অর্ধাঙ্গিনীঃশেষ পর্ব

অর্ধাঙ্গিনীঃ
শেষ পর্ব
মোর্শেদা খাতুন….
♥♥♥♥
বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল জারার।
উঠে বসতে গিয়ে বাধা পেল।আফনানের একটা হাত ওকে ঘেরাও করে রেখেছে।সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আস্তে করে ওকে সরিয়ে জারা উঠে বসল যেন ঘুম ভেঙ্গে না যায়। চারপাশ তাকাল,বেলা ঠাহর করা যাচ্ছেনা।আকাশ কালো হয়ে আছে তার উপর ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।জানালার কাঁচ দেখে মনে হলো কেউ সেখানে অনবরত পানি ঢেলে দিচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল জারা।বেলা তিনটা বাজতে চলেছে।
দ্রুত বিছানা থেকে নামল।এলোমেলো চুলগুলো দুহাতে গুছিয়ে খোপা করল।ওড়নাটা খুঁজতে গিয়ে দেখলো আফনানের গায়ের নিচে চাপা পড়েছে ওটা।টেনে বার করার সাহস হলোনা।আফনান জেগে যাবে।
হঠাৎ মনে পড়লো-“আয় হায়! আমার নামাজ!”
তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকল।গোসল সেরে দ্রুত নামাজে দাঁড়ালো।আফনান তখনো ঘুমে।ওকে ডাকতে গেলে জারার নামাজ কাযা হয়ে যাবে।চার রাকাত ফরয আদায় করে তারপর আফনানকে ডাকল।আফনান চোখ না খুলেই হাত বাড়িয়ে জারার কব্জি আঁকড়ে ধরে টানল।জারা ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-“দেখুন,ক’টা বাজে!”
আফনান ঘুম ঘুম চোখ মেলে বলল-” ক’টা বাজে?”
-“সাড়ে তিনটা বাজতে চলেছে।উঠুন তাড়াতাড়ি”!
আফনানের ঘুম ছুটে গেছে-“ওরে বাবা,তাই নাকি”!
বলে উঠে বসল।জারার দিকে তাকিয়ে দেখল ও নামাজের হিজাব পড়ে আছে।এমন পোষাকে ওকে সাংঘাতিক ইনোসেন্ট লাগে।বলল-“বাহ্,উঠে নামাজও পড়ে ফেলেছো?”
জারা হাসল।
“আমাকে ডাকলে না কেন?”
-“কি করবো,আমার নামায তো কাযা হয়ে যাবে”!
-হমম্……!
-“খিদে লেগেছে উঠুন তাড়াতাড়ি!”
আফনান ওর দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকল।জারা ওকে টেনে নামাল-“আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে পেট ভরবেনা।নামুন তো””!
-“আরে বলো কি?পেট মন দুইই ভরে যাবে।আরেকবার সুযোগ দিয়েই দেখো”!
জারা ওকে প্রায় ঠেলে বাথরুমে পাঠাল।তারপর রুমটা গোছাতে শুরু করল।ইন্টারকমের বাটন টিপে লাঞ্চ আনতে বলে দিল।

নামাজ সেরে আফনান খেতে বসল।জারা চুপচাপ খাবার বাড়তে লাগলো প্লেটে।আফনান ওর দিকে তাকিয়ে আছে।জারার গা থেকে মৃদু চন্দনের সুবাস আসছে।গোসলের পরপর জারাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশী কিউট লাগছে।
আফনান ওর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলল–“এ্যাই,তুমি আছাড় খেয়ে পড়ে গেছিলে নাকি?”
জারা সচকিত হলো-“না তো”!
-“তাহলে ব্যথা পেলে কিভাবে?এই যে এতো তোমার গলায় লাল দাগ কিসের আর এই যে…..!”জারা লজ্জা পেয়ে একটা ওড়না নিয়ে সমস্ত মাথা ঘাড় গলা ঢেকে ফেলল!
-“আপনার ভাত দিয়েছি,তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন,বাবুকে আনতে যেতে হবে না?”!জারা আফনানের সামনে প্লেট রেখে বলল।
-“বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।পরে যাই।ফুপুর সাথে ফোনে কথা বলে নাও।”
ভাত খাবার পরে আফনানের চা খাবার অভ্যাস।জারাকে চা দিতে বলে মোবাইলটা অন করল! চমকে উঠে হেসে ফেলল।
জারা জিজ্ঞেস করল-“কি হয়েছে হাসছেন কেন?”
জারাকে দেখাল-“দ্যাখো অবস্থা!”
জারা দেখলো প্রচুর মিসকল জমা হয়ে গেছে।লজ্জিত হেসে বলল-“আম্মুকে ফোন দিয়ে কথা বলুন”!
-“হুঁ,বলবো যে তোমার বৌমা আমাকে তিনটা পর্যন্ত তার বাহুডোরে আটকে রেখেছিল,তাই……”!
জারা হাতের কাছের কুশনটা ছুঁড়ে মারল আফনানের দিকে-“অসভ্য,আমি আটকে রেখেছি না তুমিই……”!বলে লজ্জা পেয়ে গেল।আফনান ওর হাত ধরে টেনে বসাল।-“আপনি টাপনি বাদ।এখন থেকে তুমি।ন্যাচারলি যেটা এখন তোমার মুখ থেকে বেরিয়েছে।’”!
ফোন বাজল।আফনান দেখল”আম্মু”ই আবার ফোন করেছে।রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করল!
-“হ্যাঁ,আম্মু…..কেমন আছো তুমি……না, আমি ভালো আছি…..ওই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,দুরাত না ঘুমিয়ে একেবার টায়ার্ড…… কে?… তোমার বৌমা?”
জারা ইশারায় হাত নাড়ল।আফনান হেসে বলল-“সামনেই আছে কথা বলো?”
জারাকে আঙ্গুল তুলে ইশারা করতে জারা এগিয়ে গিয়ে ফোন ধরল-“আসসালামুআলাইকুম আম্মু”!
সাবিহা কাঁদো কন্ঠে বললেন-“ভালো আছিস মা?”
জারার মনে হলো এত মধুর ডাক ও জীবনে শোনেনি।সে নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে গেল,ওর চোখ ভিজে উঠল।জারা তার শরীরের খবর নিলো।ওদের কথোপকথনের মাঝেই আফনান জারার কোমড় ধরে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো-“নাও…বসে কথা বলো”!
জারা ভ্রু কুঁচকে ওকে শাসন করবার ভঙ্গি করল।কিন্তু কথা বলতে বলতেই কিছুক্ষণ পর লাফ দিয়ে সরে গেল।আফনানের দিকে আঙ্গুল তুলে শাসাল।ওদিকে সাবিহা জিজ্ঞেস করলেন-“কবে ফিরবি তোরা?”
-“এই যে মা ওর সাথে কথা বলুন”!আফনানের হাতে মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে ‘দুম’ করে কিল বসিয়ে দিল ওর পিঠে।
আফনান কেশে নিয়ে এবার কথা বলাতে একটু সিরিয়াস হলো কারন মা জিজ্ঞেস করছেন-“তোরা ঠিক আছিস তো?বাবুটা কেমন আছে?”
আফনান জবাব দিলো।সাথে জানিয়ে দিলো সে জারাকে নিয়ে আগামী কাল ফিরবে।
♥♥♥
বৃষ্টি থামলে ফুপিকে নিয়ে হোটেলে ফিরলো ওরা।ফুপির বাসায় যাবার সময়য় আফনান একগাদা মিষ্টি দই ফলমূল নাস্তা কিনে নিয়ে গেল সেই বাড়ীতে।
ঠিক হলো,ফুপি এবার ওদের সাথে ঢাকা যাবে।ফুপি প্রথমে না না করছিলেন কিন্তু আফনানের পীড়াপীড়িতে তিনি অবশেষে রাজী হলেন।
ওদিকে সাবিহা চৌধুরী গ্র্যান্ড রিসেপশনের ব্যবস্থা করেছেন বাড়ীতে আর এসব কাজে তাকে সাহায্য করছে সেজান।সে ক্যাটারারের সাথে কথা বলা,লাইটিং এর ব্যবস্থা করা সহ যাবতীয় কাজে সেজানই মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।
ইতোমধ্যে ভাইয়ের সাথে ফোনে কথাও বলে নিয়েছে সে।কথার ফাঁকে ফাঁকে আফনানের মাধ্যমে জারার কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে।সে তার বিগত জীবনের যৌবনোন্মাদনার খেসারত দিচ্ছে বলেও আফসোস করল।
ফুপির সাথে কথা বলছিল জারা-“ফুপি,তুমি আমাদের সাথে ঢাকা থেকে যাওনা কেন?”শুনে ফুপি হেসেছে।
-“বোকা মেয়ে,মেয়ের শ্বশুড়বাড়ী কি থাকতে আছে?”
-“কেন ফুপি,কি সমস্যা?আফনান খুব ভালো ছেলে”!
-” সে আমি জানি মা,তুই স্বামী যেটা পেয়েছিস সে লাখে একটা!কিন্তু সব কিছুরই একটা সুন্দর অসুন্দর বলে কথা আছে।তোকে বলে রাখি মা,মানুষের বদনজর বড় মারাত্মক জিনিস।তোর সুখী দাম্পত্যে কারো বদনজর লাগা অস্বাভাবিক কিছু না তাই সাবধানে থাকি।সবসময় বদনজরের দুআ পড়বি”!
জারা মাথা নাড়ল-“পড়বো”!
তারপর বাবুকে নিয়ে কতক্ষণ আদর করল।ওকে খাইয়ে ফুপুর কোলে দিয়ে উঠে আসার সময় ফুপুকে মনে করিয়ে দিল কাল বিকেলেই বেরিয়ে পড়বে ওরা।
♥♥♥
রাতে খাবার দাবার শেষে আফনান বললো-“দিনে যে হারে ঘুমিয়েছি,রাতে তো ঘুমাতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।”
পরে জারাকে নিয়ে বারান্দায় রাখা সোফাতে বসলো।আফনান জারাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে রাখল।জারা োর কাঁধে মাথা রেখে বলল-“একটা অনুরোধ করতে চাই”!
-“করো”!
-“ঢাকায় ফিরে গিয়ে ইরিনাকে কিছু বলেন না”!
আফনান কপাল সামান্য কুঁচকে জারাকে ধরে সোজা করে বসালো-“কিছুই বলবো না?”
-“না,কি দরকার,থাক না”!
-“যে তোমাকে ভয় দেখিয়ে বাড়ী ছাড়া করল,তোমার স্বামীকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছে,তাকে কিছুই বলবেনা?”
-“আপনি সরাসরি না বলে অন্যভাবেও তো ওদের সতর্ক করতে পারেন,আম্মুকে দিয়ে বলাতে পারেন।কিন্তু আমি চাচ্ছি বিষয়টা যেন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায়।হাজার হলেও তারা আপনার আত্মীয় আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবেনা!”
আফনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জারাকে ফের জড়িয়ে ধরল।
জারা ওর গালে হাত রেখে বলল-“আমি আপনাকে নিয়ে জান্নাতে যেতে চাই!”
আফনান ওর দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু শব্দে বলল-“আল্লাহপাক আমাদের দুজনকে তাঁর সন্তষ্টির জন্য কবুল করুন”!
-“আমিন”!
♥♥♥
ঢাকা পৌঁছেও বাড়ী পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল।সাবিহা পরমানন্দে জারাকে বরন করে নিলেন।কেঁদে বুকে জড়িয়ে নিলে”!জারার ফুপির সাথে পরিচিত হয়েও খুব খুশী হলেন!ফুপিকে জারার পাশের খালি কামরাটা দেয়া হলো।জারা ঘরে ঢুকে ব্যাগ রাখতে গিয়ে দেখলো কমলা এক কোণে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে। চোখ ভর্তি পানি।জারা এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করল-“ভালো আছিস রে মা?”
-“হ,মামী,আপনে যাওনের পর মনটা অনেক খারাপ হয়া গেছিল।মনে অইছিল আপনে আর আইবেন না।”!
-“তোদের দোয়া আর ভালোবাসাই আমাকে ফিরিয়ে এনেছে”!
কমলা চোখ মুছে বলল-“মামী,আমি হেইদিন নিজের চউক্কে ইরিনা আন্টিরে আলমারীত্তেইক্কা জিনিস ব্যাগে বরতে দ্যাকসি”!
জারা ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল-“থাক,মামাকে বলিস না,শুনলে রেগে যাবে”!
পেছন থেকে আফনান হঠাৎ বলে উঠল-“এরপরেও তুমি বলবে ওকে কিছু না বলতে?”
জারা চমকে উঠে দাঁড়াল।আফনান কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ও টেরই পায়নি।”
আফনান যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল।
♥♥♥
রাতে ঘুমুবার সময় জারা দেখল।আফনান চুপ করে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।ওর মুখ যথেষ্ট গম্ভীর।জারা ওর মেজাজের আঁচ অনুমান করে ওর পাশে গিয়ে ওর হাতের উপরে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।আফনান একটু চমকে তাকাল-“ও… তুমি”!
-“কি ভাবছিলে এতো?”
আফনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“মানুষ এতো নিচে কিভাবে নামতে পারে?”
জারা ওর বুকে মাথা রেখে বলল-“আপনি এখনো এসব নিয়ে ভাবছেন?”
-“আমি আম্মুকে সব জানাবো।তাঁর আদরের ভাগ্নির কীর্তিকলাপ তাঁর জানা থাকা উচিত”!
জারা আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ঘুমের চেষ্টা করল।সরে যাবার উদ্যোগ নিতেই আফনান টেনে ধরল-“যাচ্ছো কেন?”
-“রাত হয়েছে তো,ঘুমাতে হবেনা?”
আফনান ওকে কাছে টেনে বলল-“দুজনে এক বালিশে ঘুমাবো!
জারা কিছু বলতে গেলে ওকে বাধা দিয়ে বলল-“এটাও কিন্তু সুন্নত!”
জারা সরে যেতে চেয়েও পারলোনা।আফনান ততক্ষণে ওকে অক্টোপাস আলিঙ্গনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।
♥♥♥
বেশ ঘটা করে পালিত হলো আফনানের ওয়েডিং রিসেপশন।প্রায় সকল আত্মীয় স্বজন এলো।জারার অনুরোধে ইরিনদেরকে অনুষ্ঠানের আগে কিছু বলা হলোনা।যা বলার পরে বলা হবে।অনুষ্ঠানটা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক।
জারাকে একটা মেরুন রঙের জমকালো রাজস্থানী ঘাঘড়া পড়ানো হলো।আফনান এটা পঞ্চান্ন হাজার টাকা দিয়ে ইন্ডিয়া থেকে আনিয়েছে।পার্লার থেকে মহিলাদের বাড়ী আনানো হলো।সাজানোর পর জারার দিক থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিলো না।ওকে সম্রাজ্ঞীর মত লাগছিল।
মহিলাদের আলাদা বসানোর ব্যবস্থা করা হলো।সেখানে পুরুষদের প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ।আফনানের এক আত্মীয়া ওকে ধরল-“এত সুন্দর বউ কোত্থেকে নিয়ে আসলি?’”
আফনান হাসল-“জ্বী দোয়া করবেন”!
এমন সময় পেছন থেকে কেউ ওর কাঁধে টোকা দিল।আফনান ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো -“ইরিনা”!
আফনান কিছু বলতে গিয়েও চেপে গেল।জারার অনুরোধ মনে পড়ল।ইরিনা ফ্যাকাশে হেসে বলল-“একটা কথা ছিল ফিন ভাই”!
আফনান অন্যদিকে তাকিয়ে বলল-“বলো”!
-“আপনি কি কোনো কারনে আমার উপর রাগ?”
-“তোমার কি মনে হয়?”
-“না মানে,ভাবীর চলে যাওয়ার ব্যপারে আমি যা বলেছি তা আসলে আমার বলাটা উচিত হয়নি।খালামনি আমাকে বলেছেন আমার জারার কাছে মাফ চাওয়া উচিত।”
-“সেটা তোমার ব্যপার কিন্তু তোমাকে এতটুকু জানিয়ে রাখি যে,জারার কারনেই তুমি এখানে আসতে পেরেছো।নতুবা তোমাকে বিশ্বাস করার কোন কারন দেখিনা।তুমি মিথ্যে রটনা করেছো প্লাস আলমারিতেও হাত দিয়েছো!”ছিহ্,এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারলে?
যাক্, এসেছো,খাও,ঘুরো… কিন্তু একটা অনুরোধ, দয়া করে এরকম জঘন্য আচরণ আর কারো সাথে কোরোনা।” বলে আফনান সরে গেলো ওর সামনে থেকে।
আফনানকে ওভাবে চলে আসতে দেখে সেজান ধরল-“কি হয়েছে ভাইয়া?”
-“কিছু না,এমনিই..”!আফনানের মুখ গম্ভীর।
সেজান ওর কাঁধে মৃদু চাপড় দিয়ে হেসে বলল-“হুঁ…আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি কিছুটা।বেচারীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই সে তোর প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। তোকে দেখলে তো মেয়েদের মাথার স্ক্রু এমনিই খুলে পড়ে যাবে”!
-“দুর! ছাড় তো এসব কথা !বাই দ্যা ওয়ে,এমন চমতকার আয়োজনের জন্য থ্যাংকস।”
সেজান মুচকি হেসে বলল-“সারপ্রাইজ আরেকটা আছে।”
আফনান হাসল-“কি সেটা? “
সেজান পকেট থেকে একটা বড় ইনভেলপ বের করে আফনানের হাতে দিয়ে বলল-“এটা আমারপক্ষ থেকে তোদের দুজনকে গিফট!
-আফনান দেখে খুশি হয়ে বলল-“ও….মাশাআল্লাহ! জারা ভীষণ খুশি হবে এটা পেলে…কিন্তু…..বাবুকে রেখে..এতদিন.!
সেজান আফনানের হাত ধরে বলল-“বাবুর বাবা তো আছিই। তোরা নিশ্চিন্তে যা।তাছাড়া আম্মু আছে ফুপি আছে,সমস্যা কি”!আর জারা আপুকে বলিস তার এই ছোট ভাইটাকে যেন মন থেকে ক্ষমা করে দেয়।আমি কিন্তু ওনাকে ভাবী ডাকবো না,আপুই ডাকবো।”পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
“-“জীবনের সত্যিকারের অর্থ বুঝতে শিখলাম অনেক পরে।তোর আর জারার ভালোবাসা দেখে মনে হয় “সত্যিই প্রেম পবিত্র ও সুন্দর”তবে তা অবশ্যই বিয়ের পর।বিয়ের আগে কোনো প্রেমই সুন্দর না পবিত্র তো নয়ই বরং সেটা নষ্টামী।”
আফনান মাথা নেড়ে সায় দিরল-“সত্যি,স্বামী স্ত্রীর মাঝে মহান আল্লাহ রহমত ঢেলে দেন,তাই সবারই উচিত স্বামী দরিদ্র হোক কি অসুন্দর তাকেই রাজার চোখে দেখা আর তার কাছে আত্মসমর্পন করা।একইভাবে প্রতিটা স্বামীরই উচিত স্ত্রী অসুন্দরী হোক কি দরিদ্র তার প্রতি সম্মান আর ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকানো তাহলে সেই চাহনীতেও আল্লাহ প্রেম ঢেলে দেবেন।
-“চল্,ভেতরে যাই’”সেজান এক হাতে ক্রাচ। অন্য হাতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে পা বাড়ালো।
♥♥♥♥
গভীর রাত।
চমৎকার ফুলের চাঁদোয়ার নিচে জারা বসে আছে।আফনানের মনে হলো জারাকে এতো অদ্ভুত সুন্দর আগে কখনো লাগেনি।সে জারার পাশে গিয়ে বসলো।ঘোমটা সরিয়ে সালাম দিলো।জারাও হেসে উত্তর দিল।
দুজনের দুষ্টামী খুনসুটির এক পর্যায়ে আফনান জারাকে বলল-“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।তারপর ইনভেলপটা জারার হাতে দিয়ে সেজানের বলা কথা গুলো বলল আফনান।জারা সেটা হাতে নিয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়ে প্রবল উচ্ছাসে আফনানকে জড়িয়ে ধরল।আফনান ওকে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল।জারা আফনানের বুকে মুখ গুঁজে বলল-“সেজান ভাই যে আমাদের এত দামী উপহার দেবেন আমি ভাবতেও পরিনি।
-“ওকে মন থেকে ক্ষমা করে দিও”!
-“মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন।”
আনন্দে জারার চোখ ভিজে আসতে চাইছে।আফনানের গলা জড়িয়ে ধরে বলল-“কবে যাব আমরা?”
আফনান দুষ্টামী করে বলল-“কোথায়?”
জারা ওর নাক ধরে টান দিয়ে বলল-“ওমরাহ করতে”!
আফনান জারার কপালে চুমু দিয়ে বলল-“এমাসের শেষে।”!
..♥..
সমাপ্ত


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *