অর্ধাঙ্গিনী:৫মপর্ব

অর্ধাঙ্গিনী

৫মপর্ব
মোর্শেদা খাতুন


………………………..
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল জারার।দীর্ঘদিনের অভ্যাস ফজরের আগে আগে ঘুম ভাঙা।আজ একটু দেরীতে ভাঙল।জারা ঘুম ভাঙার পর দেখলো আফনান বিছানায় নেই।দুরে সোফাতে ঘুমাচ্ছে।জারা আস্তে ধীরে নিচে নামল,বাথরুমে গেল,ওযু করে বেরোবার মুখেই শুনতে পারলো এলার্ম বাজছে।আফনান সম্ভবত দিয়ে রেখেছিল।
.
জারা সেটা বন্ধ করার জন্য হাত দিতেই আফনান চোখ বন্ধ করেই হাত বাড়িয়ে দিলো, তারপর ঘড়িসহ জারার হাত চেপে ধরল।হাতের অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুলল,-তাকিয়ে দেখল জারা!-“ওহ্,আপনি?”স্যরি!”
জারা হাত ছাড়িয়ে ওকে বলল-“উঠে পড়ুন,তাড়াতাড়ি,ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে।”
.
আফনান ঘড়ি দেখল।তারপর উঠে পড়ল।দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে শরীর মুচড়ে শব্দ করে আড়মোড়া ভাঙলো।জারা পেছন থেকে মৃদু চাপড় দিলো ওর পিঠে-“এ্যাই, আস্তে।”ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ঘুম ভাঙার দুআ পড়তে হয়।তারপর কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতে হয় এটাই সুন্নত।”
ওর দিকে তাকিয়ে তারপর বেসিনের দিকে গেল আফনান।হাত ধুলো।তারপর বলল-“এখন কি করবো ?”
-“উফ,এটাও বলে দিতে হবে?তাড়াতাড়ি অযু করে আসুন।আলো ফুটে যাবে তো!”
-“সেকি গোসল নাকি করতে হয়?”আফনান অবাক হবার ভান করে বলল।
-“উফ্…আ..ফ..না..ন ” বলে জারা কোমড়ে দুহাত রাখল তারপর ডান হাতের আঙ্গুল তুলে শাসালো।
-“আরে রাগের মত কি বললাম।!”
-“আপনি যাবেন তাড়াতাড়ি?দেরি হচ্ছে কিন্তু আমাদের নামায কাযা হয়ে না যায়”!
-“হায়রে! জিজ্ঞেস করলেও দোষ!’ আফনান হাসল।আসলে ওর জারার সঙ্গে দুষ্টুমী করতে খুব ভালো লাগছে।অথচ ও যথেষ্ট সিরিয়াস টাইপ ছেলে।ওর নিজের ভেতরে এই শিশুসূলভ মানসিকতা যে লুকিয়ে ছিল আফনান নিজেই জানতো না।মাথা চুলকে সে বাথরুমে ঢুকে গেল।
.
জারা দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে ফেলল চট করে।একটা সামনে আরেকটা পেছনে।
আফনান টুপি খুঁজলে জারা তা বাড়িয়ে ধরল-“জানি,এটাই খুঁজবেন।এই নিন,আসুন।”
-” দুটো আগেপিছে কেন?পাশাপাশি দাঁড়াবো না?”
-“জ্বীনা,পুরুষের কাতার সামনে!আর আপনি ইমামতি করবেন, আমি আপনার পেছনে নামাজ পড়বো !সুরাটুরা মনে আছে তো!”
-“এতটা আন্ডার এসটিমেট করাটা উচিত না,ছোটবেলায় মক্তবে তিনবছর পড়েছি,তখন আমরা গ্রামে……”জারা ওকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সোজা করে দিয়ে বলল-“চুপ্, পরে শুনবো! এখন শুরু করুন!”
.
আফনান গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে তারপর ভরাট কন্ঠে ইক্বামত দিতে শুরু করল।জারার মন কান যেন জুড়িয়ে গেল।কি সুন্দর স্পষ্ট বিশুদ্ধ উচ্চারন।আফনানের এই বিরাট গুনটি তো জানা ছিলো না!”
-“আল্লা….হু আকবার”! বলে তাকবীর দিতে জারা নিজেও নিঃশব্দে তাকবীর বলে হাত বাঁধল।
এ এক চমৎকার দৃশ্য।ধূলোমলিন পৃথিবীতে যেন জান্নাতের বাগিচা।স্বামী স্ত্রী মহান রবের দরবারে একত্রে হাজিরা দিচ্ছে।ইবলিশ এমন সব পরিবারে শয়তানি করে সুবিধে করতে পারেনা কেবল দুর থেকেই ঘুরঘুর করে!
নামাজ শেষে জারা উঠতে গিয়ে দেখল আফনান তখনো মুনাজাতে মগ্ন হয়ে আছে।
জারার চোখে আফনানের সম্মান আজ অনেক উঁচুতে উঠে গেল।মনে মনে রবের শোকর আদায় করল এমন লোককে স্বামী হিসেবে পেয়ে।জারা একমনে ভাবছে হঠাৎ আফনান জারার চোখের সামনে হাত নাড়ল -“কোথায় হারিয়ে গেছেন?”
জারা আফনানের দিকে তাকাল।যেন নতুন করে ওকে দেখছে।তারপর মৃদু হেসে বলল-“আমাকে তুমি করে বলবেন প্লিজ।’আপনি’ টা শুনতে ঠিক ভালো লাগছেনা।”
আফনান চমকে বলল-“কিই?হঠাৎ এই অধমের প্রতি দয়ার কারন?”
জারা মুখ নামিয়ে বলল-“আমাকে মাফ করে দেবেন,আমি আসলে আপনাকে আন্ডার এস্টিমেট করিনি, ভেবেছি……!”
-“দুর ছাড়ো তো! বাদ দাও।আচ্ছা খিদে লেগেছে নাকি?”
-“আমার এত ঘন ঘন খিদে লাগেনা!”
-” তাই! এজন্যই তো স্বাস্থ্য নাই।আচ্ছা, ভালো কথা, আমার প্রমোশন কি কেবল ঐ ‘তুমি’ বলা পর্যন্তই নাকি আরো কোনো সু..যো..গ সু..বি..ধা।”
জারা কড়া চোখে তাকাতেই আফনান হেসে চোখ মারল-“ঠাট্টা করেছি!”

জারা উঠে বিছানায় গিয়ে বসল-“সকাল হতে তো এখনো দেরী আছে,আপনি কিন্তু কাল রাতে একদম ঘুমাননি।আসুন, কিছুক্ষণ শুয়ে নিন!”
-“আরে দুর, এখন ঘুম আসবেনা।! “
-“আরে আসুন তো,আমি সাহায্য করছি!”
আফনান বলল-“কিভাবে?”
-“চুলে হাত বুলিয়ে দেবো!” জারা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল!”
.
আফনান একটা কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে গড়িয়ে পড়ল-“ভেবেছিলাম কপাল বোধহয় খুলে গেছে!”
জারা ওর চুলে হালকা হাতে আঙ্ঙ্গুল চালাতে চালাতে বলল-“প্রথম দিন কিন্তু আপনাকে খুবই ভদ্র আর গম্ভীর মনে হয়েছিল।”
-“এখন কি অভদ্র হয়ে গেছি?”
-” না,তা না তবে আপনাকে দেখে বাইরে থেকে মনে হয়না যে আপনি এতটা ছেলেমানুষ আর……!”
-“আর…?আর কি বলো?”
-“আর দুষ্ট ও! “জারা হেসে বলল।
শোয়াবস্থাতেই খপ করে জারার হাত ধরে ফেলল আফনান-“এ্যাই,কি অভদ্রতা করেছি এ পর্যন্ত বলো! “
-“থাক্,ঘুমান।”
-“আমাকে অভদ্র কে বানালো? তুমিই তো বানিয়েছো, সব দোষ তোমার। তোমাকে দেখলেই দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় আসে তো আমি কি করবো?”
-“আচ্ছা,একটা কথা,আপনাকে সকালে দেখলাম সোফায়।কোন সমস্যা? না মানে,আপনাকে তো বিছানাতেই দেখেছিলাম…!
-“হুঁ…নিজেতো বেঘোরে ঘুমিয়েছো।আমার বারোটা বাজিয়ে।সহ্য হচ্ছিলো না।তাই সরে গেছি।আরো কিছু?”
জারা চুপ করে রইল,তারপর ফিসফিসিয়ে বলল-“আমাকে একটু সময় দিন,প্লিজ”!আ..আমি…..সারার কথা……!”
হঠাৎ শুনতে পেলো আফনানের মিহি নাক ডাকার শব্দ।জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

.
কয়েক ঘন্টা পর, চোখেমুখে হালকা পানির ছিটা পড়তেই আফনানের ঘুম ভেঙ্গে গেল।তাকিয়ে দেখল জারা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে!
-“উঠুন,আর কত ঘুমাবেন?দশটা তো প্রায় বাজতে চলল।”
-“আরে তাই নাকি?”বলে ঘড়ি দেখল আফনান।
-“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন”!
-“নাস্তার কথা বলে দাও,ও..ভালো কথা ফুপির খোঁজ নিয়েছো?”
-” জ্বী,দেখা করে এসেছি সকাল বেলাতেই।নাস্তাও খেয়েছেন।”
-“যাক্! ” বলে আফনান বাথরুমে চলে গেল।জারা জেনে নিল গোসল সেরে কোন পোশাকটা পড়বে আফনান।তারপর তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হাতের কাছে এনে রাখল।
আফনান এসে সব গোছানো দেখতে পেয়ে বলল-“আহ্,এবার মনে হচ্ছে ঘরে বউ আছে।আচ্ছা,শোনো আজ তোমাকে নিয়ে একটু বাইরে যাবো,লাঞ্চের পর।তৈরী থেকো!”
-“আমার আর তৈরী…! কেবল বোরকাটাই তো পড়বো!”
-“ওহ্,দ্যাটস রিমাইন্ড মি,তোমার জন্য একটা নতুন বোরকাও আছে। ঐ ড্রয়ারে।
জারা উঠে ড্রয়ারের কাছে যেতেই আফনানের ফোন বাজল।
ফোনটা রিসিভ করেই আফনান জোরে বলে উঠল-“ওহ্….মা….কেমন আছো তোমরা?”
জারা অসহায়ের মত সেদিকে চেয়ে রইল।

চলবে…..

hassab_irsf


Comments

One response to “অর্ধাঙ্গিনী:৫মপর্ব”

  1. […] Chapter 1 Chapter 2 Chapter 3 Chapter 4 Chapter 5 Chapter 6 Chapter […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *