“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-০১
Writer:-Hassab bin Ahmed.
সকালে হঠাৎ আম্মুর চিল্লাচিল্লি শুইনা ঘুম ভাঙলো। একটু মন দিয়ে শুনে দেখি আমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে , আমার এতো ঘুম কেনো? তাই আর শুয়ে না থাকে উঠে আম্মুর কাছে গিয়ে আমতা আমতা করে জিগাইলাম –
আমি:- কি হয়েছে আম্মু?
আম্মু :- এইতো নবাব সিরাজউদ্দৌলার ঘুম ভেংগে গেছে।
আমি:- কি শুরু করলে?
আম্মু:- কি শুরু করবো এখন কয়টা বাজে ? সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলে চলবে?
যা হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
আমি:- এতো বকা খাওয়ার পর আর ভাত খেতে হবে না এমনি পেট ভরে গেছে?
আম্মু:- আচ্ছা তোর ভাত খেতে হবে না তোর আব্বু তোর জন্য না খেয়ে বসে আছে তোর আব্বুকে বলে আয় যে আমি ভাত খাবো না.
আমি:- বলো কি? আব্বু না খেয়ে আছে আমার জন্য , তো আগে বলবে না ? আজকে যে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।
ও আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হয় নি , আমার নাম সাজিদ বিন আহমেদ, নিজের একটি বিজনেস শুরু করে তার দেখা শুনা করছি আর কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি, আব্বু কলেজের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন এখন রিটায়ার্ড হয়েছে , সত্যি বলতে আমি সব থেকে বেশি ভয় পাই আব্বু কে, আর আমার আব্বু কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাকে ভাত খাওয়ার সময় বলে , আজ যিহেতু আমার সঙ্গে ভাত খাওয়ার জন্য বসে আছে তার মানে বিশেষ কিছু একটা আছে , আমার তো অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে কারণ আব্বু সব থেকে বেশি অপছন্দ করে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, তাই তারাতারি ফ্রেস হয়ে ভয়ে ভয়ে খাবার টেবিলে গেলাম। গিয়ে দেখি আব্বু আর তানিশা বসে আছে, ( তানিশা আমার ছোট বোন ,) আমার শত্রু হিসেবে ধরতে পারেন কারণ এমন কোনো কাজ নেই যে আব্বু আম্মুর কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করে না । আমি বসলাম আম্মু খাবার বেড়ে দিচ্ছে , তানিশা দেখি অল্প অল্প করে হাসতেছে আমার তো মনে হচ্ছে এই কিছু বলেছে আব্বু কে , এখন তো আমি কিছু বললেও শুনবে না , কারণ তানিশা যা বলে আব্বু আম্মু তাই শুনে আমাকে বকা দেয় , আমার কথা শুনেও না 😕😥, তাই বকা খাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নিলাম। আব্বু বলে উঠলো.
আব্বু:- সাজিদ তোমাকে তো ঘুম থেকে তারাতারি উঠতে বলেছি , এতো দেরি হলো কেন?
আমি কিছু বললাম না , চুপচাপ খেতে শুরু করলাম
তানিশা:- আব্বু তোমাকে তো আমি আগেই বলেছি তোমার ছেলেকে দিয়ে কিছু হবে না ।
আমি তানিশার দিকে চক গরম করে তাকালাম,
তানিশা:- দেখলে আব্বু আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে ছিলো ?
আব্বু:- তানিশা তুই চুপ করবি।
তানিশাও দেখি ভয় পেয়ে গেছে। তাই ও মাথা ঝাকিয়ে খেতে আরম্ভ করলো।
আব্বু:- সাজিদ আজকে অফিসে যেতে হবে না। কাজ আছে।
আমি:- আব্বু আমার একটু অফিসে দরকার আছে যেতে হবে।
আব্বু:- আমি বলেছি যেতে হবে না. আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না।
আমি:- সরি আব্বু । ঠিক আছে?
আম্মু:- তুই আগে খেয়ে নে আমি পড়ে সব বলছি.
তার পর খেয়ে আমার রুমে চলে গেলাম , কিছু সময় পর আম্মু আমার রুমে আসলো ,
আমি:- হুম আম্মু এখন বলো কি হয়েছে 😕?
আম্মু:- আসলে হয়েছি কি কিছু দিন ধরে তোর বিয়ে নিয়ে আলোচনা চলতেছে এক মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। তোর আব্বু বিয়ের সব কিছু ঠিক করে ফেলেছে .
আমি:- মানে কি 🙄 আব্বু হঠাৎ এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিলো আর তুমি কি করলে? না করতে পারলে না?
আম্মু:- আমি জানি যে তোকে জানানো উচিৎ ছিল কিন্তু তোর উপর এই বিশ্বাস ছিলো বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে , আসলে মেয়েটা অনেক ভালো, পরিবারের সদস্যরাও অনেক ধার্মিক। কেনো তোর কি কোনো পছন্দ আছে?
আমি:- না আম্মু তেমন কিছু নেই। তার পর বলো
আম্মু:- মেয়েটার নাম সুবহা , আমাদের সব কথা হয়ে গেছে এখন শুধু তোর মতামতের অপেক্ষায় আছি তাই আজ তোকে নিয়ে সুবহা দের বাসায় যাবো। তুই একবার দেখা করে আয় তোর অবশ্যই পছন্দ হবে।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে , কিন্তু মনে রেখো আমার পছন্দ না হলে কিন্তু এই বিয়ে হবে না।
আম্মু :- আচ্ছা ঠিক আছে তোর আব্বুকে আমি বুঝিয়ে বলবো ।
কিছু সময় পর আম্মু, আব্বু, আমি আর তানিশা বেরিয়ে পরলাম সুবহার সঙ্গে দেখা করার জন্য , এখন কি আমার খুশি হওয়া উচিত না রাগ কারা উচিত কিছু বুঝতে পারতেছি না, কেমন যেন একটা মিশ্র অনুভূতি আব্বুর উপর অল্প অল্প রাগ হচ্ছে, কারণ আমাকে না জানিয়ে এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়েছে আবার ভালোও লাগতেছে, অল্প অল্প লজ্জাও লাগছে এইটা ভেবে যে আমি কোন একটা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি বিয়ের জন্য, আল্লাহর কাছে দোয়া করি যাতে এই মেয়েকেই কেই বিয়ে করতে পারি। সুবহা ! নামটা ভালোই তাই না 🤩 ! সাধারণত সুবহা নাম আমাদের এখানে কেউ রাখে না । আচ্ছা আমি তো এখনো সুবহা কে দেখিও নাই আমাদের বিয়ে হবে কি না তার কোন হিসাব নেই , তাহলে আমি সুবহা নাম নিয়ে এতো ভাবছি কেনো? তবে যাই বলি না কেন নামটা কিন্তু ভালোই 🙂। মনের ভিতর অনেক কিছুই চলছে কিরকম যেন অন্য রকম অভিজ্ঞতা যা আমি আর কোনোদিন অনুভব করি নাই। এই সব ভাবতে ভাবতেই সুবহাদের বাসার সামনে এসে পড়েছি , গাড়ি থেকে নেমেই দেখি অনেক লোক আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে আব্বুর সম বয়সী এক লোক আব্বুর সঙ্গে কথা বলে আমাকে জিজ্ঞাস করলেন .
” বাবা ভালো আছো” হয়তো লোকটি আমার হবু শ্বশুর . তাই আমিও বললাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,। তারপর আমাদের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসত দিলো , তানিশা তো এমন ভাব করছে যে এই টা ওর অনেক পরিচিত বাসা , কিছু সময় পর সুবহার আব্বু আর আম্মু কিছু খাবার নিয়ে এলো আমাদের খাওয়ার জন্য , তানিশা তো দেখি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে , অবশ্য অনেক কিছুই দিয়েছে খেতে। আমি তো কিছু মুখে দিচ্ছি না এই দেখে সুবহার আম্মু বললো ” বাবা কিছু খাচ্ছ না যে “
এখন আমি আর কি বলবো তাই অল্প চা খেলাম তার পড় শুরু হলো প্রশ্নর উপর প্রশ্ন, আমার মনে হচ্ছে আমি অনেক বড়ো অপরাধি , আর সুবহার আব্বু আম্মু হচ্ছে পুলিশ অফিসার, কিছু করার নেই মাথা নিচু করে এক এক করে প্রশ্ন র উত্তর দিচ্ছি, কোথায় থাকি, কি করি, পড়া শুনা কতো দূর, ভবিষ্যতে কি করার ইচ্ছে আছে , কিন্তু কিছু প্রশ্ন আমাকে অনেক লাজ্জায় ফেলে দিয়েছে ,
– তুমি কি কোরআন পড়তে পারো ?
আমি:- না ,
-কোয়টা সূরা মুখস্ত আছে?
আমি:- শুধু সূরা ফাতিহা,
-তাহলে তুমি নামাজ আদায় করো কিভাবে?
আমি :- আসলে আমি সাধারণত নামাজ আদায় করি না.
এই প্রশ্ন গুলো শুনার পর মনে হলো যে এখন আমাকে ঘাড় ধরে বাসা থেকে বের করে দিবে😕 আর নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে তো দূরের কথা। হঠাৎ সুবহার আম্মু কাকে যেনো ডেকে বললো –
সুবহার আম্মু:- আরিফ!
আরিফ:- জি আম্মু!
সুবহার আম্মু:- ভাইয়াকে সুবহার রুমে নিয়ে যা ।
এই কথা শুনে তো আমার হার্টবিট বেড়ে যাওয়া শুরু করলো , আমি সুবহার রুমের দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি নিচে যেভাবে লজ্জা পেয়ছি এখন সুবহা যে কি কি প্রশ্ন করবে আল্লাহ ভালো জানে কারণ আম্মু বলেছিলো যে এই বাসার সবাই ধার্মিক।
আরিফ ডাকলো
আরিফ:- ভাইয়া আপু কিন্তু অনেক রাগি, সাবধানে কথা বলবেন
( বলেই হাসা শুরু করলো)
এই শুনে তো আমার গলা শুকিয়ে গেল , তাও আরিফের সঙ্গে অল্প হাসলাম। হঠাৎ দুজনে একটা দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে গেলাম।
আরিফ দরজায় নক করে বল্লো ” আপু দরজা টা খুলো” এই কথা বলে আরিফ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
আরিফ:- তো ভাইয়া আপনি থাকেন আমি এখন যাই .
এই বললেই চলে গেল আমি তো মহা বিপদে পড়ে গেলাম , হঠাৎ দরজা খুলার আয়াজ পেলাম আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ বন্ধ করে নিলাম ………
চলবে..………
Leave a Reply