গল্পঃ:-শান্তির খোঁজে
পর্ব:-০৬
Writer:-Hassab bin Ahmed.
রুমে এসে ফ্রেস হয়ে দুজনে ইশার নামাজ আদায় করে নিলাম তারপর আমি শুয়ে পড়লাম হুমাইরা ও শুয়ে পড়লো মাঝে কোল বালিশ 😥।
আমি:- এইটা না দিলে হয়না? রাতে কোথায় থাকে কে জানে।
হুমাইরা:-না হয়না । আর আপনি আমার জায়গায় আসবেন না?
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো না কিন্তু যদি তুমি আসো?
হুমাইরা:- গেলে যাবো আমার স্বামীর কাছে আমি যেতেই পারি?
আমি:- স্বার্থপর ( বিরবির করে)
হুমাইরা:- কিছু বললে?
আমি:- না কিছু বলিনি । তুমি বলেছিলে আমাকে তুমি করে বলবে।
হুমাইরা:- ও বললাম তো কিছু দিন সময় লাগবে।
(কিছু সময় নিরবতা)
হুমাইরা:- আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
আমি:- আরে মহারানী একটা কেনো যোতো খুসি করো তোমার জন্য তো আমি সব সময় হাজির ।
হুমাইরা:- আমি আল্লাহ র কাছে সব সময় চাইতাম আমার উনি যাতে ধুমপান না করে। আল্লাহ আমার দুয়া কবুল করেছে তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার যানা মতে ধুমপান হারাম না এটা মাকরূহ তাহলে আপনি ছেরে দিলেন কেনো?
আমি:- উনি মনে?
হুমাইরা:-উনে মানে আমার স্বামী মানে আপনি. 😌
আমি:- তুমি কি চাও আমি ধূমপান করি?
হুমাইরা:- ছি । আপনাকে তো ঘরেই ঠুকতে দিবো না ধূমপান করলে।?
আমি:- চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ নিজের ইচ্ছায় কখনো হারাম কাম আমি করবো না এইটুকু বিশ্বাস করতে পারো?
হুমাইরা:- জানি তো আপনি ভদ্রলোক। আমি সুধু জানতে চেয়েছিলাম .😏
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে বলছি শুনো
(ক).প্রথমে আমরা পবিত্র কোরআন থেকে ৫ টি আয়াত দেখাবো
১. [সূরা গাশিয়াহ আয়াত নং:-০৭] এই আয়াতে জাহান্নামীদের খাবারের প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন “জাহান্নামিরা ঐ খাবার খাবে যা তাদের পুষ্টি ও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না” তো তুমি যদি ধূমপান করো তাহলে তোমার শরীরে কোনো পুষ্টি যোগায় না বা ক্ষুধাও কমাবে না । এই আয়াতের দ্বারা আমরা ধূমপান কে জাহান্নামীদের খাবার বলতেই পারি।
২.[সূরা নিসা আয়াত নং:-২৯, সূরা বাকারা আয়াত নং:-১৯৫] বলা হয়েছে” তোমরা নিজেদের কে ধংসের দিকে নিক্ষেপ করো না” তুমি যদি সিগারেটের প্যাকেট দেখো তাহলে দেখবে প্যাকেটর গাঁয়ে লেখা থাকে ধূমপান মৃত্যু ঘটায়” তুমি যদি ধূমপান করো তাহলে তুমি আত্মহত্যা করেছো যা এই দুই আয়াতের বিরুদ্ধে যায় । তুমি যদি ধূমপান মাকরূহ বলতে চাও তাহলে তুমি দুইটি কাজ করতে পারো । এক – তুমি বলতে পারো আমি এই দুই আয়াত মানিনা।( তাহলে তো তুমি মুছলিম থাকবে না😀)
দুই:- তোমাকে এমন একটি বিজ্ঞানের বই দেখাতে হবে যেখানে লেখা আছে ” ধূমপান করলে মৃত্যু হয়না” ( আমি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র আমি আজ পর্যন্ত এমন বই দেখিনি)
৩.আমি মনেকরি বিরি, সিগারেটে এইগুলা অপবিত্র বস্তু। আর পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফ আয়াত নং:-১৫৭ বলা হয়েছে” তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল ও অপবিত্র বস্তু হারাম”
৪.সূরা ইসরা আয়াত নং:-২৭ ” নিশ্চয় অপব্যবহার কারী শয়তানেরা ভাই” ধূমপান করা অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়।
(খ).
১. একটি রিপোর্ট দেখে নেই World health organization র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ধূমপান করার জন্য প্রত্যেক বছরে ৮ মিলিয়ন এ রো বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে ।
•Tobacco kills up to half of its users.
•Tobacco kills more than 8 million people each year. More than 7 million of those deaths are the result of direct tobacco use while around 1.2 million are the result of non-smokers being exposed to second-hand smoke.
এরপর ও তুমি ধূমপান কে মাকরূহ বলবে কোনো যুক্তি তে।
রিপোর্ট দেখে আসতে পারেন:-https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/tobacco
২. তুমি যদি শাইখ আবু মুআবিয়া ইসলাম কামাদারের লেখা ” হালাল বিনোদন ” বই টি র ১৯ নং পেজে দেখো তাহলে দেখবে ধূমপান কে এখানে সম্পুর্ন ভাবে হারাম বলা হয়েছে।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক ইসলাম জানার ও আমল করার তৌফিক দান করেন আমীন।
আচ্ছা এখন তুমি বলো ধূমপান হালাল না হারাম?
হুমাইরা:- অবশ্যই হারাম।
আমি:- হুম।
( তাঁরপর কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না ফজরের সয়ম হুমাইরা আমাকে ডেকে তুললো তার পর নামাজ আদায় করে এসে রুমে ঢুকলাম আজকে রবিবার হয়ার কারণে কলেজ বন্ধ তাই কলেজে যায়ার চিন্তা নেই এমন সময় আম্মু তার রুমে যেতে বললো গিয়ে দেখি হুমাইরাও ওখানে )
আম্মু:- সাজিদ আমি, তোর আব্বু আর তানিশা আজ তোর নানু বাড়ি যাচ্ছি তোর মামা অল্প অসুস্থ। আমরা কাল আসবো আর তোরা ভালো করে থাকিস আর হুমাইরা কে কিছু বলিস না কিন্তু । তাহলে তোরা থাক আমরা গেলাম.
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে।
(আমার মনটা আরো ভালো হয়ে গেল তাহলে তো পুড়ো বারিতে শুধু আমরা দুজন। হুমাইরা দেখি রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে আমিও গেলাম . তাঁর পর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম)
হুমাইরা:-হুম কি শুরু করলেন?
আমি:- কোথায় কি করলাম। শুনো না অল্প রুমে গিয়ে গল্প করি চলোনা?
হুমাইরা:- আচ্ছা গল্প করলে কি পেট ভরবে? রান্না করতে হবে না?
আমি:- তুমি যদি একটা আদর দাও তাই হবে আর ভাত খেতে হবে না 😊☺️।
হুমাইরা:- হুম বুঝতে পেরেছি আপনার হবে কিন্তু আমার হবে না । আপনি রুমে গিয়ে আরাম করেন আমি অল্প পরেই আসছি.
আমি:- মানে কি আমার প্রিওতমা একা একা কস্ট করে রান্না করবে আর আমি শুয়ে থাকবো?
আমি কি তোমার কোনো সাহায্য করতে পারি না?
হুমাইরা:- কেনো পারবেন না অবশ্যই পারবেন?
আচ্ছা আপনি যে সব সময় আমাকে আমার কাজে সাহায্য করেন
ছোট থেকে প্রত্যেকটা বড় কাজে আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন যদি এগুলো অন্যা কেউ জানতে পারে তাহলে আপনাকে বৌ পাগল বলবে আপনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে।
আমি:- আমি অবশ্যই বৌ পাগল এতে কোনো সন্দেহই নেই 🤗 ।
হুমাইরা:- আপনি ইচ্ছে করলে তো বাকিদের মতো সব বোঝা আমার উপর চাপিয়ে দিতে পারেন।
আমি:- আচ্ছা বলতো পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ কে ছিলেন? (মুচকি মুচকি হেঁসে জিজ্ঞেস করলাম)
হুমাইরা:- রাসূল্লাল্লাহু (সাঃ)( হুমাইরা কতক্ষণ চিন্তা করার পর উত্তর দিলো)
আমি:- ঠিক আর হাদিসের মধ্যে এসেছে।
আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, “তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৭৬
সব চাইতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীদের কাছে সাহায্য করতে পারে তাহলে আমার মত একজন ক্ষুদ্র মানুষ কেন তার মহারানী কে সাহায্য করতে পারব না?।
হাদিসের মধ্যে আরো এসেছে।
হিশাম (র) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাঃ) তাঁর ঘরে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি নিজ ঘরে যা করে থাকে, তিনি জুতা মেরামত করতেন, কাপড়ে তালি দিতেন এবং সেলাই করতেন (আবু দাউদ)।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৫৪২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
সেই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিটি যদি নিজের কাজ নিজেই গুছিয়ে নিতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না?।
আর আমি তো এগুলি এজন্যই করি।
কারণ এগুলি তিনি করেছেন এগুলি তার সুন্নাহ।
এগুলি দেখে কেউ যদি আমাকে বউ পাগল বলে
তাহলে তাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতেই হয়।
যাকে অনুসরণ করতে গিয়ে আমি এগুলি করছি
তিনিও কি তাহলে বউ পাগল ছিলেন?।
স্ত্রীর কাজে সাহায্য করলে তাকে ভালোবাসলে
তার হক আদায় করলে যে বলে বউ পাগল বলতেই হয় তার ইসলামের কোন জ্ঞানই নেই।
এরা হচ্ছে সে সব কাপুরুষ।
যারা নিজেদের সব দায়দায়িত্ব স্ত্রীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে মহান মনে করে।
স্ত্রীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনে করে।
খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এরাই তাদের স্ত্রীদের কাছে সবচাইতে নিকৃষ্ট।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই পরিপূর্ণ ঈমানদার যিনি তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা চরিত্রবান। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে ভাল। (আস্-সহীহাহ-২৮৪)
সিলসিলা সহিহা, হাদিস নং- ৪০
সুতরাং যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারল না সে কিভাবে আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে?।
আরো একটি সত্য ঘটনা বলি শুনো
” একবার Dr Chapman খাবার খাওয়ার সময় উনার স্ত্রী উনাকে বলেন দেখোনা এই জানালা গুলো তে ময়লা জমে গেছে। Dr Chapman জানালার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন ‘হুঁ’ তার পর আবার খাওয়া শুরু করে দেন ।পরের দিন সকালে যখন উনার স্ত্রী জানালার পাশে যান তখন দেখে Dr Chapman ঐ জানালা গুলো পরিস্কার করার চেষ্টা করছেন।এই দৃশ্য দেখে উনার স্ত্রী উনাকে প্রশ্ন করেন তুমি কি করছো? Dr Chapman উত্তর দেন কিছুনা এই একটু ভালোবাসা প্রদানের চেষ্টা করছি।এই কথা শুনে উনার স্ত্রী খুসিতে কেঁদে ওঠেন আর বলেন তুমি জানো you are the best husband in the world.
হুমায়রা:-দ্বীনদার ছেলেদের স্ত্রী হতে পারাটা একটি বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা আমাকে দিয়েছে।(বিরতির করে)
তাঁর পর দুজনেই রান্না করতে আরম্ভ করলাম।
চলবে………………..
বিঃ দ্রঃ:- আপনাদের মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা
#hassab_irsf
Leave a Reply