে আমরা রাজীবদের বাসার দিকে রওনা হলাম । আমাদের পরিবারের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রাজীবদের। আর আমাকে রাজীবের বাবা-মা নিজের ছেলে মতো মনে করে। তাই নিজের বাসা মনে করে থাকতে বলছে। তবে এখানে একটা ভদ্রতার বিষয় আছে।

তানহাকে নিয়ে রাজিবদের বাসায় গেলাম। বাসায় পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাসায় ঢুকে আমি শুধু গেস্ট রুম খুললাম। তাছাড়া কোন ঘর খুলিনি।

তানহা : আমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।

অর্ণব : হুম যাও।
তারপর তানহাকে বাথরুম পর্যন্ত নিয়ে গেলাম।

তানহা : হাত দিয়ে দেখায় দিলেই তো আমি নিজেই আসতে পারতাম। আসার কি দরকার ছিলো? আমি কি বাচ্চা?

অর্ণব : হাহা। না তবে তুমি আমার বউ। তোমাকে সর্বাবস্তায় সম্মান করা আমার কর্তব্য। কেননা,

হাদিসে আছে,

সাফিয়্যা (রা.) ছিলেন, নবীজি সাঃ এর অন্যতম স্ত্রী। তিনি কিছুটা খাটো ছিলেন, ফলে উটের পীঠে আরোহন করতে কষ্ট হতো। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাহায্য করার জন্যে নিজের হাঁটু পেতে দিতেন। সাফিয়্যা (রা.) সেই হাঁটুতে পা রেখে উটের হাওদায় ওঠে বসতেন
-[সহিহ বুখারি: ৪২১১]💕

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি তাঁর স্ত্রীর সাহায্যে নিজের হাঁটু বিছিয়ে দেন আর সেই হাঁটুতে পা দিয়ে ভর করে স্ত্রী উটের পীঠে চড়েন! কী অসাধারণ দৃশ্য! কী চমৎকার বিনয় ও ভালবাসা! আর আমি আমার বউয়ের জন্য এতটুকু করবো না?

তানহা : তাহলে তো স্যার এখন আমার দায়িত্বও বেড়ে গেলো😜

এই বলে তানহা আমার কাছে আসলো। আমি শুধু চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে দেখে থাকলাম।

……

অর্ণব : এবার ম্যাডাম আপনার লজ্জা করে না এসব করতে?

তানহা : নাহ। কারণ এটা আমার একমাত্র স্বামীর জন্য ছিলো। আর

হাদিসে আছে,

“যে স্বামী তার স্ত্রীকে একবার চুমু দিবে এবং যে স্ত্রী তার স্বামীকে একবার চুমু দিবে,
প্রতিটা চুমুর বিনিময়ে ১০০ টা নেকি তাদের আমলনামায় লিখা হয়।”
-[মুসনাদে আহমদ (স্বামী স্ত্রী অধ্যায়)]💕

বুঝলেন স্যার?

অর্ণব : জি ম্যাডাম।

তানহা : এই দেখো। আমি কাপড় নিতেই ভুলে গেছিলাম। ভাগ্যিস এখন মনে পড়লো।
তারপর তানহা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।

আমি আসে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। আসলে এটাই বাস্তবতা। জ্ঞানীরা বলেন, নারীকে আপনি যেটুকু ভালবাসা ও সম্মান দিবেন, সে বিনিময়ে তারচেয়ে বেশি ভালবাসা ও সম্মান ফিরিয়ে দেবে। আবার তাকে যতটুকু ঘৃণা দেখাবেন, বিনিময়ে সে তারচেয়েও বেশি ঘৃণা ফিরিয়ে দেবে। তাদের ভালবাসা ও সম্মান দিলে তারাও সম্মান করবে, ভালবাসবে। যেমনটা ঘটেছে সাফিয়্যা (রা.) ও নবীজি (সাঃ) উনাদের জীবনে।

তানহা কিছুক্ষণ পর কাপড় চেঞ্জ করে বেড় হলো। তানহাকে দেখে আমি থো। তানহাকে এখন পর্যন্ত আমি শুধু জামা-পায়জামা আর শাড়িতেই দেখছি। আর শাড়িতে তো তানহার উপর নানাভাবে ক্রাস খাচ্ছিলাম। কিন্তু এটা? এই মেয়ে তো আমাকে পাগল করে দিবে। একটা কালো প্লাজু, অফ হোয়াইট ফতুয়া টাইপ কামিজ আর সাথে কালো ওরনা। তানহার এই রূপ বর্ণনা করার ভাষা আমার নাই।

অর্ণব : এই এগুলা কি শুরু করছো? আমাকে কি মারেই ফেলবা? একটা মেয়ের এত রূপ কিভাবে হতে পারে?

তানহা : আমি নিজের রুমে এভাবেই থাকি। তুমিই প্রথম পুরুষ যে আমাকে এই রূপে দেখলা😜

অর্ণব : সত্যি?

তানহা : জি হ্যাঁ। তুমি কত কষ্ট করে পরনারী থেকে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে রেখেছিলা শুধু আমাকে দেখবা বলে। এটা ছিলো তারই পুরষ্কার। আর এটা তোমার প্রাপ্য। এজন্যই আমি নিজেকে সর্বোচ্চ সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতাম।

কাছে গিয়ে তানহা কপাল আমার কপালে ঠেকিয়ে,
অর্ণব : আমি জানি আর এটা তুমিও জানো যে ইসলামে মেয়েদের একমাত্র স্বামীর জন্য যে কোনো পোশাক পরিধান করা যাবে, কেবলমাত্র তাকেই ভালো লাগানোর জন্য। যে কোনো প্রসাধন কেবল স্বামীর মন আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। সাজ-সজ্জাতেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার রহস্য। তাই তা শুধু স্বামীকে দেখার জন্য জায়েয।
তবে সেগুলাও শরিয়তের সীমার মধ্যে।

হাদিসে আছে,

“যা ইচ্ছা খাও,পান কর ও পর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. বলেন, তুমি যা চাও খাও এবং যা পারো পরিধান কর তবে তোমার থেকে দুটি জিনিস যেন না প্রকাশ পায় -অপচয় ও অহংকার”।
-(সহীহ বুখারী)💕

এগুলা কি জানো?

হাতের টাওয়েলটা সাইডে রেখে, আমার ঘাড়ে দুই হাত দিয়ে,
তানহা : জি জানি। আমরা সৌন্দর্য চর্চা করতে পারবো একমাত্র স্বামীর জন্য। তবে কিছু বিধিনিষেধ আছে।

*সৌন্দর্য চর্চা হালাল ও হারাম হওয়ার কষ্টিপাথর হলো এই যে, “ঐ প্রসাধনদ্রব্য ব্যবহারে যেন অঙ্গের বা ত্বকের কোনো ক্ষতি না হয়”।

*ঐ দ্রব্যে যেন কোনো প্রকার অবৈধ বা অপবিত্র বস্তু মিশ্রিত না থাকে, তা যেন বিজাতীয় মহিলাদের বৈশিষ্ট্য না হয়। (যেমন সিদুর, টিপ প্রভৃতি) এবং তা যেন নন-মাহরামের সামনে প্রকাশ না পায়”।

  • পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোনো প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।
  • যে লেবাস বা অলঙ্কারে ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোনো বিজাতীয় ধর্মীয় প্রতীক চিত্রিত থাকে মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।

*মাথার ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে জাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই উচিত।

*মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়।

*সৌন্দর্যের জন্য সামনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে কোনো নায়িকা বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে ছেঁটে বিভিন্ন ধরনের কাট ইত্যাদি হারাম।

আবার স্বামীর জন্য নিজেকে সর্বদা সুরভিতা করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে। ভালোবাসায় যাতে ঘুণ না ধরে; বরং তা যাতে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় সে চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর উভয়কেই রাখা উচিত।
তবে,
*মহিলা কোনো সেন্ট বা সেন্টজাতীয় প্রসাধন ব্যবহার করে বাইরে গাইরে-মাহরামের সামনে যেতে পারে না।
কারণ, তার নিকট থেকে সেন্ট যেমন স্বামীর মন ও ধ্যান আকর্ষণ, ঠিক তেমনিই পরপুরুষের মন, ধ্যান, প্রভৃতি আকৃষ্ট হয়। তাই তো যারা সেন্ট ব্যবহার করে বাইরে নন-মাহরাম পুরুষের সামনে যায় তাদেরকে শরীয়তে ‘ব্যাভীচারিনী’ বলা হয়েছে। আর এখানে খেয়াল রাখার বিষয় যে, সেন্টে যেন এলকোহল বা স্পিরিট মিশ্রিত না থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের নিকট) বৈধ নয়।

এছাড়া আরো অনেক বিধিনিষেধ আছে। এতেই হবে নাকি আরো বলতে হবে?

অর্ণব : হাহা। যথেষ্ঠ হয়েছে। আর আমারও সময় নেই। রাতের খাবার আনতে হবে ভুলে গেলা?

তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে,
তানহা : তাড়াতাড়ি যাও। পরে রাত হয়ে যাবে। আমি তো একদম ভুলেই গেছিলাম।

অর্ণব : আমি আসলে মোবাইল করবো। তার আগে গেট খুলবা না ঠিক আছে?

তানহা : ঠিক আছে। এই ড্রেস পাল্টাবা না?

অর্ণব : একেবারে বাইরে থেকে আসে পাল্টাবো।

দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে,
তানহা : সাবধানে যেও। আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

তারপর আমি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আগে অনেকবার আসার সুবাদে রাস্তাঘাট ভালোমতোই চিনি। একটা রেস্টুরেন্টে যায়ে খাবারের অর্ডার দিলাম। প্রচুর ভীর তাই লাইনে দাঁড়ায় থাকতে হলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।ভাই এতো ভীড় কেনো?

লোকটি : অলাইকুম আসসালাম।আপনি সম্ভবত আজকে প্রথম আসছেন। এখানে প্রতিদিনই এসময় ভীড় হয়। কোন কোন সময় তো খাবার পাওয়াই যায় না।

অর্ণব : ওহ!

কিছু দূরে দেখলাম একটা বাচ্চা ওর আম্মুর কাছে কেক খাওয়ার জেদ করতেছিলো। বাচ্চাটার আম্মু বললো,
বাচ্চার আম্মু : মামণি আগে আল্লাহর কাছে চাইবা। যে, “ইয়া আল্লাহ আমার অমুক খাবারটা চাই। তুমি এই ব্যাপারে আব্বুর মন নরম করে দাও এবং আব্বুকে সামর্থ্য দান করো। আব্বু যেন আমাকে জিনিসটা কিনে দেয়।” বুঝলা?

শান্ত হয়ে,
বাচ্চা : হুম আম্মু। আমি দোয়া করতেছি।

বাচ্চার আম্মু : তুমি দোয়া করো আমি তোমার আব্বুকে বলে আসতেছি। এখানেই থাকবা। কোথাও নড়বা না।

বাচ্চা : ঠিক আছে আম্মু।

তারপর উনি আমার সামনে থাকা লোকটার কাছে আসে বললেন,
বাচ্চার আম্মু : এই যে শুনছেন?

লোকটি : জি আমি শুনছি। কিছু বলতে হবে না। যায়ে বাবুকে বলো আল্লাহ ওর দোয়া কবুল করছে।

তারপর উনি চলে গেলেন। আমি তো পুরা অবাক। একটা পরিবার কতটা দ্বীনদার হলে এরকম ইসলামিক ভাবধারাকে নিজেদের মধ্যে লালন করতে পারে! আমি লোকটাকে বললাম,
অর্ণব : উনি কি আপনার স্ত্রী ছিলেন?

লোকটি : হুম। আমি অনেক ভাগ্যবান যে এরকম একটা স্ত্রী পেয়েছি।

অর্ণব : জি সত্যিই আপনি ভাগ্যবান। আপনাদের সন্তানটি খুব ভালো শিক্ষা পাচ্ছে পরিবার থেকে। কারণ সে এভাবেই আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে বড় হবে। যা কিছু চাইবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইবে।

লোকটি : দোয়া করিয়েন।

অর্ণব : আরো কিছু কি শিখান? আমিও আমার ভবিষ্যত সন্তানদের এরকমভাবে শিক্ষা দিতে চাই।

লোকটি : ওহ। জি আরো অনেক কিছুই শিখাই। যেমন যদি কিছু দিতে না পারি কিংবা ওর কোন চাওয়া পূরণ নাহয় তখন বলি এর মানে আল্লাহ এটা তোমাকে দুনিয়ায় দিতে চাননি। কারণ তিনি জান্নাতে তোমাকে এর থেকে অনেক বেশি দিতে চাচ্ছেন।

অনেক সময় বলি,
এই পছন্দের জামা টা কিনতে পারোনি; জান্নাতে গেলে পাবে।

  • ঐ খেলনা টা পাওনি; জান্নাতে গেলে পাবে।
  • এটা খেতে ইচ্ছে হয়েছে পাওনি?
    -জান্নাতে গেলে পাবে।

তুমি দুনিয়াতে যত স্যাক্রিফাইস করবা, জান্নাতে তত পাবা। এখানে একটা খেলনা না পেলে জান্নাতে দশটা খেলনা পাবা।

মূল কথা বাবুকে জান্নাত লোভী বানাচ্ছি। হাহা।

অর্ণব : দারুণ কাজ করতেছেন।

লোক : আবার দ্বীনি শিক্ষাটাও দিই। তাই উত্তরও দেয় ইসলামিক।

যেমন যদি জিজ্ঞাসা করি,
আমাদেরকে কে সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর দিবে,

  • আল্লাহ।

আমাদেরকে কে খাওয়াচ্ছেন?

  • আল্লাহ।

আমাদেরকে কে পোশাক দিচ্ছেন?

  • আল্লাহ।

আমাদেরকে কে হাসাচ্ছেন?

  • আল্লাহ।

তোমাকে কে সব থেকে বেশি ভালবাসেন?-
আল্লাহ, ও মানুষদের মধ্যে রাসুল (সাঃ)। তারপর আব্বু আম্মু।

তাহলে তুমি কাকে সব থেকে ভালবাসো?
-আল্লাহ এবং তারপর রাসুল (সাঃ) কে।

বাবুকে বলছিলাম যে কখনই যেন এই প্রশ্নের উত্তর আব্বু আম্মু না হয়।

কে তোমার পরম আপনজন?

  • আল্লাহ।

আমরা কার কাছে ফিরে যাব?
-আল্লাহ।

আজ তিনবেলা খেয়েছ, খেলেছ, ঘুমিয়েছ। কাকে থ্যাংকস দিবা?

  • আল্লাহকে।

অর্ণব : খুব সুন্দর শিক্ষা পাচ্ছে। আর মনে হয় খুব তাড়াতাড়িও শিখছে বিষয়গুলা।

লোক : জি ঠিক বলেছেন। ব্যবসার কারণে কোন কোন মাস অর্থ সঙ্কটে পড়তে হয়।

যেদিন খাওয়ার জুটবেনা সেদিন জিজ্ঞাসা করবো,
আজ আমাদেরকে কে খেতে দেন নি মা? -আল্লাহ।

তুমি কি রাগ করেছ?
উত্তর আসবে, যিনি মাসে ২৯ দিন খাওয়ান তিনি ১ দিন না খাওয়ালে রাগ করার মত অকৃতজ্ঞ বান্দী কি আমি হবো?

.

(দেখলাম লোকটার চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। তা আড়াল করার জন্য চোখে কিছু পড়েছে এমন ভঙ্গিমায় চোখ মুচতেছেন। তিনি বলতে থাকলেন,)

.

আবার যেদিন খাবার রান্না হয়,
আজকে আম্মু তোমার প্রিয় খাবার রান্না করেছে। ধন্যবাদ কাকে দিবা?
-আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহকে।

আব্বু খেলনা কিনে এনেছে, ধন্যবাদ কাকে দিবা?
-আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ কে। আল্লাহ আব্বুকে টাকা দিয়েছেন।

মা তুমি ব্যাথা পেয়েছ, এর বিনিময়ে কী পাবে?

  • আলহামদুলিল্লাহ। গুনাহ মাফ।

এত স্পষ্ট ভাবে বলতে পারেনা ! তোতলিয়েই বলে। দাঁত উঠে নি তো।

.

(আমি শুনে নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। কয়েক মূহুর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। বুঝলাম তারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করে।)
অর্ণব : মাশআল্লাহ! শুনে খুব ভালো লাগলো। আল্লাহ আপনাদেরকে এর পুরষ্কার জান্নাতে দিবেন ইনশাল্লাহ। শুধু ধৈর্য ধরেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“এবং আপনি ধৈর্যধারণকারীদের সুসংবাদ দিন।”

  • (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)💕

আবার,

আল্লাহ্ তায়ালা বলেন

“এবং যারা ধৈর্যধারণ করবে আমি অবশ্যই তাদেরকে তারা যে কাজ করে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেব।”

  • (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৬)💕

আর ধৈর্যশীলদেরকে তো ফেরেশতারা সালাম দিবে। কেননা ধৈর্যশীল বান্দা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, জান্নাতের ফেরেশতারা তাদের প্রতি সালাম পাঠ করবে।

পবিত্র কুরআনে আছে,

“এবং ফেরেশতারা প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হবে এবং বলবে তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কতই না ভালো পরিণাম (তোমাদের)।’
-(সুরা : ইনসান, আয়াত : ১২)💕

লোক : হুম ইনশাল্লাহ।

গল্প করতে করতে আমাদের সময় চলে আসলো। উনি খাবার নিলেন। কিন্তু উনার ছেলে কোন কেক খাবে এইটা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছেন। আমি বললাম,
অর্ণব : আপনি শুনে আসেন ততক্ষণে আমি এখানে খাবারটা দেখতেছি।

উনি যেতেই আমি আমার খাবার নিলাম আর উনার খাবারের বিলসহ পেইড করলাম। উনাদের জন্য তো এতটুকু করতেই পারি।

কিছুক্ষণের মধ্যে উনি আসলেন। আমি সালাম দিয়ে তাড়াতাড়ি কাটে পড়লাম।

আমি বাড়ির দিকে যাচ্ছি আর ওদের নিয়ে ভাবতেছি। উনাদের মতো দ্বীনদারদের উদ্দেশ্য করেই

আল্লাহ বলেন,

“হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত যে কঠোর সাধনা করে থাকো, অতঃপর তুমি (তোমার কাজের প্রতিদান) দেখতে পাবে।”
(সুরা আল-ইনশিক্বাক্বঃ ৬)💕

আল্লাহ উনাদের জান্নাতবাসী করুক। নিশ্চই লোকটি আমাকে খুঁজার জন্য বেড়িয়েছিলেন। আল্লাহ করে যেনো আর না দেখা হয়। কারণ উনার আত্মসম্মান আছে। দেখামাত্রই ঋণটা শোধ করবেনই। কিন্তু আমি তো খাবারটা উনাদের ঋণ হিসেবে দেয় নি।

দেখতে দেখতে বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে তানহাকে কল দিলাম।

তানহা গেট খুলে দিলে ভিতরে সালাম দিয়ে ঢুকলাম।

অর্ণব : জানো আজকে কি হইছে!
তারপর তানহাকে পুরা ঘটনা বললাম।

তানহা : তো উনাদের দাওয়াত দিতে পারলা না?

অর্ণব : হ্যাঁ! তুমিও হও একটা। আমরা কি নিজেদের বাসায় আছি?

তানহা : হাহাহা। তাও ঠিক। জানো যখন আল্লাহ কাউকে ভালবাসেন, তাকে অনেক অর্থ সম্পদ দিয়ে দেন না। তার প্রভাব প্রতিপত্তি আর ক্ষমতার মধ্যেও কোন প্রবৃদ্ধি ঘটে না। বরং তিনি যদি কাউকে ভালবাসেন তাকে নেক আমলের তাউফিক দেন। ঠিক উনাদের মতো। আবার পুরো রমাদান যদি তুমি রোজা রাখতে পারো, যদি রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করার সৌভাগ্য হয়, তাহলে তুমি বিশ্বাস করতে পারবা, সেই মহান রব তোমাকে অনেক ভালবাসেন। তিনি তোমাকে পছন্দ করেন বলেই তুমি তার দিকে দুহাত তুলে চাইতে পারো, তিনি ভালবাসেন বলেই তার নাম উচ্চারনের সৌভাগ্য তোমার হয়।

অর্ণব : ঠিক বলছো। আবার এর উল্টো দিকে, যখন তিনি কারো উপর রাগ হন, তিনি কিন্তু তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া বন্ধ করে দেন না। তার খাবার দাবারের যোগানও বন্ধ হয় না। বরং হয়তো সে আগের চেয়ে আরও ভাল থাকার কিংবা খাওয়ার সুযোগ পায়। আবার কেউ তাঁর নাফরমানি করলে, তাকে তিনি সাথে সাথে শাস্তি দেন না। তার পায়ের নিচ থেকে জমিন সরে যায় না, মাথার উপর ছাদও ভেঙ্গে পড়ে না। কিন্তু আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলে, তার অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। ইবাদতে তার মন বসে না, নামাজ পড়তে তার আর ভাল লাগে না। দ্বীনের কোন কথা শুনলে বিরক্তি আসে, তিলাওয়াতের সুরের চেয়ে গানের সুরই তার কাছে প্রিয় মনে হয়। গভীর রাতে একাকী সিজদায় যেয়ে কাঁদতে তার আর সাধ জাগে না। কেনো সে ফজরে আর উঠতে পারে না সেই আফসোস তার আর হয় না।

তানহা : হ্যাঁ ঠিক বলছো। আবার ক্ষমা প্রার্থনার বদলে সেই মানুষটি তো ভাবতে থাকে, এসবই তার ইচ্ছাধীন বিষয়। সে নামাজ পড়তে চায় না বলেই,পড়া হয় না। তার তেমন ভাল লাগে না বলেই, অন্যান্য আমলগুলোও সবসময় করা হয় না। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, তারই গুনাহের কারণে, তার থেকে সেই ইবাদতের নিয়ামত ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তারই বদআমলের কারণে, সে আর পায় না আমলের সেই মিষ্টতা।

অর্ণব : হুম। এই তাড়াতাড়ি খাবার দেও খুব খিদা লাগছে।

তানহা : এই দেখো। তোমার সাথে গল্প করতে যায়ে আমিও ভুলে গেছিলাম। আমারো খুব খিদা লাগছে। তুমি বসো আমি আসতেছি।

(চলবে….)

লেখা : ক্ষণিকের মুসাফির❣

[আগের পর্বগুলো Timeline এই দেওয়া আছে]🍁

💚ইমাম মাহদীর সন্ধানে💞