তুমি আমার প্রিয়তমা”পর্ব:-১২

তুমি আমার প্রিয়তমা”

পর্ব:-১২

Writer:-Hassab bin Ahmed.

পরদিন সকালে বাসায় চলে আসলাম , সুবহাও এসেছিলো আমার সঙ্গে , কিছু দিন আমাদের বাসায় থেকে সুবহাদের বাসায় চলে গিয়েছে। সুবহাকে দেখিনা প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল ।  আজকে সুবহার কথা অনেক মনে হচ্ছে । অনেক সময় ধরে ফোন বেজেই চলেছে ,  রিসিভ করার ইচ্ছে না থাকলেও রিসিভ করলাম , 

আমি:-আসসালামু আলাইকুম,

ঐ পাস থেকে :- ওয়ালাইকুম আসসালাম , ফোন ধরতে এতো সময় লাগে । 

আমি:- ও সরি , এটা কর নম্বর ?

সুবহা:- আম্মুর নতুন নম্বর , 

আমি:- ওওও

সুবহা:- শুনেন , কাল আমার জন্ম দিন সো আপনাকে আজকে রাতের ভিতরে আসতে হবে .!

আমি:- তুমি জন্ম দিন পালন করো?

সুবহা:- না , আমি জানি অনেক আলেম জন্ম দিন পালন করা হারাম বলেছে , তাই আমি জন্ম দিন পালন করি না । তারপরো আপনার আসতে হবে ! বাই , আমার অনেক কাজ আছে ! পরে কথা বলবো ।

বলেই ফোন কেটে দিলো আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না,

আজ হাতে অনেক কাজ , তাই ফোন বন্ধ করে রাখলাম ।

                       ………….

ঐ দিকে সুবহা সাজিদের জন্য অনেক কিছু রান্না করে অপেক্ষা করছে , কিন্তু দিন শেষে রাত হয়ে গেলো কিন্তু সাজিদ আসলো না , অনেক বার ফোন করেছে , কিন্তু কোন লাভ হয় নি সাজিদের ফোন বন্ধ , সুবহা দরজা বন্ধ করে কান্না করে অভিমান করে রুমে বসে আছে ,কারো সঙ্গে কথা বলছে না , সুবহার আম্মু , সাজিদের বাসায় কল করেছিলো কিন্তু সাজিদ বাসায় নেই ।রাত অনেক হয়ে গেলো , নিশি সুবহার খাবার রুমে দিয়ে গেলো , কিন্তু সুবহা খাবার না খেয়ে বসে আছে।  দেখতে দেখতে ১২ টা বেজে গেলো , সুবহা সময় দেখার জন্য মোবাইল টা হাতে নিলো, সঙ্গে সঙ্গে সাজিদের ফোন আসলো , সাজিদ এখন কল করেছে দেখে তো সুবহার রাগ মাথায় উঠে গেছে । রিসিভ করেই

সুবহা:- কে আপনি কাকে চাই , এতো রাতে ফোন করেছেন কেন? (অভিমানী কন্ঠে)

আমি:- শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা , 

সুবহা:- দেখুন এখানে কোন প্রিয়তমা থাকে না , ফোন রাখেন , 

আমি:- কিন্তু আমার প্রিয়তমা তো এখানেই থাকে , 

সুবহা :- আমি আপনাকে চিনি না , তাই আমাকে আর বিরক্ত করবেন না.

বলেই ফোন কেটে দিল ,

আমি আবার ফোন করলাম 

সুবহা:- আপনাকে তো বললাম আমি আপানাকে চিনি না , আবার কেনো ফোন করলেন ?

আমি:- হয়তো কেউ কারো অভিমান ভাঙার জন্য , কারো চোখের জল মুছে দেয়ার জন্য দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে, 

সুবহা :- মানে , সত্যি আপনি এসেছেন , 

বলেন এক দৌড়ে দরজা খুলে দিলো ,  সুবহা আমার দিকে তাকিয়ে আছে

আমি অপরাধীর মতো তাকিয়ে বললাম – সরি 

সুবহা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো , আপনি জানেন আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম আপনার ফোন বন্ধ , চিন্তায় আমার অবস্থা শেষ আর আপনি আমাকে একটা ফোন করেন নাই , সারাদিন আপার জন্য কোত কিছু বানিয়েছি, কিন্তু আপনি আসলেন না , 

আমি:- এই তো আসলাম , এবার কান্না বন্ধ করো , তুমি আসতে বলবে আর আমি আসবো না তা কি করে হয় ।

সুবহা:- আপনি অনেক খারাপ ( অভিমানী কন্ঠে)

আমি:-  বললাম তো সরি , এই নাও তোমার জন্য ছোটো একটি গিফট।

সুবহা :-বাহ এতো চকলেট , আই লাভ ইউ ,

আমি:- হুম , অল্প ফ্রেস হবো ,

ফ্রেস হয়ে এসে দেখি সুবহা ভাত বেড়ে দিয়েছে।

সুবহা :- আপনার হয়তো খিদে পেয়েছে , ভাত খেয়ে নিন .

আমি:- হুম সত্যি খিদে পেয়েছিল , 

আমি:- এক মিনিট , তুমি খেয়েছো?

সুবহা:- আপনি খান , আমি খাবো না !

আমি:- আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি খেয়েছো কি না?( রাগি কন্ঠে)

সুবহা:- জি জি , আমি খেয়েছি , আপনি খান !

আমি:-সুবহা আমি আগেও বলেছি আমি মিথ্যা বলা পছন্দ করি না , সত্যি করে বলো 😡!

সুবহা:- না!😔

আমি:- তাহলে মিথ্যা কথা বললে কেনো?

সুবহা :- ভাবলাম আপনার খিদে পেয়েছে তাই!!!!! সরি !

আমি:- এটাই শেষ , এর পর যদি কখনো আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলো তাহলে যে আমি কি করবো  তুমি কল্পনাও করতে পারবে না !

সুবহা:- সরি !

আমি:- চলো দুজনে ভাগ করে খাই !

তরকারি দেখে তো আমি শেষ !

আমি:- এইগুলো কি ?

সুবহা:- কদু দিয়ে মাছ দিয়ে রান্না করেছি !

আমি:- আমি এইগুলো খাবো না !

সুবহা:- কেন? আমি নিজের হাতে রান্না করেছি !

আমি:- আমি কদু খাই না ! ভালো লাগে না ।

সুবহা:- তাও খেতে হবে ! 

আমি:-কেন?

সুবহা:- আমি আপনার জন্য অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি, আর সবচেয়ে বড় কারন হলো , হজরত মুহাম্মদ সা: কদু খেতে পছন্দ করতেন ! 

আমি:- সত্যি হজরত মুহাম্মদ সা: কদু খেতে পছন্দ করতেন ? কখনো শুনিনি তো !

সুবহা:- জি , শুনেন একটি হাদিস বলি 

        আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এক দর্জি গোলামের বাড়ীতে আসলেন। তাঁর সামনে কদু উপস্থিত করা হলে তিনি (বেছে বেছে) কদু খেতে লাগলেন। সে দিন থেকে আমিও কদু খেতে ভালোবাসি, যেদিন থেকে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তা খেতে দেখেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯২৬)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪৩৩

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আমি:- হুম , খেতে পাড়ি এক সর্তে !

সুবহা:- কি?

আমি:- কেউ যদি খাইয়ে দেয় তাহলে !

এইটা শুনে সুবহা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে ! বউ যদি খাইয়ে দেয় তাহলে তো সবকিছু ভালোই লাগবে ! তার পরো বলছি , সত্যি অনেক ভালো লাগছে ! যারা কদু খেতে পছন্দ করেন না ! তাঁরা একবার খেয়ে দেখতে পারেন ! 

সুবহা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আমি খাচ্ছি আর সুবহার দিকে তাকিয়ে আছি ! 

সুবহা:- আচ্ছা আপনার স্যার আইজাক নিউটনের তৃতীয় সূত্র

মনে আছে?

আমি:- মানে কি ! কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছো 

সুবহা:- হুম বলেন না !

আমি:- মনে থাকবে না কেন নিউটনের তৃতীয় সূত্র- প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷

সুবহা :- হুম তাহলে তো এই সূত্র মতে আমি যদি কাউকে খাইয়ে দেই তাহলে তো আমাকেও কেউ খাইয়ে দেবে কারন , খাইয়ে দেওয়াও তো একটি কার্য!😌

আমি:- 🙄, এই সমান্য কথা বলতে এতো কিছু ! বললেই হয় আমাকেও খাইয়ে দিন !

সুবহা:- সব কিছু বলতে হয় না কিছু বুঝে নিতে হয় !

আমি:- হুম , হা করো ……..

তার পর সুবহা আমাকে খাইয়ে দিলো ! আমি সুবহাকে খাইয়ে দিলাম! 

সুবহা :- তাহলে আপনি বিছানায় ঘুমান আর আমি নিচে ঘুমাই ,

আমি:- মানে ! কেন ?

সুবহা :- না এমনি এখানে তো কোল বালিশ নেই বডার দেয়ার জন্য ! রাতে যদি কিছু হয় !

আমি:- কিহহহহহ🙄 , কি হবে কিছু হবে না আসো !

সুবহা:- আমি কিন্তু সিরিয়াস !

আমি:- বললাম তো কিছু হবে না , আমার উপর এইটুকু ভরসা করতে পারে !

আমি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর সুবহা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে ।

আমি:- আচ্ছা ঘরিটা পছন্দ হয়েছে ?

সুবহা:- হুম 🤗, একেবারে আপনার মতো সুন্দর !

আমি:- তাই নাকি

সুবহা:- হুম, একটা কথা বলি?

আমি:- অবশ্যই ! 

সুবহা:- আমি দেখেছি আপনি সব সময় টাখনুর নিচে কাপড় পরেন !

ছেলেদের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা হারাম । তোবে নিচের দিকে থেকে যেটা পরা হয় তা যায়েজ( যেমন মোজা) । টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা যাবেনা মর্মে বহুত সহীহ হাদীস পাওয়া যায়।যেমন সুনানে আন নাসায়ী হাদীস নং:-৪৪৫৮, ৪৪৫৯, শামায়েলে তিরমিযী হাদীস নং- ৯২.  এই হাদীস গুলোতে পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে যারা টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রেখে তাদের সঙ্গে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবে না এবং পবিত্র ও করবে না। এখান থেকে বলতে পারি যে টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা হারাম।  টাখনুর উপর কাপড় পরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কিন্তু আপনি এই বিষয় টাই সবথেকে বেশি অবহেলা করেন। 

আমি:- হুম , সত্যি বলেছো ! কিন্তু অনেকেই বলেছেন গর্ব বা অহংকার না করে কেউ যদি টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে তাহুলে সেটা হারাম হবে না।

সুবহা:- আমি জানি অনেক আলেম এইভাবে বলেছেন তারা অনেক জ্ঞানী, তাই তাদের মতকে আমরা সন্মান করি ও ভালোবাসি , তাই তাদের সঙ্গে তর্ক করবো না আপনি তাদের শুধু এই হাদীস টাই বলবেন “শামায়েলে তিরমিযী হাদীস নং-৪৪ বলা হয়েছে যে” হজরত মুহাম্মদ সাঃ সব সময় টাখনুর উপর কাপড় পরতেন।”

    এই একটি হাদিস ই সব  বিতর্ক শেষ হয়ে যায়। যে যাই বলুক । আমরা একটাই জবাব দিবো যে আমরা কোনো বিতর্ক করবো না  হজরত মুহাম্মদ সাঃ টাখনুর নিচে কাপড় পারেন নাই তাই আমরাও পারবো না।

আমি:- হুম , আজ থেকে ইনশাআল্লাহ টাখনুর নিচে কাপড় পারবো না !

এইভাবেই কথা বলতে বলতে কখন যে সকাল হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না! ফজরের আজান দিয়ে দিলো 

আমি:- শুন আমি সকালেই চলে যাবো  কারো সঙ্গে দেখা করবো না , আর গোসল করে একেবারে বের হয়ে যাই !

সুবহা:- কিন্তু..

আমি:- প্লিজ !

সুবহা :- আচ্ছা ঠিক আছে 

তার পর সুবহা গিয়ে দেখে আসলো বাইরে কেউ আছে নাকি 

সুবহা:- বাথরুমে চলেন , কেউ নেই !

আমি:- হুম চলো!

আমি গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম আর সুবহা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে !

আমি:- হুমু!

সুবহা:- কি হয়েছে?

আমি:- অল্প ভিতরে এসে দেখো তো , সাওআর দিয়ে পানি পড়ছে না কেন?

সুবহা:- হুম আপনার চালাকি আমি বুঝি ! আমি ভিতরে যাবো না 

আমি:- প্লিজ ! আমি সত্যি বলছি ( আবেগি কন্ঠে)

সুবহা:- আচ্ছা ঠিক , কিন্তু কোন দুষ্টুমি করবেন না কিন্তু!

সুবহা যেই বাথরুমের ভিতরে এসেছে , এক টানে কাছে নিয়ে এসে  আমার ঠোট সুবহার ঠোট এক করে দিলাম ! 

কতো সময় ছিলাম বলতে পারবো না !

আমি আর সুবহা সাওয়ারের পানিতে দুজন কাক ভিজে হয়ে গেছে !

সুবহা:- আপনি কি মানুষ না দানব ?😡

আমি:- কেন?

সুবহা:- আর একটু হলে তো আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম !

আমি:- 😀😀😀 , আজ পর্যন্ত শুনিনাই যে কেউ কিচ করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করছে! 

সূবহা:- 😡😡😡

আমি:- আচ্ছা সরি, কিন্তু তুমি কাঁদছো কেন?

সুবহা:- কৈ!

আমি:- এই তো এখনো তো তোমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !

সুবহা:- জানিনা !

তার পর আমি গোসল করে সুবহার রুমে আসলাম , আর সুবহা বাথ রুমেই থাকলো !

                         …………

সুবহা গোসল করে বাইরে বের হয়ে দেখে নিশি দারিয়ে আছে!

সুবহা:- এতো সকালে তুই এখানে কেন?

নিশি:- অজু করতে এসেছিলাম ! তার পর দেখি ,বাথ রুমে লাইট! তুই এতো সকালে গোসল করলি কেন?

সুবহা:- এমনি ! তুই তোর রুমে যা!

নিশি:- এতো সকালে গোসল করলি , রাতে সাজিদ ভাইয়া আসেছিলো নাকি ? 😁

সুবহা:- তুই কিন্তু বেশি দুষ্ট হয়ে গেছিস , এক থাপ্পর দিয়ে বড়োদের সঙ্গে কথা বলা শিখিয়ে দিবো ।

নিশি রুমে চলে গেল ! 

                             …….

সুবহা আর আমি নামাজ আদায় করে নিলাম!! আমি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, সুবহা আমার সার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে , এমন সময় নিশি ঘরে ঢুকে পড়লো !

সুবহা তো লজ্জায় লাল হয়ে শেষ ।

তার পর আর কি নিশি সবাইকে বলে দিলো ! তাই আজকের দিন এখানে থাকতে হলো !  পুরো দিন খুব আনান্দয় কেটে গেলো ! তার পর দিন আমি বাসায় চলে আসলাম !

এভাবেই চলছিলো আমার আর সুবহার দুষ্ট মিষ্টি প্রেম ! দেখতে দেখতে দুইটা বছর কেটে গেল !   কিন্তু হঠাৎ সব কিছু শেষ হয়ে গেলো , আমাদের সংসারে নেমে এলো কাল বৈশাখী ঝড় , সব কিছু কেমন যেন উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো

চলবে…………..


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *