“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-০৬
Writer:-Hassab bin Ahmed.
…….আমি প্রতিজ্ঞা করলাম আর কখনো নামাজ ছেড়ে দিব না ,ইনশাআল্লাহ।
সুবহাও সুন্দর করে আজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল । আজ সুবহার থেকে খুশি মনে হয় কেউ নেই । সুবহাও নামাজ শেষে হাত তুলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার চেষ্টা করছে” আল্লাহ তোমায় কি বলে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না। আমি সব সময় চাইতাম আমার স্বামী যেন পুরোপুরি দ্বীনদার হয় । কিন্তু আমি সাজিদ কে প্রথমে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম , কিন্তু তুমি আমাকে নিরাশ করো নি । সাজিদ নামাজ না পড়ার জন্য কান্না করছে ,এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে, আল্লাহ তুমি ওকে মাফ করে দাও।”
সুবহা কান্না করেই চলছে , সে তার রবের সঙ্গে কথা বলছে। সুবহা মোনাজাত শেষ করে ,জায়নামাজে বসে বসে কান্না করছে।
এই সময় সুবহার আম্মু রুমে প্রবেশ করেলো , দেখতে পেলো সুবহা কাঁদছে।
সুবহার আম্মু:- কিরে কি হয়েছে? কাঁদিস কেন?
সুবহা:- কিছু না আম্মু এমনি .
সুবহার আম্মু:- কিছু না হলে কেউ কাঁদে ? বল কি হয়েছে?
সুবহা:- কিছুই হয় নি? এতো রাতে তুমি এখানে কেন?
সুবহার আম্মু:- জল নিতে গিয়েছিলাম রান্না ঘরে।তোর রুমের সামনে এসে কান্নার আওয়াজ পেলাম তাই রুমে আসলাম। সত্যি করে বল তো কি হয়েছে?
সুবহা:- আসলে আম্মু , আল্লাহ আমার দুয়া কবুল করেছে।
সুবহার আম্মু:- এ তো খুশির খবর , এখানে কান্না করার কি আছে?
সুবহাও ভাবলো এখন তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু ও কাঁদছে কেন? সুবহা নিজেকে শান্ত করে বললো
সুবহা:- এইটা ভালো লাগার কান্না আম্মু ।
সুবহার আম্মু:- হুম হয়েছে , কোন কিছু হতে না হতেই চোখের পানি পরে তোর , এখন বড়ো হয়েছিস আল্লাহ জানে বেচেরা সাজিদের কপালে কি আছে?
সুবহা:- আম্মু তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো?😡
সুবহার আম্মু :- হয়েছে আর রাগ দেখাতে হবে না। এবার ঘুমিয়ে পর।
……………………………………………….
দিন পার হতে লাগলো কিন্তু আমি সুবহার সঙ্গে কোন কথা বলতে পারছি না । সুবহা মোবাইল সুইচ অফ করে রাখে , আমার ফোন রিসিভ করতে চায় না , আর রিছিভ করলেও কথা বলে না ।
রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি , সুবহা কে একটা কল করে দেখি কি হয় ।
সুবহা:- আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ?
আমি:- যাক তাহলে ফন ধরলেন ? আমি তো ভাবছিলাম কল রিসিভ করবেন না?
সুবহা:- আপনাকে আমি কি বলেছি শুনেন নাই?😤
আমি:- কি? রাগ করছো কেন?
সুবহা:- রাগ করবো না ? আপনি আজ পর্যন্ত কখনো নিজে সালাম দিয়েছেন? আর আজ তো সালামের জবাব ও দিলেন না .
আমি:- ওওওও সরি । আচ্ছা সালাম দেওয়া কি খুবিই জরুরি?
সুবহা:- মানে কি? আপনি জানেন না ‘সালাম দেয়া সুন্নত ও সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।’
আমি:- না তো , আজ শুনলাম । আপনি কি এই বিষয়ে একটু ভালো করে বলতে পারবেন?
সুবহা:- আচ্ছা ঠিক আছে , শুনেন
সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, যখন দুইজন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়। এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-‘আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দেবো, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে, আল্লাহর রহমত ও নেকি অর্জন হবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যা, বলুন; তখন নবীজী এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের পরস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করবে’। (মুসলিম :১/৫৪)
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) সেগুলো কি কি? উত্তরে তিনি এরশাদ করেন, কোনো মুসলমানের সাথে তোমার দেখা হলে প্রথমে তাকে সালাম করবে, তোমাকে আহবান করলে তার আহবানে সাড়া দেবে, তোমার কাছে সৎ উপদেশ কামনা করলে তাকে সৎ উপদেশ দেবে, হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে এর জবাব দিবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে, অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে এবং তার মৃত্যু হলে জানাজার পর লাশের সাথে চলবে’। (মুসলিম :২/২১৩)
এক মুসলমান অপর মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করলে উভয়ে আলাদা হওয়ার পূর্বেই সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়’। (আবু দাউদ : ২/৭০৮)
আমি:- সালামের এতো গুরুত্ব , আগে তো জানতাম না ।
সুবহা:- জি , আরো অনেক হাদীস আছে সালামের বিষয়ে । এর একটি হাদিস শুনেন
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর নিকটে এসে বললেন-
السلام عليكم
আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ১০ নেকি লেখা হয়েছে।
এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন-
السلام عليكم ورحمة الله
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। রাসূল (সা.) সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০ নেকি লেখা হয়েছে।
এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন-
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা-তুহ। রাসূল (সা.) তারও জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ৩০ নেকি লেখা হয়েছে। (আবু দাউদ)।
আমি:- আলহামদুলিল্লাহ । আমি চেষ্টা করবো সালাম দিয়ে কথা বলার জন্য।
সুবহা:- হুম , আর কেউ আগে সালাম দিলে , সালামের জবাব ও দিতে হবে.
আমি:- জি , অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানলাম আজকে ধন্যবাদ।
সুবহা:- হুম থাকেন তাহলে কাজ আছে । আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আমি:- মানে কি , এই শুনেন , হেলো,হেলো … যা ফনটা রেখে দিলো । এভাবে কাজ হবেনা , সুবহার সঙ্গে দেখা করতে হবে ।
……………………………….
(৭ দিন পর)
কালকে আমাদের বিয়ে
বাহিরে খুব প্রবল ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে “! আর এই ঝড় বৃষ্টির রেশ ধরে তার সাথে আমার মান অভিমান চলছে””।
৭ দিন হয়ে গেল তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই”! আমি ও অভিমান করে তার ফোনে আর কল দেইনি”!!
আজ সেই দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে”!
কেন আমাদের মান অভিমান চলছে তা জানতে হলে ৭ দিন আগে যেতে হবে ।
শুনেন তাহলে , আজ থেকে ৭ দিন আগে । আমি সুবহার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে সুবহার কলেজে গিয়েছিলাম। কলেজের সামনে সুবহার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কলেজ শেষ হবার পর সুবহা কলেজ থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে লাগলো । যদিও বোরকা আর নিকাব পরা ছিল , তবুও চিনতে ভুল করিনি । আমি সুবহার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম , আর সুবহা সুবহা বলে ডাকতে লাগলাম , কিন্তু সুবহা এমন ভাবে যাচ্ছে যেন আমাকে চিনতেই পারছে না । ওরা ৪ জন ছিলো সবাই বোরকা সহ নিকাব পরা । আমি প্রায় দৌড়ে গিয়ে সুবহার সামনে এসে দাড়ালাম,
আমি:- আস-সালামু আলাইকুম, ভালো আছেন?
সুবহা:- ওয়ালাইকুমুস আসলাম , জি আমি ভালো আছি ,রাস্তা ছাড়েন ।
আমি:-না আজকে তো যেতে নিবো না 😁
সুবহা:- এই আপনি কি পাগল বুঝতে পারেন না আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না , আপনার ফোন রিসিভ করি না , আপনার জন্য আমার ফোন সুইচ অফ করে রাখতে হয় । এর মানে আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না, এইটুকু বুঝতে পারেন না। ( উচ্চ কন্ঠে)
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না , আমার হাতে থাকা ফুলটা মাটিতে পড়ে গেল । লজ্জায় কার দিকে তাকাতে পারছিলাম না, সুবহার বান্ধবীদের সামনে এভাবে অপমান হবো কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে যদিও অন্য কোন মানুষ ছিলো না তার পরো নিজেকে অনেক খারাপ মানুষ মনে হচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা পায়ে এসে গাড়িতে এসে বসলাম। চলে এলাম বাসায় , আমার মাথায় শুধু এইটাই ঘুরতেছে , এখন আমার কি করা উচিৎ ? ভাগ্য ভালো সুধু সুবহার বান্ধবীরা ছিলো , যদি অন্য মানুষ থাকতো তাহলে তো আমির আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকতো না ।
………………………………………..
ঐ দিকে
সুবহাও বুঝতে পারে নাই যে এতো বড়ো ঘটনা ঘটে যাবে । সুবহা ও কান্না করতে করতে রাস্তায় বসে গেলো , সুবহার পুরো শরীর যেন অবস হয়ে গেছে ও আর দারিয়ে থাকতে পারছে না। ওর বান্ধবীরা ওকে ধরে নিয়ে এক বড়ো গাছের নিচে বসিয়ে দিলো । সুবহা কে সবাই কান্না করতে বারন করেছে ,
মর্জিনা ( সুবহার বান্ধবী):- দেখ আর কান্না করিস না , এই নে জল খা , এরকম কেন করলি ,তুই যদি সাজিদ কে বিয়ে না করিস তাহলে বাসায় বল যে এই বিয়ে আমি করবো না । আমি জানি বাসায় তোর কথা শুনবে । কিন্তু তুই এই ভাবে অপমান না করলেও পারতি ।
সুবহা:- তো কি করতাম আমি. আমি দিন দিন ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি , আর কি বল্লি বিয়ে না করার কথা , আমারো
ওর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে , ঘুরতে ইচ্ছে করে , দিন দিন বেড়েই চলেছে আমার দুর্বলতা , তাই এরকম করলাম । ( কান্না জড়িত কন্ঠে)
মনিকা ( সুবহার বান্ধবী):- কিন্তু তাও যা হয়েছে এইটা বেশি হয়ে গেছে । সাজিদের মুখ টা দেখেছিলি কালো হয়ে গেছিলো , হাঁটতে পারছিলো না। সুবহা তারাতাড়ি ফন বের করে
সাজিদ কে ফোন দেয় . কিন্তু রিসিভ করলো না আবার ফোন দিলে সুইচ অফ বলছে , সুবহার চিন্তা আরো বেরে গেলো ,সুবহা আরো অস্থির হয়ে পড়লো , সুবহা চখে কিছু দেখতে পারছে না । কেমন যেন সব ঝাপসা দেখাচ্ছে।
চলবে………..……
Leave a Reply