আমার মহারানী পর্ব:-০৩

“তুমি আমার মহারানী”

পর্ব:-০৩

Author:-Hassab bin Ahmed.

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা

……ভয়ে কথা ও বলতে পারছে না ভালোকরে।

আমি- তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন ? এই তোমার ভরসা । আসো ।

রেহনুমা আমার পিছনে পিছনে আসতে লাগলো ।

রেহনুমা- আমরা এখানে কেন এসেছি ? 

আমি- মানে , খেতে এসেছি।

রেহনুমা- কিন্তু আমরা তো খেয়েই বের হলাম ।

আমি- হুম, কি খেয়েছো দেখিছি, কিছু খাওনি , মুখটা দেখেছ তোমার  শুকিয়ে গেছে। কাল রাতেও কিছু খেলে না , সকালেও কিছু খাওনি , 

রেহনুমা:- না আমি ঠিক আছি । 

আমি:- তো বলো কি খাবে। 

রেহনুমা:- আসলে আমি তো কখনো এতো বড়ো রেস্টুরেন্টে আসি নি । তাই আপনি কিছু একটা আনতে বলেন। 

ওয়েটার :- ছ্যার অর্ডার?

আমি:- Peri Peri Chicken Pizza,Oreo Milkshake,Crispy Chicken Burger ,Mango Lassi. নিয়ে আসেন ।

ওয়েটার :- ঠিক আছে স্যার।

কিছু সময় পর ওয়েটার খাবার নিয়ে এলো । 

আমি- আমরা না ডাকা পর্যন্ত এখানে যাতে কেউ না আসে !!

ওয়েটার- আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।

রেহনুমা:-  আচ্ছা আপনি তাহলে রিক্সা……

আমি:- দেখো আমি জানি তোমার মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে । সব বলবো  আগে বাসায় যাই । এখন খেয়ে নাও , 

রেহনুমা কিছু বললো না শুধু মাথা ঝাঁকালো ।

তার পর রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে হস্টেলের দিকে রওনা দিলাম ।

আমি- এখন কিরকম লাগছে?

রেহনুমা:- ভালো। 

রেহনুমা:- আচ্ছা একটা কথা বলি ? 

আমি:- এইটা জিগ্গেস করার কি আছে ? বলো ।

রেহনুমা:- না মানে, এই গাড়ির গ্লাস টা কি  নামানো যাবে  ? বাইরের বাতাস এলে ভালো লাগতো । 

আমি:-অবশ্যই , 

আমি:- ঐ দেখ , হস্টেল‌ প্রায় পেয় গেলাম,  কিন্তু ওদের জন্য কিছুই কিনা হয়নি ।

রেহনুমা:- লাগবে না কিছু ।

আমি:- কেন , লাগবে না , এই প্রথম শ্যালিকা দের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি । কিছু তো নিতেই হয় , কিছু ফল নিয়ে নেই দারাও।  আর তাছাড়া শ্যালিকা মানে তো অর্ধেক বউ তাই না

কথা শেষ করার আগেই দেখি রেহনুমার মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে ।  আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিলো ,যেনো আমাকে চিবিয়ে খাবে ‌ । আমি কিছু বললাম না ।

হস্টেলে পৌঁছে গেলাম ।  তার পর অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে , দেখা করলাম ।  দেখা হতেই তিন বোন কান্না শুরু করে দিলো । সে কি কান্না বন্ধ হবার নাম নেই ।  আমি যে একটা মানুষ পাসে দাঁড়িয়ে আছি  কারো কোনো খেয়াল নেই ।  একটু শান্ত হয়ে রেহনুমা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো 

রেহানা:-  এই তোদের দুলাভাই ।

আমি:- আসলামু আলাইকুম ?

মরমী আর নিশির সঙ্গে অনেক কথা হলো ।  ওদের সঙ্গে দেখা করে রেহনুমার মুখে যে খুশি দেখিছি ‌ , এর আগে কখনো এতো খুশি দেখি নাই । 

মরমী :- ভাইয়া , আমরা বিয়েতে উপস্থিত থাকতে চাচ্ছিলাম । কিন্তু …..

আমি:- জি বুঝতে পারছি ।  কোন অসুবিধা নেই । 

নিশি:- তো ভাইয়া , আপনার বাসায় কবে যাবো দাওয়াত খেতে । 

আমি:- আমি কি বলবো , তোমার আপুর বাসা , এখন তোমাদের আপু কখন বা নিবে ?

নিশি:- তো আপু বলো কখন যাবো ? 

রেহনুমা:- আগে তোরা ভালো করে পরিক্ষা শেষ কর।

আমি:- হুম , পরিক্ষার শেষের দিন , আমি আর তোমার আপু এসে তোমাদের দুজনকেই নিয়ে যাবো ঠিক আছে ‌ । 

নিশি :- জি ভাইয়া । 

আমি:- রেহনুমা ঐ গুলো এনেছো দিলেনা তো । 

রেহনুমা , গাড়ি থেকে ফল গুলো এনে দিলো । 

মরমী :- আরে আপু কি দরকার ছিল এগুলো নিয়ে আসার । 

আমি রেহানাকে ইশারা করলাম যে যেতে হবে । 

রেহনুমা :- এখন যেতে হবে , মরমী তোর ভাইয়ার মোবাইলে ফোন দিবি । আর ভালো করে পড়া লেখা করবি । 

হস্টেল থেকে বেরিয়ে এসে বাসার দিকে যাচ্ছি । 

আমি:- মোন ভালো হয়েছে?

রেহনুমা:- হুম , আচ্ছা আপনি ওরকম ব্যবহার করলেন কেন? 

আমি:- কিরকম ।

রেহনুমা:- মরমী আর নিশির দিকে ভালো করে তাকান নাই , কথাও বললেন মাথা নিচু করে ‌। 

আমি:- উত্তর টা তুমি ভালো করেই জানো । ওরা আমার মাহরাম ছিল না ।

রেহনুমা:- হুম, আপনি সত্যি অনেক ভালো , যখন আপনি বলেছিলেন শালি অর্ধেক বউ , আমার যে কিরকম রাগ উঠেছিল বুঝতে পারবো না ।

আমি:- হা হা হা , ওটা মজা করেছিলাম ,

রেহনুমা :- ওরকম মজা আর আমার সঙ্গে করবেন না । 

আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে ‌ ।  এখন চলো একটা শপিং মলে যাই।

একটা শপিং মলে ঠুকলাম । 

রেহনুমা :- ও এতো বড় , এই প্রথম আমি কোন শপিং মলে ঠুকলাম । 

আমি:- শুন , তোমার নতুন সংসার , তোমার যা যা লাগবে , তাই নিবে ঠিক আছে ‌।

রেহনুমা কিছু নিচ্ছে না , শুধু বলে লাগবে না , আমি কিছু কিছু  করে নিয়ে দিচ্ছি ।

আমি:- শুন আরো কি কিছু লাগবে , না লাগলে চলে যাই ।

রেহনুমা :- শুনেন , কিছু মেয়েদের যিনিস নিতে চাচ্ছিলাম ।

আমি:- হুম , যা লাগে নিয়ে নাও। 

রেহনুমা :- আমি তো জানিনা কোথায় আছে ।

আমি :- কি লাগবে বলো আমি এনে দেই , 

রেহনুমা :- ঐ…

আমি:- আরে আমার কাছে বলতেও লজ্জা পাচ্ছো । কি লাগবে প্যাড ?

রেহনুমা :- না , কাপড়

আমি:- হুম , নিচে আছে চলো ।

সপিং থেকে বের হয়ে , 

আমি:- আমার মহারানীর কি খিদে পেয়েছে?

রেহনুমা:- না তো ,

আমি:- কিন্তু আমার খিদে পেয়েছে।

রেহনুমা:- আপনার এতো খিদে পায় কেন?

আমি:- হুম কেন যে এতো খিদে পায়😒, চলো না কিছু খাই , 

তার পর কিছু খেয়ে , বাসার সামনে চলে এলাম। 

গাড়ি থেকে নেমে 

আমি :- মহারানী এইটা তোমার রাজ মহল  , মানে তোমার নতুন বাসা । 

রেহনুমা :- এতো বড় বাসা আপনাদের সুবাহানাল্লাহ , 

আমি:- আপনাদের মানে? তুমি এইটা বলতে পারলে .

রেহনুমা :- তো কি বলবো ?

আমি:- কি বলবে , কমছে কম আমাদের বলতে পারতে?

রেহনুমা:- আচ্ছা ঠিক আছে আমাদের ।

আমি:- হুম , ভিতরে চলো । 

প্রথমে আম্মুর রুমে ঢুকলাম । আম্মু তো মহাখুশি , দেখেই রেহনুমা কে জরিয়ে ধরেছে ‌ । তার পর আম্মু রেহনুমাকে সব কিছু খুলে বললো , কিভাবে কি হলো । রেহনুমা তো কান্না শুরু করে দিছে । 

আম্মু :- কান্না করতে নেই মা । সাজিদ তোরা রুমে যা। 

রেহনুমা কে বেড রুমে নিয়ে এলাম ।

আমি:- মহারানী তো এই আমাদের বেডরুম।

এবার তো কান্না বন্ধ করো । 

রেহনুমা :- জানেন , আজকে আমি অনেক খুশি । একটা কথা বলি ‌?

আমি:- হুম বলো 

রেহনুমা :- এই খুশির জন্য আমি দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে চাচ্ছিলাম । 

আমি:- হুম অবশ্যই  , এইটা বাথা রুম , আর ঐটা নামাজ পড়ার রুম । 

                             …………

রেহনুমা ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করতে বসলো , রেহনুমা জিবনে এতো খুশি ‌হয় নি ,  সে তার সৃষ্টি কর্তাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না । রেহনুমার মনে শুধু বার বার সূরা দুহার ৫ নং আয়াত মনে পরে যাচ্ছে । “অচিরেই তোমার রব তোমাকে এতো নিয়ামত দিবেন যে , তুমি খুশি হয়ে যাবে”। 

নামাজ আদায় করে রেহনুমা কোরআন পোড়তে শুরু করলো । রেহনুমা সূরা আল-ইনশিরাহ পড়তে শুরু করলো , সূরা আল-ইনশিরাহ পড়ে রেহনুমার মনে হচ্ছে আল্লাহ নিজেই তার সঙ্গে কথা বলছে , 

(” আমি কি তোমার অন্তর প্রশস্ত-প্রশান্ত করে দেইনি? তোমার উপর থেকে ভীষণ বোঝা নামিয়ে দিয়েছি, যা তোমার পিঠ ভেঙ্গে দিচ্ছিল? তোমার মান-সম্মান উঁচু করেছি? তাহলে অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অবশ্যই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি। তাই যখনি কোনো কাজ থেকে অবসর পাও, তখনি নিবেদিত হও, তোমার প্রভুকে পাওয়ার জন্য তাঁর দিকে ফিরে যাও। —আল-ইনশিরাহ”) 

সন্ধ্যায় রেহনুমা রান্না ঘরে ঢুকে তো অবাক হয়ে গেছে , রান্না ঘরোও এতো সুন্দর থাকতে পারে? রেহনুমার শাশুড়ি রান্না করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রেহনুমার শাশুড়ি তো ওকে কাজ করতেই দিচ্ছে না , তাও রেহনুমা জোর করে কিছু কিছু করে দিচ্ছে । 

                         *********

রাতের খাবার তিনজন এক সঙ্গে খেয়ে , মায়ের সঙ্গে অনেক খন সময় কাটালাম , রেহনুমার কাছে তার অতীত শুনলো আম্মু , রেহনুমা বলতে বলতে কেঁদে কেঁদে অস্থির । আমি রেহনুমা কে বেড রুমে নিয়ে এসে পানি খেতে দিলাম । 

আমি:- আপনি আমার মহারানী , আর আপনি যদি এভাবে কাঁদেন তাহলে আমার কি ভালো লাগবে ? 

রেহনুমা :- যানেন আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এতো বড় ঘরে আমার বিয়ে হবে ! 

রেহনুমা কে শান্ত করে শুতে বললাম ,

আমি:- আচ্ছা একটা কথা বলি?

রেহনুমা:- হুম 

আমি:- আসলে রাতে হয়তো আমার হাত পা আপনার উপর চলে যেতে পারে ! কিছু মনে করবেন না প্লিজ

রেহানা :- ঠিক আছে ,কোন অসুবিধা নেই।

তার পর আমি শুতে গেলাম ।

রেহনুমা :- কি হলো আপনি কি করেন?

আমি:- কেন শুব না?

রেহনুমা:- লংপেন্ট পড়েই শুনবেন , চেন্জ করে নেন ! আপনার তো লংগি আছে ওটা পড়েনন !

আমি:- না ,  আসলে আমি লংগি পড়ে শুতে পারি না, রাতে যদি লংগি পড়ে শুই তাহলে সকালে লংগি খুঁজে পাই না !!

আমার কথা শুনে হুমাইরা হাসতে শুরু করলো ‌ । আর ওর হাসা দেখে তো আমার রাগ হচ্ছে !! আরে একজন মানুষ একটি কাজ নাও করতে পারে , এখানে হাসার কি আছে??   আরো কিছু সময় কথা বলে দুজনে শুয়ে পরলাম।

চলবে…………


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *