পর্দা

পর্দা নিয়ে জানার আগে প্রথমে জানতে হবে পর্দা কি ?

=পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে- পর্দা ইসলামে ব্যাপক অর্থ বহন করে। পবিত্র সামাজিক পরিবেশে সুন্দর ও আন্তরিকভাবে পরিবার গঠনে ইসলামের বিভিন্ন বিধান গুলোকেই মূলত এক কথায় ‘পর্দা-ব্যবস্থা’ বলা হয়।

১. পবিত্র কুরআনের প্রথমে আল্লাহ পর্দার আদেশ দিয়েছেন পুরুষ দের কিন্তু আমরা সবাই পর্দার কথা বলি মেয়েদের। যখনি পর্দার কথা আসে তখনি বলি মেয়েদের পর্দা মেয়েদের পর্দা কিন্তু পবিত্র কুরআন সূরা নূর আয়াত নং- ৩০ এ পুরুষদের পর্দার কথা বল্লেন তার পর ৩১ নং আয়াতে মেয়েদের পর্দার কথা বল্লেন। তারমানে দুজনেরই পর্দা করতে হবে।

২. দ্বিতীয় তে আমরা দেখব একটি ফতুয়া ।A woman who says that Hijab is not compulsory is a disbelievers.
( Sheiqh Ibn baz: fatwa:- 8487)কোনো মেয়ে যদি বলে যে আমার উপর পর্দা ফরজ না তাহলে ও কাফের।

৩. তৃতীয় তে আমরা দেখব দেবর ভাবির পর্দা।একজন লোক হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর নিকট এসে বল্লেন যে “দেবরের বেপারে কি নির্দেশ হজরত মুহাম্মদ সাঃ বল্লেন যে দেবর মৃত্যু তুল্য”। দেবর যিহেতু বারির ভিতরে থেকে তাই পর্দা করতে কষ্ট হয়। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ সাঃ বল্লেন দেবর মৃত্যু তুল্য। এই হাদীসটি বহুত জায়গায় আছে যেমন• সহীহ বুখারী -৫২৩২
• সহীহ মুসলিম-৫৫৬৭
• জামে’ আত-তিরমিযী-১১৭১
• আল লুল ওয়াল মারজন -১০৪৩

4.তাবিয়ী ইবনু শিহাব যুহরী বলেন তাকে নবী- পত্নী উম্মু সালামার (রা) খাদেম নাবহান বলেছেন, তাকে উম্মু সালামা (রা) বলেছেন “তিনি এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) এর অন্য স্ত্রী মাইমূনা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকট ছিলেন । তিনি বলেন, আমরা তার নিকট থাকা অবস্থায় ইবনু উম্মি মাকতূম (রা) আসলেন এবং তার ঘারে প্রবেশ করলেন এ ঘটনা ঘটেছিল আমাদের হিজাব করার নির্দেশ নাযিল হওয়ার পর। তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের বললেন, তোমরা দুজন তার থেকে আড়ালে চলে যাও। আমি তখন বললাম হে আল্লাহর রাসূল, তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদের দেখেছন না এবং চিনেনও না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন তোমরা দুজন কি অন্ধ?? তোমরা কি তাকে দেখছো না??? (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৭৮)

মিশকাত (৩১১৬), ইরওয়া (১৮০৬), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

৫.আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আমি আমার সে ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে রাসূল (সাঃ) শুয়ে আছেন,তখন আমি আমার বড় চাদর খুলে রাখতাম আর ভাবতাম ইনি হলেন আমার স্বামী আর অপরজন আমার পিতা।পরে যখন হযরত উমর (রাঃ) কে এই ঘরে দাফন করা হল, আল্লাহর কসম আমি কখনো পুরো শরীর কাপড়ে না ঢেকে সেখানে প্রবেশ করিনি উমর (রাঃ) কে লজ্জা করার কারনে।’
(মুসনাদে আহমাদ,মিশকাতঃ১৬৭৪)[ আমি চাইবো আপনি এই বিষয়টি ভালো করে চিন্তা করুন, একজন মৃত ব্যক্তিকে লজ্জা করার কারনে তার কবরের পাশে পর্দা না করে যায় না । এটাই তো মুসলিম মহিলাদের আত্নমর্যাদা হওয়া উচিৎ]

৬.যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে পর-পুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলনা যাতে অন্তরে যার ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলবে।
(সূরা আহযাব সূরা নং:-৩৩ আয়াত নং:- ৩২)

৭.রাসূল সা. বলেন- “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী হল বে-পর্দা ও অহংকারী নারীরা। এরাই মুনাফিক। এদের জান্নাতে প্রবেশ করা বড়ই দুরূহ ব্যাপার।” [বায়হাকী]
অন্যান্য ফরজ ইবাদতেরমত পর্দা করাও নারীদের উপর ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক পর্দার নির্দেশ দিয়ে বলেন- “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার মেয়েদেরকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদেরকে ‘জিলবাব’ দিয়ে ঢেকে বের হয়, তাহলে সহজেই তাদেরকে চেনা যাবে। এবং তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।” [সূরা আহযাব : ৫৯]
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রথমে পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল সা. এর স্ত্রী ও মেয়েদেরকে। অথচ তারাই ছিলেন পৃথিবীর সবচে সতী, পূণ্যবতী। আমাদের চিন্তা করা দরকার, আল্লাহ যদি তাদেরকে পর্দার জন্য কঠোর হুকুম দিতে পারেন, যারা ছিলেন পূত-পবিত্রা। তাহলে এই নষ্ট যুগের নারীদের পর্দার বিধান রক্ষা করা এবং তা মেনে চলা কতটুকু জরুরী ও আবশ্যকীয়?

৮.আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’ প্রকার লোক জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সব লোক যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি থাকবে। তারা এর দ্বারা লোকেদের পিটাবে। দ্বিতীয় প্রকার ঐ শ্রেণীর মহিলা, যারা কাপড় পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ প্রায়, মানুষকে আকৃষ্টকারিণী ও স্বয়ং বিচ্যুত। যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের পিঠের উঁচু কুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। (ই.ফা. ৬৯৩০, ই.সে. ৬৯৮৮)
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭০৮৬)

৯.আর সুগন্ধি আকর্ষণের এমন একটি মাধ্যম যা দৃষ্টি-অবনত ব্যাক্তিকেও আকৃষ্ট করে। সুতরাং এ বিষয়ে কতটা সতর্ক থাকা দরকার তা নিজেরাই ভেবে দেখি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনার প্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৮৬)

১০.রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যেখানে দু’জন বেগানা নারী-পুরুষ নির্জনে
একত্রিত হয়, সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।”–(সহীহ্ তিরমিযী, ১১৭১)

১১.আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন: ` নারী আউরাত বা আবৃতব্য গুপ্তাঙ্গ ; কাজেই সে যখন বের হয় তখন শয়তান তাকে অভ্যর্থনা করে।`
(তিরমিযী,আস-সুনান ৩/৪৭৬, ইবনু খুযাইমা,আস-সহীহ ৩/৯৩, ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১২//৪১২-৪১৩)

এই হাদীসে নারীকেই ‘ আউরাত’ বলা হয়েছে।এ থেকে জানা যায় যে নারীর পুরো দেহই আবৃতব্য, কোনো অঙ্গ ‌বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। শুধু একান্ত প্রয়োজনে চক্ষু উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে।
(সংগ্রহ:- পোশাক পর্দা ও দেহ-সজ্জা পৃষ্ঠা নং- ১৭০)

“শরীয়তের নির্দেশ হল, স্ত্রীরা স্বামীর সাথে নম্রতার সাথে কথা বলবে, আর পরপুরুষের সাথে কড়াসুরে কথা বলবে। কিন্তু বর্তমান ফ্যাশনেবল নারীদের চিত্র উল্টা। স্বামীর সাথে যখন কথা বলে, তখন যেন দুনিয়ার সব তিক্ততা তার মুখে এসে জড়ো হয়। আর পরপুরুষের সাথে যখন কথা বলে তখন যেন দুনিয়ার সমস্ত মিষ্টতা তার মুখে এসে ভিড় করে।

শেষে আমার পছন্দের একটি লাইন দিয়ে পর্দার আলোচনা শেষ করছি।

-নগ্নতা ছিল আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে একটা আজাব!
-আর তারা এখন এটাকে স্বাধীনতা বলে!”
(শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিযাহুল্লাহ)


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *