“তুমি আমার প্রিয়তমা”
পর্ব:-১১
Writer:-Hassab bin Ahmed.
সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম শহরে , দুপুরে সুবহা ফোন করে বলেছিলো , যে ওরা পৌঁছে গেছে । আমাকে তারাতাড়ি যেতে বললো । এখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে, ভাবলাম প্রথম ঐ বাসায় যাবো , তাই কিছু গিফট নিয়ে যাই । গিয়ে দেখি দোকানের মালিক আমার পুরনো বন্ধু “মামুন”. আর কি অনেক বছর পর দেখা , তাই দুজনে ভাবলাম একটা চা দোকানে গিয়ে চা খেতে খেতে কথা বলি । যেই ভাবা সেই কাজ , আমরা রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম । হঠাৎ এক বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাকে এসে ধাক্কা মেরে চলে গেল । আমি রাস্তায় পড়ে গেলাম । বা হাত দিতে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে । মামুন আমাকে ধরে কাছে থাকা মেডিকেলে নিয়ে গেল , আমার বা হাত কেটে গেছে , বেন্ডেজ করে দিলো , আর কিছু ঔষধ দিলো ।
ডাক্তার:- চিন্তার কোন কারন নেই , এক সাপ্তাহ রেস্টে থাকুন , ঠিক হয়ে যাবে ।
মেডিকেল থেকে বেরিয়ে এলাম ।
মামুন:- আচ্ছা সাজিদ , তুই তো এখন গাড়ি চালাতে পারবি না । রাতও হয়ে গেছে ।
এক কাজ কর , আজকের রাত আমাদের বাসায় থাক কাল সকালে তোকে তোর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।
আমি:- হুম ঠিক আছে , তাই কর ।
এখন মামুন দের বাসায় যাচ্ছি । ও হো সুবহা কে তো কল করতে হবে । সুবহাকে ফোন দিলাম , রিসিভ করে সালাম দিলো
আমি:- ওয়ালাইকুম আসসালাম , হুমাইরা আমি যেতে পারবো না , আসলে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে , আমি বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি ।
সুবহ:- কখন? কোথায়? কিভাবে ? ডাক্তার দেখিয়েছেন ? ( অস্থির হয়ে)
আমি:- তুমি শান্ত হউ , এতো অস্থির হয়ো না । কিছু হয় নি, শুধু বা হাতে একটু কেটে গেছে।
সুবহা:- আজকে কি তাহলে বাসায় যাবেন ?
আমি:- না , আমার বন্ধুর বাসায় থাকবো ।
সুবহা:- ওওও , তো ভাইয়ার বাসা কোথায় ?
আমি:- আছে পাশেই মনে হয় । আগে তো কখনো যাই নি।
সুবহা:- ঠিক আছে , পৌঁছে কল দিয়েন, 😥( কান্না জড়িত কন্ঠে)
আমি:- এই তুমি কান্না করছো কেন , কিছু হয় নি তো ।
সুবহা:- কে বলেছে কিছু হয়নি , হাত কেটে গেছে তাও কিছু হয় নি? 😥
সুবহা কে সান্ত্বনা দিয়ে ফোন রেখে দিলাম ।
…………..
সুবহা কান্না করেই যাচ্ছে । ফোন হাতে দিয়ে কান্না করছে । সুবহা ভাবছে আমার বরটার না জানি কত কষ্ট হচ্ছে”””? সুবহা এখন কি করবে বুঝতে পারছে না”! সুবহার খালা এসে দেখে সুবহা কাঁদছে ।
সুবহার খালা :- কিরে মা কি হয়েছে কাঁদছিস কেন”’? কেউ কিছু বলছে “?
সুবহা কিছু বলতে পারছে না , কথার উত্তর না দিয়ে কেঁদেই চলছে”! কেন জানি কান্না থামাতেই পারছেনা”! খালা সুবহার কাছে আসতেই খালাকে জড়িয়ে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো”! এই কান্নার আওয়াজ শুনে সবাই এসে হাজির , সুবহার আম্মু, নিশি, আরিফ। সুবহার কান্না দেখে তো সবাই অবাক আর চিন্তায় পড়ে গেল”””! কারন সুবহা বিয়ের ব্যাপার ছাড়া আর কোন বিষয় নিয়ে এভাবে কাঁদছে তা কোরো জানা নেই ।
কান্না আর থামাতে পারছে না””
সুবহার কান্না শুনে সুবহার আম্মু বারবার সুবহাকে আর বোন কে জিজ্ঞেস করছে সুবহা কাঁদছে কেন”?
কিন্তু সুবহা উত্তর দিতেই পারছিনা আর খালা তো কিছুই জানে না “”!
সব মিলিয়ে রুমে থমথমে আবহাওয়া””!
!
খালা সুবহাকে পানি খেতে দিল”! আর বলল, সাজিদের সাথে কোন ঝগড়া হইছে কিনা””?
পানি খেয়ে কিছুটা স্বস্তি হয়ে আম্মু আর খালাকে সাজিদের খবর বললো ।
সুবহার আম্মু সাজিদ কে ফোন দিলো , কিন্তু ছুইচ অফ , বলছে। সবাই সুবহাকে শান্তনা দিলো ।
……………..
আমার মোবাইলেও চার্জ নেই , মামুনের মোবাইলেও চার্জ নেই । প্রায় আধা ঘন্টা জার্নি করার পর মামুন দের বাসা এসে পৌঁছে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আরিফ আমাকে ওর আম্মুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ।
মামুন :- আম্মু , ও আমার বহুত পুরনো বন্ধু । আমরা এক সঙ্গে হোস্টেলে ছিলাম ।
আমি:- আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি , ভালো আছেন ।
আন্টি আমাকে কিছু বলবে তার আগেই এক মেয়ে কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এ তো দেখি সুবহা । আমি কি করবো বুঝতে পারছি না । সুবহা তো কান্না করতেছে । সবাইতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । আন্টি আর মামুনের তো হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা । তাঁর পর একে একে , আরিফ , নিশি , শাশুড়ি মাও এসে হাজির । সুবহা তো আমাকে ছাড়ছেই না। কি করি , আমার তো লজ্জা করছে এখন , আবার মনে হলো মামুন দের বাসায় সুবহারা কেন ? আমি সুবহার কানে কানে বললাম ” হুমু এখন ছাড়ো জরিয়ে ধরার অনেক সময় পাবে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে”। সুবহা আমাকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ে দেখে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে , সুবহা লজ্জায় লাল হয়ে এক দৌড়ে ভিতরে চলে গেল । তাহলে আরিফ সুবহার খালাতো বোন । আমিও সবার সঙ্গে কথা বলে ভিতরে চলে গেলাম । রাতে সুবহা খাবার নিয়ে আসলো ।
সুবহা:- খেয়ে নিবেন , আমি গেলাম ।
আমি:- হুমু , শুনো ?
সুবহা:- কি ? আর হুমু কে? আপনি আগেও বলেছিলেন .😠
আমি:- ওওও হুমু হলো হুমায়রা নামের সংক্ষেপ।
সুবহা:- ভালো , এখন খান ।
আমি:- কি ভাবে খাবো আমার তো হাতে ব্যাথা!
সুবহা:- আপনার তো বা হাতে ব্যাথা , ডান হাত দিয়ে খাবেন .
আমি:- বলছিলাম কি , একটু খাইয়ে দাও না 😒
সুবহা:- পারবো না !
আমি:-কেন ?
সুবহা:- এমনি ,
আমি :- মনে হয় আমার হুমু অনেক রাগ করেছে , এখানে বসো তো , ( হাত ধরে বিছানায় বসালাম ) হুম এখন বলো কি হয়েছে ? এতো রাগ করছ কেন?
সুবহা:- তখন যে আপনাকে জরিয়ে ধরেছিলাম , ঐ টা নিয়ে সবাই আমাকে নিয়ে মজা করছে ।😭
আমি:- হুম , খুবই দুঃখজনক ব্যাপার ,
সুবহা:- হুম ।
আমি:- আমার কিন্তু অনেক খিদে পেয়েছে।
সুবহ:- আমারো !
আমি:- তাহলে একটু খাইয়ে দাও না 😒,
সুবহা:- আচ্ছা ঠিক আছে ( একটা হাসি দিয়ে)
সুবহা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে , সত্যি বলতে বউ এর হাতে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা ।
সুবহা:- ওওওও
আমি:-কি হলো
সুবহা:- কি হবে , আর একটু হলে তো আমার নখটাই খেয়ে ফেলতেন ।
আমি:- সরি হুমু , আসলে নিজেকে তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলাম ।
সুবহা:- হুম হয়েছে , আর বলতে হবে না।
আমি:- খুব বেশি লেগেছে ?
সুবহা:- পরের বার যাতে আর না হয়।
আমি:- আচ্ছা হবে না ।
খাওয়া শেষে , সুবহা চলে যাচ্ছে ।
আমি:- এই কই যাও ,
সুবহা:- কেন শুতে যাই, রাত তো অনেক হলো ।
আমি:- কোথায় ।
সুবহা :- খালার সাথে , খালা আজ রাত তার সঙ্গে থাকতে বলেছেন ,
আমি:- মানে কি , তাহলে আমি কি একা একাই থাকবো ?
সুবহা :- হুম 🤗 ,
আমি:- আমি থাকবো না , তুমি আমার পাশে শুবে আমি তাই জানি ।
সুবহা:- এতো বাচ্চাদের মত করেন কেন , অল্প বুঝতে চেষ্টা করুন , আমি খালাকে বলেছি ,যে তার সাথে থাকবো আজকে ।
আমি: – না হবে না , তোমাকে আমার সঙ্গেই থাকতে হবে ।
সুবহা:- আচ্ছা ঠিক আছে । পাগল একটা ।
আমি:- আবার কই যাও ,
সুবহা:- আরে , ফ্রেস হয়ে অজু তো করে আসি ।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে যাও,
*****
সুবহা ফ্রেস হতে যাচ্ছে আর চিন্তা করচে যদি খালার সঙ্গে দেখা হয় , তাহলে তো শেষ । খালাকে কি বলবে ।
সুবহা , অজু করে সাজিদের রুমের দিকে যাচ্ছে , আর মনে মনে দুয়া করছে , খালা যেন না ডাকে , কিন্তু পিছন থেকে ডাক দিলো ।
খালা :- কিরে সুবহা , কই যাস আমি তোর জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি । আয় ঘুমাবো ।
সুবহা:- জি খালা ,
সুবহা খালার পিছন পিছন যাচ্ছে আর ভাবছে , এখন খালাকে কি করে বুঝাবে। সুবহার অস্থিরতা দেখে সুবহার খালা মুচকি মুচকি হাসছে ।
খালা:- কি হলো মা দাঁড়িয়ে কেন ? শুয়ে পর ।
সুবহা:- খালা , বলছিলাম কি , খালু কোথায় ?
খালা:- কেন , পাশের রুমেই তো আছে । এখন শুয়ে পর তো আগে ,
সুবহা আর কিছু বলতে পারছে না , কি বলবে , কোন উপায় না দেখে শুতে গেলো ,
খালা:- কি রে তুই এতো ঘেমে যাচ্ছিস কেনো ?
সুবহা:- কই না তো?? ( চমকে উঠে)
খালা মুচকি হাসি দিয়ে বললো , ” জামাই কে রেখে এখানে থাকতে ভালো লাগছে না , ?
সুবহা:- খালা কি যে বলো না , ( লজ্জা পেয়ে)
খালা :- সামান্য হাতে দুঃখ পেয়েছে তাই যে কান্না করলি , আর এখান যদি আমি তোকে আমার কাছে রাখি , তাহলে তো তুই আমাকে অভিশাপ দিয়ে দেবি ( হাসতে হাসতে বললো)
সুবহা:- খালা ….
খালা :- আমি জানতাম , তাই নিশিকে আমার পাশে রাখছি , যা দেখ ঐ দিকে আবার সাজিদ রাগ করে বসে আছে ।
খালার পাশে তো নিশি শুয়ে আছে , এতো অস্থিরতার জন্য খেয়াল করে নাই সুবহা।
সুবহা:- খালামনি তুমি সব থেকে ভালো । আই লাভ ইউ
খালা:- হয়েছে এবার যা।
সুবহা এক দৌড়ে সাজিদের রুমে গেলো । সাজিদ তো রাগে ফুলছে ।
………
আমি:-এতো দেরি ।
সুবহা:- কি করবো , খালার ওখানে আটকে গিয়েছিলাম ।
সাজিদের রাগ ভাঙাতে একটু কষ্ট করতে হয়েছে সুবহার , দুইটা মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে হয়েছে ।
তার পর সাজিদ কে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে দুজনেই শুয়ে পরলো।
সুবহা:- এই উঠেন তো ।
আমি:- কেন , আবার কি হলো ,
সুবহা :- বিছানা টা ভালো করে ঝাড়তে হবে ।
আমি:- কেন পরিস্কার তো আছে সন্ধ্যায় আমি যখন রুমে আসলাম তখনি তো ঝেড়ে দিলে ?
সুবহা :- আবার ঝাড়তে হবে , কারণ ঘুমানোর আগে বিছানা ভালো করে ঝেড়ে নিতে হয় এইটা সুন্নত ।
আমি:- ওওও , আচ্ছা তুমি যে অজু করে আসলে ওটাও কি সুন্নত ।
সুবহা:- জি ,
আমি:- এই দুটোই কি সুন্নত না আরো আছে ।
সুবহা :- ঘুমানোর আগে আরো কিছু সুন্নত আছে ।
আমি:- কি কি ?
সুবহা :- ঠিক আছে বলছি , শুনেন
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিশ্বনবি (সা:) বেশকিছু আমল করতেন। যাতে ঘুম নিরাপদ ও প্রশান্তিদায়ক হয়।
ঘুম সম্পর্কে হাদিসে একাধিক আমল করার কথা এসেছে। কিছু আমল আপনাকে বলছি।
১.বিছানাটা ভালো ভাবে ঝেড়ে নেয়া।( সহিহ বুখারী , হাদীস নং- ৬৩২০)
২.অজু করে ঘুমানো।( সহিহ বুখারী, হাদীস নং- ২৪৭)
৩.তাসবীহ’, তাহ’মীদ ও তাকবীর পাঠ করা : ৩৩ বার সুবহা’নাল্লাহ, ৩৩ বার আলহা’মদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার।( সহিহ বুখারী, হাদীস নং-৬৩১৮)
৪.আয়াতুল কুরসী পাঠ করা ১ বার ।(সহিহ বুখারী হাদীস নং- ২৩১১,৩২৭৫,৫০১০)( মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং- ২১২৩)
৫.সুরা ইখলাস পাঠ করা (৩ বার)।( সহিহ বুখারী, হাদীস নং-৫০১৫)
৬.সুরা কাফিরুন পড়া (১ বার)।( তিরমিজী, হাদীস নং- ৩৪০৩)
৭. সুরা মুলক পড়া ।(তিরমিজি হাদীস নং-৩৪০৪)
৮.সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়া।
আমি:- আচ্ছা , কিন্তু আমার তো ওগুলো মুখস্থ নেই , আমি কিভাবে পাড়বো ?
সুবহা:- গুগলে সার্চ করেন পেয়ে যাবেন , আর কিছু দিন দেখে দেখে পরলেই মুখস্থ হয়ে যাবে ।
আমি:- কিন্তু আমার কাছে তো তুমিই গুগল ।
সুবহা:- হুম বুঝতে পারছি , ঠিক আছে , আমি বলে দিচ্ছি আপনি শুনে শুনে বলুন ।
আমি:- হুম ভালো আইডিয়া 🤗
তার পর শুয়ে পরলাম ,
সুবহা:- এই কি করছেন ? জরিয়ে ধরেছেন কেন ? আপনার তো হাতে ব্যাথা ,
আমি:- আরে কিছু হবে না , একটু কাছে আসো তো ।
চলবে………
Leave a Reply