আমার মহারানী পর্ব:-৪

“আমার মহারানী”

পর্ব:-৪

Author:-Hassab bin Ahmed.

সকাল ১০ টা

ঘুমিয়ে আছি…. হঠাৎ শিতল হাতের স্পর্শে সারা শরীর কম্পিত হতে লাগল,চোখ খুললাম!

দেখি আমার মহারানী আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ডাকছে,

এতো আদর করে ডাকলে কি আর ঘুমিয়ে থাকা যায়, তাই উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম ,  ফ্রেশ হয়ে .. দেখি বউ রান্না ঘরে… আম্মুকে আজ রান্না ঘরে ঢুকতেই দেয় নি।

মেয়েটি…ছাপা শাড়ি পরে আছে, আচলটা কোমরে গোজা! চুল গুলো খোলা অবস্থায় মাথার সাথে ছোট করে আটকে রাখা! দেখতে তো সেই লাগছে! নাহ আর থাকা যায়না!

.

আস্তে আস্তে গিয়ে পেছন থেকে ওরে যাপটে ধরলাম…

রেহনুমা:-হুহুহুহু! আবার শুরু করলেন?

আমি:- হুম আসলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছেতো তাই আর লোভ সামলাতে পারলাম নাহ! হিহিহি

রেহনুমা:-ও তাই?

আমি:-হুম ঠিক তাই!

রেহনুমা-ওওও তাহলে এখন ছাড়ো! রুটি পুরে যাবেতো

এই বলেই আমাকে চিমটি কাটলো!

হাল ছেড়ে চলে এলাম , তারপর তিনজনে খাবার খেয়ে নিলাম , আমার একটু অফিসে যেতে হবে!! রেহনুমাকে 

ইশারা করে কাছে আসতে বললাম, রেহনুমা আমার সামনে এসে  দাড়ালো!!

আমি:- আসলে অনেক দিন ধরে অফিসে যাই না , আজ একটু যেতে হবে !! 

রেহনুমা:– ওও , ঠিক আছে দেখে শুনে যাবেন, আর একটু তারাতাড়ি আসবেন!!

আমি:- হুম, আরো একটি কথা ছিল !

রেহনুমা:- বলেন?

আমি:- তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটি সুন্নত আদায় করি ?

রেহনুমা:- জি , অবশ্যই !!!

আমি সঙ্গে সঙ্গে রেহনুমার কপালে চুমু দিলাম !! রেহনুমা তো মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ও এইটা কল্পনাও করতে নি যে এই কাজ হবে !!!

রেহনুমা:- এইটা কি আপনার সুন্নত?(লজ্জা কন্ঠে)

আমি:- জি, হজরত মুহাম্মদ সা: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে চুমু খেতেন ,

চলে আসলাম অফিসে , এই  কদিন আমি না থাকায় অনেক কাজ জমা হয়ে গেছে, সব কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল , সারাদিন এতো ব্যাস্ত ছিলাম রেহনুমার সঙ্গে কথাও বলতে পারলাম না , বাসায় ফেরার সময় রেহনুমার জন্য কিছু খাবার নিলাম। চটপটি, ফুচকা, চিপস, আচার, আইসক্রিম এই আর কি!।

বাসায় গিয়ে রেহনুমা কে জরিয়ে ধরলাম , কিন্তু ও জোর করে ছাড়িয়ে নিলো , আমি কিছু না বলে খাবার গুলো দিলাম – “এই গুলো তোমার জন্য” রেহনুমা নিয়ে চলে গেল কিছু বললো না ,  আমি রেহনুমার পাশে গিয়ে

আমি:- উপহার পছন্দ হয়নি???

রেহনুমা:- অনেক পছন্দ হয়েছে ! একজন মেয়ের তো এসব প্রিয়ো খাবার , তারপর এই প্রথম কেউ আমাকে এতো ভালবাসে এনে দিয়েছে !!

আমি:- তাহলে কিছু বললে না যে ?

রেহনুমা:- এমনি ভালো লাগছে না!!

আমি:-  কেন ? কি হয়েছে ? বলো আমি এখুনি ঔষধ নিয়ে আসি?

রেহনুমা :- আপনি শান্ত হোন , আমি ঠিক আছি !!! আপনি ফ্রেস হয়ে আসেন আমি ভাত বেড়ে দিচ্ছি!!

আমি:- সত্যি ঠিক আছো ?

রেহনুমা :- হুম !!

আমি ফ্রেস হয়ে ভাত খেতে বসলাম , রেহনুমা ভাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে , কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো ভাত খাবে না?

রেহনুমা:- না , আপনি খান , আমি অল্প আগেই অনেক কিছু খেয়েছি , 

আমি:- তাহলে তুমি ভাত  কখন খাবে?

রেহনুমা:- আপনি খান আমি পড়ে খেয়ে নিব !!

বলেই চলে গেল 

আমি কিছু ভাত খেলাম , তার পড় রেহনুমা কে ডাকলাম

রেহনুমা :- কি হয়েছে! কিছু লাগবে?

আমি:- না, আমার পাশে বসো!

রেহনুমা:- না না, আপনি খান আমি রুমেই আছি?

আমি:- তোমাকে বসতে বলেছি বসো ?( ধমক দিয়ে)

রেহনুমা , ভয় পেয়ে আমার পাশের চেয়ারে বসলো , কিছু সময় বসে থেকেই হঠাৎ করে এক দৌড়ে চলে গেল ভিতরে , আমি কিছু বোঝাতে পারছি না কি হয়েছে , আমি খাবার শেষ করে রুমে এসে দেখি রেহনুমা ছোফায় বেকা হয়ে বসে আছে!!

আমি:- এই তোমার কি হয়েছে এই ভাবে বসে আছো কেন? দেখি সোজা হও,!!!

রেহনুমা:- না কিছু হয় নি এমনি আমি ঠিক আছি !!

আমি:- যদি ঠিক থাকো তাহলে পেট ধরে আছো কেন ? আরে তুমি যদি না বলো কি হয়েছে তাহলে বুঝবো কিভাবে ??

রেহনুমা :- আমি ঠিক আছি ? এইটা মেয়েদের প্রবলেম ! আপনি বুঝবেন না আপনি যান !!

আমি:- তুমি কি বলবে ? আরে আমি তোমার স্বামী , এইটা ভুলে যেওনা 😡!( রাগি কন্ঠে)

রেহনুমা:- তেমন কিছু না এই তলপেটে ব্যথা করছে, আর অল্প অল্প মাথা ঘুরাছে , ঠিক হয়ে যাবে, আপনি নামাজ আদায় করে শুয়ে পড়েন

আমি:- তোমার কি পিরিয়ড শুরু হয়েছে??

রেহনুমা মাথা নাড়িয়ে শিকার করলো!!! আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলেম

                        ****

রেহনুমা মনে মনে ভাবছে , এতো সময় তো প্রেম ছিল যখনি অসুস্থ হলাম ,তখনি রুমে থেকে চলে গেল , সব পুরুষ একিই রকম, মনে হয় আজ আর রুমে আসবে না !! 

                            ******

আমি  কিছু সময় পর রুমে আসলাম হট ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে , 

আমি:- আরে তুমি এখনো ছোফায় বসে আছো ? বিছানায় আসো!!

রেহনুমা:- না না , এই অবস্থায় বিছানা ধরা যাবে না !!!

আমি:-  এক থাপ্পর দিব , বিছানায় আসো !!

রেহনুমা ভয়ে ভয়ে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালো 

আমি:- কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন শুয়ে পড়ো

রেহনুমা :- আমি বলছিলাম কি…

আমি:- কিছু শুনতে চাই না , যা বলছি তাই করো!!

রেহনুমা কিছু না বলে শুয়ে পড়লো

রেহনুমা :- এই কি করছেন পেট থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন কেন? ( ভয় পেয়ে)

আমি:- আরে তুমি সবসময় এতো ভয়ে ভয়ে থাকো কেন , ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে গরম জলেরসেঁক দিব , এতে করে তোমার ব্যথা অনেকটা কমে যাবে ইনশাল্লাহ , 

আমি:- আচ্ছা তোমাকে কে বলেছে যে পিরিয়ডের সময় বিছানা ছোঁয়া যায় না ?

রেহনুমা:- আম্মু বলতো , এই সময় আমাকে বারান্দায় থাকতে দিতো!!

এই কথা শুনে তো আমি কি করবো বুঝতে পারছি না এই ধরনের চিন্তা মানুষের মাথায় আসে কিভাবে !!! ( কথা বলছি আর গরম জলেরসেঁক দিচ্ছি)

আমি:- সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ, এখন কিরকম লাগছে ??

রেহনুমা:- আলহামদুলিল্লাহ , অনেক আরাম পেয়েছি বেথা নাই বললেই চলে !!!

আমি:- ঠিক আছে তাহলে এখন একটু উঠে বসো , আমি আসতেছি, 

কিছু সময় পর আদা চা নিয়ে আসলাম ,

আমি:- এইটা খাও!

রেহনুমা:- কি এইটা?

আমি:-আদা চা,!! আদা বেশ উপাকারী পিরিয়ডের ব্যথা রোধের জন্য। আদা চা পান করলে এই সময় বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।

রেহনুমা:- আপনি অযথা এতো কষ্ট করছেন!!!

আমি:- আমার মহারানীর জন্য কি এইটুকু করব না?

রেহনুমার চোখ থেকে অজরে জল গড়িয়ে পড়ছে!

আমি:- এই তুমি কাঁদছো কেন??

রেহনুমা:- আপনি আমাকে মাফ করে দেন, আপনি সত্যি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো স্বামী, আপনি যখন প্রথম রুম থেকে চলে গেলেন আমি ভাবলাম আপনি অন্য কোনো রুমে গিয়েছেন রাত থাকার জন্য , সবার মতো আপনিও আমাকে একা করে চলে গেলেন!!!( কাঁদছে আর বলছে)

আমি রেহনুমার কপালে চুমু দিয়ে 

আমি:- তুমি তো আমার অংশ , নিজের অংশ কে রেখে কি কেউ চলে যেতে পারে!! কান্না বন্ধ করো আমি একটু নামাজ পড়ে আসি আর , পুরোটা খেতে হবে কিন্তু !!! আর বেশি অসুবিধা হলে আম্মুকে ডেকে নিয়ে , আমি আসি , আই লাভ ইউ !!!!

নামাজ আদায় করে এসে দেখি রেহনুমা ছোফায় বসে আছে ,

আমি:- কি হয়েছে আবার সোফায় কেন?

রেহনুমা:- এমনি 

আমি:- ভাত খেয়েছো ??

রেহনুমা:- না , আপনি শুয়ে পড়েন আমি খেয়ে নিব !!

আমি কিছু না বলে রান্না ঘরে গিয়ে এক প্লেট ভাত নিয়ে আসলাম …

রেহনুমা :- আপনি আবার কস্ট করে আনতে গেলেন কেন? আমি খেয়ে নিতাম !!!

আমি:- হা করো , 

আমি খাইয়ে দিচ্ছে , আর রেহনুমা আমার দিকে তাকিয়ে আছে , রেহনুমার চোখ থেকে পানি পড়ছে !!!!!!

আমি -কি হলো আবার কাঁদছো কেন??

রেহনুমা – এই প্রথম কেউ আমাকে

এতো আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে !!!

আমি কিছু বললাম না , কি বলবো বলার মতো আছে বা কি!!    তার পর আমি শুতে গেলাম কিন্তু রেহনুমা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে আছে!!

আমি- কি হলো শুবে না???

রেহনুমা- আপনি শুয়ে পড়েন আমি বারান্দায় থাকবো !!!

আমি:- কেন?

রেহনুমা- আপনি এতো কিছু জানেন কিন্তু এইটা জানেন না ,যে হাদিসে আছে মেয়েদের এই সময় ঘরে থাকতে নেই ঘরের বাইরে থাকতে হয়!!!!

আমি:- হাদীসে আছে?

রেহনুমা- জি !!

আমি – কে বলেছে?

রেহনুমা:- কে বলবে , হাদিসে আছে , আর আম্মু আমাদের তো বারান্দায় থাকতে দিতো!!!

এই শুনে আমি অবাক হয়ে গেছি। তোবে কি আমরা আসলেই মুছলিম? এরকম মানুষ অনেক আছে যারা ইসলামের নামে পিরিয়ড হওয়া মানুষ টাকে অপমান করে। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না শুধু এইটুকু বলি যে পিরিয়ড হলে মানুষটা পঁচে যায় না। এক ধরনের যুবক আছে এইটা কে নিয়ে হাসাহাসি করে।  এটাকে নিয়ে ঠাট্টা বা উপহাস করার মত কোনো বিষয় নই,  সত্যি আমারা ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। 

আমি:- কোন হাদীসে আছে??

রেহনুমা:-আছে কিন্তু কোথায় আছে জানিনা

আমি:- তুমি নিজে পড়ে দেখেছো ??

রেহনুমা:- না !!  শুনেছি!!

আমি:- কোথায় ?

রেহনুমা :- আম্মু বলেছিলো!!!

আমি:- হুম। বুঝতে পারছি , এই গুলো সব মিথ্যা কথা , সহীহ বুখারীর একটি হাদিস বলি শুন –

                     উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েয দেখা দিলে আমি চুপি চুপি বেরিয়ে গিয়ে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার কি নিফাস দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর সঙ্গে চাদরের ভেতর শুয়ে পড়লাম।

(৩২২, ৩২৩, ১৯২৯; মুসলিম ৩/২, হাঃ ২৯৬, আহমাদ ২৬৫৮৭) (আ.প্র. ২৮৯, ই.ফা. ২৯৪)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৮

আমি:- এইবার বলো কোনটা ঠিক ?

রেহনুমা – যিহেতু এইটা হাদীসে আছে অবশ্যই এইটা ঠিক !!

আমি:- তাহলে তো এখন এক খাটে থাকতে অসুবিধা নেই !!!

রেহনুমা কিছুই বলল না , আমি রেহনুমা কে খাটে শুইয়ে দিয়ে  আমিও পাসে শুয়ে পড়লাম।

চলবে……..


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *