তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব:-০২

“তুমি আমার প্রিয়তমা”

পর্ব:-০২

Writer:-Hassab bin Ahmed.

হঠাৎ দরজা খুলার আয়াজ পেলাম আমি আমার চোখ বন্ধ করে নিলাম

মনে হয় দরজা খুলে গেল, কেউ একজন হয়তো সালাম দিয়েছিলো। চোখ খুলে তাকালাম সুন্দর পরিপাটি রুম এতো সুন্দর রুম দেখতেও ভালো লাগে।  আমার সামনে হয়তো সুবহা দারিয়ে আছে , সঠিক বলতে পারছি না কারন কালো বোরখা পরিহিত আছে এমনকি নিকাব ও পরেছে , আমি তো সালাম ফিরানোর কথা ভুলেই গেছি, মেয়েটি আমাকে একটা ছোফায় বসতে বললো আমি কোনমতে বসলাম , মেয়েটিও আমার পাশে থাকা ছোফায় বসলো,  আমি ঘেমে গেছি তাই রুমাল দিয়ে মুখটা একটু মুছে নিলাম , মেয়েটি নরম সুরে বললো আমার নাম “হুমাইরা বিনতে আব্দুলা” সবাই আমাকে “সুবহা‌” বলে ডাকে ।

আমি তো কন্ঠ শুনেই শেষ এতো সুন্দর কন্ঠ কিভাবে হতে পারে।  

কিছু সময় নিরবতা , আমি শুধু মুখ মুছে যাচ্ছি এই অবস্থা দেখে সুবহা বললো-

সুনবা :- আপনি কি বেশি নার্ভাস ফিল করছেন?

আমি:- না তেমন কিছু না, আসলে এভাবে এই পরিস্থিতিতে এই প্রথম ,তাই‌ অল্প ……😕

সুবহা:- হুম….

না এই ভাবে বসে থাকলে হবে না তাই আমি কথা বলা শুরু করলাম,

আমি:- আপনি ভালো আছেন?

সুবহা:- জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?

(আমি তো ভাবতেছি এতো সুন্দর কন্ঠ হয় কিভাবে।)

আমি:- জি আমিও ভালো আছি। আমি জানিনা আমাদের এখানে কি বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ, আমার ‌কোন প্রশ্ন নেই আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাস করতে পারেন,  

সুবহা মাথা ঝাকিয়ে ‌জানালো কোন প্রশ্ন নেই ,  তারপর সুবহা নিকাব খুলতে লাগলো.,

আমি:- দাড়ান , আপনি নিকাব খুলবে না প্লিজ।

সুবহা:- কেনো? আপনি কি আমাকে না দেখেই বিয়ে করতে চান?

আমি:- (একটু হাসি দিয়ে) আসলে আপনাকে কথা গুলো কিভাবে বলব বুঝতে পারতেছি না  , দেখুন আমার ইসলামী জ্ঞান ০% , ইসলাম সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই , সুধু নামে মুছলিম, আপনার আব্বু আম্মুর সঙ্গে কথা বলে মনে হলো আপনারা অনেক ধার্মিক , আর আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি পরিপূর্ণ পর্দা করেন । আমার মনে হয় না যে আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে , এইটা আশা করাও হয়তো ভুল। তাই আমি চাইনা আপনি আমাকে আপনার চেহারা দেখান। 

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম  , কিন্তু মনে হয় কথা গুলো তার মাথায় ঢুকে নাই , তাই তার মুখ থেকে নিকাব টা খুলে ফেললো। 

আমি তো হা হয়ে তাকিয়ে আছি , এই আমি কি দেখেছি , মায়াবী চোখ, গোলাপী ঠোট, ঠোটের কোনে যেন হাঁসি লেগেই আছে। আমি হয়তো বলতে পারবো সুবহা কি পরিমান সুন্দরী, কিন্তু আমি সুবহার চেহারার মাঝে যে  মায়া দেখিছি তার বর্ননা লিখে বুঝানোর কোন শক্তি আমার নেই। আমি এক পলকে চেয়ে আছি দেখে সুবহা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো এই লজ্জা পাওয়া মুখটা আরো সুন্দর লাগতেছে খেয়াল করলাম লজ্জায় সুবহার চেহারা আনার ফলের মতো লাল হয়ে গেছে আর সেই মিষ্টি হাসি তো আছেই। আমি তো এই হাসি দেখাই পাগল হয়ে গেছি।

এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছে,

রমনী অনর্থক হাসে

তাহা দেখিয়া পুরুষ অনর্থক কাঁদে

অনেক পুরুষ ছন্দ মিলাইতে বসে

আবার কেহ গোলায়া দড়ি দিয়ে মরে !!!! “””””

জানিনা আমার অবস্থা কি হবে? 

আমিও চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে বলল

আমি:- আপ. আপনি মনে হয় আমার কথা বুঝতে পারেন নাই।

সুবহা:- কেনো বুঝতে পারবো না? আপনি বলেছেন আমি ইসলাম মানি আপনি মানেন না?. এ জন্য আমার আব্বু আম্মু আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে দিবে না?

আমি:- জি।

সুবহা:- কেনো আপনি কি আল্লাহ কে বিশ্বাস করেন না?

আমি:- অবশ্যই করি , কেনো করবো না।

সুবহা:- আপনি কি মানেন হজরত মুহাম্মদ সাঃ শেষ নবী ।

আমি:- জি অবশ্যই মানি ।

সুবহা:- আপনি কি মানেন যে আমাদের পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে জীবন অতিবাহিত করা উচিৎ।

আমি:- জি ।

সুবহা:- তো‌ আপনাকে কে বললো যে আপনি ইসলাম সম্পর্কে কিছু যানেন না ইসলাম মানেন না. হয়তো আমি মানি ৫% আপনি মানেন ২% । ইনশাআল্লাহ আমি আশা করি আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার রবের কাছে ফিরে আসবেন।

আমি :- আপনি শুধু ৫% মানবেন কেনো ? আপনাদের পুরো পরিবার পরিপূর্ণ ধার্মিক।

সুবহা:- (সেই মন ভুলানো হাসি দিয়ে) আপনাকে কে বলেছে আমার পরিবার পরিপূর্ণ ধার্মিক , তাই যদি হতো তাহলে আমি আপনার সামনে এভাবে বসে থাকতাম না , আমার সঙ্গে আমার মাহরাম কেউ থাকতো। এভাবে দেখা করা ইসলাম উনোমতি দেয় নি।

এই গুলো শুনে জানিনা আমার মাথায় কি হলো হঠাৎ বলে উঠলাম

আমি:- তাহলে কি আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে?

সুবহা:- আল্লাহ ভালো জানেন । সত্যি বলতে আমি সব সময় চাইতাম আমার স্বামী যেনো পরিপূর্ণ ভাবে ধর্ম মানার চেষ্টা করে।

(এই কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো , )

আমি:- ধন্যবাদ আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলো । এখন মনে আমার যাওয়া উচিৎ অনেক সময় হয়ে গেছে , প্রায় আধা ঘন্টা।  

আমি এসে আব্বু আম্মুর পাসে বসলাম । 

সুবহার আব্বু আমার আব্বু কে বলছে-

সুবহার আব্বু- দেখুন বেয়াই মশাই আমি তো আপনাকে সব বললাম , আর সব কথা তো হয়েই আছে , তাহলে কি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবেন! না আরো দেরি করবেন ?

আব্বু:- আমার তো এক দিনো দেরি করার ইচ্ছে নেই কিন্তু এক বার সুবহার মতামত নেয়া উচিৎ.

সুবহার আম্মু:- জি ঠিক বলেছেন বেয়াই , আমি এক বার সুবহার সঙ্গে কথা বলে আসি। 

এই বলে সুবহার আম্মু সুবহার রুমের দিকে গেল।

**

সুবহার আম্মু:- কি রে মা এখনো বসে আসিছ। সবাই তোর মতামতের অপেক্ষায় আছে. তুই কি বলিস?

সুবহা:- তোমরা যা ভালো মনে করো।

সুবহার আম্মু:- তা তো জানি , তার পরো তোর মতামত জানা আমাদের কর্তব্য।

সুবহা:- জি আম্মু আমি এই বিষয়ে ভাবছিলাম কি করা যায় . কিন্তু আমি অমত করার কোন কারণ খুঁজে পেলাম না ।

সুবহার আম্মু:- আলহামদুলিল্লাহ শুনে খুশি হলাম।

*******

সুবহার আম্মু হাঁসি মুখে আমাদের সামনে এসে বললো –

সুবহার আম্মু:- আলহামদুলিল্লাহ সুবহার এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই । এখন বিয়ের তারিখ ঠিক করতে পারেন । 

এই কথা শুনে তো আমার জ্ঞান হারানোর কথা , কারণ আল্প আগে আমাকে না করে দিলো আর এখনি রাজি । 

তানিশা ‌দেখি সুবহার রুমের দিকে যাচ্ছে।  যাই হোক আমি কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলাম না ।  অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হলো সামনে মাসের ১০ তারিখে আমাদের বিয়ে । আজকে ১০ তারিখ মানে ঠিক ১ মাস পর। সবাই অনেক খুশি , কেউ মিষ্টি খাচ্ছে কেউ গল্প করছে । কিন্তু আমি ভাবতেছিলাম  যাওয়ার আগে সেই মায়াভরা চাঁদ মুখ টা যদি একবার দেখতে পেতাম। অবশেষে আমাদের বাসায় চলে যাওয়ার সময় হয়ে এলো সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম কিন্তু ‌আমি যাকে খুঁজে বেরাচ্ছি তাকে একটি বারের জন্যও পেলাম না। কিন্তু আমার  হবু শ্বশুর  অনেক ধরনের খাবার পেকিং করে দিয়ে দিলো আমাদের কে বাসায় নিয়ে আসার জন্য । সবাই গাড়িতে উঠলাম আমি ড্রাইভিং সিটে বসে বসে আইনার দিকে তাকিয়ে আছি এই আশায়  যদি একবার দেখতে পাই । 

তানিশা:- কি রে আর কতো সময় অপেক্ষা করবি যাবি না এই বাসার থেকে যাবি আজকে ?

আমি চোখ গরম করে তাকালাম ওর দিকে , ও দেখি হাসতেছে , না এখানে কিছু বলা যাবে না আব্বু আম্মু আছে ।  তাই গাড়ি ইস্টার্ড করে বাসার দিকে রওনা হলাম । অবশেষে বাসায় পৌছে গেলাম।‌  

কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগতেছে না। মনে হচ্ছে কি যেনো নেই? ভাত খাওয়ার জন্যে বসলাম কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নাই তাই রেখে এলাম । 

রুমে এসে ভাবতেছি যদি সুবহার সঙ্গে অল্প কথা বলতে পারতাম তাহলে মনে হয় ভালো লাগতো।

হঠাৎ তানিশার ডাক শুনতে পেলাম-

তানিশা:- কি রে কি ভাবছিস এতো?

আমি:- না কিছু না , তুই এখনো কেনো?

তানিশা:- বুঝি বুঝি , তবে আমার কাছে একটা সমাধান আছে , কিন্তু টাকা লাগবে ৫০০ .

আমি:- লাগবে না তোর সমাধান, আমার টাকা 💰 বেশি হয়নি?

তানিশা:- আচ্ছা ঠিক আছে , আমার কাছে আমার হবু ভাবির ফোন নং ছিলো তোর যখন লাগবে না তাহলে আমি যাই।

আমি:- আরে লাগবে না কেন? ওটা তো আমি মজা করে বললাম , আমার আদরের ছোট বোন আমাকে কিছু দিবে আর আমি নিবনা কেনো?

তানিশা:- পাল্টি বাজ। হবে না , দিবো না তোকে।

আমি:- দে না প্লিজ , এই নে ৫০০ টাকা 

তানিশা:- আচ্ছা ঠিক আছে , তুই যখন এতো করে বলছিস , ১০০০ টাকা দে ।

আমি:- মানে কি 🙄 ? ৫০০ থেকে ১০০০ হয়ে গেলো কিভাবে . হবে না ৫০০ নে।

তানিশা:-২০০০ হাজার লাগবে এখন , যতো সময় যাবে , টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকবে. 

আমি:-আচ্ছা ঠিক আছে এই নে ২০০০ হাজার টাকা .

তানিশা:- হুম ঠিক আছে , আর কখনো আমার সঙ্গে লাগতে আসিস না বুঝলি।

তানিশার কাছ থেকে ফোন নং নিয়ে কল করলাম……

কিন্তু এখন আমার মাথায় কিছু আসছে না এখন আমি সুবহাকে কি বলবো  

চলবে……………….


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *