তুমি আমার প্রিয়তমা”পর্ব:-১৪

তুমি আমার প্রিয়তমা”

পর্ব:-১৪

Writer:-Hassab bin Ahmed.

……নাছির :- জি আমি ফ্রি আছি , আসতেছি…….

কিছু সময় পর নাছির আসলো , সুবহা‌ ভিতরে আছে আমি আর নাছির হসপিটালের বাহিরে আছি , নাছির কিছু জানে না , আমার সঙ্গে কি কি হয়েছে , ওকে খুলে বললাম ,

নাছির:- আমি তোকে কি বলে সান্তনা দিবো ? যে মানুষটা আমাকে সবসময় মোটিভেট করতো , তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার কাছে নেই , ধৈর্য্য ধর ইনশাআল্লাহ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে , চল আগে আমার বাসায় যাই , তারপর দেখি…

আমি:- নারে , আজ না হয় তোর বাসায় যাবো , কিন্তু তার পর , আমি অন্য এক সাহায্যর জন্য তোকে ডাকলাম,

নাছির:- হুম ,বল 

আমি:- আমাকে ছোট একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দিতে পারবি ? আর কিছু টাকা যদি হয় , ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত দিয়ে দিবো .

নাছির:- তুই আমাকে এখনো নিজের মনে করিস না , তুই আমার কিছ থেকে টাকা নিবি , আবার ফিরিয়ে দেয়ার কথা আসছে কেন ???? 

আমি:- হুম , বাসা ভাড়া হবে ??

নাছির:- দেখ তুই তো জানিস বাসা ভাড়া পাওয়া কোত অসুবিধা , ভালো বাসা দেখতে হবে? তোরা আমার বাসায় চল ,তার পর একসঙ্গে বাসা দেখি!!!

আমি:- না , আমার এখনি বাসা লাগবে তোর কাছে কোন ঠিকানা থাকলে বল ( অস্থির হয়ে)

নাছির:- দেখ তুই আগে শান্ত হ , আমার জানা একটা বাসা আছে কিন্তু তোরা ওখানে থাকতে পারবি না!!

আমি:- কেন?

নাছির:- আরে টিনের ঘর ,

আমি:- চল ,

নাছির:-  কোথায়??

আমি:- আমার নতুন বাসায় , আমি তো চিনি না তাই তুই নিয়ে যাবি!!!

নাছির:- দেখ তুই বোঝার চেষ্টা কর ওইখানে তুই থাকতে পারবি না , কেউ লাখ টাকার ঘর ছেড়ে এসে টিনের ঘরে থাকতে পারে না ।

আমি কোন কথা শুনলাম না ,চলে এলাম সুবহার পাশে , 

আমি :- চলো….

সুবহা:- হুম , কিন্তু কোথায় ???

আমি:- আমাদের নতুন বাসায় , 

সুবহা আর কিছু বললো না , আমরা হেঁট হাটে যাচ্ছি নাছির বাইক নিয়ে আমাদের আগে আগে যাচ্ছে !!

কিছু সময় পর পেয়ে গেলাম , দুইটা ঘর , একটা থাকা ঘর অন্য একটি রান্না ঘর,,, ঘর মালিকের সঙ্গে কথা বলে বাসা ভাড়া নিলাম । 

আমি:- নাছির তুই এখান বাসায় যা পরে কথা বলবো!!!!

নাছির চলে গেল, আমি আর সুবহা ঘরের ভিতরে ঢুকলাম , পুরো ঘর নুংরা ,  

আমি :- পছন্দ হয় নি???

সুবহা:- আপনি আমাকে যেখানে রাখবেন ওটাই আমার জন্য রাজমহলের থেকে অনেক বড়ো !!!

ঘরের ভিতরে কিছু নেই সুধু একটি খাট আর একটি টেবিল !!!

চলো কি আর করার সাফা করি !!

সুবহা:- হুম , কিন্তু সাফা করার জন্য ঝারু বা অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে , কিছুই তো দেখতে পারাছি না !!!!

আমি:- ঠিক বলেছো , তুমি এক কাজ করো কিছু প্রয়োজনীয় বস্তুর নাম বলো , আমি নিয়ে আসি বাজার থেকে !!!!

সুবহা :- হুম ঠিক আছে মোবাইলে লিখে নিন আমি বলছি , 

সুবহা বলা শুরু করলো , ঝারু ,  লাইট,  বালিশ, বাল্টি,………….করাই…………… চাউল  , মরিচ…………………………..

আমি তো লিস্ট লিখতে লিখতে শেষ , কমছে কম ৫০ টার উপর হয়ে গেছে !

আমি:- ঠিক আছে , আমি এখুনি নিয়ে আসছি , আর বাসা থেকে বের হওয়ার কোন দরকার নেই , আর কেউ আসলেই গেট খুলার দরকার নেই , আমি এসে কল করবো ঠিক আছে ,

সুবহা:- জি , আরো একটি কথা !!

আমি:- আমার  মোবাইলের চার্জ বেশি নেই একটা চার্জর আনবেন !!!!

  আমি কিছু না বলে চলে আসলাম বাজারে ,প্রয়োজনীয় কিছু বস্তু কিনলাম , টাকাও শেষ,!! ১০০০ টাকা রেখে দিলাম নিজের কাছে কখন কি দরকার হয় বলা তো যায় না।

বাসায় এসে দুজনে সব ঠিক করলাম , সন্ধ্যার আগে নাছির ফোন করলো , 

নাছির:- তারাতাড়ি বাসার বাইরে আয় এক জায়গায় যেতে হবে , 

আমি কিছু না বলে সুবহাকে বলে বের হলাম , নাছির দেখি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে !!!

আমি বাইকে উঠলাম , নাছির আমাকে নিয়ে থানায় আসলো ,

আমি:- থানায় কেন আসলি ???

নাছির :- ঐ মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার মামলা করতে !!!

আমি:- তাতে কি হবে ?

নাছির:- কিছু হবে না তার পরও

মেয়েটির নামে মামলা করে বাসায় ফিরলাম । এসে দেখি সুবহা রান্না শেষ করে ফেলেছে । ইশার নামাজ পড়ে খেতে বসলাম , সুবহাকে জিগ্গেস করলাম

আমি:- বাসায় কল করেছিলে ???

সুবহা:- হুম 

আমি:- কি বললো?

সুবহা:- আর কখনো ফোন করতে মানা করলো !!! আপনি করেছিলেন?

আমি:- হুম ,

সুবহা:- কি বললো রাগ কমেছে কি?

আমি:- আমাকে জন্ম দেওয়াই তাদের সব থেকে বরো ভুল ছিল ।

সুবহা:- চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ!

কেউ ভালো করে খেতে পারলাম না ।

অল্প অল্প খেয়ে হাত ধুয়ে ফেললাম!

এইভাবেই কেটে গেলো ১০ টি দিন!!

মোবাইলের স্কীনের দিকে তাকিয়ে দেখি, রাত্রি দুইটা বেজে গেছে। তবুও ঘুম আসছে না আমার। মনের মাঝে চাপা কষ্ট গুলোকে কে যেনো বার বার নাড়া দিচ্ছে। পাশেই শুয়ে আছে সুবহা ।  গভীর ঘুমে আছন্ন।

.

আমি বিছানা ছেড়ে, আস্তে করে উঠে পড়লাম। যদি সুবহার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তাহলে আর বারান্দায় যাওয়া হবে না আমার। আর তখন সুবহা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করবে।

.

বিছানা থেকে নেমে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে রুমের দরজা খুলে বারান্দায় চলে আসলাম।

.

কয়েকটি বিষয় আমাকে সর্বদা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, একমু্হুর্ত শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।

এখনো পর্যন্ত অন্য কোন চাকরী যোগার করতে পারিনি। সেইজন্য মনে সবসময় একটা কষ্টের ছাপ লেগে থাকে।

সুবহা আমার জীবনে এসে অনেক কষ্টে জীবন পার করছে। সব বউই চাই, তার স্বামী, কিছু দিতে পারুক আর না পারুক, কমদামি কিছু গিফ্ট, আর অল্প সময় যেনো তাকে দেয়।

.

নিজের কাছেই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে। সবাই তাদের নিজের বউকে কত কিছু দেই, শুধু আমিই দিতে পারলাম না। দশটা দিন ধরে ভালো কোন রান্না হয়নি, সেইজন্য একি রকমের খাবার পনেরো দিন ধরে খেয়ে আসছি। সুবহার মুখের দিকে তাকাতে আমার লজ্জা করে, কারন ওর মুখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি, মেয়েটি কিছু একটা আশা করে আমার থেকে। কিন্তু আমি কিছুই দিতে পারিনা তাকে।

.

নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। পেছনে ঘুরে দেখি সুবহা দাড়িয়ে আছে।

আমি:- কি ব্যাপার ঘুম থেকে উঠে আসলে কেনো?

সুবহা:- যেখানে আপনি নেই, সেখানে আমি কি করে থাকি বলেন! কি করছেন এখানে ??

আমি:- কেন , আকাশ দেখছি তুমি তো বলেছিলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা সুন্নত। নবীজী (সঃ) মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।-সূরা বাকারাঃ১৪৪, মুসলীম : ২৫৩১।

সুবহা:- হুম ভালো কথা , তবে কাঁদছেন কেন?

সুবহা:- আমাকে বিয়ে করে তুমি অনেক বড়ো ভুল করেছো। কথাটি বলতেই আমার মুখ চেপে ধরলো নেহা।

সুবহা:-  আপনাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই আমি। তাই এই ধরনের কথা কখনো কল্পনাও করবেন না। 

আমি:- তুমি বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি !! আমি ঐ মেয়েটি কে চিনি না সত্যি !

সুবহা:- জি জানি ! আপনাকে আমি ভালো করেই জানি , তাইতো সব কিছু ফেলে আপনার সঙ্গে চলে আসলাম !!( জরিয়ে ধরে)

আর আপনি এতো ভেঙে পারছেন কেন আপনি কি এই আয়াত ভুলে গেলেন “যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তার জন্য আল্লাই যথেষ্ট।

( At-Talaq 65: Verse 3 )”

আমি:- ঐ ভরসাই তো বেঁচে আছি!

সুবহা:- এতো রাতে এখানে থাকতে হবে না, এখন চলেন ঘুমাবেন?

সুবহার কথাই ছাদে আর থাকলাম না,সুবহার কথা না শুনলে সে হয়তো রাগ করবে,আমি চাইনা,কোন কারনে সুবহা কষ্ট পেয়ে থাকুক। বিছানাই এসে শুয়ে পড়লাম, সুবহা আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে,আর আমি ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করছি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, নিজেই বলতে পারবো না।

.

ঘুম থেকে উঠে দেখি,সুবহা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ( ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়েছিলাম দুজনে) সকাল হয়েছে অনেক আগেই,তবুও সুবহার কাছে হয়তো এখনো সকাল হয়নি। সেইজন্য সে এখনো ঘুমিয়ে আছে। সুবহাকে জাগিয়ে তুলতে মন সাই দিলো না। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমিও শুয়েই থাকলাম। কিছুক্ষন পরেই সুবহার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘুম থেকে উঠে দেখে,আমি জেগে আছি,তখন সে একটু লজ্জা পেলো,কারন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে আর আমি সেটা দেখে ফেলেছি। সুবহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রান্না করতে চলে গেলো,আর আমি ফ্রেস হয়ে একটু বাইরে গেলাম।

.

বাড়ির বাইরে যেতেই নাছির ফোন দিলো..

নাছির:- সাজিদ  কোথায় তুই তোর তো

Indian Council of Agricultural Research এ চাকরি হয়ে গেছে ! আমি পাইনি রে 

আমি:- কি বলছিস সত্যি !!

নাছির:- এই অল্প আগেই রিজাল্ট দিলো , তুই দেখে নে , 

আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে দেখতেছি !!

মনে মনে আমি অনেক হাসতেছি,এখন থেকে আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না আমার।অনেক দিন পরে একটু হাঁসলাম। বাইরে না গিয়ে বাড়িতেই চলে আসলাম আবার।

.

রুমে ঢুকে সুবহাকে খুজতে থাকলাম। খুজে দেখি সুবহা রান্না ঘরে রান্না করছে। আমি ওখানে যেতেই আমাকে সে দেখতে পেয়েছে।

সুবহা:- ওখানে দাড়িয়ে কেনো,ভেতরে আসেন!

ভেতরে ঢুকে  জড়িয়ে ধরলাম।

সুবহা:- এই ছাড়েন ,কি করছেন এসব,দেখতেছেন না রান্না করছি।

আমি:- না আমি এখন ছাড়বো না তোমাকে , আজকে আমি অনেক খুশি।

সুবহা:- এই যে ছাড়েনতো , বলেই নেহা আমার দিকে ঘুরলো। কি জন্য এতো খুশি, যে আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে।

আমি:- এই দেখো আমার চাকরির হয়েছে ( মোবাইল টা এগিয়ে দিয়ে)। আমার চাকরি হয়ে গেছে, দুদিন পরেই জয়েন করতে হবে।  ১ লাখের উপরে বেতন।

সুবহা:- সত্যি বলছো?

আমি:-  তাহলে রিজাল্টা কি মিথ্যা।

সুবহা সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। চুমু দিয়ে ওমনি সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওপাশে ঘুরে রান্না

করতে লাগলো।

.

বুঝতে পারছি,সে লজ্জা পেয়েছে,না হলে এমন করতো না,সেইজন্য সে ওপাশে ঘুরে কাজ দেখাচ্ছে আমাকে। আমিও কম না,পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরলাম। এবার আর ছাড়তে বললো না, হয়ত বুঝে গেছে,ছাড়তে বললেও কোন লাভ হবেনা। আর সুবহাও চায়,এমনি করে যেনো আমি তাকে ভালোবাসি সারাজীবন। সুবহা রান্না করছে,আর আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আছি। এখন থেকে আর কোন কিছুই আমাকে পিছু টানবে না,এখন থেকে সুবহাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে পারবো,দিন শেষে অন্যদের মতন আমিও একটি করে ফুল এনে দিতে পারবো। 

চলবে…………


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *